Ajker Patrika

কাশ্মীর নিয়ে কেন বারবার বিবাদে জড়ায় ভারত ও পাকিস্তান

অনলাইন ডেস্ক
ছবি: বিবিসি
ছবি: বিবিসি

কাশ্মীর হলো একটি নানান জাতিগোষ্ঠীতে ভরপুর হিমালয়ের অঞ্চল। এই অঞ্চলটি হ্রদ, উপত্যকা এবং বরফে ঢাকা পাহাড়ের সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীর অঞ্চল নিয়ে এখন পর্যন্ত দুটি যুদ্ধ এবং একাধিকবার সীমিত সংঘাতে জড়িয়েছে। কিন্তু কেন এই অঞ্চল নিয়ে তাদের বিরোধ এবং তা কীভাবে শুরু হলো?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে দেখা যায়, কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের এই বিরোধ অনেক পুরোনো। ভারত ও পাকিস্তান ১৯৪৭ সালের আগস্টে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার আগেই কাশ্মীর নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয়েছিল।

ভারত ভাগের প্রাক্কালে ‘ইন্ডিয়ান ইনডিপেনডেন্স অ্যাক্টে’ বলা হয়েছিল, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর চাইলে ভারত কিংবা পাকিস্তান—যে কোনো একটির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে।

তবে এই অঞ্চলটির তৎকালীন স্থানীয় শাসক মহারাজা হরি সিং চেয়েছিলেন কাশ্মীর স্বাধীন থাকুক। কিন্তু ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তান থেকে আসা উপজাতীয়দের আগ্রাসনের মুখে তিনি ভারতের সাহায্য চান এবং এর বিনিময়ে কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করায় সম্মতি দেন।

এরপরই শুরু হয় যুদ্ধ এবং ভারত জাতিসংঘে হস্তক্ষেপ কামনা করে। জাতিসংঘ প্রস্তাব দেয় গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক—কাশ্মীর ভারত না পাকিস্তানের সঙ্গে যাবে। কিন্তু দুই দেশ নিজেদের দখলে রাখা অঞ্চলগুলো থেকে সেনা সরিয়ে নিতে একমত হতে না পারায় সেই গণভোট আর হয়নি।

১৯৪৯ সালের জুলাইয়ে জাতিসংঘের সুপারিশে একটি নিয়ন্ত্রণ রেখা চিহ্নিত করে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ভারত ও পাকিস্তান। এর ফলে অঞ্চলটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। ভারতীয় অংশ হয়ে যায় জম্মু ও কাশ্মীর। আর পাকিস্তানের দখলে থাকা অঞ্চলটির নাম হয় আজাদ কাশ্মীর।

এরপর ১৯৬৫ সালে দুই দেশের মধ্যে আবারও যুদ্ধ হয় এবং ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান-সমর্থিত বাহিনীর সঙ্গে ভারতের একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু তীব্র সংঘাত সংঘটিত হয়।

তত দিনে উভয় দেশই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আজও ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরকে পুরোপুরি নিজেদের দাবি করে। তবে এই কাশ্মীর এককভাবে কোনো দেশেরই নিয়ন্ত্রণে নেই। তারা এর অংশবিশেষ নিয়ন্ত্রণ করে।

ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এত অস্থিরতা কেন

কাশ্মীরের বাসিন্দাদের মধ্যে কার সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত—তা নিয়ে নানা মত আছে। অনেকেই ভারতের শাসন চায় না, বরং স্বাধীনতা বা পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে।

এখানে ধর্ম একটি বড় বিষয়। কারণ জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের ৬০ শতাংশের বেশি জনগণ মুসলিম। এই পরিসংখ্যান অঞ্চলটিকে ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য করে তুলেছে।

১৯৮৯ সাল থেকে এই অঞ্চলে ভারতের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে। এই বিদ্রোহে সেখানে এখন পর্যন্ত বহু মানুষের প্রাণ গেছে।

ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদে মদদ দিচ্ছে। যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।

২০১৬ সালে অঞ্চলটির উরিতে হামলায় ১৯ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর ভারত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায়। এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল সন্দেহভাজন জঙ্গি ঘাঁটি।

২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলায় ৪০ জনের বেশি ভারতীয় আধাসামরিক সদস্য নিহত হলে ভারত বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। ১৯৭১ সালের পর সেবারই প্রথম ভারতের যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এর ফলে পাল্টা হামলা ও বিমানযুদ্ধ শুরু হয়।

২০১৯ সালেই ভারত সরকারের সিদ্ধান্তে কাশ্মীরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন বাতিল করা হয় এবং সেখানে ব্যাপক নিরাপত্তা অভিযান চালানো হয়। পরবর্তী কয়েক বছরে এই অঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহ কিছুটা কমে আসে এবং পর্যটন বাড়তে থাকে।

কয়েক বছর শান্ত থাকার পর সর্বশেষ গত মাসে পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলা করে ২৬ জনকে হত্যা করার পর সেখানে এখন উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত দুই দশকে কাশ্মীরে এটি ছিল বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা।

এই ঘটনার দুই সপ্তাহ পর মঙ্গলবার (৬ মে) মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। এর ফলে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০৩ সালে ভারত ও পাকিস্তান একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল। ২০১৪ সালে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের প্রতিশ্রুতি নিয়ে। তবে তিনি শান্তি আলোচনায়ও আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। সেই বছরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ দিল্লিতে মোদির শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন।

কিন্তু ২০১৫ সালে পাঞ্জাবের পাঠানকোটে ভারতীয় বিমানঘাঁটিতে হামলার জন্য ভারত পাকিস্তান-ভিত্তিক গোষ্ঠীগুলোর দিকে আঙুল তোলে। এর ফলে ২০১৭ সালে ইসলামাবাদে একটি আঞ্চলিক সম্মেলনে মোদির নির্ধারিত সফর বাতিল করা হয়।

এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য শান্তি আলোচনা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অপারেশন সিন্দুর ঘিরে আলোচিত কে এই কর্নেল সোফিয়া কুরেশি

ভাগনের বিয়েতে ১ কেজি সোনা, ৪ বস্তা টাকা, ২১০ বিঘা জমি, পেট্রলপাম্প উপহার দিল মাড়োয়ারি পরিবার

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের এমডির অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে কর্মীরা

আস্থায় বাজিমাত ইসলামী ব্যাংক

চট্টগ্রামে র‍্যাব কর্মকর্তার লাশ: মাকে নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কলহে আত্মহত্যা বলে দাবি ভাইয়ের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত