অনলাইন ডেস্ক
আবারও কাশ্মীর ইস্যুতে সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হুমকি শেষ পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যতম ভয়ংকর আকাশযুদ্ধে গড়ায়। তবে চার দিনের মাথায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে উত্তেজনা খানিকটা প্রশমিত হয়েছে। দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সরাসরি লড়াইয়ের বাইরে সুপ্ত অথচ সমান গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এই পরিবর্তনের ক্ষেত্র ভারত-পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো।
এই দেশগুলো হলো—বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান এবং মালদ্বীপ। এই দেশগুলোর কোনোটির কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র নেই। দেশগুলো এই সংকটে কেবল নীরব দর্শক নয়, বরং তারা কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আঞ্চলিক ধাক্কার প্রতিক্রিয়ায় দেশগুলো এখন নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি নতুন করে সাজাতে পারে। এই দেশগুলোরই কিতাবি নাম দেওয়া যেতে পারে ‘সুইং স্টেট।’ ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতির আগেই এসব দেশের দিকে অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
ভারত-পাকিস্তান সংকটকে দীর্ঘদিন ধরে কেবল দ্বিপক্ষীয় ইস্যু হিসেবেই দেখা হয়েছে। ঐতিহাসিক ক্ষোভ আর পারমাণবিক প্রতিরোধের (ডিটারেন্ট) মধ্যে এটিকে সীমাবদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে, প্রতিটি সংকটই—হোক তা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা বা কাশ্মীর নিয়ে বর্তমান উত্তেজনা—কিছু না কিছু ধারাবাহিক প্রভাব তৈরি করে। এসব প্রভাব অঞ্চলের ছোট, পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন দেশগুলোর কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত অবস্থানকে পরীক্ষার মুখে ফেলে দেয়। বিশেষ করে এবার ঝুঁকি বেশি। কারণ, এই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ আরও বেশি হিসাব করে এগোতে হচ্ছে। কারণে এই অঞ্চলে চীন এখন ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের একটি কেন্দ্রীয় অংশ উঠেছে।
বাংলাদেশ
ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতের আলোকে এই অঞ্চলে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর থেকে দেশটি অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুরতা ও বৈদেশিক নীতি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
নাগরিক সমাজ, জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী এবং ইসলামপন্থী শক্তিগুলো ভারতের প্রতি সন্দিহান হয়ে উঠছে। তারা মনে করে, ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। বিশেষ করে, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা নিয়ে তাদের এই ধারণা তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে, জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়—পূর্ববর্তী সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা থেকে শুরু করে নির্বিচারে গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা/নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ প্রতিবাদকারী নিহত হয়েছেন।
জনগণ ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব তীব্র হওয়ায় ঢাকা আরও স্বাধীন বা এমনকি (ভারত) বিরোধী অবস্থান নিতে বাধ্য হতে পারে। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছে এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তার জন্য জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডর (চিকেন’স নেক) ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। এটিকে মানবিক উদ্যোগ বলা হলেও ভারতীয় বিশ্লেষকেরা এই পদক্ষেপকে ভারতের কৌশলগত অঙ্গনে বাইরের হস্তক্ষেপের বিস্তৃত প্রবণতার অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।
ভারতের জন্য এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময়। বাংলাদেশ এমন এক পরিস্থিতিতে রয়েছে, যেখানে দেশটি চীনের সাহায্যে অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিতে পারে, পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে এবং নিরপেক্ষতাকেই সার্বভৌমত্ব হিসেবে তুলে ধরতে পারে। গত সপ্তাহে ভারত অবৈধ অভিবাসী ও রোহিঙ্গা আখ্যা দিয়ে অন্তত ২৬০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে (পুশ ইন) দিয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের একতরফা পদক্ষেপ দেখে ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত চীনের অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহের চেষ্টা করতে পারে।
দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ যদি বহুমুখী অংশীদারত্ব এবং ‘সফট ব্যালান্সিং’—এর মাধ্যমে কৌশলগত আত্মনিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে, তাহলে বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত হিসাব-নিকাশ মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। বিশেষ করে, মিয়ানমারের পাশে বাংলাদেশের অবস্থান এই পরিবর্তনকে আরও বেশি প্রভাবিত করবে এই অঞ্চলকে।
শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কায় কাশ্মীর সংকট অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুরতা ও আঞ্চলিক নীতি পরিবর্তনের দ্বৈত চাপের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। এখনো অর্থনৈতিক সংকটের ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চুক্তির আওতায় প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ফলে কলম্বোর অন্য কোনো দেশের সঙ্গে প্রকাশ্য মৈত্রীতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ সীমিত। তবুও সংকটের মুহূর্তে ভারতের অনমনীয়তা—যেমন নিরাপত্তা অংশীদারত্ব জোরদার করা এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী ন্যারেটিভ ব্যবহার করা শ্রীলঙ্কার ওপর ভারতের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের চাপ তৈরি করে।
একই সময়ে, চীন হামবানটোটা বন্দর থেকে কলম্বো পোর্ট সিটি পর্যন্ত বিস্তৃত নানা প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে গভীরভাবে যুক্ত। ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা হয়তো আঞ্চলিক সংহতি আশা করেন, কিন্তু শ্রীলঙ্কার জন্য ভারতের প্রতি অতিমাত্রায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া দেশটির কৌশলগত ভারসাম্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। ভারত ও চীনের মধ্যে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখা শ্রীলঙ্কার জন্য কেবল উত্তম কূটনৈতিক পছন্দই নয়, বরং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পন্থা।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্রীলঙ্কার মুসলিম জনগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ সংবেদনশীলতা। তারা এই অঞ্চলে মুসলিমবিরোধী মনোভাবের প্রতি সংবেদনশীল। ভারতে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা অনুসরণ করে। বিজেপির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) নামে কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভারতের মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্য এবং নরেন্দ্র মোদি নিজেও আরএসএসের বর্তমান বা সাবেক সদস্য।
শ্রীলঙ্কার সিংহলি বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ‘বোধু বালা সেনার’ নেতা বলেছেন, তাঁরা দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামি চরমপন্থা মোকাবিলায় আরএসএসের সঙ্গে ‘হিন্দু-বৌদ্ধ শান্তি অঞ্চল’ গঠনের সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। অবশ্য আরএসএস এই দাবি অস্বীকার করেছে। বৌদ্ধ ও হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এই ক্রমবর্ধমান সখ্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ধারণা তৈরি করছে যে, এই অঞ্চলে সংখ্যাগুরুবাদী মতাদর্শের প্রাধান্য তৈরি করে বাকিদের ‘অপর’ করে ফেলার বিষয়টি আঞ্চলিকভাবে সমন্বয় করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে কাশ্মীর সংকটের সময় হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতের সঙ্গে প্রকাশ্য জোট কলম্বোর সীমিত কৌশলগত পরিধিকে আরও সংকুচিত করবে। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ উত্তেজনাও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
নেপাল
নেপাল দীর্ঘদিন ধরে ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে মোটর ভেহিক্যালস এগ্রিমেন্টের মতো উপ-আঞ্চলিক কাঠামো এবং চীনের সঙ্গে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের রেল কূটনীতি ব্যবহার করে নেপাল তার নির্ভরতায় বৈচিত্র্য এনেছে। তবুও সংকটের সময় ভারতের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা সংবেদনশীলতা এই ভারসাম্য বজায় রাখাকে আরও কঠিন করে তোলে।
কাঠমান্ডু খুব ভালো করেই জানে, তারা যখন পরম সার্বভৌমত্ব দাবি করে তখন কী ঘটে। ২০১৫ সালে নেপাল নতুন সংবিধান গ্রহণ করে। সে সময় ভারত এর বিরোধিতা করে। দিল্লি এই অভিযোগ তোলে যে, সংবিধানে মধেসি জনগোষ্ঠীর উদ্বেগ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। মধেসি জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব গভীর। এরপরই দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে কয়েক মাসব্যাপী অবরোধ শুরু হয়। যদিও ভারত এই অস্থিরতার সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকার করে। তবে নেপালে এটিকে ব্যাপকভাবে ভারতের জবরদস্তি হিসেবেই দেখা হয়।
মধেশী বা মধেসি জাতি নেপালের দক্ষিণভাগে ও বিহারের উত্তরাংশের সমতলে বসবাসকারী মানুষদের বলা হয়। ভারত ও নেপালের যে অংশে মধেসি জাতি বাস করে একত্রে সেই অঞ্চলকে মধেশ বলা হয়। মধেশ শব্দটি মধ্যদেশ শব্দের অপভ্রংশ রূপ। নেপাল ও বিহারের মধেসিদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বা শারীরিক গঠনগত কোনো তফাৎ নেই।
ভারত এর আগে ১৯৮৯ সালে চীনের কাছ থেকে অস্ত্র কেনার প্রতিক্রিয়ায় নেপালের ওপর আনুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছিল। এটি প্রত্যাশিতই ছিল। ২০১৫ সালের অবরোধ জ্বালানি ও ওষুধের ব্যাপক সংকট তৈরি করেছিল। তখনই নেপালজুড়ে ভারতবিরোধী জাতীয়তাবাদী মনোভাবের ঢেউ শুরু হয়। সম্প্রতি, ভারত ও নেপাল মানচিত্র সংক্রান্ত বিরোধে জড়িয়েছে। ২০১৯ সালে ভারত এক নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করে, যেখানে বিতর্কিত অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পদক্ষেপ কূটনৈতিক উত্তেজনা উসকে দেয় এবং নেপালের পার্লামেন্ট নিজস্ব সংশোধিত মানচিত্র প্রকাশ করে। এটি নেপালের পক্ষ থেকে সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এক দৃঢ় পদক্ষেপ ছিল।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার এই মুহূর্তে কাঠমান্ডুর সমদূরত্ব বজায় রাখার প্রচেষ্টা নয়াদিল্লি ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে দেখতে পারে। পররাষ্ট্রনীতি যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং দেশে জাতীয়তাবাদ বাড়ছে, তখন নেপালের কৌশলগত পন্থা অবলম্বনের সুযোগ সংকুচিত হতে পারে। যে অস্পষ্টতা একসময় দেশটিকে সুবিধা দিত—যেমন অবকাঠামো চুক্তি, সীমান্ত বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক বার্তাগুলোর ভারসাম্য, তা ক্রমবর্ধমান মেরুকৃত আঞ্চলিক পরিবেশে দায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে সরকার স্পষ্ট ও দৃশ্যমান অবস্থান নিতে বাধ্য হতে পারে।
ভুটান
ভুটান ভারতের সঙ্গেই থাকবে বলে অনুমান করা যায়। দুই দেশের ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। দেশ দুটি ১৯৪৯ সালে মৈত্রী চুক্তি করে। তবুও, পশ্চিম ফ্রন্টে ভারতের সামরিক মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হওয়ায় উত্তরে মনোযোগের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া, আগে থেকেই সেখানে চীনের আঞ্চলিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে, ২০১৭ সালে দোকলাম অচলাবস্থার পর এটি আরও প্রকট হয়েছে। দোকলামে ভারত ও চীনের সৈন্যরা টানা ৭৩ দিন মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। বেইজিং ভারত, ভুটান ও চীনের সংযোগস্থলের কাছাকাছি কৌশলগত সংবেদনশীল এলাকায় একটি সড়ক নির্মাণ করেছিল। এই এলাকাটি চীন ও ভুটান উভয়ই দাবি করে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
থিম্পুর পররাষ্ট্রনীতি সতর্ক মনে হলেও বাস্তবতা আরও জটিল। তবে এই চাপ প্রশমনে ভুটান ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। দেশটি ন্যূনতম কূটনীতি এবং ধীর গতির রক্ষণশীল নীতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অবস্থান নির্ধারণ করে। কাশ্মীরের মতো সংকট ভুটানের পররাষ্ট্র নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন না আনলেও, থিম্পুর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। যার ফলে, দেশটি নীরবে তার কৌশলগত পরিবেশ পুনর্মূল্যায়ন করতে পারে। বিশেষ করে, যখন ভারতের আঞ্চলিক সক্ষমতা সীমিত হচ্ছে এবং উত্তরে চীনের তৎপরতা অব্যাহতভাবে বাড়ছে।
মালদ্বীপ
মালদ্বীপে কাশ্মীর সংকট ইসলামপন্থী ও রক্ষণশীল রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ভারতবিরোধী প্রতিক্রিয়া আবারও উসকে দিতে পারে। বিশেষ করে, যখন নয়াদিল্লি ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি ব্যাপক করার চেষ্টা করছে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ২০২৩ সালের নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারের কল্যাণেই জয়ী হন। তিনি মালদ্বীপে ভারতীয় সামরিক উপস্থিতিকে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। মুইজ্জু এরপর থেকে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন দিকে চালিত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের অনুরোধও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
যদিও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি ভারত সফরের মাধ্যমে অবস্থান কিছুটা নমনীয় করেছেন। তবে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা, বিশেষ করে রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যুক্ত যারা, তারা এখন কাশ্মীর সংঘাতকে উপলক্ষ করে আবারও ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়িয়ে তুলতে পারে। তারা এই সংকটকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর অভিযানের অংশ হিসেবে দেখাতে পারে। যেখানে মালদ্বীপের জনসংখ্যার বেশির ভাগই মুসলিম।
একই সময়ে, চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং ভারতের সঙ্গে উন্নয়ন অংশীদারত্ব মালদ্বীপকে একটি জটিল পরিস্থিতিতে ফেলেছে। দেশটির কৌশল মূলত আঞ্চলিক শক্তিগুলোর স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং জলবায়ু সুরক্ষায় নেতৃত্ব তৈরি করার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সংঘাত সেই সুযোগকে সংকুচিত করতে পারে।
চাপের মুখে কৌশলগত উপায়
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের বিপরীতে এই দেশগুলোর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়াকে একটি সাধারণ কৌশলের আলোকে তুলে ধরা যায়। সেটি হলো—ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান। এই পাঁচটি ‘সুইং স্টেট’ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘সুচিন্তিত অস্পষ্টতার’ শিল্পে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। তারা একাধিক শক্তির—ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র—কাছ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা চায়, তবে কোনো জোটে আবদ্ধ হতে চায় না। এটি তাদের সর্বোচ্চ আত্মনিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে এবং বিদেশি সাহায্য নির্ভরতা, সামরিক চাপ বা অবকাঠামোগত জটিলতার ফাঁদে পড়া এড়াতে সাহায্য করে।
কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সংকট এই সম্পর্ক কাঠামোতে চাপ সৃষ্টি করে পরীক্ষায় ফেলেছে। প্রতিটি ঘটনা এই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ তাদের পছন্দের ইঙ্গিত দিতে, বাগাড়ম্বরপূর্ণ অবস্থান নিতে বা জনগণের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া সামাল দিতে বাধ্য করেছে। প্রায়শই এ ধরনের সংকট দেশগুলোর পছন্দনীয় নীরব কৌশল অবলম্বনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমানভাবে ভারতকে তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি স্তম্ভ বা মূল খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে ভারতের আঞ্চলিক নেতৃত্ব কেবল প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তান সংঘাত প্রতিবারই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ ভারতবিরোধী মনোভাবাপন্ন করলে বা চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠতার দিকে ঠেলে দিলে তা এই অঞ্চলকে তুলনামূলক অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী।
এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে সমুদ্রকেন্দ্রিক পন্থা এবং কোয়াডের মতো জোটগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই কৌশলে মূলত সমুদ্রপথে চীনের হুমকি মোকাবিলায় মনোনিবেশ করা হয়েছে। এভাবে যুক্তরাষ্ট্র সেই মূল ক্ষেত্রটিকে উপেক্ষা করছে, যেখানে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এরই মধ্যে তুঙ্গে। স্থলসংযোগ, উপ-আঞ্চলিক কূটনীতি, সমুদ্র নিরাপত্তা এবং পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন পাঁচটি দেশের মধ্যে সংকট মোকাবিলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাচ্ছে।
ওয়াশিংটন যদি দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতায় বিনিয়োগ করতে চায়, তাহলে কেবল সরব খেলোয়াড়দেরই নয়, বরং নীরব কৌশলী অর্থাৎ পাঁচটি ‘সুইং স্টেটকেও’ বুঝতে হবে। তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উপেক্ষা করলে দক্ষিণ এশিয়ার ভঙ্গুর ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যার পরিণতির ফল এই উপমহাদেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে।
আটলান্টিক কাউন্সিল থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আবারও কাশ্মীর ইস্যুতে সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হুমকি শেষ পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যতম ভয়ংকর আকাশযুদ্ধে গড়ায়। তবে চার দিনের মাথায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে উত্তেজনা খানিকটা প্রশমিত হয়েছে। দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সরাসরি লড়াইয়ের বাইরে সুপ্ত অথচ সমান গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এই পরিবর্তনের ক্ষেত্র ভারত-পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো।
এই দেশগুলো হলো—বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান এবং মালদ্বীপ। এই দেশগুলোর কোনোটির কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র নেই। দেশগুলো এই সংকটে কেবল নীরব দর্শক নয়, বরং তারা কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আঞ্চলিক ধাক্কার প্রতিক্রিয়ায় দেশগুলো এখন নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি নতুন করে সাজাতে পারে। এই দেশগুলোরই কিতাবি নাম দেওয়া যেতে পারে ‘সুইং স্টেট।’ ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতির আগেই এসব দেশের দিকে অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
ভারত-পাকিস্তান সংকটকে দীর্ঘদিন ধরে কেবল দ্বিপক্ষীয় ইস্যু হিসেবেই দেখা হয়েছে। ঐতিহাসিক ক্ষোভ আর পারমাণবিক প্রতিরোধের (ডিটারেন্ট) মধ্যে এটিকে সীমাবদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে, প্রতিটি সংকটই—হোক তা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা বা কাশ্মীর নিয়ে বর্তমান উত্তেজনা—কিছু না কিছু ধারাবাহিক প্রভাব তৈরি করে। এসব প্রভাব অঞ্চলের ছোট, পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন দেশগুলোর কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত অবস্থানকে পরীক্ষার মুখে ফেলে দেয়। বিশেষ করে এবার ঝুঁকি বেশি। কারণ, এই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ আরও বেশি হিসাব করে এগোতে হচ্ছে। কারণে এই অঞ্চলে চীন এখন ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের একটি কেন্দ্রীয় অংশ উঠেছে।
বাংলাদেশ
ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতের আলোকে এই অঞ্চলে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর থেকে দেশটি অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুরতা ও বৈদেশিক নীতি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
নাগরিক সমাজ, জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী এবং ইসলামপন্থী শক্তিগুলো ভারতের প্রতি সন্দিহান হয়ে উঠছে। তারা মনে করে, ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। বিশেষ করে, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা নিয়ে তাদের এই ধারণা তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে, জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়—পূর্ববর্তী সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা থেকে শুরু করে নির্বিচারে গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা/নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ প্রতিবাদকারী নিহত হয়েছেন।
জনগণ ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব তীব্র হওয়ায় ঢাকা আরও স্বাধীন বা এমনকি (ভারত) বিরোধী অবস্থান নিতে বাধ্য হতে পারে। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছে এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তার জন্য জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডর (চিকেন’স নেক) ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। এটিকে মানবিক উদ্যোগ বলা হলেও ভারতীয় বিশ্লেষকেরা এই পদক্ষেপকে ভারতের কৌশলগত অঙ্গনে বাইরের হস্তক্ষেপের বিস্তৃত প্রবণতার অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।
ভারতের জন্য এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময়। বাংলাদেশ এমন এক পরিস্থিতিতে রয়েছে, যেখানে দেশটি চীনের সাহায্যে অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিতে পারে, পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে এবং নিরপেক্ষতাকেই সার্বভৌমত্ব হিসেবে তুলে ধরতে পারে। গত সপ্তাহে ভারত অবৈধ অভিবাসী ও রোহিঙ্গা আখ্যা দিয়ে অন্তত ২৬০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে (পুশ ইন) দিয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের একতরফা পদক্ষেপ দেখে ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত চীনের অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহের চেষ্টা করতে পারে।
দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ যদি বহুমুখী অংশীদারত্ব এবং ‘সফট ব্যালান্সিং’—এর মাধ্যমে কৌশলগত আত্মনিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে, তাহলে বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত হিসাব-নিকাশ মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। বিশেষ করে, মিয়ানমারের পাশে বাংলাদেশের অবস্থান এই পরিবর্তনকে আরও বেশি প্রভাবিত করবে এই অঞ্চলকে।
শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কায় কাশ্মীর সংকট অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুরতা ও আঞ্চলিক নীতি পরিবর্তনের দ্বৈত চাপের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। এখনো অর্থনৈতিক সংকটের ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চুক্তির আওতায় প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ফলে কলম্বোর অন্য কোনো দেশের সঙ্গে প্রকাশ্য মৈত্রীতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ সীমিত। তবুও সংকটের মুহূর্তে ভারতের অনমনীয়তা—যেমন নিরাপত্তা অংশীদারত্ব জোরদার করা এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী ন্যারেটিভ ব্যবহার করা শ্রীলঙ্কার ওপর ভারতের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের চাপ তৈরি করে।
একই সময়ে, চীন হামবানটোটা বন্দর থেকে কলম্বো পোর্ট সিটি পর্যন্ত বিস্তৃত নানা প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে গভীরভাবে যুক্ত। ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা হয়তো আঞ্চলিক সংহতি আশা করেন, কিন্তু শ্রীলঙ্কার জন্য ভারতের প্রতি অতিমাত্রায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া দেশটির কৌশলগত ভারসাম্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। ভারত ও চীনের মধ্যে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখা শ্রীলঙ্কার জন্য কেবল উত্তম কূটনৈতিক পছন্দই নয়, বরং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পন্থা।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্রীলঙ্কার মুসলিম জনগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ সংবেদনশীলতা। তারা এই অঞ্চলে মুসলিমবিরোধী মনোভাবের প্রতি সংবেদনশীল। ভারতে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা অনুসরণ করে। বিজেপির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) নামে কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভারতের মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্য এবং নরেন্দ্র মোদি নিজেও আরএসএসের বর্তমান বা সাবেক সদস্য।
শ্রীলঙ্কার সিংহলি বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ‘বোধু বালা সেনার’ নেতা বলেছেন, তাঁরা দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামি চরমপন্থা মোকাবিলায় আরএসএসের সঙ্গে ‘হিন্দু-বৌদ্ধ শান্তি অঞ্চল’ গঠনের সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। অবশ্য আরএসএস এই দাবি অস্বীকার করেছে। বৌদ্ধ ও হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এই ক্রমবর্ধমান সখ্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ধারণা তৈরি করছে যে, এই অঞ্চলে সংখ্যাগুরুবাদী মতাদর্শের প্রাধান্য তৈরি করে বাকিদের ‘অপর’ করে ফেলার বিষয়টি আঞ্চলিকভাবে সমন্বয় করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে কাশ্মীর সংকটের সময় হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতের সঙ্গে প্রকাশ্য জোট কলম্বোর সীমিত কৌশলগত পরিধিকে আরও সংকুচিত করবে। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ উত্তেজনাও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
নেপাল
নেপাল দীর্ঘদিন ধরে ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে মোটর ভেহিক্যালস এগ্রিমেন্টের মতো উপ-আঞ্চলিক কাঠামো এবং চীনের সঙ্গে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের রেল কূটনীতি ব্যবহার করে নেপাল তার নির্ভরতায় বৈচিত্র্য এনেছে। তবুও সংকটের সময় ভারতের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা সংবেদনশীলতা এই ভারসাম্য বজায় রাখাকে আরও কঠিন করে তোলে।
কাঠমান্ডু খুব ভালো করেই জানে, তারা যখন পরম সার্বভৌমত্ব দাবি করে তখন কী ঘটে। ২০১৫ সালে নেপাল নতুন সংবিধান গ্রহণ করে। সে সময় ভারত এর বিরোধিতা করে। দিল্লি এই অভিযোগ তোলে যে, সংবিধানে মধেসি জনগোষ্ঠীর উদ্বেগ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। মধেসি জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব গভীর। এরপরই দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে কয়েক মাসব্যাপী অবরোধ শুরু হয়। যদিও ভারত এই অস্থিরতার সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকার করে। তবে নেপালে এটিকে ব্যাপকভাবে ভারতের জবরদস্তি হিসেবেই দেখা হয়।
মধেশী বা মধেসি জাতি নেপালের দক্ষিণভাগে ও বিহারের উত্তরাংশের সমতলে বসবাসকারী মানুষদের বলা হয়। ভারত ও নেপালের যে অংশে মধেসি জাতি বাস করে একত্রে সেই অঞ্চলকে মধেশ বলা হয়। মধেশ শব্দটি মধ্যদেশ শব্দের অপভ্রংশ রূপ। নেপাল ও বিহারের মধেসিদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বা শারীরিক গঠনগত কোনো তফাৎ নেই।
ভারত এর আগে ১৯৮৯ সালে চীনের কাছ থেকে অস্ত্র কেনার প্রতিক্রিয়ায় নেপালের ওপর আনুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছিল। এটি প্রত্যাশিতই ছিল। ২০১৫ সালের অবরোধ জ্বালানি ও ওষুধের ব্যাপক সংকট তৈরি করেছিল। তখনই নেপালজুড়ে ভারতবিরোধী জাতীয়তাবাদী মনোভাবের ঢেউ শুরু হয়। সম্প্রতি, ভারত ও নেপাল মানচিত্র সংক্রান্ত বিরোধে জড়িয়েছে। ২০১৯ সালে ভারত এক নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করে, যেখানে বিতর্কিত অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পদক্ষেপ কূটনৈতিক উত্তেজনা উসকে দেয় এবং নেপালের পার্লামেন্ট নিজস্ব সংশোধিত মানচিত্র প্রকাশ করে। এটি নেপালের পক্ষ থেকে সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এক দৃঢ় পদক্ষেপ ছিল।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার এই মুহূর্তে কাঠমান্ডুর সমদূরত্ব বজায় রাখার প্রচেষ্টা নয়াদিল্লি ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে দেখতে পারে। পররাষ্ট্রনীতি যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং দেশে জাতীয়তাবাদ বাড়ছে, তখন নেপালের কৌশলগত পন্থা অবলম্বনের সুযোগ সংকুচিত হতে পারে। যে অস্পষ্টতা একসময় দেশটিকে সুবিধা দিত—যেমন অবকাঠামো চুক্তি, সীমান্ত বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক বার্তাগুলোর ভারসাম্য, তা ক্রমবর্ধমান মেরুকৃত আঞ্চলিক পরিবেশে দায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে সরকার স্পষ্ট ও দৃশ্যমান অবস্থান নিতে বাধ্য হতে পারে।
ভুটান
ভুটান ভারতের সঙ্গেই থাকবে বলে অনুমান করা যায়। দুই দেশের ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। দেশ দুটি ১৯৪৯ সালে মৈত্রী চুক্তি করে। তবুও, পশ্চিম ফ্রন্টে ভারতের সামরিক মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হওয়ায় উত্তরে মনোযোগের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া, আগে থেকেই সেখানে চীনের আঞ্চলিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে, ২০১৭ সালে দোকলাম অচলাবস্থার পর এটি আরও প্রকট হয়েছে। দোকলামে ভারত ও চীনের সৈন্যরা টানা ৭৩ দিন মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। বেইজিং ভারত, ভুটান ও চীনের সংযোগস্থলের কাছাকাছি কৌশলগত সংবেদনশীল এলাকায় একটি সড়ক নির্মাণ করেছিল। এই এলাকাটি চীন ও ভুটান উভয়ই দাবি করে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
থিম্পুর পররাষ্ট্রনীতি সতর্ক মনে হলেও বাস্তবতা আরও জটিল। তবে এই চাপ প্রশমনে ভুটান ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। দেশটি ন্যূনতম কূটনীতি এবং ধীর গতির রক্ষণশীল নীতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অবস্থান নির্ধারণ করে। কাশ্মীরের মতো সংকট ভুটানের পররাষ্ট্র নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন না আনলেও, থিম্পুর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। যার ফলে, দেশটি নীরবে তার কৌশলগত পরিবেশ পুনর্মূল্যায়ন করতে পারে। বিশেষ করে, যখন ভারতের আঞ্চলিক সক্ষমতা সীমিত হচ্ছে এবং উত্তরে চীনের তৎপরতা অব্যাহতভাবে বাড়ছে।
মালদ্বীপ
মালদ্বীপে কাশ্মীর সংকট ইসলামপন্থী ও রক্ষণশীল রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ভারতবিরোধী প্রতিক্রিয়া আবারও উসকে দিতে পারে। বিশেষ করে, যখন নয়াদিল্লি ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি ব্যাপক করার চেষ্টা করছে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ২০২৩ সালের নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারের কল্যাণেই জয়ী হন। তিনি মালদ্বীপে ভারতীয় সামরিক উপস্থিতিকে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। মুইজ্জু এরপর থেকে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন দিকে চালিত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের অনুরোধও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
যদিও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি ভারত সফরের মাধ্যমে অবস্থান কিছুটা নমনীয় করেছেন। তবে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা, বিশেষ করে রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যুক্ত যারা, তারা এখন কাশ্মীর সংঘাতকে উপলক্ষ করে আবারও ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়িয়ে তুলতে পারে। তারা এই সংকটকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর অভিযানের অংশ হিসেবে দেখাতে পারে। যেখানে মালদ্বীপের জনসংখ্যার বেশির ভাগই মুসলিম।
একই সময়ে, চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং ভারতের সঙ্গে উন্নয়ন অংশীদারত্ব মালদ্বীপকে একটি জটিল পরিস্থিতিতে ফেলেছে। দেশটির কৌশল মূলত আঞ্চলিক শক্তিগুলোর স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং জলবায়ু সুরক্ষায় নেতৃত্ব তৈরি করার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সংঘাত সেই সুযোগকে সংকুচিত করতে পারে।
চাপের মুখে কৌশলগত উপায়
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের বিপরীতে এই দেশগুলোর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়াকে একটি সাধারণ কৌশলের আলোকে তুলে ধরা যায়। সেটি হলো—ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান। এই পাঁচটি ‘সুইং স্টেট’ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘সুচিন্তিত অস্পষ্টতার’ শিল্পে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। তারা একাধিক শক্তির—ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র—কাছ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা চায়, তবে কোনো জোটে আবদ্ধ হতে চায় না। এটি তাদের সর্বোচ্চ আত্মনিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে এবং বিদেশি সাহায্য নির্ভরতা, সামরিক চাপ বা অবকাঠামোগত জটিলতার ফাঁদে পড়া এড়াতে সাহায্য করে।
কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সংকট এই সম্পর্ক কাঠামোতে চাপ সৃষ্টি করে পরীক্ষায় ফেলেছে। প্রতিটি ঘটনা এই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ তাদের পছন্দের ইঙ্গিত দিতে, বাগাড়ম্বরপূর্ণ অবস্থান নিতে বা জনগণের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া সামাল দিতে বাধ্য করেছে। প্রায়শই এ ধরনের সংকট দেশগুলোর পছন্দনীয় নীরব কৌশল অবলম্বনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমানভাবে ভারতকে তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি স্তম্ভ বা মূল খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে ভারতের আঞ্চলিক নেতৃত্ব কেবল প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তান সংঘাত প্রতিবারই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ ভারতবিরোধী মনোভাবাপন্ন করলে বা চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠতার দিকে ঠেলে দিলে তা এই অঞ্চলকে তুলনামূলক অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী।
এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে সমুদ্রকেন্দ্রিক পন্থা এবং কোয়াডের মতো জোটগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই কৌশলে মূলত সমুদ্রপথে চীনের হুমকি মোকাবিলায় মনোনিবেশ করা হয়েছে। এভাবে যুক্তরাষ্ট্র সেই মূল ক্ষেত্রটিকে উপেক্ষা করছে, যেখানে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এরই মধ্যে তুঙ্গে। স্থলসংযোগ, উপ-আঞ্চলিক কূটনীতি, সমুদ্র নিরাপত্তা এবং পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন পাঁচটি দেশের মধ্যে সংকট মোকাবিলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাচ্ছে।
ওয়াশিংটন যদি দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতায় বিনিয়োগ করতে চায়, তাহলে কেবল সরব খেলোয়াড়দেরই নয়, বরং নীরব কৌশলী অর্থাৎ পাঁচটি ‘সুইং স্টেটকেও’ বুঝতে হবে। তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উপেক্ষা করলে দক্ষিণ এশিয়ার ভঙ্গুর ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যার পরিণতির ফল এই উপমহাদেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে।
আটলান্টিক কাউন্সিল থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
ভারতের প্রস্তাবিত চার লেনের শিলং-শিলচর মহাসড়কটি এনএইচ-৬ (মেঘালয়, আসাম ও মিজোরামকে সংযোগকারী মহাসড়ক) ধরে মওলিনখুং (মেঘালয়) থেকে পঞ্চগ্রাম (আসাম) পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এটিই এই অঞ্চলের প্রথম উচ্চ-গতির করিডর প্রকল্প। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুসারে, শিলং-শিলচর মহাসড়কটি মিয়ানমারের কালাদান...
২ ঘণ্টা আগেতবে পাকিস্তানের দাবি নিশ্চিত হলেও এটি রাফাল বা অন্যান্য পশ্চিমা বিমানের ওপর চীনা জে-১০ সি’র শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করবে না। কারণ, পশ্চিমা বিমানগুলো সাধারণত আরও বিভিন্ন ধরনের মিশনে অংশ নিতে সক্ষম। তা সত্ত্বেও, বিশ্বজুড়ে সামরিক কর্মকর্তারা এই ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য তৎপর হয়েছেন। অনেক দেশ নিজেদের যুদ্ধ..
১ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্র কেন আগে এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিল? ভারতের মতো একটি সার্বভৌম দেশ কেন তৃতীয় পক্ষকে নিজের পক্ষ থেকে কথা বলার সুযোগ দিল?
৩ দিন আগেআন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত সপ্তাহে পাকিস্তানকে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা অনুমোদন করেছে। এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে ভারত। কারণ, সে সময় দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে সামরিক সংঘাত চলছিল। পরে হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।
৩ দিন আগে