আমিনুল ইসলাম নাবিল
চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশের পরিবেশবিষয়ক গবেষক মাহমুদা মিতি ব্রিটেনে অনুষ্ঠেয় এক কনফারেন্সে যোগদানের আমন্ত্রণ পান। তাৎক্ষণিক তিনি ব্রিটিশ ভিসার জন্য আবেদন করেন। সব প্রক্রিয়া শেষে তিনি যখন দূতাবাস থেকে তাঁর পাসপোর্টটি হাতে পান, তত দিনে কনফারেন্স শেষ হওয়ার প্রায় সাত দিন অতিবাহিত হয়েছে। মাহমুদা মিতি ১৩ জুলাই তাঁর পাসপোর্টের কাগজপত্র হাতে পেয়ে লক্ষ্য করেন, তাঁর ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল ৩ জুলাই, সম্মেলন শুরুর ঠিক একদিন আগে। কিন্তু এটি দূতাবাসের অফিসেই ১০ দিন আটকে ছিল। এমন ভোগান্তিতে এখন শুধু বাংলাদেশের মিতিই নন, এশিয়ার দেশগুলোর অনেকেই পড়ছেন। এর কারণ হিসেবে সামনে আসছে জনবল সংকট, শিক্ষার্থী ভিসার চাপসহ নানা বিষয়।
পশ্চিমা দূতাবাসের দীর্ঘসূত্রতায় এশীয়দের ভ্রমণের যে ভোগান্তি, সে বিষয়ে সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট। এতে মাহমুদা মিতি ছাড়াও আরও কয়েকজনের ভোগান্তির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জার্মান ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া শারমিন রহমান নামের এক শিক্ষার্থী ২০২১ সালের জুনে ভিসার আবেদন করেন। কিন্তু আগস্ট মাসে এসে তাঁর কাছে দূতাবাস থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়। এর পর ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে লেগে যায় আরও তিন মাস। ভিসা প্রদানের এই দীর্ঘসূত্রতার কারণে তাঁর শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হয়।
আরেক বাংলাদেশির ভোগান্তির চিত্র উঠে এসেছে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে। ব্রিটেনে প্রশিক্ষণ নেওয়া ওই ব্যক্তির নাম লুবাব মনির; পেশায় আইনজীবী। গত আগস্টে এথেন্সে এক বন্ধুর বিয়েতে যোগদানের কথা ছিল তাঁর। এথেন্সে যাওয়ার আগে তিনি ইউরোপ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু ভিসা জটিলতায় তিনি তাঁর পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হন। যখন তিনি ভিসার আবেদন করেন, তখনই তাঁকে হোটেল ও ফ্লাইট বুকিং দিতে বলা হয়। এমনকি বিমা নেওয়ার কথাও বলা হয়, যা অফেরতযোগ্য। লুবাব মনির বলেন, ‘বাজে বিষয় হচ্ছে, দূতাবাসগুলো আবেদনকারীদের পাসপোর্ট ঝুলিয়ে রাখে।’
জাপান, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়া এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের নাগরিকেরাই যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডাসহ শেনজেনভুক্ত দেশগুলোয় ভিসা পেতে এমন জটিলতার মুখে পড়েন। ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়া কষ্টকর, সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং কিছু ক্ষেত্রে অপমানজনকও হয়ে থাকে।
শেনজেন অঞ্চল হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৬টি দেশ নিয়ে তৈরি ব্লক, যেখানকার অধিবাসীরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভিসামুক্ত যাতায়াত করতে পারেন। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে—অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, ইতালি, লাটভিয়া, লিচটেনস্টেইন, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড।
ইকোনমিস্ট বলছে, তিন সপ্তাহের মধ্যে ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাকে ‘মানদণ্ড’ নির্ধারণ করলেও এখন ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কমপক্ষে সাত সপ্তাহ সময় নেয় ব্রিটেন। থাইল্যান্ডের নাগরিকদের ক্ষেত্রে কানাডার ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়া ৯৩ দিন পর্যন্ত চলে। আর বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ১২৯ দিন। তবে ভিসা প্রদানে দীর্ঘসূত্রতার ঘটনা সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে টুরিস্ট ভিসা পেতে ২৪ মাসেরও বেশি সময় লেগে যায়। আর স্টুডেন্ট ভিসা পেতে সময় লাগে ১৫ মাস। আর প্রশিক্ষিত শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ভিসা পাওয়াই দুরূহ, ২০২৪ সালের আগে ভিসা পাওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে।
এদিকে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস থেকে গত ১ আগস্ট ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানতে চাওয়া হয় যে, ভিসা নিয়ে কারও কোনো প্রশ্ন আছে কিনা। জুবায়ের জামান নামের একজন সেখানে অনুরোধ করেছেন, তিনি ২৪ জুন ভিসা ইন্টারভিউ দিয়েছেন। তাঁকে ভিসা কর্মকর্তা ভিসা অনুমোদনের কথা জানিয়ে সবুজ লিফলেট দিয়েছেন। কিন্তু পরে তাঁকে জানানো হয়, তিনি এপি; অর্থাৎ, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ প্রসেসে রয়েছেন। অথচ তাঁর ফ্লাইট ছিল, ১ আগস্ট, যা তিনি মিস করতে বাধ্য হয়েছেন।
ভিসা প্রদানের এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার জন্য অবশ্য করোনা মহামারি ও এর পরবর্তী ভ্রমণ বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আনছে পশ্চিমা দূতাবাসগুলো। দূতাবাসগুলো বলছে, দূতাবাসের কর্মকর্তারা মহামারির সময়ে নিজ দেশে চলে আসেন। শূন্য পদগুলোর অনেকগুলোতেই এখনো কাউকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
মার্কিন দূতাবাস জানায়, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সারা বিশ্বেই শিক্ষার্থী বিনিময় ব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, চলতি বছর দূতাবাসের কনস্যুলেটগুলোতে বেশিসংখ্যক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং প্রশাসনিক কাজে সহায়তার জন্য তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ইউরোপের এক কূটনীতিক বলেন, শূন্য পদগুলো পূর্ণ করা কঠিন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই পরিস্থিতি নিরসনে এক দশক লেগে যেতে পারে।
করোনা মহামারি-পরবর্তী সময়ে ভ্রমণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অন্য কিছু বিষয়ের কারণেও ভিসা জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রীষ্মে ভ্রমণের ব্যস্ত সূচির পাশাপাশি এ সময়টাতে শিক্ষার্থী ভিসার চাপও বেড়েছে। দুই বছর পর এ সময়টাতে অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ফিরছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছরের জুন থেকে আগস্ট সময়টাতে ভারতের দূতাবাসের কনস্যুলেটগুলো অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য বেশি আবেদন করেছে। অনেক দূতাবাসে স্টুডেন্ট ভিসাগুলো বেশি যাচাই-বাছাই করা হয়। কারণ, স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে প্রায়ই জালিয়াতি হয়। ফলে ভ্রমণ ভিসার চেয়ে শিক্ষার্থী ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়া করতে বেশি সময় লাগে।
ভূ-রাজনীতিও ভিসা জটিলতার বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা আফগানিস্তান থেকে সরে আসে। তখন দূতাবাসগুলো আফগানদের দেশত্যাগে সহায়তা করতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়। এর পর ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরু হলে অনেক কনস্যুলেট কর্মকর্তাকে শরণার্থীদের ভিসা নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এক ব্রিটিশ কূটনীতিক স্বীকার করে নিয়েছেন, এর ফলে পুরো ব্যবস্থার গতি ধীর হয়েছে। এ ছাড়া ব্রেক্সিট ইস্যুও এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। যখন থেকে ইউরোপ থেকে অবাধ চলাচল বন্ধ হয়, তখন থেকে শ্রমিকদের জন্য পুরো বিশ্বের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ব্রিটেনকে। তাদের প্রত্যেকেরই এখন ভিসার দরকার। ফলে চাপ বেড়েছে বহুগুণ।
ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়ার এমন জটিলতায় একদিকে যেমন পশ্চিমা দেশগুলোর মানুষেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে যারা ভিসার আবেদন করছেন, তাঁরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কমসংখ্যক ভিসা অনুমোদন করা, মানে কমসংখ্যক ভ্রমণকারী। আর ভ্রমণকারীর সংখ্যা কমে আসা মানে হোটেল রুম ও রেস্টুরেন্ট খালি পড়ে থাকা। ফলে পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
চলতি বছর পশ্চিমা দূতাবাসগুলোর ভিসা প্রদানে এমন দীর্ঘসূত্রতায় বেশ ভোগান্তিতেই পড়েছে এশিয়ার দেশগুলো। এশিয়ার দেশগুলো থেকে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মানুষ পশ্চিমা দেশগুলোতে যায়। ২০১৯ সালে ২৪ লাখ ভিসার অনুমোদন দিয়েছিল ব্রিটেন, এর অর্ধেকই পেয়েছিল ভারত ও চীন। একই বছর ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের পাঁচটি কনস্যুলেটে ৮ লাখ ৩৯ হাজার ৫০৪টি ভিসার অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু চলতি বছর অনেকেই ভিসা জটিলতায় পড়েছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব সমস্যা সমাধানের একটি উপায়ও বলে দেওয়া হয়েছে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, ভ্রমণের ক্ষেত্রে নীতিমালা সহজ করতে হবে। দীর্ঘ সময়ের জন্য ভিসা প্রদান বন্ধ রাখতে হবে (যুক্তরাষ্ট্র এটি অনুসরণ করে থাকে)। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের মতো অন্যরাও যেন সুবিধা ভোগ করতে পারে, সে জন্য ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের আওতায় আরও দেশকে যুক্ত করতে হবে। তবে এ পদক্ষেপগুলো রাজনৈতিকভাবে নেওয়া কঠিন। কারণ, কিছু লোক এর অপব্যবহার করে। তাই এমন সম্ভাবনা কম। এশিয়ার পর্যটক এবং শিক্ষার্থীরা পশ্চিমা দেশগুলো ছাড়া অন্য দেশগুলোকে বেছে নিতে পারেন। এতে যেসব দেশ স্বাগত জানাতে ব্যর্থ হচ্ছে, তারাই শেষ পর্যন্ত হেরে যাবে।
চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশের পরিবেশবিষয়ক গবেষক মাহমুদা মিতি ব্রিটেনে অনুষ্ঠেয় এক কনফারেন্সে যোগদানের আমন্ত্রণ পান। তাৎক্ষণিক তিনি ব্রিটিশ ভিসার জন্য আবেদন করেন। সব প্রক্রিয়া শেষে তিনি যখন দূতাবাস থেকে তাঁর পাসপোর্টটি হাতে পান, তত দিনে কনফারেন্স শেষ হওয়ার প্রায় সাত দিন অতিবাহিত হয়েছে। মাহমুদা মিতি ১৩ জুলাই তাঁর পাসপোর্টের কাগজপত্র হাতে পেয়ে লক্ষ্য করেন, তাঁর ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল ৩ জুলাই, সম্মেলন শুরুর ঠিক একদিন আগে। কিন্তু এটি দূতাবাসের অফিসেই ১০ দিন আটকে ছিল। এমন ভোগান্তিতে এখন শুধু বাংলাদেশের মিতিই নন, এশিয়ার দেশগুলোর অনেকেই পড়ছেন। এর কারণ হিসেবে সামনে আসছে জনবল সংকট, শিক্ষার্থী ভিসার চাপসহ নানা বিষয়।
পশ্চিমা দূতাবাসের দীর্ঘসূত্রতায় এশীয়দের ভ্রমণের যে ভোগান্তি, সে বিষয়ে সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট। এতে মাহমুদা মিতি ছাড়াও আরও কয়েকজনের ভোগান্তির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জার্মান ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া শারমিন রহমান নামের এক শিক্ষার্থী ২০২১ সালের জুনে ভিসার আবেদন করেন। কিন্তু আগস্ট মাসে এসে তাঁর কাছে দূতাবাস থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়। এর পর ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে লেগে যায় আরও তিন মাস। ভিসা প্রদানের এই দীর্ঘসূত্রতার কারণে তাঁর শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হয়।
আরেক বাংলাদেশির ভোগান্তির চিত্র উঠে এসেছে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে। ব্রিটেনে প্রশিক্ষণ নেওয়া ওই ব্যক্তির নাম লুবাব মনির; পেশায় আইনজীবী। গত আগস্টে এথেন্সে এক বন্ধুর বিয়েতে যোগদানের কথা ছিল তাঁর। এথেন্সে যাওয়ার আগে তিনি ইউরোপ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু ভিসা জটিলতায় তিনি তাঁর পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হন। যখন তিনি ভিসার আবেদন করেন, তখনই তাঁকে হোটেল ও ফ্লাইট বুকিং দিতে বলা হয়। এমনকি বিমা নেওয়ার কথাও বলা হয়, যা অফেরতযোগ্য। লুবাব মনির বলেন, ‘বাজে বিষয় হচ্ছে, দূতাবাসগুলো আবেদনকারীদের পাসপোর্ট ঝুলিয়ে রাখে।’
জাপান, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়া এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের নাগরিকেরাই যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডাসহ শেনজেনভুক্ত দেশগুলোয় ভিসা পেতে এমন জটিলতার মুখে পড়েন। ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়া কষ্টকর, সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং কিছু ক্ষেত্রে অপমানজনকও হয়ে থাকে।
শেনজেন অঞ্চল হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৬টি দেশ নিয়ে তৈরি ব্লক, যেখানকার অধিবাসীরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভিসামুক্ত যাতায়াত করতে পারেন। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে—অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, ইতালি, লাটভিয়া, লিচটেনস্টেইন, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড।
ইকোনমিস্ট বলছে, তিন সপ্তাহের মধ্যে ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাকে ‘মানদণ্ড’ নির্ধারণ করলেও এখন ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কমপক্ষে সাত সপ্তাহ সময় নেয় ব্রিটেন। থাইল্যান্ডের নাগরিকদের ক্ষেত্রে কানাডার ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়া ৯৩ দিন পর্যন্ত চলে। আর বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ১২৯ দিন। তবে ভিসা প্রদানে দীর্ঘসূত্রতার ঘটনা সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে টুরিস্ট ভিসা পেতে ২৪ মাসেরও বেশি সময় লেগে যায়। আর স্টুডেন্ট ভিসা পেতে সময় লাগে ১৫ মাস। আর প্রশিক্ষিত শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ভিসা পাওয়াই দুরূহ, ২০২৪ সালের আগে ভিসা পাওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে।
এদিকে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস থেকে গত ১ আগস্ট ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানতে চাওয়া হয় যে, ভিসা নিয়ে কারও কোনো প্রশ্ন আছে কিনা। জুবায়ের জামান নামের একজন সেখানে অনুরোধ করেছেন, তিনি ২৪ জুন ভিসা ইন্টারভিউ দিয়েছেন। তাঁকে ভিসা কর্মকর্তা ভিসা অনুমোদনের কথা জানিয়ে সবুজ লিফলেট দিয়েছেন। কিন্তু পরে তাঁকে জানানো হয়, তিনি এপি; অর্থাৎ, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ প্রসেসে রয়েছেন। অথচ তাঁর ফ্লাইট ছিল, ১ আগস্ট, যা তিনি মিস করতে বাধ্য হয়েছেন।
ভিসা প্রদানের এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার জন্য অবশ্য করোনা মহামারি ও এর পরবর্তী ভ্রমণ বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আনছে পশ্চিমা দূতাবাসগুলো। দূতাবাসগুলো বলছে, দূতাবাসের কর্মকর্তারা মহামারির সময়ে নিজ দেশে চলে আসেন। শূন্য পদগুলোর অনেকগুলোতেই এখনো কাউকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
মার্কিন দূতাবাস জানায়, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সারা বিশ্বেই শিক্ষার্থী বিনিময় ব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, চলতি বছর দূতাবাসের কনস্যুলেটগুলোতে বেশিসংখ্যক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং প্রশাসনিক কাজে সহায়তার জন্য তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ইউরোপের এক কূটনীতিক বলেন, শূন্য পদগুলো পূর্ণ করা কঠিন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই পরিস্থিতি নিরসনে এক দশক লেগে যেতে পারে।
করোনা মহামারি-পরবর্তী সময়ে ভ্রমণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অন্য কিছু বিষয়ের কারণেও ভিসা জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রীষ্মে ভ্রমণের ব্যস্ত সূচির পাশাপাশি এ সময়টাতে শিক্ষার্থী ভিসার চাপও বেড়েছে। দুই বছর পর এ সময়টাতে অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ফিরছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছরের জুন থেকে আগস্ট সময়টাতে ভারতের দূতাবাসের কনস্যুলেটগুলো অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য বেশি আবেদন করেছে। অনেক দূতাবাসে স্টুডেন্ট ভিসাগুলো বেশি যাচাই-বাছাই করা হয়। কারণ, স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে প্রায়ই জালিয়াতি হয়। ফলে ভ্রমণ ভিসার চেয়ে শিক্ষার্থী ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়া করতে বেশি সময় লাগে।
ভূ-রাজনীতিও ভিসা জটিলতার বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা আফগানিস্তান থেকে সরে আসে। তখন দূতাবাসগুলো আফগানদের দেশত্যাগে সহায়তা করতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়। এর পর ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরু হলে অনেক কনস্যুলেট কর্মকর্তাকে শরণার্থীদের ভিসা নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এক ব্রিটিশ কূটনীতিক স্বীকার করে নিয়েছেন, এর ফলে পুরো ব্যবস্থার গতি ধীর হয়েছে। এ ছাড়া ব্রেক্সিট ইস্যুও এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। যখন থেকে ইউরোপ থেকে অবাধ চলাচল বন্ধ হয়, তখন থেকে শ্রমিকদের জন্য পুরো বিশ্বের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ব্রিটেনকে। তাদের প্রত্যেকেরই এখন ভিসার দরকার। ফলে চাপ বেড়েছে বহুগুণ।
ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়ার এমন জটিলতায় একদিকে যেমন পশ্চিমা দেশগুলোর মানুষেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে যারা ভিসার আবেদন করছেন, তাঁরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কমসংখ্যক ভিসা অনুমোদন করা, মানে কমসংখ্যক ভ্রমণকারী। আর ভ্রমণকারীর সংখ্যা কমে আসা মানে হোটেল রুম ও রেস্টুরেন্ট খালি পড়ে থাকা। ফলে পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
চলতি বছর পশ্চিমা দূতাবাসগুলোর ভিসা প্রদানে এমন দীর্ঘসূত্রতায় বেশ ভোগান্তিতেই পড়েছে এশিয়ার দেশগুলো। এশিয়ার দেশগুলো থেকে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মানুষ পশ্চিমা দেশগুলোতে যায়। ২০১৯ সালে ২৪ লাখ ভিসার অনুমোদন দিয়েছিল ব্রিটেন, এর অর্ধেকই পেয়েছিল ভারত ও চীন। একই বছর ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের পাঁচটি কনস্যুলেটে ৮ লাখ ৩৯ হাজার ৫০৪টি ভিসার অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু চলতি বছর অনেকেই ভিসা জটিলতায় পড়েছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব সমস্যা সমাধানের একটি উপায়ও বলে দেওয়া হয়েছে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, ভ্রমণের ক্ষেত্রে নীতিমালা সহজ করতে হবে। দীর্ঘ সময়ের জন্য ভিসা প্রদান বন্ধ রাখতে হবে (যুক্তরাষ্ট্র এটি অনুসরণ করে থাকে)। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের মতো অন্যরাও যেন সুবিধা ভোগ করতে পারে, সে জন্য ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের আওতায় আরও দেশকে যুক্ত করতে হবে। তবে এ পদক্ষেপগুলো রাজনৈতিকভাবে নেওয়া কঠিন। কারণ, কিছু লোক এর অপব্যবহার করে। তাই এমন সম্ভাবনা কম। এশিয়ার পর্যটক এবং শিক্ষার্থীরা পশ্চিমা দেশগুলো ছাড়া অন্য দেশগুলোকে বেছে নিতে পারেন। এতে যেসব দেশ স্বাগত জানাতে ব্যর্থ হচ্ছে, তারাই শেষ পর্যন্ত হেরে যাবে।
কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর আবারও উঠে এসেছে সেই পুরোনো প্রশ্ন—এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে কি না। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামে একটি সংগঠন। এটি পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই
১৪ ঘণ্টা আগেভারত চলতি মাসে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি স্থগিত করেছে। এই চুক্তির অধীনে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো ভারতের বন্দর ও বিমানবন্দর ব্যবহার করে সারা বিশ্বে পণ্য রপ্তানি করতে পারত। ভারতের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিশাল পোশাক খাতকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই আশঙ্কাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে উত
২ দিন আগেআসিয়ানের কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্র যখন ক্রমবর্ধমান হারে বয়স্ক জনসংখ্যা এবং সংকুচিত কর্মশক্তির সম্মুখীন, তখন এই সমন্বয় আরও গুরুত্বপূর্ণ। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতে এরই মধ্যেই জনমিতিক পরিবর্তন ঘটছে, যা দীর্ঘমেয়াদি দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। বাংলাদেশ বিশাল,
২ দিন আগেএই অবস্থায় বর্তমান তথ্যের ভিত্তিতে, আগামী এক বছরের জন্য মার্কিন মন্দার আশঙ্কা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত রাখা যেতে পারে এবং পরবর্তী চার বছরের জন্য এটি আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও কিছুই নিশ্চিত নয়, তবে আমরা যদি ‘ডাঙায় আটকে পড়ি’ অর্থাৎ মন্দার মধ্যে পড়েই যাই, তবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
২ দিন আগে