Ajker Patrika

কামিনী রায়

সম্পাদকীয়
কামিনী রায়

ব্রিটিশ ভারতে তখন হিন্দু মেয়েদের লেখাপড়া করাকে একরকম গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজ বলে মনে করা হতো। তাই লুকিয়ে-চুরিয়ে বাবা ও স্বল্পশিক্ষত মা ছোট্ট কামিনীকে লেখাপড়ার হাতেখড়ি দিয়েছিলেন। সেই কামিনী রায়ের কথাই বলা হচ্ছে যিনি লিখেছেন, ‘সংশয়ে সংকল্প সদা টলে/ পাছে লোকে কিছু বলে’ কিংবা ‘সকলের তরে সকলে আমরা/ প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।’

১৮৬৪ সালের ১২ অক্টোবর বরিশালের বাকেরগঞ্জের বাসন্ডা গ্রামে জন্ম নেন প্রথিতযশা এই বাঙালি কবি ও নারীবাদী লেখক।

সমাজকর্মীও ছিলেন তিনি। মধ্যবিত্ত শিক্ষিত এক বৈদ্য পরিবারে জন্মেছিলেন কামিনী রায়। ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত তাঁর বাবা চণ্ডীচরণ সেন ছিলেন বিচারক, লেখক ও ব্রাহ্ম সমাজের বিশিষ্ট নেতা। তাই বুঝি লেখাপড়ার মর্মটা বুঝেছিলেন ভালো করেই। একটু দেরিতে হলেও ১২ বছর বয়সে মেয়েকে ভর্তি করেছিলেন কলকাতার এক বোর্ডিং স্কুলে।

শৈশবেই কবিতা আর স্তোত্র আবৃত্তি শিখে ফেলেছিলেন কামিনী রায়। বাসায় মেহমান এলে ডাক পড়ত আবৃত্তি শোনানোর জন্য। মাত্র ৮ বছর বয়স থেকে কবিতা লেখা শুরু করেন তিনি। ১৫ বছর বয়সে, ১৮৮৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আলো ও ছায়া’। মনে করা হয়, তাঁর লেখায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব রয়েছে। তবু কামিনী রায়ের লেখার ঢং যে আলাদা, তা বোঝা যায় তাঁর সাহিত্য পড়লে।

তিনিই প্রথম বাঙালি নারী, যিনি ১৮৮৬ সালে সংস্কৃতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। তাঁকে নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ বললে অত্যুক্তি করা হবে না। তাঁর অনেক প্রবন্ধে সেই ছাপ পাওয়া গেছে। তিনি নারী শ্রম তদন্ত কমিশনের সদস্যও ছিলেন।

কবিতায় মুগ্ধ হয়ে কেদারনাথ রায় বিয়ে করেছিলেন তাঁকে। অথচ বিয়ের পর সংসারকেই কবিতা মেনে ছেড়েছিলেন কবিতা লেখা। একদিন ঘোড়ার গাড়ি উল্টে গিয়ে আঘাত পেয়ে মারা যান কেদারনাথ রায়। কয়েক বছরের মধ্যে কবি হারান দুই সন্তানকেও। স্বজন হারিয়ে যখন কবিতা লেখা শুরু করেন, তখন কামিনী রায়ের রচনাতেও সেই কষ্টের প্রতিচ্ছবি প্রকাশ পায়।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৯ সালে ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ লাভ করেন তিনি। ১৯৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জীবন থেকে অবসর নেন ক্লান্ত কামিনী রায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত