Ajker Patrika

নিষ্ঠায় অবিচল

সম্পাদকীয়
নিষ্ঠায় অবিচল

এ কথা অনেকেই জানেন, তাজউদ্দীন আহমদ ম্যাট্রিক ও আইএ পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান করে নিয়েছিলেন। কিন্তু রাজনীতি এবং সমাজসেবা ছিল তাঁর প্রাণ, ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দিকে এরপর আর তেমন নজর দিতে পারেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স করেছিলেন বটে, কিন্তু এমএ পরীক্ষা দিতে পারেননি। জেলখানা থেকে আইনের ডিগ্রি নিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোগী হিসেবে তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বারবার গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘকাল তিনি কারাগারে কাটান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহযোগী হয়ে তিনি অসহযোগ আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখেন।

তবে তাঁর অমর কীর্তি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন। মুক্তিযুদ্ধের সময় দলের ভেতরে ও বাইরে তিনি নানা ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন। কিন্তু তিনি তাঁর লক্ষ্যে ছিলেন অবিচল।স্বাধীনতা লাভের পর তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারও আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ধ্বংস করার জন্য বহুভাবে চেষ্টা করে। সংগ্রামের একপর্যায়ে আমেরিকা প্রশ্ন তোলে, “স্বাধীনতা চাও, না মুজিবকে চাও?” এর উত্তরে আমি বলেছিলাম, স্বাধীনতাও চাই, মুজিবকেও চাই।’

তবে একাত্তরেই সরকারের মধ্য থেকে এই একই প্রসঙ্গে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল। সরকারের মধ্যে এই কুটিলতার নাটের গুরু ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমদ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মোশতাক আহমদ যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পাকিস্তানের সঙ্গে আপস করতে চেয়েছিলেন। বিশ্বাসঘাতকতার এ খবর জানাজানি হয়ে গেলে তাজউদ্দীন আহমদ কঠোর হন। খন্দকার মোশতাককে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরালেন না বটে, কিন্তু তাঁর সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিলেন। এ কথা খন্দকার মোশতাক ভোলেননি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে হত্যা করার মাধ্যমে মোশতাক প্রমাণ করেছেন, বিশ্বাসঘাতকতাই ছিল তাঁর রাজনীতির মূল সুর।

সূত্র: আনিসুজ্জামান, মহামানবের সাগরতীরে, পৃষ্ঠা ৫৮-৫৯

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত