ইশতিয়াক হাসান

লাউয়াছড়ার জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে ট্রেনটা। জানালা দিয়ে নানা গাছপালা দেখছিলাম আর ট্রেনের শব্দের মধ্যে আলাদা করার চেষ্টা করছিলাম অরণ্যের পশু-পাখির ডাক। হঠাৎ করে মনের পর্দায় ভেসে উঠল বিখ্যাত একটি সিনেমার দৃশ্য, যেটি চিত্রায়িত হয়েছে এই অরণ্যে। হলিউডের ১৯৫৬ সালের ওই দুর্দান্ত ছবির নাম অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ। একই নামের কালজয়ী এক উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয় যেটি।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক। অনেকেই তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন কল্পবিজ্ঞান কাহিনির জনক হিসেবে, তাঁর অসাধারণ সব অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি এখনো আলোড়িত করে পাঠকদের। গল্পটি ফরাসি ঔপন্যাসিক জুল ভার্নের। আজকের এই দিনে, অর্থাৎ ১৮২৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে আসেন তিনি। তাঁরই অমর সৃষ্টি শুরুতে যে উপন্যাসের কথা বলা হয়েছে সেই ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ’ বা ‘আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ’।
জুল ভার্নের জন্ম ব্যস্ত এক ফরাসি বন্দর নঁতে। বলা চলে, এখানে আসা-যাওয়া করা অজস্র জাহাজই অভিযানের প্রতি আগ্রহের জন্ম দেয় বালক জুল ভার্নের মনে । বোর্ডিং স্কুলে পড়ার সময় ছোটগল্প ও কবিতা লেখা শুরু করেন তিনি। আইনজীবী বাবার ইচ্ছা ছেলে তাঁকেই অনুসরণ করবে। অতএব আইন অধ্যয়নের জন্য প্যারিসে পাঠানো হলো জুল ভার্নকে।
তবে পড়াশোনার পাশাপাশি সাহিত্য ও থিয়েটারের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকল ক্রমেই। ১৮৪৯ সালে আইন ডিগ্রি অর্জনের পর জুল ভার্ন নিজের শিল্প-সাহিত্যের প্রতি ঝোঁকের কারণেই রয়ে গেলেন প্যারিসে।
তবে বাবার দিক থেকে আইন পেশায় মনোযোগ দেওয়ার জন্য চাপ বাড়ছিল। ১৮৫২ সালের দিকে বাবার নঁতে ফিরে আইনচর্চা শুরু করার প্রস্তাব নাকচ করে দেন জুল ভার্ন। উল্টো একটি থিয়েটারে স্বল্প বেতনে সেক্রেটারির চাকরি নেন।
জুল ভার্নের জীবনের পরের কাহিনিতে যাওয়ার আগে একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। তখন ক্লাস ফাইভ-সিক্সে পড়ি। আগে বের হওয়া জুল ভার্নের বইগুলোর অনুবাদ ভলিউম আকারে বের করা শুরু করেছে সেবা প্রকাশনী। ঈদের সেলামির টাকা দিয়ে কিনে ফেললাম এ রকম একটি ভলিউম। পাঁচ-পাঁচটি অ্যাডভেঞ্চার ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ছিল। পরের দুই দিন কাটল মোটা ভলিউমটি নিয়েই। নাওয়া-খাওয়া শিকেয় উঠল। মিস্টেরিয়াস আইল্যান্ডের সাবলীল রূপান্তর ‘রহস্যের দ্বীপে’ জুল ভার্নের চরিত্রদের সঙ্গে বেলুনে চেপে হাজির হয়ে গেলাম এক দুর্গম দ্বীপে । আমার চোখের সামনেই যেন দ্বীপের চেহারা পাল্টে দিলেন তাঁরা।
একই সঙ্গে রহস্য, অ্যাডভেঞ্চার আর বিজ্ঞান কল্পকাহিনির আশ্চর্য এক মিশেল বইটি। দ্বীপে টেলিগ্রাফ লাইন বসানো, নিজেরাই কাচ তৈরি করে বাসন বানানো, নৌকা এমনকি জাহাজ তৈরি করার মতো বিষয়গুলো যেন মনের চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। পাশাপাশি দেখা না দেওয়া রহস্যময় এক ব্যক্তির সাহায্য, জলদস্যুদের সঙ্গে লড়াই সবকিছু মিলিয়ে মজে গেলাম। এদিকে ‘বেলুনে পাঁচ সপ্তাহ’ বইয়ে হট এয়ার বেলুনে চেপে আফ্রিকার দুর্গম এলাকা চষে বেড়ানোর সময় রোমাঞ্চে, ভয়ে কাঁটা দিচ্ছিল শরীর।
তারপর অবশ্য একে একে জুল ভার্নের সেবা থেকে বের হওয়া সব কটি বই-ই পড়ে ফেলি। এখন অবশ্য আরও কোনো কোনো প্রকাশনী জুল ভার্নের বই অনুবাদ করা শুরু করেছে। ভারতীয় বিভিন্ন প্রকাশনীর অনুবাদও পাওয়া যায় দোকানে।
যাক, জুল ভার্নের জীবনকাহিনিতে ফিরে যাচ্ছি আবার। ১৮৫৬ সালে হনোরিন দ্যু ভিয়েন নামের এক বিধবা তরুণীর প্রেমে পড়েন। ১৮৫৭ সালে তাঁকে বিয়ে করার পর জুল ভার্ন বুঝতে পারলেন অর্থনৈতিক নিরাপত্তাটা জরুরি। স্টক ব্রোকার হিসেবে কাজ শুরু করলেন। তাই বলে লেখালেখি থেকে দূরে সরে গেলেন না। ১৮৫৭ সালেই প্রথম বই ‘দ্য ১৮৫৭ স্যালন (লা সেলন দ্যু ১৮৫৭)’ প্রকাশিত হয়।
১৮৫৯ সালে, জুল ভার্ন ও তাঁর স্ত্রী ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে প্রথম ভ্রমণ করেন। এটা তাঁর ওপর এতটা প্রভাব বিস্তার করে যে তিনি লেখেন ব্যাকওয়ার্ডস টু ব্রিটেন। যদিও তাঁর মৃত্যুর পর উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। ১৮৬১ সালে দম্পতির একমাত্র সন্তান, মিশেল জঁ পিয়েরে ভার্নের জন্ম হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক হেতজেলের সঙ্গে পরিচয়ই জুল ভার্নের জীবন পাল্টে দিল। বলা চলে, সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর পরিচিতিতেও আছে এই প্রকাশকের বড় ভূমিকা। ১৮৬৩ সালে হেতজেল প্রকাশ করেন জুল ভার্নের ‘ফাইভ উইকস ইন আ বেলুন’। দুর্দান্ত এই অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি পাঠকদের মনে জায়গা করে নেয়। হেতজেলের সঙ্গে প্রতিবছর তাঁর জন্য লেখার চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
১৮৬৪ সালে হেতজেল প্রকাশ করেন জুল ভার্নের আরেক বিখ্যাত বই ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব ক্যাপ্টেন হ্যাটরাস’। একগুঁয়ে ও রোমাঞ্চপ্রেমী এক ক্যাপ্টেনের সঙ্গে দুর্দান্ত এক সাগর অভিযানে পাঠকের বেরিয়ে পড়ার সুযোগ হয় বইটিতে। একই বছর প্রকাশ পায় জুল ভার্নের আরেক দুর্দান্ত উপন্যাস ‘জার্নি টু দ্য সেন্টার অব আর্থ’। পাতালের এই রোমাঞ্চকর অভিযানের কাহিনি সেবা প্রকাশনী থেকে বের হওয়া সাবলীল রূপান্তর ‘পাতাল অভিযান’ পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম বালক বয়সেই।
১৮৬৫ সালটি জুল ভার্নের জন্য আরেকটি মাইলফলক বলতে পারেন। কারণ এ বছরই বের হয় তাঁর দুনিয়া কাঁপানো বই ফ্রম দ্য আর্থ টু মুন বা ‘চাঁদে অভিযান’। মানুষ চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখে ১৯৬৯ সালে। এর ১০৪ বছর আগেই মানুষকে চাঁদে অভিযানে পাঠিয়ে দেন জুল ভার্ন। বলা চলে, সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন তিনি।
ভ্রমণ আর অভিযানের প্রতি আগ্রহ এত প্রবল ছিল জুল ভার্নের যে, একপর্যায়ে একটি জাহাজই কিনে ফেলেন। এই জাহাজের কল্যাণে জুল ভার্ন ও তাঁর স্ত্রী সাগরে চষে বেরিয়ে বড় একটি সময় কাটাতে লাগলেন। বন্দর থেকে বন্দরে, দ্বীপ থেকে দ্বীপে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। এতে নিজের ছোটগল্প আর উপন্যাসের অনেক মাল-মসলাও পেলেন। ১৮৬৭ সালে ভাইয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বেরিয়ে এলেন।
১৮৬৯ সালে প্রকাশিত হয় জুল ভার্নের আরেক অসাধারণ উপন্যাাস ‘টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’। আর এখানেই আবারও একটু স্মৃতিকাতর হয়ে পড়তে হচ্ছে আমাকে।
জুল ভার্নের ওই ভলিউম কেনারও আগের গল্প। সম্ভবত ক্লাস ফোরে পড়ি। আব্বুর স্টিলের আলমারির নিচের অংশটা তখন আমার কাছে রহস্য-রোমাঞ্চের খনিতে প্রবেশের দরজা। গাদাগাদি করে সেখানে রাখা ছিল অনেক বই। নীহাররঞ্জন গুপ্তের ‘কিরীটী রায়ের কাহিনি’, সেবা প্রকাশনীর ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ কিংবা ‘উড়ন্ত সসার’-এর মতো বই, করবেট-এন্ডারসনের রোমাঞ্চকর শিকার কাহিনি কিংবা স্টিভেনসনের ট্রেজার আইল্যান্ডের সঙ্গে পরিচয় এখানেই। একদিন আব্বুর ওই ভান্ডারেই খুঁজে পাই ‘সাগরতলে’ বইটি। অর্থাৎ ‘টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’র সেবা প্রকাশনীর অনুবাদ।
বলা চলে, ‘সাগরতলে’ আমার সাগর সম্পর্কে ধারণটাই পাল্টে দিল। আমি নিশ্চিত আরও অনেক পাঠকের বেলাতেই এটি সত্যি। সাবমেরিন বলে যে জলের তলে বিচরণে সক্ষম আশ্চর্য এক যান আছে তা-ও জানলাম এই বইয়ে। ক্যাপ্টেন নিমোর সঙ্গে পরিচয় হলো। তাঁর সঙ্গে সেই সাবমেরিনে চেপে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম সাগরের তলে। তাঁর সেই রহস্যে মোড়া সাবমেরিন, যেটিকে মানুষ ভেবেছিল বিপজ্জনক এক প্রাণী। সাগরের কত প্রাণীর নাম জানলাম বইটি পড়ে। ক্যাপ্টেন নিমোও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে সাগরে মুক্তা খুঁজলাম! আরও কত কী করলাম!
বলা চলে কোমলে-কঠিন মেশানো আশ্চর্য এক চরিত্র ক্যাপ্টেন নিমো স্থায়ী জায়গা করে নিল আমার বালক মনে, যা অটুট আছে এখনো। অবশ্য পরে রহস্যের দ্বীপে ক্যাপ্টেন নিমো আর নটিলাসের পরিণতির কথা ভাবলে এখনো মন কেঁদে ওঠে।
আবার ফিরে আসা যাক জুল ভার্নের জীবনচক্রে। ১৮৬৯-৭০ সালের দিকে অ্যারাউন্ড দ্য মুন এবং ডিসকভারি অব দ্য আর্থ নামের বই দুটিও প্রকাশিত হয়। তত দিনে জুল ভার্নের বই ফরাসি থেকে ইংরেজিতেও রূপান্তরিত হচ্ছে। বলা চলে লিখেই ভালোভাবে চলতে পারেন তখন।
১৮৭২ সালের শেষের দিকে জুল ভার্নের বিখ্যাত উপন্যাস ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ’ প্রথম প্রকাশিত হয়। ফিলিয়াস ফগের দুঃসাহসিক ভ্রমণ এমন সময়ে পাঠকদের রোমাঞ্চকর এক অভিযানে নিয়ে যায়, যখন ভ্রমণ সহজ এবং লোভনীয় হয়ে উঠছিল। উপন্যাসটি প্রকাশের পর দেড় শ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। তবে এটি এখনো এই একবিংশ শতাব্দীতেও মোহাচ্ছন্ন করে রাখে রোমাঞ্চপ্রেমী পাঠকদের। পাঠক যেন নিজেকে আবিষ্কার করেন ফিলিয়াস ফগের জায়গায়।
থিয়েটার, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রসহ নানা মাধ্যমে উঠে আসে ফগের বিশ্বভ্রমণের গল্প। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৫৬ সালের সেই ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্রটি, যাতে ফিলিয়াস ফগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন অভিনেতা ডেভিড নিভেন। এই ছবির একটি অংশ চিত্রায়িত হয় লাউয়াছড়ার জঙ্গলে।
জুল ভার্নের সাহিত্য রচনা চলতে থাকে। ১৮৮৬ সালে ভাতিজা গেসটন গুলি করেন জুল ভার্নের পায়ে। বাকি জীবনটা খোঁড়া থাকতে হয় তাঁকে। এর মধ্যে মারা যান প্রকাশক হেতজেল। তবে জুল ভার্নের কলম তাতে থেমে গেল না। এইট হান্ড্রেড লিগস অন দ্য আমাজন, দ্য পারচেজ অব দ্য নর্থ পোল, মাস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ড তাঁর হেতজেল পরবর্তী সময়ে লেখা বইগুলো উল্লেখযোগ্য।
এই সুযোগে মাস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ডের ব্যাপারে দু-চারটি কথা না বললেই নয়। অসম্ভব প্রতিভাধর কিন্তু একগুঁয়ে ও অহংকারী এক বিজ্ঞানীর গল্প এটি। আর তাঁর সৃষ্টি জল, স্থল আর আকাশে চলতে সক্ষম অদ্ভুত এক যানের কাহিনি। উপন্যাসের শেষে দেখা যাবে তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ছুটে যাচ্ছেন বজ্রের দিক। পরিণতিটা সম্পর্কে না হয় নাই বললাম।
গোটা জীবনে ৬০টির বেশি উপন্যাস লিখেছেন জুল ভার্ন। সেই সঙ্গে আছে বেশ কিছু নাটক ও ছোট গল্প।
উত্তর ফ্রান্সের শহর অ্যামিয়েন্সে বাড়ি বানিয়ে পাকাপাকিভাবে থাকা শুরু করেন জুল ভার্ন। সেখানেই কাটে জীবনের বাকি দিনগুলো। ১৮৮৮ সালে সেখানকার সিটি কাউন্সিলে কাজ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, ১৯০৫ সালের ২৪ মার্চ অ্যামিয়েন্সেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তবে পাঠক ভুলে যায়নি এই কল্পবিজ্ঞান লেখককে। অনেকেই তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন বিজ্ঞান কল্পকাহিনির জনক হিসেবে। জুল ভার্ন সর্বকালের দ্বিতীয় সর্বাধিক অনূদিত লেখক। যে ভাষায় লিখেছেন তা থেকে অন্য ভাষায় লেখা অনুবাদ হওয়ার দিক থেকে তাঁর ওপরে আছেন কেবল রহস্যকাহিনি লেখিকা আগাথা ক্রিস্টি। জুল ভার্নের কাহিনিগুলো পরের সময়ের লেখক, বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবকদের কল্পনাকে আলোড়িত করেছে।
জুল ভার্নের তৈরি করা ক্যাপ্টেন নিমো, ফিলিয়াস ফগ, ক্যাপ্টেন হ্যাটরাসসহ শত শত চরিত্র এখনো সতেজ পাঠকের মনে। তাঁদের রোমাঞ্চকর জগতে এখনো বিচরণ করতে ভালোবাসেন পাঠক।
সূত্র: বায়োগ্রাফি ডট কম, উইকিপিডিয়া

লাউয়াছড়ার জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে ট্রেনটা। জানালা দিয়ে নানা গাছপালা দেখছিলাম আর ট্রেনের শব্দের মধ্যে আলাদা করার চেষ্টা করছিলাম অরণ্যের পশু-পাখির ডাক। হঠাৎ করে মনের পর্দায় ভেসে উঠল বিখ্যাত একটি সিনেমার দৃশ্য, যেটি চিত্রায়িত হয়েছে এই অরণ্যে। হলিউডের ১৯৫৬ সালের ওই দুর্দান্ত ছবির নাম অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ। একই নামের কালজয়ী এক উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয় যেটি।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক। অনেকেই তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন কল্পবিজ্ঞান কাহিনির জনক হিসেবে, তাঁর অসাধারণ সব অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি এখনো আলোড়িত করে পাঠকদের। গল্পটি ফরাসি ঔপন্যাসিক জুল ভার্নের। আজকের এই দিনে, অর্থাৎ ১৮২৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে আসেন তিনি। তাঁরই অমর সৃষ্টি শুরুতে যে উপন্যাসের কথা বলা হয়েছে সেই ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ’ বা ‘আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ’।
জুল ভার্নের জন্ম ব্যস্ত এক ফরাসি বন্দর নঁতে। বলা চলে, এখানে আসা-যাওয়া করা অজস্র জাহাজই অভিযানের প্রতি আগ্রহের জন্ম দেয় বালক জুল ভার্নের মনে । বোর্ডিং স্কুলে পড়ার সময় ছোটগল্প ও কবিতা লেখা শুরু করেন তিনি। আইনজীবী বাবার ইচ্ছা ছেলে তাঁকেই অনুসরণ করবে। অতএব আইন অধ্যয়নের জন্য প্যারিসে পাঠানো হলো জুল ভার্নকে।
তবে পড়াশোনার পাশাপাশি সাহিত্য ও থিয়েটারের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকল ক্রমেই। ১৮৪৯ সালে আইন ডিগ্রি অর্জনের পর জুল ভার্ন নিজের শিল্প-সাহিত্যের প্রতি ঝোঁকের কারণেই রয়ে গেলেন প্যারিসে।
তবে বাবার দিক থেকে আইন পেশায় মনোযোগ দেওয়ার জন্য চাপ বাড়ছিল। ১৮৫২ সালের দিকে বাবার নঁতে ফিরে আইনচর্চা শুরু করার প্রস্তাব নাকচ করে দেন জুল ভার্ন। উল্টো একটি থিয়েটারে স্বল্প বেতনে সেক্রেটারির চাকরি নেন।
জুল ভার্নের জীবনের পরের কাহিনিতে যাওয়ার আগে একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। তখন ক্লাস ফাইভ-সিক্সে পড়ি। আগে বের হওয়া জুল ভার্নের বইগুলোর অনুবাদ ভলিউম আকারে বের করা শুরু করেছে সেবা প্রকাশনী। ঈদের সেলামির টাকা দিয়ে কিনে ফেললাম এ রকম একটি ভলিউম। পাঁচ-পাঁচটি অ্যাডভেঞ্চার ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ছিল। পরের দুই দিন কাটল মোটা ভলিউমটি নিয়েই। নাওয়া-খাওয়া শিকেয় উঠল। মিস্টেরিয়াস আইল্যান্ডের সাবলীল রূপান্তর ‘রহস্যের দ্বীপে’ জুল ভার্নের চরিত্রদের সঙ্গে বেলুনে চেপে হাজির হয়ে গেলাম এক দুর্গম দ্বীপে । আমার চোখের সামনেই যেন দ্বীপের চেহারা পাল্টে দিলেন তাঁরা।
একই সঙ্গে রহস্য, অ্যাডভেঞ্চার আর বিজ্ঞান কল্পকাহিনির আশ্চর্য এক মিশেল বইটি। দ্বীপে টেলিগ্রাফ লাইন বসানো, নিজেরাই কাচ তৈরি করে বাসন বানানো, নৌকা এমনকি জাহাজ তৈরি করার মতো বিষয়গুলো যেন মনের চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। পাশাপাশি দেখা না দেওয়া রহস্যময় এক ব্যক্তির সাহায্য, জলদস্যুদের সঙ্গে লড়াই সবকিছু মিলিয়ে মজে গেলাম। এদিকে ‘বেলুনে পাঁচ সপ্তাহ’ বইয়ে হট এয়ার বেলুনে চেপে আফ্রিকার দুর্গম এলাকা চষে বেড়ানোর সময় রোমাঞ্চে, ভয়ে কাঁটা দিচ্ছিল শরীর।
তারপর অবশ্য একে একে জুল ভার্নের সেবা থেকে বের হওয়া সব কটি বই-ই পড়ে ফেলি। এখন অবশ্য আরও কোনো কোনো প্রকাশনী জুল ভার্নের বই অনুবাদ করা শুরু করেছে। ভারতীয় বিভিন্ন প্রকাশনীর অনুবাদও পাওয়া যায় দোকানে।
যাক, জুল ভার্নের জীবনকাহিনিতে ফিরে যাচ্ছি আবার। ১৮৫৬ সালে হনোরিন দ্যু ভিয়েন নামের এক বিধবা তরুণীর প্রেমে পড়েন। ১৮৫৭ সালে তাঁকে বিয়ে করার পর জুল ভার্ন বুঝতে পারলেন অর্থনৈতিক নিরাপত্তাটা জরুরি। স্টক ব্রোকার হিসেবে কাজ শুরু করলেন। তাই বলে লেখালেখি থেকে দূরে সরে গেলেন না। ১৮৫৭ সালেই প্রথম বই ‘দ্য ১৮৫৭ স্যালন (লা সেলন দ্যু ১৮৫৭)’ প্রকাশিত হয়।
১৮৫৯ সালে, জুল ভার্ন ও তাঁর স্ত্রী ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে প্রথম ভ্রমণ করেন। এটা তাঁর ওপর এতটা প্রভাব বিস্তার করে যে তিনি লেখেন ব্যাকওয়ার্ডস টু ব্রিটেন। যদিও তাঁর মৃত্যুর পর উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। ১৮৬১ সালে দম্পতির একমাত্র সন্তান, মিশেল জঁ পিয়েরে ভার্নের জন্ম হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক হেতজেলের সঙ্গে পরিচয়ই জুল ভার্নের জীবন পাল্টে দিল। বলা চলে, সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর পরিচিতিতেও আছে এই প্রকাশকের বড় ভূমিকা। ১৮৬৩ সালে হেতজেল প্রকাশ করেন জুল ভার্নের ‘ফাইভ উইকস ইন আ বেলুন’। দুর্দান্ত এই অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি পাঠকদের মনে জায়গা করে নেয়। হেতজেলের সঙ্গে প্রতিবছর তাঁর জন্য লেখার চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
১৮৬৪ সালে হেতজেল প্রকাশ করেন জুল ভার্নের আরেক বিখ্যাত বই ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব ক্যাপ্টেন হ্যাটরাস’। একগুঁয়ে ও রোমাঞ্চপ্রেমী এক ক্যাপ্টেনের সঙ্গে দুর্দান্ত এক সাগর অভিযানে পাঠকের বেরিয়ে পড়ার সুযোগ হয় বইটিতে। একই বছর প্রকাশ পায় জুল ভার্নের আরেক দুর্দান্ত উপন্যাস ‘জার্নি টু দ্য সেন্টার অব আর্থ’। পাতালের এই রোমাঞ্চকর অভিযানের কাহিনি সেবা প্রকাশনী থেকে বের হওয়া সাবলীল রূপান্তর ‘পাতাল অভিযান’ পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম বালক বয়সেই।
১৮৬৫ সালটি জুল ভার্নের জন্য আরেকটি মাইলফলক বলতে পারেন। কারণ এ বছরই বের হয় তাঁর দুনিয়া কাঁপানো বই ফ্রম দ্য আর্থ টু মুন বা ‘চাঁদে অভিযান’। মানুষ চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখে ১৯৬৯ সালে। এর ১০৪ বছর আগেই মানুষকে চাঁদে অভিযানে পাঠিয়ে দেন জুল ভার্ন। বলা চলে, সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন তিনি।
ভ্রমণ আর অভিযানের প্রতি আগ্রহ এত প্রবল ছিল জুল ভার্নের যে, একপর্যায়ে একটি জাহাজই কিনে ফেলেন। এই জাহাজের কল্যাণে জুল ভার্ন ও তাঁর স্ত্রী সাগরে চষে বেরিয়ে বড় একটি সময় কাটাতে লাগলেন। বন্দর থেকে বন্দরে, দ্বীপ থেকে দ্বীপে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। এতে নিজের ছোটগল্প আর উপন্যাসের অনেক মাল-মসলাও পেলেন। ১৮৬৭ সালে ভাইয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বেরিয়ে এলেন।
১৮৬৯ সালে প্রকাশিত হয় জুল ভার্নের আরেক অসাধারণ উপন্যাাস ‘টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’। আর এখানেই আবারও একটু স্মৃতিকাতর হয়ে পড়তে হচ্ছে আমাকে।
জুল ভার্নের ওই ভলিউম কেনারও আগের গল্প। সম্ভবত ক্লাস ফোরে পড়ি। আব্বুর স্টিলের আলমারির নিচের অংশটা তখন আমার কাছে রহস্য-রোমাঞ্চের খনিতে প্রবেশের দরজা। গাদাগাদি করে সেখানে রাখা ছিল অনেক বই। নীহাররঞ্জন গুপ্তের ‘কিরীটী রায়ের কাহিনি’, সেবা প্রকাশনীর ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ কিংবা ‘উড়ন্ত সসার’-এর মতো বই, করবেট-এন্ডারসনের রোমাঞ্চকর শিকার কাহিনি কিংবা স্টিভেনসনের ট্রেজার আইল্যান্ডের সঙ্গে পরিচয় এখানেই। একদিন আব্বুর ওই ভান্ডারেই খুঁজে পাই ‘সাগরতলে’ বইটি। অর্থাৎ ‘টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’র সেবা প্রকাশনীর অনুবাদ।
বলা চলে, ‘সাগরতলে’ আমার সাগর সম্পর্কে ধারণটাই পাল্টে দিল। আমি নিশ্চিত আরও অনেক পাঠকের বেলাতেই এটি সত্যি। সাবমেরিন বলে যে জলের তলে বিচরণে সক্ষম আশ্চর্য এক যান আছে তা-ও জানলাম এই বইয়ে। ক্যাপ্টেন নিমোর সঙ্গে পরিচয় হলো। তাঁর সঙ্গে সেই সাবমেরিনে চেপে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম সাগরের তলে। তাঁর সেই রহস্যে মোড়া সাবমেরিন, যেটিকে মানুষ ভেবেছিল বিপজ্জনক এক প্রাণী। সাগরের কত প্রাণীর নাম জানলাম বইটি পড়ে। ক্যাপ্টেন নিমোও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে সাগরে মুক্তা খুঁজলাম! আরও কত কী করলাম!
বলা চলে কোমলে-কঠিন মেশানো আশ্চর্য এক চরিত্র ক্যাপ্টেন নিমো স্থায়ী জায়গা করে নিল আমার বালক মনে, যা অটুট আছে এখনো। অবশ্য পরে রহস্যের দ্বীপে ক্যাপ্টেন নিমো আর নটিলাসের পরিণতির কথা ভাবলে এখনো মন কেঁদে ওঠে।
আবার ফিরে আসা যাক জুল ভার্নের জীবনচক্রে। ১৮৬৯-৭০ সালের দিকে অ্যারাউন্ড দ্য মুন এবং ডিসকভারি অব দ্য আর্থ নামের বই দুটিও প্রকাশিত হয়। তত দিনে জুল ভার্নের বই ফরাসি থেকে ইংরেজিতেও রূপান্তরিত হচ্ছে। বলা চলে লিখেই ভালোভাবে চলতে পারেন তখন।
১৮৭২ সালের শেষের দিকে জুল ভার্নের বিখ্যাত উপন্যাস ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ’ প্রথম প্রকাশিত হয়। ফিলিয়াস ফগের দুঃসাহসিক ভ্রমণ এমন সময়ে পাঠকদের রোমাঞ্চকর এক অভিযানে নিয়ে যায়, যখন ভ্রমণ সহজ এবং লোভনীয় হয়ে উঠছিল। উপন্যাসটি প্রকাশের পর দেড় শ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। তবে এটি এখনো এই একবিংশ শতাব্দীতেও মোহাচ্ছন্ন করে রাখে রোমাঞ্চপ্রেমী পাঠকদের। পাঠক যেন নিজেকে আবিষ্কার করেন ফিলিয়াস ফগের জায়গায়।
থিয়েটার, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রসহ নানা মাধ্যমে উঠে আসে ফগের বিশ্বভ্রমণের গল্প। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৫৬ সালের সেই ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্রটি, যাতে ফিলিয়াস ফগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন অভিনেতা ডেভিড নিভেন। এই ছবির একটি অংশ চিত্রায়িত হয় লাউয়াছড়ার জঙ্গলে।
জুল ভার্নের সাহিত্য রচনা চলতে থাকে। ১৮৮৬ সালে ভাতিজা গেসটন গুলি করেন জুল ভার্নের পায়ে। বাকি জীবনটা খোঁড়া থাকতে হয় তাঁকে। এর মধ্যে মারা যান প্রকাশক হেতজেল। তবে জুল ভার্নের কলম তাতে থেমে গেল না। এইট হান্ড্রেড লিগস অন দ্য আমাজন, দ্য পারচেজ অব দ্য নর্থ পোল, মাস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ড তাঁর হেতজেল পরবর্তী সময়ে লেখা বইগুলো উল্লেখযোগ্য।
এই সুযোগে মাস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ডের ব্যাপারে দু-চারটি কথা না বললেই নয়। অসম্ভব প্রতিভাধর কিন্তু একগুঁয়ে ও অহংকারী এক বিজ্ঞানীর গল্প এটি। আর তাঁর সৃষ্টি জল, স্থল আর আকাশে চলতে সক্ষম অদ্ভুত এক যানের কাহিনি। উপন্যাসের শেষে দেখা যাবে তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ছুটে যাচ্ছেন বজ্রের দিক। পরিণতিটা সম্পর্কে না হয় নাই বললাম।
গোটা জীবনে ৬০টির বেশি উপন্যাস লিখেছেন জুল ভার্ন। সেই সঙ্গে আছে বেশ কিছু নাটক ও ছোট গল্প।
উত্তর ফ্রান্সের শহর অ্যামিয়েন্সে বাড়ি বানিয়ে পাকাপাকিভাবে থাকা শুরু করেন জুল ভার্ন। সেখানেই কাটে জীবনের বাকি দিনগুলো। ১৮৮৮ সালে সেখানকার সিটি কাউন্সিলে কাজ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, ১৯০৫ সালের ২৪ মার্চ অ্যামিয়েন্সেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তবে পাঠক ভুলে যায়নি এই কল্পবিজ্ঞান লেখককে। অনেকেই তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন বিজ্ঞান কল্পকাহিনির জনক হিসেবে। জুল ভার্ন সর্বকালের দ্বিতীয় সর্বাধিক অনূদিত লেখক। যে ভাষায় লিখেছেন তা থেকে অন্য ভাষায় লেখা অনুবাদ হওয়ার দিক থেকে তাঁর ওপরে আছেন কেবল রহস্যকাহিনি লেখিকা আগাথা ক্রিস্টি। জুল ভার্নের কাহিনিগুলো পরের সময়ের লেখক, বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবকদের কল্পনাকে আলোড়িত করেছে।
জুল ভার্নের তৈরি করা ক্যাপ্টেন নিমো, ফিলিয়াস ফগ, ক্যাপ্টেন হ্যাটরাসসহ শত শত চরিত্র এখনো সতেজ পাঠকের মনে। তাঁদের রোমাঞ্চকর জগতে এখনো বিচরণ করতে ভালোবাসেন পাঠক।
সূত্র: বায়োগ্রাফি ডট কম, উইকিপিডিয়া
ইশতিয়াক হাসান

লাউয়াছড়ার জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে ট্রেনটা। জানালা দিয়ে নানা গাছপালা দেখছিলাম আর ট্রেনের শব্দের মধ্যে আলাদা করার চেষ্টা করছিলাম অরণ্যের পশু-পাখির ডাক। হঠাৎ করে মনের পর্দায় ভেসে উঠল বিখ্যাত একটি সিনেমার দৃশ্য, যেটি চিত্রায়িত হয়েছে এই অরণ্যে। হলিউডের ১৯৫৬ সালের ওই দুর্দান্ত ছবির নাম অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ। একই নামের কালজয়ী এক উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয় যেটি।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক। অনেকেই তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন কল্পবিজ্ঞান কাহিনির জনক হিসেবে, তাঁর অসাধারণ সব অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি এখনো আলোড়িত করে পাঠকদের। গল্পটি ফরাসি ঔপন্যাসিক জুল ভার্নের। আজকের এই দিনে, অর্থাৎ ১৮২৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে আসেন তিনি। তাঁরই অমর সৃষ্টি শুরুতে যে উপন্যাসের কথা বলা হয়েছে সেই ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ’ বা ‘আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ’।
জুল ভার্নের জন্ম ব্যস্ত এক ফরাসি বন্দর নঁতে। বলা চলে, এখানে আসা-যাওয়া করা অজস্র জাহাজই অভিযানের প্রতি আগ্রহের জন্ম দেয় বালক জুল ভার্নের মনে । বোর্ডিং স্কুলে পড়ার সময় ছোটগল্প ও কবিতা লেখা শুরু করেন তিনি। আইনজীবী বাবার ইচ্ছা ছেলে তাঁকেই অনুসরণ করবে। অতএব আইন অধ্যয়নের জন্য প্যারিসে পাঠানো হলো জুল ভার্নকে।
তবে পড়াশোনার পাশাপাশি সাহিত্য ও থিয়েটারের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকল ক্রমেই। ১৮৪৯ সালে আইন ডিগ্রি অর্জনের পর জুল ভার্ন নিজের শিল্প-সাহিত্যের প্রতি ঝোঁকের কারণেই রয়ে গেলেন প্যারিসে।
তবে বাবার দিক থেকে আইন পেশায় মনোযোগ দেওয়ার জন্য চাপ বাড়ছিল। ১৮৫২ সালের দিকে বাবার নঁতে ফিরে আইনচর্চা শুরু করার প্রস্তাব নাকচ করে দেন জুল ভার্ন। উল্টো একটি থিয়েটারে স্বল্প বেতনে সেক্রেটারির চাকরি নেন।
জুল ভার্নের জীবনের পরের কাহিনিতে যাওয়ার আগে একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। তখন ক্লাস ফাইভ-সিক্সে পড়ি। আগে বের হওয়া জুল ভার্নের বইগুলোর অনুবাদ ভলিউম আকারে বের করা শুরু করেছে সেবা প্রকাশনী। ঈদের সেলামির টাকা দিয়ে কিনে ফেললাম এ রকম একটি ভলিউম। পাঁচ-পাঁচটি অ্যাডভেঞ্চার ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ছিল। পরের দুই দিন কাটল মোটা ভলিউমটি নিয়েই। নাওয়া-খাওয়া শিকেয় উঠল। মিস্টেরিয়াস আইল্যান্ডের সাবলীল রূপান্তর ‘রহস্যের দ্বীপে’ জুল ভার্নের চরিত্রদের সঙ্গে বেলুনে চেপে হাজির হয়ে গেলাম এক দুর্গম দ্বীপে । আমার চোখের সামনেই যেন দ্বীপের চেহারা পাল্টে দিলেন তাঁরা।
একই সঙ্গে রহস্য, অ্যাডভেঞ্চার আর বিজ্ঞান কল্পকাহিনির আশ্চর্য এক মিশেল বইটি। দ্বীপে টেলিগ্রাফ লাইন বসানো, নিজেরাই কাচ তৈরি করে বাসন বানানো, নৌকা এমনকি জাহাজ তৈরি করার মতো বিষয়গুলো যেন মনের চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। পাশাপাশি দেখা না দেওয়া রহস্যময় এক ব্যক্তির সাহায্য, জলদস্যুদের সঙ্গে লড়াই সবকিছু মিলিয়ে মজে গেলাম। এদিকে ‘বেলুনে পাঁচ সপ্তাহ’ বইয়ে হট এয়ার বেলুনে চেপে আফ্রিকার দুর্গম এলাকা চষে বেড়ানোর সময় রোমাঞ্চে, ভয়ে কাঁটা দিচ্ছিল শরীর।
তারপর অবশ্য একে একে জুল ভার্নের সেবা থেকে বের হওয়া সব কটি বই-ই পড়ে ফেলি। এখন অবশ্য আরও কোনো কোনো প্রকাশনী জুল ভার্নের বই অনুবাদ করা শুরু করেছে। ভারতীয় বিভিন্ন প্রকাশনীর অনুবাদও পাওয়া যায় দোকানে।
যাক, জুল ভার্নের জীবনকাহিনিতে ফিরে যাচ্ছি আবার। ১৮৫৬ সালে হনোরিন দ্যু ভিয়েন নামের এক বিধবা তরুণীর প্রেমে পড়েন। ১৮৫৭ সালে তাঁকে বিয়ে করার পর জুল ভার্ন বুঝতে পারলেন অর্থনৈতিক নিরাপত্তাটা জরুরি। স্টক ব্রোকার হিসেবে কাজ শুরু করলেন। তাই বলে লেখালেখি থেকে দূরে সরে গেলেন না। ১৮৫৭ সালেই প্রথম বই ‘দ্য ১৮৫৭ স্যালন (লা সেলন দ্যু ১৮৫৭)’ প্রকাশিত হয়।
১৮৫৯ সালে, জুল ভার্ন ও তাঁর স্ত্রী ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে প্রথম ভ্রমণ করেন। এটা তাঁর ওপর এতটা প্রভাব বিস্তার করে যে তিনি লেখেন ব্যাকওয়ার্ডস টু ব্রিটেন। যদিও তাঁর মৃত্যুর পর উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। ১৮৬১ সালে দম্পতির একমাত্র সন্তান, মিশেল জঁ পিয়েরে ভার্নের জন্ম হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক হেতজেলের সঙ্গে পরিচয়ই জুল ভার্নের জীবন পাল্টে দিল। বলা চলে, সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর পরিচিতিতেও আছে এই প্রকাশকের বড় ভূমিকা। ১৮৬৩ সালে হেতজেল প্রকাশ করেন জুল ভার্নের ‘ফাইভ উইকস ইন আ বেলুন’। দুর্দান্ত এই অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি পাঠকদের মনে জায়গা করে নেয়। হেতজেলের সঙ্গে প্রতিবছর তাঁর জন্য লেখার চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
১৮৬৪ সালে হেতজেল প্রকাশ করেন জুল ভার্নের আরেক বিখ্যাত বই ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব ক্যাপ্টেন হ্যাটরাস’। একগুঁয়ে ও রোমাঞ্চপ্রেমী এক ক্যাপ্টেনের সঙ্গে দুর্দান্ত এক সাগর অভিযানে পাঠকের বেরিয়ে পড়ার সুযোগ হয় বইটিতে। একই বছর প্রকাশ পায় জুল ভার্নের আরেক দুর্দান্ত উপন্যাস ‘জার্নি টু দ্য সেন্টার অব আর্থ’। পাতালের এই রোমাঞ্চকর অভিযানের কাহিনি সেবা প্রকাশনী থেকে বের হওয়া সাবলীল রূপান্তর ‘পাতাল অভিযান’ পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম বালক বয়সেই।
১৮৬৫ সালটি জুল ভার্নের জন্য আরেকটি মাইলফলক বলতে পারেন। কারণ এ বছরই বের হয় তাঁর দুনিয়া কাঁপানো বই ফ্রম দ্য আর্থ টু মুন বা ‘চাঁদে অভিযান’। মানুষ চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখে ১৯৬৯ সালে। এর ১০৪ বছর আগেই মানুষকে চাঁদে অভিযানে পাঠিয়ে দেন জুল ভার্ন। বলা চলে, সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন তিনি।
ভ্রমণ আর অভিযানের প্রতি আগ্রহ এত প্রবল ছিল জুল ভার্নের যে, একপর্যায়ে একটি জাহাজই কিনে ফেলেন। এই জাহাজের কল্যাণে জুল ভার্ন ও তাঁর স্ত্রী সাগরে চষে বেরিয়ে বড় একটি সময় কাটাতে লাগলেন। বন্দর থেকে বন্দরে, দ্বীপ থেকে দ্বীপে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। এতে নিজের ছোটগল্প আর উপন্যাসের অনেক মাল-মসলাও পেলেন। ১৮৬৭ সালে ভাইয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বেরিয়ে এলেন।
১৮৬৯ সালে প্রকাশিত হয় জুল ভার্নের আরেক অসাধারণ উপন্যাাস ‘টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’। আর এখানেই আবারও একটু স্মৃতিকাতর হয়ে পড়তে হচ্ছে আমাকে।
জুল ভার্নের ওই ভলিউম কেনারও আগের গল্প। সম্ভবত ক্লাস ফোরে পড়ি। আব্বুর স্টিলের আলমারির নিচের অংশটা তখন আমার কাছে রহস্য-রোমাঞ্চের খনিতে প্রবেশের দরজা। গাদাগাদি করে সেখানে রাখা ছিল অনেক বই। নীহাররঞ্জন গুপ্তের ‘কিরীটী রায়ের কাহিনি’, সেবা প্রকাশনীর ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ কিংবা ‘উড়ন্ত সসার’-এর মতো বই, করবেট-এন্ডারসনের রোমাঞ্চকর শিকার কাহিনি কিংবা স্টিভেনসনের ট্রেজার আইল্যান্ডের সঙ্গে পরিচয় এখানেই। একদিন আব্বুর ওই ভান্ডারেই খুঁজে পাই ‘সাগরতলে’ বইটি। অর্থাৎ ‘টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’র সেবা প্রকাশনীর অনুবাদ।
বলা চলে, ‘সাগরতলে’ আমার সাগর সম্পর্কে ধারণটাই পাল্টে দিল। আমি নিশ্চিত আরও অনেক পাঠকের বেলাতেই এটি সত্যি। সাবমেরিন বলে যে জলের তলে বিচরণে সক্ষম আশ্চর্য এক যান আছে তা-ও জানলাম এই বইয়ে। ক্যাপ্টেন নিমোর সঙ্গে পরিচয় হলো। তাঁর সঙ্গে সেই সাবমেরিনে চেপে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম সাগরের তলে। তাঁর সেই রহস্যে মোড়া সাবমেরিন, যেটিকে মানুষ ভেবেছিল বিপজ্জনক এক প্রাণী। সাগরের কত প্রাণীর নাম জানলাম বইটি পড়ে। ক্যাপ্টেন নিমোও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে সাগরে মুক্তা খুঁজলাম! আরও কত কী করলাম!
বলা চলে কোমলে-কঠিন মেশানো আশ্চর্য এক চরিত্র ক্যাপ্টেন নিমো স্থায়ী জায়গা করে নিল আমার বালক মনে, যা অটুট আছে এখনো। অবশ্য পরে রহস্যের দ্বীপে ক্যাপ্টেন নিমো আর নটিলাসের পরিণতির কথা ভাবলে এখনো মন কেঁদে ওঠে।
আবার ফিরে আসা যাক জুল ভার্নের জীবনচক্রে। ১৮৬৯-৭০ সালের দিকে অ্যারাউন্ড দ্য মুন এবং ডিসকভারি অব দ্য আর্থ নামের বই দুটিও প্রকাশিত হয়। তত দিনে জুল ভার্নের বই ফরাসি থেকে ইংরেজিতেও রূপান্তরিত হচ্ছে। বলা চলে লিখেই ভালোভাবে চলতে পারেন তখন।
১৮৭২ সালের শেষের দিকে জুল ভার্নের বিখ্যাত উপন্যাস ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ’ প্রথম প্রকাশিত হয়। ফিলিয়াস ফগের দুঃসাহসিক ভ্রমণ এমন সময়ে পাঠকদের রোমাঞ্চকর এক অভিযানে নিয়ে যায়, যখন ভ্রমণ সহজ এবং লোভনীয় হয়ে উঠছিল। উপন্যাসটি প্রকাশের পর দেড় শ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। তবে এটি এখনো এই একবিংশ শতাব্দীতেও মোহাচ্ছন্ন করে রাখে রোমাঞ্চপ্রেমী পাঠকদের। পাঠক যেন নিজেকে আবিষ্কার করেন ফিলিয়াস ফগের জায়গায়।
থিয়েটার, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রসহ নানা মাধ্যমে উঠে আসে ফগের বিশ্বভ্রমণের গল্প। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৫৬ সালের সেই ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্রটি, যাতে ফিলিয়াস ফগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন অভিনেতা ডেভিড নিভেন। এই ছবির একটি অংশ চিত্রায়িত হয় লাউয়াছড়ার জঙ্গলে।
জুল ভার্নের সাহিত্য রচনা চলতে থাকে। ১৮৮৬ সালে ভাতিজা গেসটন গুলি করেন জুল ভার্নের পায়ে। বাকি জীবনটা খোঁড়া থাকতে হয় তাঁকে। এর মধ্যে মারা যান প্রকাশক হেতজেল। তবে জুল ভার্নের কলম তাতে থেমে গেল না। এইট হান্ড্রেড লিগস অন দ্য আমাজন, দ্য পারচেজ অব দ্য নর্থ পোল, মাস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ড তাঁর হেতজেল পরবর্তী সময়ে লেখা বইগুলো উল্লেখযোগ্য।
এই সুযোগে মাস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ডের ব্যাপারে দু-চারটি কথা না বললেই নয়। অসম্ভব প্রতিভাধর কিন্তু একগুঁয়ে ও অহংকারী এক বিজ্ঞানীর গল্প এটি। আর তাঁর সৃষ্টি জল, স্থল আর আকাশে চলতে সক্ষম অদ্ভুত এক যানের কাহিনি। উপন্যাসের শেষে দেখা যাবে তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ছুটে যাচ্ছেন বজ্রের দিক। পরিণতিটা সম্পর্কে না হয় নাই বললাম।
গোটা জীবনে ৬০টির বেশি উপন্যাস লিখেছেন জুল ভার্ন। সেই সঙ্গে আছে বেশ কিছু নাটক ও ছোট গল্প।
উত্তর ফ্রান্সের শহর অ্যামিয়েন্সে বাড়ি বানিয়ে পাকাপাকিভাবে থাকা শুরু করেন জুল ভার্ন। সেখানেই কাটে জীবনের বাকি দিনগুলো। ১৮৮৮ সালে সেখানকার সিটি কাউন্সিলে কাজ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, ১৯০৫ সালের ২৪ মার্চ অ্যামিয়েন্সেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তবে পাঠক ভুলে যায়নি এই কল্পবিজ্ঞান লেখককে। অনেকেই তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন বিজ্ঞান কল্পকাহিনির জনক হিসেবে। জুল ভার্ন সর্বকালের দ্বিতীয় সর্বাধিক অনূদিত লেখক। যে ভাষায় লিখেছেন তা থেকে অন্য ভাষায় লেখা অনুবাদ হওয়ার দিক থেকে তাঁর ওপরে আছেন কেবল রহস্যকাহিনি লেখিকা আগাথা ক্রিস্টি। জুল ভার্নের কাহিনিগুলো পরের সময়ের লেখক, বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবকদের কল্পনাকে আলোড়িত করেছে।
জুল ভার্নের তৈরি করা ক্যাপ্টেন নিমো, ফিলিয়াস ফগ, ক্যাপ্টেন হ্যাটরাসসহ শত শত চরিত্র এখনো সতেজ পাঠকের মনে। তাঁদের রোমাঞ্চকর জগতে এখনো বিচরণ করতে ভালোবাসেন পাঠক।
সূত্র: বায়োগ্রাফি ডট কম, উইকিপিডিয়া

লাউয়াছড়ার জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে ট্রেনটা। জানালা দিয়ে নানা গাছপালা দেখছিলাম আর ট্রেনের শব্দের মধ্যে আলাদা করার চেষ্টা করছিলাম অরণ্যের পশু-পাখির ডাক। হঠাৎ করে মনের পর্দায় ভেসে উঠল বিখ্যাত একটি সিনেমার দৃশ্য, যেটি চিত্রায়িত হয়েছে এই অরণ্যে। হলিউডের ১৯৫৬ সালের ওই দুর্দান্ত ছবির নাম অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ। একই নামের কালজয়ী এক উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয় যেটি।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক। অনেকেই তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন কল্পবিজ্ঞান কাহিনির জনক হিসেবে, তাঁর অসাধারণ সব অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি এখনো আলোড়িত করে পাঠকদের। গল্পটি ফরাসি ঔপন্যাসিক জুল ভার্নের। আজকের এই দিনে, অর্থাৎ ১৮২৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে আসেন তিনি। তাঁরই অমর সৃষ্টি শুরুতে যে উপন্যাসের কথা বলা হয়েছে সেই ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ’ বা ‘আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ’।
জুল ভার্নের জন্ম ব্যস্ত এক ফরাসি বন্দর নঁতে। বলা চলে, এখানে আসা-যাওয়া করা অজস্র জাহাজই অভিযানের প্রতি আগ্রহের জন্ম দেয় বালক জুল ভার্নের মনে । বোর্ডিং স্কুলে পড়ার সময় ছোটগল্প ও কবিতা লেখা শুরু করেন তিনি। আইনজীবী বাবার ইচ্ছা ছেলে তাঁকেই অনুসরণ করবে। অতএব আইন অধ্যয়নের জন্য প্যারিসে পাঠানো হলো জুল ভার্নকে।
তবে পড়াশোনার পাশাপাশি সাহিত্য ও থিয়েটারের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকল ক্রমেই। ১৮৪৯ সালে আইন ডিগ্রি অর্জনের পর জুল ভার্ন নিজের শিল্প-সাহিত্যের প্রতি ঝোঁকের কারণেই রয়ে গেলেন প্যারিসে।
তবে বাবার দিক থেকে আইন পেশায় মনোযোগ দেওয়ার জন্য চাপ বাড়ছিল। ১৮৫২ সালের দিকে বাবার নঁতে ফিরে আইনচর্চা শুরু করার প্রস্তাব নাকচ করে দেন জুল ভার্ন। উল্টো একটি থিয়েটারে স্বল্প বেতনে সেক্রেটারির চাকরি নেন।
জুল ভার্নের জীবনের পরের কাহিনিতে যাওয়ার আগে একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। তখন ক্লাস ফাইভ-সিক্সে পড়ি। আগে বের হওয়া জুল ভার্নের বইগুলোর অনুবাদ ভলিউম আকারে বের করা শুরু করেছে সেবা প্রকাশনী। ঈদের সেলামির টাকা দিয়ে কিনে ফেললাম এ রকম একটি ভলিউম। পাঁচ-পাঁচটি অ্যাডভেঞ্চার ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ছিল। পরের দুই দিন কাটল মোটা ভলিউমটি নিয়েই। নাওয়া-খাওয়া শিকেয় উঠল। মিস্টেরিয়াস আইল্যান্ডের সাবলীল রূপান্তর ‘রহস্যের দ্বীপে’ জুল ভার্নের চরিত্রদের সঙ্গে বেলুনে চেপে হাজির হয়ে গেলাম এক দুর্গম দ্বীপে । আমার চোখের সামনেই যেন দ্বীপের চেহারা পাল্টে দিলেন তাঁরা।
একই সঙ্গে রহস্য, অ্যাডভেঞ্চার আর বিজ্ঞান কল্পকাহিনির আশ্চর্য এক মিশেল বইটি। দ্বীপে টেলিগ্রাফ লাইন বসানো, নিজেরাই কাচ তৈরি করে বাসন বানানো, নৌকা এমনকি জাহাজ তৈরি করার মতো বিষয়গুলো যেন মনের চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। পাশাপাশি দেখা না দেওয়া রহস্যময় এক ব্যক্তির সাহায্য, জলদস্যুদের সঙ্গে লড়াই সবকিছু মিলিয়ে মজে গেলাম। এদিকে ‘বেলুনে পাঁচ সপ্তাহ’ বইয়ে হট এয়ার বেলুনে চেপে আফ্রিকার দুর্গম এলাকা চষে বেড়ানোর সময় রোমাঞ্চে, ভয়ে কাঁটা দিচ্ছিল শরীর।
তারপর অবশ্য একে একে জুল ভার্নের সেবা থেকে বের হওয়া সব কটি বই-ই পড়ে ফেলি। এখন অবশ্য আরও কোনো কোনো প্রকাশনী জুল ভার্নের বই অনুবাদ করা শুরু করেছে। ভারতীয় বিভিন্ন প্রকাশনীর অনুবাদও পাওয়া যায় দোকানে।
যাক, জুল ভার্নের জীবনকাহিনিতে ফিরে যাচ্ছি আবার। ১৮৫৬ সালে হনোরিন দ্যু ভিয়েন নামের এক বিধবা তরুণীর প্রেমে পড়েন। ১৮৫৭ সালে তাঁকে বিয়ে করার পর জুল ভার্ন বুঝতে পারলেন অর্থনৈতিক নিরাপত্তাটা জরুরি। স্টক ব্রোকার হিসেবে কাজ শুরু করলেন। তাই বলে লেখালেখি থেকে দূরে সরে গেলেন না। ১৮৫৭ সালেই প্রথম বই ‘দ্য ১৮৫৭ স্যালন (লা সেলন দ্যু ১৮৫৭)’ প্রকাশিত হয়।
১৮৫৯ সালে, জুল ভার্ন ও তাঁর স্ত্রী ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে প্রথম ভ্রমণ করেন। এটা তাঁর ওপর এতটা প্রভাব বিস্তার করে যে তিনি লেখেন ব্যাকওয়ার্ডস টু ব্রিটেন। যদিও তাঁর মৃত্যুর পর উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। ১৮৬১ সালে দম্পতির একমাত্র সন্তান, মিশেল জঁ পিয়েরে ভার্নের জন্ম হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক হেতজেলের সঙ্গে পরিচয়ই জুল ভার্নের জীবন পাল্টে দিল। বলা চলে, সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর পরিচিতিতেও আছে এই প্রকাশকের বড় ভূমিকা। ১৮৬৩ সালে হেতজেল প্রকাশ করেন জুল ভার্নের ‘ফাইভ উইকস ইন আ বেলুন’। দুর্দান্ত এই অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি পাঠকদের মনে জায়গা করে নেয়। হেতজেলের সঙ্গে প্রতিবছর তাঁর জন্য লেখার চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
১৮৬৪ সালে হেতজেল প্রকাশ করেন জুল ভার্নের আরেক বিখ্যাত বই ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব ক্যাপ্টেন হ্যাটরাস’। একগুঁয়ে ও রোমাঞ্চপ্রেমী এক ক্যাপ্টেনের সঙ্গে দুর্দান্ত এক সাগর অভিযানে পাঠকের বেরিয়ে পড়ার সুযোগ হয় বইটিতে। একই বছর প্রকাশ পায় জুল ভার্নের আরেক দুর্দান্ত উপন্যাস ‘জার্নি টু দ্য সেন্টার অব আর্থ’। পাতালের এই রোমাঞ্চকর অভিযানের কাহিনি সেবা প্রকাশনী থেকে বের হওয়া সাবলীল রূপান্তর ‘পাতাল অভিযান’ পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম বালক বয়সেই।
১৮৬৫ সালটি জুল ভার্নের জন্য আরেকটি মাইলফলক বলতে পারেন। কারণ এ বছরই বের হয় তাঁর দুনিয়া কাঁপানো বই ফ্রম দ্য আর্থ টু মুন বা ‘চাঁদে অভিযান’। মানুষ চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখে ১৯৬৯ সালে। এর ১০৪ বছর আগেই মানুষকে চাঁদে অভিযানে পাঠিয়ে দেন জুল ভার্ন। বলা চলে, সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন তিনি।
ভ্রমণ আর অভিযানের প্রতি আগ্রহ এত প্রবল ছিল জুল ভার্নের যে, একপর্যায়ে একটি জাহাজই কিনে ফেলেন। এই জাহাজের কল্যাণে জুল ভার্ন ও তাঁর স্ত্রী সাগরে চষে বেরিয়ে বড় একটি সময় কাটাতে লাগলেন। বন্দর থেকে বন্দরে, দ্বীপ থেকে দ্বীপে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। এতে নিজের ছোটগল্প আর উপন্যাসের অনেক মাল-মসলাও পেলেন। ১৮৬৭ সালে ভাইয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বেরিয়ে এলেন।
১৮৬৯ সালে প্রকাশিত হয় জুল ভার্নের আরেক অসাধারণ উপন্যাাস ‘টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’। আর এখানেই আবারও একটু স্মৃতিকাতর হয়ে পড়তে হচ্ছে আমাকে।
জুল ভার্নের ওই ভলিউম কেনারও আগের গল্প। সম্ভবত ক্লাস ফোরে পড়ি। আব্বুর স্টিলের আলমারির নিচের অংশটা তখন আমার কাছে রহস্য-রোমাঞ্চের খনিতে প্রবেশের দরজা। গাদাগাদি করে সেখানে রাখা ছিল অনেক বই। নীহাররঞ্জন গুপ্তের ‘কিরীটী রায়ের কাহিনি’, সেবা প্রকাশনীর ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ কিংবা ‘উড়ন্ত সসার’-এর মতো বই, করবেট-এন্ডারসনের রোমাঞ্চকর শিকার কাহিনি কিংবা স্টিভেনসনের ট্রেজার আইল্যান্ডের সঙ্গে পরিচয় এখানেই। একদিন আব্বুর ওই ভান্ডারেই খুঁজে পাই ‘সাগরতলে’ বইটি। অর্থাৎ ‘টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’র সেবা প্রকাশনীর অনুবাদ।
বলা চলে, ‘সাগরতলে’ আমার সাগর সম্পর্কে ধারণটাই পাল্টে দিল। আমি নিশ্চিত আরও অনেক পাঠকের বেলাতেই এটি সত্যি। সাবমেরিন বলে যে জলের তলে বিচরণে সক্ষম আশ্চর্য এক যান আছে তা-ও জানলাম এই বইয়ে। ক্যাপ্টেন নিমোর সঙ্গে পরিচয় হলো। তাঁর সঙ্গে সেই সাবমেরিনে চেপে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম সাগরের তলে। তাঁর সেই রহস্যে মোড়া সাবমেরিন, যেটিকে মানুষ ভেবেছিল বিপজ্জনক এক প্রাণী। সাগরের কত প্রাণীর নাম জানলাম বইটি পড়ে। ক্যাপ্টেন নিমোও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে সাগরে মুক্তা খুঁজলাম! আরও কত কী করলাম!
বলা চলে কোমলে-কঠিন মেশানো আশ্চর্য এক চরিত্র ক্যাপ্টেন নিমো স্থায়ী জায়গা করে নিল আমার বালক মনে, যা অটুট আছে এখনো। অবশ্য পরে রহস্যের দ্বীপে ক্যাপ্টেন নিমো আর নটিলাসের পরিণতির কথা ভাবলে এখনো মন কেঁদে ওঠে।
আবার ফিরে আসা যাক জুল ভার্নের জীবনচক্রে। ১৮৬৯-৭০ সালের দিকে অ্যারাউন্ড দ্য মুন এবং ডিসকভারি অব দ্য আর্থ নামের বই দুটিও প্রকাশিত হয়। তত দিনে জুল ভার্নের বই ফরাসি থেকে ইংরেজিতেও রূপান্তরিত হচ্ছে। বলা চলে লিখেই ভালোভাবে চলতে পারেন তখন।
১৮৭২ সালের শেষের দিকে জুল ভার্নের বিখ্যাত উপন্যাস ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ’ প্রথম প্রকাশিত হয়। ফিলিয়াস ফগের দুঃসাহসিক ভ্রমণ এমন সময়ে পাঠকদের রোমাঞ্চকর এক অভিযানে নিয়ে যায়, যখন ভ্রমণ সহজ এবং লোভনীয় হয়ে উঠছিল। উপন্যাসটি প্রকাশের পর দেড় শ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। তবে এটি এখনো এই একবিংশ শতাব্দীতেও মোহাচ্ছন্ন করে রাখে রোমাঞ্চপ্রেমী পাঠকদের। পাঠক যেন নিজেকে আবিষ্কার করেন ফিলিয়াস ফগের জায়গায়।
থিয়েটার, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রসহ নানা মাধ্যমে উঠে আসে ফগের বিশ্বভ্রমণের গল্প। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৫৬ সালের সেই ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্রটি, যাতে ফিলিয়াস ফগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন অভিনেতা ডেভিড নিভেন। এই ছবির একটি অংশ চিত্রায়িত হয় লাউয়াছড়ার জঙ্গলে।
জুল ভার্নের সাহিত্য রচনা চলতে থাকে। ১৮৮৬ সালে ভাতিজা গেসটন গুলি করেন জুল ভার্নের পায়ে। বাকি জীবনটা খোঁড়া থাকতে হয় তাঁকে। এর মধ্যে মারা যান প্রকাশক হেতজেল। তবে জুল ভার্নের কলম তাতে থেমে গেল না। এইট হান্ড্রেড লিগস অন দ্য আমাজন, দ্য পারচেজ অব দ্য নর্থ পোল, মাস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ড তাঁর হেতজেল পরবর্তী সময়ে লেখা বইগুলো উল্লেখযোগ্য।
এই সুযোগে মাস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ডের ব্যাপারে দু-চারটি কথা না বললেই নয়। অসম্ভব প্রতিভাধর কিন্তু একগুঁয়ে ও অহংকারী এক বিজ্ঞানীর গল্প এটি। আর তাঁর সৃষ্টি জল, স্থল আর আকাশে চলতে সক্ষম অদ্ভুত এক যানের কাহিনি। উপন্যাসের শেষে দেখা যাবে তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ছুটে যাচ্ছেন বজ্রের দিক। পরিণতিটা সম্পর্কে না হয় নাই বললাম।
গোটা জীবনে ৬০টির বেশি উপন্যাস লিখেছেন জুল ভার্ন। সেই সঙ্গে আছে বেশ কিছু নাটক ও ছোট গল্প।
উত্তর ফ্রান্সের শহর অ্যামিয়েন্সে বাড়ি বানিয়ে পাকাপাকিভাবে থাকা শুরু করেন জুল ভার্ন। সেখানেই কাটে জীবনের বাকি দিনগুলো। ১৮৮৮ সালে সেখানকার সিটি কাউন্সিলে কাজ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, ১৯০৫ সালের ২৪ মার্চ অ্যামিয়েন্সেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তবে পাঠক ভুলে যায়নি এই কল্পবিজ্ঞান লেখককে। অনেকেই তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন বিজ্ঞান কল্পকাহিনির জনক হিসেবে। জুল ভার্ন সর্বকালের দ্বিতীয় সর্বাধিক অনূদিত লেখক। যে ভাষায় লিখেছেন তা থেকে অন্য ভাষায় লেখা অনুবাদ হওয়ার দিক থেকে তাঁর ওপরে আছেন কেবল রহস্যকাহিনি লেখিকা আগাথা ক্রিস্টি। জুল ভার্নের কাহিনিগুলো পরের সময়ের লেখক, বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবকদের কল্পনাকে আলোড়িত করেছে।
জুল ভার্নের তৈরি করা ক্যাপ্টেন নিমো, ফিলিয়াস ফগ, ক্যাপ্টেন হ্যাটরাসসহ শত শত চরিত্র এখনো সতেজ পাঠকের মনে। তাঁদের রোমাঞ্চকর জগতে এখনো বিচরণ করতে ভালোবাসেন পাঠক।
সূত্র: বায়োগ্রাফি ডট কম, উইকিপিডিয়া

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
১ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

অনেকের কাছেই তিনি কল্পবিজ্ঞান কাহিনির জনক, তাঁর অসাধারণ সব অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি এখনো আলোড়িত করে পাঠকদের। গল্পটি ফরাসি ঔপন্যাসিক জুল ভার্নের। আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৮২৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে আসেন তিনি।
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
১ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

অনেকের কাছেই তিনি কল্পবিজ্ঞান কাহিনির জনক, তাঁর অসাধারণ সব অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি এখনো আলোড়িত করে পাঠকদের। গল্পটি ফরাসি ঔপন্যাসিক জুল ভার্নের। আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৮২৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে আসেন তিনি।
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
১ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৩ দিন আগেসম্পাদকীয়

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

অনেকের কাছেই তিনি কল্পবিজ্ঞান কাহিনির জনক, তাঁর অসাধারণ সব অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি এখনো আলোড়িত করে পাঠকদের। গল্পটি ফরাসি ঔপন্যাসিক জুল ভার্নের। আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৮২৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে আসেন তিনি।
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৩ দিন আগেসম্পাদকীয়

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

অনেকের কাছেই তিনি কল্পবিজ্ঞান কাহিনির জনক, তাঁর অসাধারণ সব অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি এখনো আলোড়িত করে পাঠকদের। গল্পটি ফরাসি ঔপন্যাসিক জুল ভার্নের। আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৮২৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে আসেন তিনি।
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
১ দিন আগে