মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যরাত। ১৭ জনের একটি দল সুন্দরবন থেকে বন্য প্রাণীর ছবি তুলে ফিরছে ঢাকার দিকে। মোংলার কাছে বাদ সাধল জাহাজের ইঞ্জিন। সারেং জানালেন, জাহাজ চলবে না। বিকল ইঞ্জিন সারাতে লাগবে কিছু যন্ত্রাংশ। জায়গাটা সুন্দরবন—জলে কুমির ডাঙায় বাঘ। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ঠিকঠাক কাজ করছে না। এমন দমবন্ধ পরিবেশে রাত ক্রমে গভীর হলো। অবশ্য শেষ পর্যন্ত জাহাজ ফিরতে পেরেছিল অনেকটা দেরি করে।
এমন অনেক স্মৃতি জমে গেছে ফটোগ্রাফার সোফিয়া জামানের জীবনে। অথচ কোনো দিন যে ছবি তুলবেন, সেটা ভাবেননি। স্বামী মারা যাওয়ার পর ভীষণ একাকিত্ব ভর করে তাঁর ওপর। মন খারাপের সেই দিনগুলোতে তিনি ছবি তোলার কথা ভাবলেন। বাবা ছবি তুলতেন। সেই সূত্রে তাঁর ফটোগ্রাফির প্রতি টান ছিল আগে থেকেই। কে জানত, সেই টান আর একাকিত্ব ভোলার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়া ফটোগ্রাফি দেশ-বিদেশে তাঁকে পরিচিতি এনে দেবে! ফুল, পাখি, প্রজাপতি, আকাশ, বন্য প্রাণী কিংবা প্রকৃতির ছবি তোলেন সোফিয়া জামান।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন সোফিয়া। বাবার ব্যবসার সুবাদে অনেক বছর থেকেছেন সেই শহরে। এখন থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে। তিন ছেলে নিয়ে তাঁর পরিবার।
নিকন ডি ৭১০০ দিয়ে শুরু
পরিবেশ ও প্রকৃতি সোফিয়াকে খুব টানে। এসবের ছবি তোলার শুরুটা হয়েছিল নিকন ডি ৭১০০ ক্যামেরায়। সেই ছবি তিনি পোস্ট দিয়েছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রচুর রিঅ্যাক্ট পেয়েছিলেন। এরপর দৃক গ্যালারির বিভিন্ন প্রদর্শনীতে ছবি জমা দেন। পুরস্কারও জুটে যায়। ফলে দিনে দিনে ছবি তোলার প্রতি সোফিয়ার আগ্রহ বাড়তে থাকে।
ট্যুরে যেতে বিপত্তি
বলা হয়, বাধা না এলে নাকি মানুষ বুদ্ধিমান হয় না। সোফিয়ার বেলায়ও তাই হয়েছে। ছবি তুলতে বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা ছিল পরিবারের। সোফিয়া এ সময় সন্ধান পান বাংলাদেশ ফিমেল ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি গ্রুপের। যোগ দিলেন তাদের সঙ্গে। এরপর চষে বেড়ালেন সারা দেশ। তারপর ধীরে ধীরে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত।
যত চ্যালেঞ্জ
সংসারের সবকিছু সামলে ছেলেদের সঙ্গে পরামর্শ করে তিন থেকে চার দিনের জন্য ছবি তুলতে বেরিয়ে পড়েন সোফিয়া। পাহাড়, নদী কিংবা বন। অথবা নিছক কোনো গ্রামে চলে যান। একেক এলাকার চ্যালেঞ্জ একেক রকম। সেগুলো মোকাবিলা করার ধরনও ভিন্ন। পাহাড়ের চড়াই-উতরাই, বিষাধর সাপ কিংবা জোঁকের ভয়। কখনো হঠাৎ বন্য প্রাণীর তাড়া খাওয়া কিংবা ত্বকের ভেতরে টিক নামক ভয়ংকর পোকার ঢুকে যাওয়ার ভয়। আবার সাতছড়ির গভীর জঙ্গলে গ্রিন পিট ভাইপারের ছোবলের ভয়। ধীরে ধীরে সব মোকাবিলা করতে শিখেছেন সোফিয়া। প্রকৃতি তাঁকে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।
ভাইরাল ছবি
এর সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেতুর ছবির কথা একটু বিশেষ।
একদিন বিকেলে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে যমুনা নদীতে বেরিয়ে পড়েন সোফিয়া। সঙ্গে ট্রাইপড। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। হাতে সময়ও অল্প। ক্যামেরার সেটিংস ঠিক করে ছবি তুলে ফেললেন। বঙ্গবন্ধু সেতুর সেই ছবি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই সঙ্গে পায় বিভিন্ন পুরস্কার।
শখের তোলা লাখ টাকা
ভালো লাগা আর ভালোবাসাই সোফিয়ার ছবি তোলার মূল প্রেরণা। ছবি বিক্রি করে কোনো আয় তো নেই-ই, বরং জমানো টাকা খরচ করে তুলতে যান ছবি। এই অর্থ ব্যয়, শারীরিক কষ্ট—সব আনন্দের জন্য। ভালোবাসার জন্য।
ছবিতে বাজিমাত
দেশের প্রথম সারির প্রায় সব সংবাদপত্রে সোফিয়ার ছবি প্রকাশিত হয়েছে। উইকিপিডিয়ায় উইকি লাভস মোমেন্টে ২০২২ সালে সোফিয়ার তোলা একটি ছবি চতুর্থ স্থান লাভ করে। সোফিয়া শুধু ছবি তোলেন না, নেপথ্যের গল্প লেখেন। ‘বাংলার পাখি’ নামে একটি পত্রিকার নিয়মিত লেখক তিনি।
একটা প্রদর্শনীর জন্য
যৌথ প্রদর্শনী হয়েছে। কিন্তু একক প্রদর্শনী হয়নি এখনো। সেটার ইচ্ছা আছে ভীষণ। আর ইচ্ছা আছে, যত দিন সম্ভব হবে, মনের আনন্দে ছবি তুলে যাওয়া।
২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যরাত। ১৭ জনের একটি দল সুন্দরবন থেকে বন্য প্রাণীর ছবি তুলে ফিরছে ঢাকার দিকে। মোংলার কাছে বাদ সাধল জাহাজের ইঞ্জিন। সারেং জানালেন, জাহাজ চলবে না। বিকল ইঞ্জিন সারাতে লাগবে কিছু যন্ত্রাংশ। জায়গাটা সুন্দরবন—জলে কুমির ডাঙায় বাঘ। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ঠিকঠাক কাজ করছে না। এমন দমবন্ধ পরিবেশে রাত ক্রমে গভীর হলো। অবশ্য শেষ পর্যন্ত জাহাজ ফিরতে পেরেছিল অনেকটা দেরি করে।
এমন অনেক স্মৃতি জমে গেছে ফটোগ্রাফার সোফিয়া জামানের জীবনে। অথচ কোনো দিন যে ছবি তুলবেন, সেটা ভাবেননি। স্বামী মারা যাওয়ার পর ভীষণ একাকিত্ব ভর করে তাঁর ওপর। মন খারাপের সেই দিনগুলোতে তিনি ছবি তোলার কথা ভাবলেন। বাবা ছবি তুলতেন। সেই সূত্রে তাঁর ফটোগ্রাফির প্রতি টান ছিল আগে থেকেই। কে জানত, সেই টান আর একাকিত্ব ভোলার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়া ফটোগ্রাফি দেশ-বিদেশে তাঁকে পরিচিতি এনে দেবে! ফুল, পাখি, প্রজাপতি, আকাশ, বন্য প্রাণী কিংবা প্রকৃতির ছবি তোলেন সোফিয়া জামান।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন সোফিয়া। বাবার ব্যবসার সুবাদে অনেক বছর থেকেছেন সেই শহরে। এখন থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে। তিন ছেলে নিয়ে তাঁর পরিবার।
নিকন ডি ৭১০০ দিয়ে শুরু
পরিবেশ ও প্রকৃতি সোফিয়াকে খুব টানে। এসবের ছবি তোলার শুরুটা হয়েছিল নিকন ডি ৭১০০ ক্যামেরায়। সেই ছবি তিনি পোস্ট দিয়েছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রচুর রিঅ্যাক্ট পেয়েছিলেন। এরপর দৃক গ্যালারির বিভিন্ন প্রদর্শনীতে ছবি জমা দেন। পুরস্কারও জুটে যায়। ফলে দিনে দিনে ছবি তোলার প্রতি সোফিয়ার আগ্রহ বাড়তে থাকে।
ট্যুরে যেতে বিপত্তি
বলা হয়, বাধা না এলে নাকি মানুষ বুদ্ধিমান হয় না। সোফিয়ার বেলায়ও তাই হয়েছে। ছবি তুলতে বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা ছিল পরিবারের। সোফিয়া এ সময় সন্ধান পান বাংলাদেশ ফিমেল ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি গ্রুপের। যোগ দিলেন তাদের সঙ্গে। এরপর চষে বেড়ালেন সারা দেশ। তারপর ধীরে ধীরে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত।
যত চ্যালেঞ্জ
সংসারের সবকিছু সামলে ছেলেদের সঙ্গে পরামর্শ করে তিন থেকে চার দিনের জন্য ছবি তুলতে বেরিয়ে পড়েন সোফিয়া। পাহাড়, নদী কিংবা বন। অথবা নিছক কোনো গ্রামে চলে যান। একেক এলাকার চ্যালেঞ্জ একেক রকম। সেগুলো মোকাবিলা করার ধরনও ভিন্ন। পাহাড়ের চড়াই-উতরাই, বিষাধর সাপ কিংবা জোঁকের ভয়। কখনো হঠাৎ বন্য প্রাণীর তাড়া খাওয়া কিংবা ত্বকের ভেতরে টিক নামক ভয়ংকর পোকার ঢুকে যাওয়ার ভয়। আবার সাতছড়ির গভীর জঙ্গলে গ্রিন পিট ভাইপারের ছোবলের ভয়। ধীরে ধীরে সব মোকাবিলা করতে শিখেছেন সোফিয়া। প্রকৃতি তাঁকে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।
ভাইরাল ছবি
এর সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেতুর ছবির কথা একটু বিশেষ।
একদিন বিকেলে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে যমুনা নদীতে বেরিয়ে পড়েন সোফিয়া। সঙ্গে ট্রাইপড। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। হাতে সময়ও অল্প। ক্যামেরার সেটিংস ঠিক করে ছবি তুলে ফেললেন। বঙ্গবন্ধু সেতুর সেই ছবি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই সঙ্গে পায় বিভিন্ন পুরস্কার।
শখের তোলা লাখ টাকা
ভালো লাগা আর ভালোবাসাই সোফিয়ার ছবি তোলার মূল প্রেরণা। ছবি বিক্রি করে কোনো আয় তো নেই-ই, বরং জমানো টাকা খরচ করে তুলতে যান ছবি। এই অর্থ ব্যয়, শারীরিক কষ্ট—সব আনন্দের জন্য। ভালোবাসার জন্য।
ছবিতে বাজিমাত
দেশের প্রথম সারির প্রায় সব সংবাদপত্রে সোফিয়ার ছবি প্রকাশিত হয়েছে। উইকিপিডিয়ায় উইকি লাভস মোমেন্টে ২০২২ সালে সোফিয়ার তোলা একটি ছবি চতুর্থ স্থান লাভ করে। সোফিয়া শুধু ছবি তোলেন না, নেপথ্যের গল্প লেখেন। ‘বাংলার পাখি’ নামে একটি পত্রিকার নিয়মিত লেখক তিনি।
একটা প্রদর্শনীর জন্য
যৌথ প্রদর্শনী হয়েছে। কিন্তু একক প্রদর্শনী হয়নি এখনো। সেটার ইচ্ছা আছে ভীষণ। আর ইচ্ছা আছে, যত দিন সম্ভব হবে, মনের আনন্দে ছবি তুলে যাওয়া।
বাড়ি তাঁর খুলনায়। সুন্দরবন, নদীনালা, গাছপালা মিলিয়ে এক অনিন্দ্যসুন্দর জনপদ। সুন্দরবন মানে শুধু বাঘ, মৌয়াল আর মাছ নয়; সেখানে আছে বনবিবির বিশ্বাস, আছে স্থানীয় উপকরণে তৈরি স্থানীয় শিল্প। সবাই সেগুলোর তেমন কদর না করলেও কেউ কেউ তো কদর করেনই। তেমনই একজন ফৌজিয়া ডেইজী।
৬ মিনিট আগেপলিথিন ও প্লাস্টিক একই জিনিস নয়। তবে পলিথিন মূলত একধরনের প্লাস্টিক। বিশ্বজুড়ে সেই প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে চলছে আন্দোলন। আগামীকাল বিশ্ব পরিবেশ দিবস। হ্যাশট্যাগ বিট প্লাস্টিক পলিউশন স্লোগান দিয়ে এবার প্লাস্টিকদূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। প্লাস্টিক পরিবেশ দূষণ করে।
৯ মিনিট আগেআমার স্বামী দেশের বাইরে গেছে পড়াশোনার জন্য। আমাদের দুই বছরের একটি মেয়েসন্তান আছে। রান্নাবান্না, শ্বশুর-শাশুড়ি ও নিজের যত্ন, সন্তানের যত্ন নেওয়া আমার কাজ। বাকি কাজের জন্য লোক আছে। কিন্তু সন্তান সামাল দিতেই আমি নাজেহাল। সন্তানের অতিরিক্ত কান্না সহ্য করতে না পেরে মারধর করি।
১৩ মিনিট আগে১৮৭৪ সালে ডাইক্লোরো ডাইফিনাইল ট্রাইক্লোরো ইথেন, অর্থাৎ ডিডিটি আবিষ্কার যে মানবজাতির জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে, সে কথা কেউ ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেনি। এর অতিরিক্ত ব্যবহারের নেতিবাচক ফল টের পেতে শুরু করলে পরিবেশবাদীরা এর বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করেন। তাঁদের মধ্যে র্যাচেল কারসন অন্যতম।
১৭ মিনিট আগে