Ajker Patrika

হাজার শিশুর ছাহেরা খালা

আব্দুর রাজ্জাক  ঘিওর, মানিকগঞ্জ
হাজার শিশুর ছাহেরা খালা

কাকজোর গ্রামের সবাই তাঁকে ছাহেরা খালা ডাকে! বাবা-মায়েরা তো ডাকেনই, তাঁদের সন্তানেরাও তাঁকে ছাহেরা খালাই ডাকে। প্রায় কিশোরী বয়সে, সেই সত্তরের দশকের শেষের দিকে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার কাকজোর গ্রামে ‘বউ’ হয়ে এসেছিলেন ছাহেরা বেগম। স্বামীর নাম ওয়াজউদ্দিন। এখন তাঁর বয়স ৬০। স্বামী মারা গেছেন বেশ কিছুদিন আগে।

মানিকগঞ্জের সব প্রান্তে এখন বেশ উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তাঘাট উন্নত, স্কুল-কলেজ তো আছেই। নতুন হয়েছে কিছু। হয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু আজ থেকে বছর ৫০ আগে মানিকগঞ্জের অবস্থা এমন ছিল না। সে সময় ঘিওরের রাস্তাঘাট ছিল না তেমন। হাসপাতাল ছিল দূরে। সেই দূরের হাসপাতালে নেওয়ার সময় গর্ভবতী অনেক মায়ের মৃত্যু হতো। সেই সব দেখে, কিশোরীকালে বউ হয়ে আসা ছাহেরা বেগমের মনে ‘দাই’ হওয়ার চিন্তা আসে। হয়তো নিজের অজান্তে অকালে ঝরে যাওয়া মায়েদের প্রতিচ্ছবি তিনি দেখতে পেতেন নিজের মধ্যে! শুধু চিন্তা করেই ক্ষান্ত হননি, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ধাত্রী হিসেবে। ধীরে ধীরে হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কাজ করে অভিজ্ঞ হয়েছেন। সেই সঙ্গে হয়ে উঠেছেন এলাকার মায়েদের ভরসার প্রতিমূর্তি।

এই যেমন ছাহেরা বেগমের হাতে জন্ম নেওয়া কাকজোর গ্রামের শিশু সিয়ামের মা আলেয়া আক্তার জানালেন, তাঁর তিনটি সন্তানের স্বাভাবিক প্রসব করিয়েছেন ছাহেরা খালা। শুধু তা-ই নয়, প্রসব-পরবর্তী খোঁজখবর নিয়ে বিনা মূল্যে প্রসবোত্তর বিভিন্ন সেবাও দিয়েছেন।

এভাবে ৩০ বছর তিনি প্রায় ১ হাজার শিশুর স্বাভাবিক প্রসব করিয়েছেন কাকজোর ও এর আশপাশের গ্রামগুলোতে। তাঁর এই সেবা জারি ছিল করোনাকালেও। দিন কিংবা রাত—খবর পেলেই ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছাহেরা বেগম হাজির হয়ে যান প্রসূতির কাছে। আর এ কাজের স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০২১ সালে তাঁকে জয়িতা সম্মাননা দেওয়া হয়।  

ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী মৃণাল কান্তি ঘোষ। তিনি জানালেন, ছাহেরা বেগমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কাকজোর কমিউনিটি হেলথ সেন্টার থেকে উন্নত প্রশিক্ষণ, প্রেশার মাপার যন্ত্রপাতিসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে, যেন তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে পারেন।

নয়াচর গ্রামের সীমা আক্তার জানিয়েছেন, ছাহেরা বেগম পেশাদার ধাত্রী না হলেও পেশাজীবী মানুষের চেয়ে তিনি বেশি পরিশ্রমী ও দায়িত্ববান। সীমা আক্তারের দুটি সন্তানের স্বাভাবিক প্রসব করিয়েছেন ছাহেরা বেগম।

প্রসূতি মায়েদের শুধু স্বাভাবিক প্রসব করানোই নয়, কাকজোর কমিউনিটি সেন্টারের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার কাজী আরিফুল হক জানিয়েছেন, তিনি এলাকার মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য উন্নয়নে তাঁদের টিমের সঙ্গে বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসছেন। সরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রচারণায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
ছাহেরা বেগম বিশ্বাস করেন, সিজারিয়ান অপারেশন থেকে স্বাভাবিক প্রসব মা ও শিশুর জন্য ভালো। এ কথা তিনি গ্রামের মায়েদের সব সময় বলেন। স্বাভাবিক প্রসব করানো তাঁর কাছে প্রার্থনার মতো। এ জন্য তিনি কোনো পারিশ্রমিক নেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত