Ajker Patrika

স্‌ভেৎলানা

আমি একজন অফিসারের স্ত্রী

ফিচার ডেস্ক
স্‌ভেৎলানা। ছবি: বিবিসি
স্‌ভেৎলানা। ছবি: বিবিসি

একজন বন্দী কারাগারে থেকে কিসের বিনিময়ে ভালো সেবা পেতে পারেন? অনেকের মনে ঘুরতে পারে এর অনেক উত্তর। কিন্তু যদি শোনেন, এই ‘বিনিময়’ সেই বন্দীর পরিবারকে দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করার প্রস্তাব! অনেকে হোঁচট খাবেন। তেমনই এক ঘটনার কথা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফাঁস করেছেন স্‌ভেৎলানা নামের এক নারী। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর জেলবন্দী স্বামীর ভালো থাকার বিনিময়ে তাঁকে নিজ দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আর এ প্রস্তাবের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কখনোই আমার দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার কথা ভাবিনি। এক সেকেন্ডের জন্যও নয়।’

৪২ বছর বয়সী স্‌ভেৎলানা দুই বছর ধরে স্বামীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। তাঁর স্বামী দিমারকে রাশিয়ানরা বন্দী করে রেখেছে। প্রতীক্ষাকালীন একদিন স্‌ভেৎলানা একটি ফোনকল পান। অন্য প্রান্ত থেকে এক রুশ এজেন্ট তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। দিমিত্রি নামের সেই এজেন্ট স্‌ভেৎলানাকে তাঁর স্বামীর ভালো থাকার বিনিময়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করার প্রস্তাব দেন। তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘তুমি একটি সামরিক অফিস পুড়িয়ে দিতে পারো, একটি সামরিক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিতে পারো অথবা ইউক্রেনীয় রেলওয়ে ইলেকট্রিক বক্সে নাশকতা করতে পারো।’ তাঁর সামনে আরেকটি বিকল্প পথও খোলা রাখা হয়েছিল। কাছাকাছি থাকা আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলোর অবস্থান সম্পর্কে সেই এজেন্টকে জানানো। তাঁকে শিখিয়ে দেওয়া হয় কীভাবে একটি রেলস্টেশনে আগুন লাগাতে হবে। কোন ধরনের পোশাক পরে যেতে হবে। বিনিময়ে স্‌ভেৎলানা সেই এজেন্টকে জানান, তাঁকে তাঁর স্বামীর কাছে একটা পার্সেল পৌঁছে দিতে হবে।

ফোন ধরার পর স্‌ভেৎলানা মূলত ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া নির্দেশনা মেনে সব পদক্ষেপ নিচ্ছিলেন। তাদের নির্দেশ আছে, রুশ এজেন্টরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা যেন যতটা সম্ভব সময় নেয়, সবকিছু রেকর্ড ও ছবি তোলে এবং রিপোর্ট করে। স্‌ভেৎলানা রিপোর্ট করেছিলেন। তিনি মেসেজগুলোর স্ক্রিনশট নিয়ে রেখেছিলেন। তিনি সময় ক্ষেপণ করছিলেন নির্দেশমতো।

একপর্যায়ে স্‌ভেৎলানা সেই প্রস্তাবে রাজি না হলে এজেন্টটি তাঁকে বলেন, ‘তোমার স্বামীকে নির্যাতন করা হচ্ছে এবং এর জন্য তুমি দায়ী।’ সেদিনের সেই ফোনকল স্‌ভেৎলানাকে একচুলও নড়াতে পারেনি নিজের অবস্থান থেকে।

তিন মাস আগে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন স্‌ভেৎলানার স্বামী দিমার। বর্তমানে চার বছরের সন্তানকে নিয়ে ভালোভাবেই জীবনযাপন করছেন তাঁরা। সবাই যখন স্‌ভেৎলানাকে জিজ্ঞাসা করে, কীভাবে সহ্য করেছিলেন সেই সব দিন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় বলি, আমি একজন অফিসারের স্ত্রী।’

ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, বন্দী সৈনিকদের আত্মীয়দের মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হওয়া মানুষের সংখ্যা কম। অন্যদিকে রাশিয়ান সরকার এক বিবৃতিতে বিবিসিকে জানিয়েছে, বন্দীদের পরিবারকে লিভারেজ হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। উল্টো রাশিয়া ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের সঙ্গে মানবিকভাবে এবং জেনেভা কনভেনশনের নীতি অনুসারে আচরণ করে বলে দাবি করে।

সূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত