Ajker Patrika

সাগরের ঢেউগুলো এমন উজ্জ্বল আলো ছড়াচ্ছে কেন

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২৪ জুন ২০২৩, ১২: ৫৩
Thumbnail image

মালদ্বীপের দ্বীপগুলোর পর্যটকদের মুগ্ধ করার মতো অনেক কিছুই আছে। তবে এদের মধ্যে ভাধু দ্বীপে গেলে রীতিমতো চমকে উঠবেন। সাগরের ঢেউগুলো এমন উজ্জ্বল নীল রঙা, যেন জ্বলছে। তারপর এসে আছড়ে পড়ছে তীরের বালুময় সৈকতে। হয়তো আপনার মনে হতে পারে এটা পৃথিবীর কোনো দৃশ্য নয়, কল্পনার রাজ্যের কিছু একটা সামনে চলে এসেছে। স্বপ্ন দেখছেন ভেবে চোখ কচলে নিতে পারেন বার কয়েক। অবশ্য এই আশ্চর্য আলোর খেলা দেখার সৌভাগ্য হবে আপনার কেবল আঁধার নামার পরই। 

মালদ্বীপের রা অ্যাটোলের একটি দ্বীপ ভাধু দ্বীপ। সাধারণত প্রবাল প্রাচীর ঘিরে থাকে উপহ্রদ বা ল্যাগুনকে বলা হয় অ্যাটোল। তো ভাদু দ্বীপ নিয়ে এমনিতে মাতামাতি করার কিছু ছিল না। ছোট্ট দ্বীপটির জনসংখ্যা টেনেটুনে ৫০০ পেরিয়েছে। কিন্তু এর সাগরের জলে এই নীলাভ আলো একে পৃথিবীর মানচিত্রে আলাদা জায়গা করে দিয়েছে। এটি এখন পরিচিতি পেয়ে গেছে সি অব স্টারস নামে। 

এই আশ্চর্য আলোর খেলা দেখার সৌভাগ্য হবে আপনার কেবল আঁধার নামার পরইপশ্চিম আকাশে সূর্য যখন ডুব দেয়, আকাশ ধরতে শুরু করে কালো রং, মালদ্বীপে ভাদু দ্বীপের পাশের সাগরের জল মেতে ওঠে আশ্চর্য এক আলোর খেলায়। হঠাৎ ভাবতে পারেন আকাশের তারারা খসে পড়েছে জ্বলে। আর এতেই ঢেউগুলো এমন নীল আলোয় জ্বলছে। 

এখন নিশ্চয় আপনার মনে প্রশ্ন জাগছে, এই আলোর রহস্য কী? তাহলে চলুন বিষয়টি খোলাসা করি। বায়োলোমিনিসেন্স হলো জীবদেহে জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আলো নিঃসৃত হওয়ার একটি প্রক্রিয়া। ব্যাকটেরিয়া, জেলি ফিশ, নানা ধরনের মাছ, কাঁকড়াজাতীয় কঠিন খোলের প্রাণী এমনকি মাশরুম কিংবা শৈবালের মতো উদ্ভিদের মধ্যেও এটা ঘটতে পারে। 

আণুবীক্ষণিক এক প্ল্যাংকটন ডাইনোফ্লাজেলেইট জন্ম দেয় এই নীল আলোরমালদ্বীপের সাগরের জলে বায়োলোমিনিসেন্স ঘটে আণুবীক্ষণিক এক প্ল্যাংকটন ডাইনোফ্লাজেলেইটে। এই প্ল্যাংকটনেরা লুসিফেরিন নামের একধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করে উজ্জ্বল নীল আলোর বিচ্ছুরণ ঘটনায়। এটা এরা এমনি এমনি করে না, করে এদের শিকার করে এমন প্রাণীদের থেকে আত্মরক্ষার জন্য। ডাইনোফ্লাজেলেইটদের বিচ্ছুরিত আলোয় শিকারি প্রাণীরা অনেক সময়ই বিভ্রান্ত হয় এবং অন্যদিকে চলে যায়। এই আলো বিচ্ছুরণের ক্ষেত্রে সাগরের ঢেউয়ের অবস্থাও ভূমিকা রাখে। 

ডাইনোফ্লাজেলেইটদের নীল আলো খুব প্রশান্তিদায়ক মনে হলেও এদের খুব বন্ধুভাবাপন্ন বলা যাবে না। কিছু কিছু ডাইনোফ্লাজেলেইট মানুষ, মাছসহ বিভিন্ন প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ উৎপাদন করে। 

নীল আলোর এই খেলা সি অব স্টারস নামে পরিচিতি পেয়েছেআরেকটি মজার ব্যাপার আছে এই নীল আলোর। অন্য প্রাণীরা এই জ্বলজ্বলে প্লাংকটন খেয়েও অনেক সময় বিপদে পড়ে। কারণ এটা অন্য প্রাণীর শরীরে গিয়েও জ্বলতে পারে। তখন সেই আলো আবার আরও বড় শিকারি জলজ প্রাণীদের আকৃষ্ট করে। 
 
এই নীল আলো নিয়ে নানা গল্পগাথা প্রচলিত আছে মালদ্বীপে। আর এগুলো পরিষ্কার করে দেয়, প্রাচীন মালদ্বীপবাসী প্রকৃতির এই শক্তিকে সমীহের চোখে দেখত এমনকি ভয়ও করত। তাঁরা সম্ভবত বিশ্বাস করত এই আলো দেখা দেওয়া অশুভ ইঙ্গিতবাহী। একই সঙ্গে একে সাগরের ক্ষমতার প্রতীক মনে করা হতো। 

মালদ্বীপে আসা পর্যটকদের কাছে একটি বড় আকর্ষণ সাগরের এই নীলাভ ঢেউতবে বায়োলোমিনিসেন্স প্ল্যাংকটনের উপস্থিতি কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। এগুলোর মধ্যে আছে পানির তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, ঢেউ, পুষ্টির মাত্রা ইত্যাদি। আর এটাকে দেখার জন্য তাই সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকাটা জরুরি। চাঁদের আলো নেই এমন রাতে এই আলো বেশি চোখে পড়ে সাগরে।

বুঝতেই পারছেন, এই নীল আলোর খেলা মালদ্বীপে আসা পর্যটকদের কাছে একটি বড় আকর্ষণ। তবে মালদ্বীপের ভাধু দ্বীপ সি অব স্টারস বা নীল আলোর খেলার জন্য নাম কামালেও এটা নিয়মিত দেখা যায় আরও কিছু জায়গায়। এমনকি সাগরের যে কোনো জায়গায় এর দেখা মিলতে পারে। মালদ্বীপের কথা যদি বিবেচনা করেন তবে মাধধু কিংবা রাংগালি দ্বীপের জলেও আশ্চর্য এই খেলা দেখতে পারবেন। 

ডাইনোফ্লাজেলেইটদের বিচ্ছুরিত আলোয় এদের যারা শিকার করতে চায় অনেক সময়ই বিভ্রান্ত হয়এ ছাড়া ক্যালিফোর্নিয়ার লিওকাডিয়া উপকূলেও জোয়ারের সময় ঢেউয়ে আলোর খেলা দেখতে পারবেন। তেমনি বায়োলোমিনিসেন্সের দেখা পেতে পারেন ভারতের লক্ষা দ্বীপের উপকূলে ও পুয়ের্তো রিকোর মসকুইটো উপসাগরে। 

সূত্র: ইভেনিং স্ট্যান্ডার্ড, ভিজিট মালদ্বীপ ডট কম, হোয়েন অন আর্থ ডট নেট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত