Ajker Patrika

এই বাজারে ঘুমানোই ভালো

ফখরুল ইসলাম
Thumbnail image

লোকে যে কেন শুধু বাজার নিয়ে হাপিত্যেশ করে, কে জানে। কথায় কথায় শুধু অভিযোগ। এই এর দাম বেশি, ওটা কেন এমন, সেটা কেন হলো না, কেউ তো দেখে না, আমারে কেউ বুঝল না—কত শত অভিযোগ! কিন্তু কী লাভ এসব অভিযোগে? ভেবে ভেবে নিজের ঘুমের বারোটা বাজানোর শখ বোধ হয়—এই বঙ্গের লোকদেরই শুধু আছে। কিন্তু তারা একবারও জরুরি বিষয়টি ভেবে দেখে না। যাদের বিরুদ্ধে তাদের এত অভিযোগ, তাদের কি ঘুমের কোনো সমস্যা আছে? না, একদমই নয়। তাহলে, এত ভাবাভাবির পক্ষে কোনো যুক্তি থাকে আর? 

অহেতুক লোকেরা বাজার ঘুরতে যায়। আরে বাবা কিছু কিনতেই যখন পারবেন না, তো বাজারে ঘুরে লাভ কী? বরং একটু প্রকৃতি দেখুন, একটু বাতাস খান, একটি চাঁদ দেখুন। দেখার জিনিসের কি অভাব পড়েছে নাকি আমাদের দেশে। না তারপরও তারা বাজারে যাবেন, আর বেগুনের কেজি ৬০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৫০, গোল বেগুন ৮০, প্রতি কেজি টমেটো ১২০, বরবটি ৬০, প্রতি কেজি শিমের ৬০ টাকা দর দেখে হুতাশে ঘামবেন, আর মাঝেমধ্যে হেঁচকি তুলবেন। এর কোনো মানে আছে? 

তাও শুধু ঘামাঘামি, আর হেঁচকি তোলায় বিষয়টা থামলে হতো। তা তো নয়। প্রতিটি পণ্যের দাম উল্লেখ করে ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে দেশের হিসাবি জনসাধারণ। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আরেকটি দল সরকার মশাইয়ের নামে অপপ্রচার চালাতে আদা-জল খেয়ে লেগেছে। এর কোনো মানে আছে? বরং পরস্পরকে তেল দিন। এতে সরবরাহ বাড়বে, চাহিদার বিপরীতে জোগান বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই দাম কমে আসবে। অর্থনীতির এই সাধারণ সমীকরণ নিয়ে না ভেবে খালি প্রতিবাদ। আহা প্রতিবাদে কি দাম কমে। কোনো দিন কমেছে? এই যে হু হু করে বয়স বেড়ে যাচ্ছে, কই এ নিয়ে তো প্রতিবাদ করছেন না। এ জায়গায় তো ঠিকই বুঝদার, তাহলে বাজার, জ্বালানি তেল নিয়ে এত অবুঝ কেন শুনি? এ নিয়ে ফেসবুকে হাঙ্গামা করার কী আছে! আরে ভাই আপনারা কি জানেন না সরকারের লস মানে জনগণের লস। এরপরও আপনারা এমন কেন করেন। কয়েকটা দিন না হয় খেয়ে না খেয়ে থাকবেন। বাস ভাড়া বেশি হলে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাবেন। স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। ঘুম হবে ভালো। 

এই যে এত এত আয়োজন—এসব কি এমনি এমনি হচ্ছে? একদমই নয়। কত কী আছে এসবের পেছনে। কত কায়দা করেই না চাকাটা চলছে। তা নিয়ে না ভেবে, শুধু শুধু অভিযোগ করছেন। একটু কষ্ট করুন। এর পর আপনি একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখবেন অজান্তেই ধনী হয়ে গেছেন। দেশ সিঙ্গাপুর হয়ে গেছে। গুরুজনেরা বলে গেছেন—কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না। এই উক্তি মাথায় থাকলে হয়তো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বেড়াতেন না। উল্টো যেসব পণ্যের দাম এখনো কম আছে সেগুলোর দাম বাড়াতে সরকারকে হালকার ওপর চাপ দিতেন। একটু বুঝিয়ে বলা যাক—উন্নত দেশে যে দামে সবজি বিক্রি হয়, তা নিশ্চয় আমাদের চেয়ে বেশি। খালি ওটা ডলারে হিসাব হয় বলে ধরতে পারা যায় না। এটা একটা কৌশল। যে দেশ যত উন্নত, তার নাগরিকদের ক্রয়ক্ষমতা তত বেশি। ক্রয়ক্ষমতা বেশি হলে অবশ্যই বেশি দামে পণ্য কেনার সক্ষমতা থাকবে। এ ক্ষেত্রে দুই ধরনের কৌশল আছে। এক, নাগরিকদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়িয়ে নাগরিকদের প্রস্তুত করা। দুই, বাজারে দাম বাড়িয়ে নাগরিকদের প্রস্তুত হতে বাধ্য করা। তা ১৬ কোটি মানুষকে তো আর ধরে ধরে ধনী করা যাবে না। ঠেলার নাম বাবাজি। সুতরাং ঠেলাটা বাজার থেকেই আসছে। এবার নিশ্চয় বোঝা গেল। 

কিন্তু অতি পণ্ডিতেরা এই কৌশলকে ব্যর্থ করে দিতে চাইছে। আদতে তারা ভীষণ অলস। আর এই অলসতা ঢাকতেই তারা প্রতিবাদের ভান করছে। কোনোভাবেই তারা ক্লেশ সহ্য করবে না। ফলে অবধারিতভাবেই যাকে নয় তাকে গালমন্দ করে বেড়াচ্ছে। এ কী সহ্য হয়। হয় না। আর সে জন্যই দেখুন কর্তারা কত আন্তরিক। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে সবজির দাম গড়ে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। বর্ধিত ভাড়া তো আছেই। তো সবই যখন বাড়ল, আপনার আয় কেন বাড়বে না। আলবৎ বাড়বে। সব বাড়বে—আয়, ব্যয়, ঘুম এবং ঘাম। সুতরাং ভাবনা কি, পা চালিয়ে হাঁটুন, আয়েশ ছেড়ে ঘামুন, দেখবেন রাত কী দারুণ ঘুম হবে। আর জানেনই তো ধনীরা নরম বিছানায় ভালো করে ঘুমান। আর ধনীদের তো শাক-লতা-পাতা নিয়ে হা-হুতাশ করলে চলে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত