Ajker Patrika

লাল জলের এক নদী আছে

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১১: ২৭
Thumbnail image

পেরুর কাসকোর ভিলকানোতা পার্বত্য এলাকায় গেলে আশ্চর্য এক নদীর দেখা পাবেন। পাথুরে উপত্যকার মাঝখান দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে যাওয়া নদীটির রং যে লাল। অবশ্য বছরের নির্দিষ্ট সময়েই কেবল এই নদীর দেখা পাবেন।

কাসকো শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে ও পালকায়োর রংধনু পর্বতের কাছেই নদীটির অবস্থান। নদীটি দেখার সেরা সময় সেখানকার বর্ষা, মানে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলে। কারণ বৃষ্টির সঙ্গে নদীর আশ্চর্য এই রঙের সম্পর্ক আছে। এ ছাড়া বছরের বাকি সময়টা নদীর রং থাকে কাঁদাটে বাদামি। আর মোটামুটি পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত এই লাল রং পাবেন।

বর্ষায় দেখা মেলে নদীর এ আশ্চর্য বর্ণেরকাসকোর এই লাল নদী স্থানীয়ভাবে পরিচিত পালকুয়েলা পুচামাইয়ু নামে। নামটি এসেছে কুয়েচুয়া পালকুয়েলা ও পুচামায়ি থেকে। কুয়েচুয়া পালকুয়েলা অর্থ ছোট্ট শাখা আর পুচামায়ি অর্থ লাল নদী। পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত লাল রং নিয়ে চলার পর আরও কয়েকটি ছোট্ট খাল-নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। সেখানে ধীরে ধীরে তার লাল রং হারাতে শুরু করে।পাখির চোখে দেখা

এই ছোট ছোট নদী-খালগুলোর মিলিত প্রবাহ গিয়ে বিসর্জন দিয়েছে ভিলকামায়ো নদীতে। এটি কাসকোর উপত্যকা ও বিখ্যাত ইনকা নগরী মাচুপিচুর মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আরও ভাটিতে নদীটি পরিচিতি পেয়েছে উরুবামবা নদী নামে। তারপর পোঙ্গো দে মানিকিউ গিরিখাদ পেরিয়ে গভীর জঙ্গলের ভেতর দিয়ে গিয়ে মিশে গেছে বিশাল আমাজন নদীতে।

কাসকো শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে লাল নদীর অবস্থানএবার বরং নদীর রং লাল হওয়ার রহস্যটা জেনে নেওয়া যাক। রংধনু পর্বত পালকয়ো থেকে আসা বৃষ্টি জলে। পালকায়ো ও আরও কিছু পর্বত মিলে তৈরি করেছে ভিলকানোতা পর্বতমালা। মাটির আলাদা আলাদা স্তরে থাকা খনিজই মূলত এই লাল রং সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। বর্ষায় ভূমিক্ষয়ের কারণে এই রং গিয়ে মেশে নদীর জলে। আরও একটু পরিষ্কার করলে, আয়রন অক্সাইড পূর্ণ লাল বেলে পাথরই লাল রং দেয় একে। বর্ষায় যখন বৃষ্টি শুরু হয়, তখন জলের তোড়ে বেলে পাথরের খনিজসমৃদ্ধ পানি ঢাল বেয়ে নেমে গিয়ে নদীর পানিকে পরিণত করে লাল কিংবা গাঢ় গোলাপিতে। বছরের বাকি সময়টা নদীর পানির উচ্চতা থাকে অনেক কম, রংও থাকে কাঁদাটে বাদামি।

ওই বয়ে যায় লাল নদীসবুজ পাহাড় আর ফার্মল্যান্ডের মাঝখান দিয়ে যাওয়ার সময় এই লাল নদী আশ্চর্য এক পরিবেশের জন্ম দেয়। এখানে আসলে কিংবা ওপর থেকে দেখলে হঠাৎ মনে হতে পারে এটি পৃথিবীর কিছু নয়, ভিনগ্রহের কোনো জায়গায় চলে এসেছেন। কিংবা মনে হতে পারে শিল্পীর কোনো অসাধারণ চিত্রকর্ম বাস্তবে মূর্ত হয়ে উঠেছে। 

পাথররাজ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটে চলেছে নদীকাসকোর কানচিস এলাকায় অবস্থান লাল নদীর। কাসকো শহর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে পাহাড়ি পথে মোটামুটি ঘণ্টা তিনেক ভ্রমণে পৌঁছে যেতে পারবেন এর কাছে।

এমনিতে শুকনো মৌসুমে, যেটি মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয়, পেরু ভ্রমণের জন্য এটাকেই আদর্শ সময় বিবেচনা করা হয়। ভিলকানোতা পার্বত্য এলাকার পাহাড়ি পথে বর্ষা মৌসুমে (ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল) ট্র্যাক করাও সুখকর কোনো অভিজ্ঞতা নয়। তবে যেহেতু নদীটি লাল রং ধারণ করে কেবল বর্ষায়, এর দর্শন পেতে আপনাকে যেতে হবে বর্ষাতেই। আবহাওয়া কিছুটা বৈরী থাকলেও এ সময় লাল নদীতে মজে যাওয়ার পাশাপাশি বিখ্যাত রংধনু পর্বতমালা, কুয়েসওয়াচাকার ইনকা ঝুলন্ত সেতু আর ইনকা নগর ওয়াকরাপুকারার ধ্বংসাবশেষ দেখার সৌভাগ্য থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না আশা করি।

সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল, মাচু–পিচু ডট অরগ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত