নদীভাঙন

‘গাঙ্গে ঘর ভাঙে গেল। আপনারা দেহেন না। আমি অসুস্থ, কনতে কনে যাব, সরার জাগা (জায়গা) নাই, জাগা-জমি নাই আমাগোর’—এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সদর উপজেলার ৮০ বছর বয়সী মহিরন বেগম। পদ্মার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে চরসিলিমপুর এলাকায় হঠাৎ ভাঙন শুরু হয়।

পদ্মার ভাঙনে বিলীন হরিরামপুরের চরাঞ্চলের সুতালড়ি ইউনিয়নের ৪১ নম্বর রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে অন্য একটি স্কুলে। একই ইউনিয়নের আড়াই কিলোমিটার দূরের ডুবাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস করার স্থান নির্ধারিত হয়েছে পদ্মায় বিলীন স্কুলের শিক্ষার্থীদের। তবে স্কুল খোলার

আর মাত্র আড়াই হাত ভাঙলেই ভেসে যাবে অর্ধশত হেক্টর জমির ফসল। এরই মধ্যে ভেঙে গেছে মাদারীপুরের টেকেরহাট-কালীবাড়ী ফিডার সড়কের প্রায় ৯৫ শতাংশ পাকা রাস্তা। বাকিটুকু ভাঙলেই কৃষকের গোলায় আর উঠবে না উঠতি বোনা আর রোপা আমন। তাই আতঙ্কে দিন কাটছে মাদারীপুরের টেকেরহাটের বিদ্যানন্দী গ্রামের পাঁচ শতাধিক কৃষকের। 

পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার নদীভাঙন কবলিত স্থানীয় জনসাধারণ। আজ সোমবার উপজেলার তালবাড়ীয়ায় পদ্মা নদীর তীরে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করেন। 

নদীর পানি ও স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় বরিশালের বাবুগঞ্জের দেহেরগতি ইউনিয়নের হাসপাতাল সড়কটি আবারও নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। সন্ধ্যা নদীর রহিমগঞ্জ এলাকায় তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের জন্মভূমি রহিমগঞ্জসহ ৩টি গ্রাম। বিলীনের পথে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্

রাজবাড়ীর পাংশায় পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে আখের। বাম্পার ফলন হওয়ায় স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল কৃষকেরা। সেই স্বপ্নই এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে ভাঙন আতঙ্কে... 

ধানের ফলন দেখে খুশিতে মন ভরে গিয়েছিল রংপুরের পীরগাছার কৃষক শহিদুল ইসলামের। কিন্তু তাঁর খুশি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ঘাঘটের পেটে এখন শহিদুলের ধানখেত। শুধু কৃষক শহিদুল নন, তাঁর মতো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকের ধানখেত, বসতভিটা এখন নদীভাঙনের কবলে। সারা দেশ থেকে আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে

রংপুরের পীরগাছায় ঘাঘট নদীর ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহের টানা ভাঙনের ফলে উপজেলার পশ্চিম নগরজিৎপুর হরিপুরটারী, জলার মোংলাকুটি, উজানপাড় ও ডারারপাড় গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

দেশের মধ্যাঞ্চলগুলোতে পদ্মাসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে আরও নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। পানিবন্দী জীবনযাপন করছে হাজার হাজার মানুষ। অনেকে ভিটেমাটি হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে অন্যত্র।

১৯৯৬ সালে এমন নদীভাঙন দেখেছিল রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মানুষ। আড়াই দশক পর তাদের সামনে আবারও সর্বনাশা রূপে হাজির হয়েছে পদ্মা। প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে ভাঙন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেললেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের আলীপুর,

বাংলাদেশে নদীভাঙন কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়; বরং বলা যায়, নিয়মিত ঘটনা। অসংখ্য নদীর দেশে ভাঙন কোথাও না-কোথাও ঘটে চলে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ভাঙন প্রবল আকার ধারণ করে। গত কয়েক দিনে আজকের পত্রিকায় বেশ কয়েকটি জেলায় নদীভাঙনের খবর ছাপা হয়েছে।

জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনা নদীর পানি বাড়ছেই। এতে উপজেলার সাপধরী ইউনিয়ন যমুনার পানিতে টইটম্বুর। ডুবে গেছে সব রাস্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শত শত একর রোপা আমনখেত, বীজতলা ও শাকসবজির খেত। তীব্র ভাঙনে ইতিমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অনেক বাড়িঘর। ভাঙনের মুখে রয়েছে এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত ইন্দুল্লামার

কয়েক দিন আগেও বিদ্যুৎ ও সোলারের আলোয় আলোকিত ছিল তিস্তা নদী বেষ্টিত নয়ারহাট বাজার। চারদিকে ছিল সবুজে ঘেরা গাছপালা ও ফসলের খেত। চরাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবায় ছিল শিবদেব ক্লিনিক। এ ক্লিনিক থেকেই চরের মানুষজন চিকিৎসা সেবা নিতেন। কিন্তু চোখের সামনেই তিস্তার ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেল গরিবের চিকিৎসালয় শিবদে

উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে টাঙ্গাইলে যমুনা, ধলেশ্বরী, ঝিনাই নদীসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ভূঞাপুরসহ বিভিন্ন উপজেলার এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। তলিয়ে যাচ্ছে আমন ধান। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

পদ্মা ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চর এলাকা আজিমনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন। পাড় আর ১৫০ কিলোমিটার ভাঙলেই বিলীন হবে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ভবনটিও। 

টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ঝিনাই নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়া সড়ক মেরামত না করায় মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে

প্রখ্যাত সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদের কবর সহ নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করছেন পটুয়াখালীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী। আজ দুপুর ২টায় তিনি গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের ফুলখালী গ্রামে রামনাবাদ নদীর ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শনে আসেন।