Ajker Patrika

ভাঙন তীব্র, সর্বনাশা রূপে নদী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
ভাঙন তীব্র, সর্বনাশা রূপে নদী

১৯৯৬ সালে এমন নদীভাঙন দেখেছিল রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মানুষ। আড়াই দশক পর তাদের সামনে আবারও সর্বনাশা রূপে হাজির হয়েছে পদ্মা। প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে ভাঙন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেললেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের আলীপুর, খারিজাগাতি ও নিমতলা গ্রামের পাড়ই মূলত ভাঙনের শিকার।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, ১৯৯৬ সালের পর প্রতিবছর ভরা মৌসুমে এক হাত দুই হাত করে পাড় ভাঙত। এবার ইতিমধ্যেই প্রায় ২০০ ফুট পর্যন্ত ভেঙে গেছে। প্রমত্তা পদ্মা গ্রাস করেছে এলাকার অন্তত ১০টি বাড়ি। হুমকির মুখে আছে আরও বেশ কিছু বাড়ি ও স্কুল।

গতকাল শুক্রবার সকালে খারিজাগাতি ও নিমতলা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের বাসিন্দারা নদীপাড়ের গাছ কেটে নিতে ব্যস্ত। খারিজাগাতি গ্রামের গোলাম রসুল নামের এক ব্যক্তি তাঁর পাকাবাড়ির দরজা-জানালা খুলে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন। তাঁর বাড়ি থেকে দুই হাত দূরে এসে গেছে ভাঙন।

ভাঙনের মুখে থাকা নিমতলা গ্রামের আশরাফুন্নেসা বেগম বলেন, ‘ভিটামাটি কিছু নাই আর। এইটুকুই জমি। এটা ভেঙে গেলে কোথায় যাব? কে দেবে জায়গা?’

রাজশাহী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে অস্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ তিনি জানান, ভাঙনের শিকার গোদাগাড়ীর চার কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণের সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য তাঁরা মন্ত্রণালয়ে লিখেছেন। তবে সেখান থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি।

এদিকে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর প্রতিনিধি জানান, উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটা, নুসরতপুর, ইব্রাহিমপুরসহ কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ এখন দিশেহারা। প্রতিদিনই গাছপালাসহ ভিটেমাটি গ্রাস করে নিচ্ছে পদ্মা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইব্রাহিমপুর গ্রামের একটি ছবি মানুষের হৃদয়ে দাগ কেটেছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই গ্রামের জামে মসজিদের অবশিষ্ট জায়গায় নামাজের দৃশ্য ছিল এটি। পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক ব্যক্তি ছবিটি পোস্ট করেছিলেন।

হাতিঘাটা ইউনিয়ন থেকে ২৫-৩০টি বাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে আজিমনগর ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি আবদুল হালিম বলেন, তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ না নিলে এই ইউনিয়নই টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে যাবে। এদিকে, কাজের অনুমোদন পাননি বলে কাজ শুরু হয়নি জানিয়েছেন মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইন উদ্দিন।

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে ভাঙন। বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। শুধু পদ্মাই নয়, ভাঙন শুরু হয়েছে মেঘনার পাড়েও। ভোলার দৌলতখান প্রতিনিধি জানিয়েছেন, উপজেলায় মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে বিলুপ্তির পথে শহীদ সিপাহি বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের জন্মভূমি চর হাজিপুর। গত দুই মাসে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে এই ইউনিয়নে গুচ্ছগ্রাম-২ (সিভিআরপি) প্রকল্পের আওতায় ৪২০টি ঘরও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফসলি জমি, বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে ৬ শতাধিক পরিবার।

এদিকে, ভাঙনের পাশাপাশি নদীর পানি উপচে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হচ্ছে। নীলফামারী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি গতকাল সকালে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। উজানের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। এতে নতুন করে ডিমলা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বিভিন্ন চরের ২ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রামের চিলমারী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। ঘরে পানি প্রবেশ করায় অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধে বা আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।

রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধিও জানিয়েছেন, পদ্মার পানি দ্বিতীয়বারের মতো বাড়তে শুরু করায় নিম্নাঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৬৭টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ। জেলার তিনটি পয়েন্টেই পানি এখন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিএনসিসির পদ ছাড়লেন এস্তোনিয়ার নাগরিক আমিনুল ইসলাম

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা, চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

এনআইডির নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের দায়িত্বে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর অতর্কিত গুলি, নিহত ২৬

পদত্যাগ করব না, আলোচনা করে সমাধান করব: কুয়েট উপাচার্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত