কাতার বিশ্বকাপ

সবই হাতে তুলেছেন, শুধু বিশ্বকাপটাই অধরা থেকে গেল। খেলোয়াড় হিসেবে সেটি হয়তো আর কখনোই উঁচিয়ে ধরার সুযোগ হবে না ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। গতকাল মরক্কোর বিপক্ষে ১-০ গোলে হারের পর পর্তুগালের বিশ্বকাপ অভিযান

একই রাতে যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দেখলেন হ্যারি কেইন। আল-বায়েত স্টেডিয়ামে গতকাল ফ্রান্সের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে পেনাল্টিতে গোল করেই ইংল্যান্ডকে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন। আবার এই পেনাল্টি মিস করেই দলকে

বেলজিয়াম ও স্পেনের পর গতকাল পর্তুগালকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দিয়েছে মরক্কো। ইউসেফ এন-নেসরির একমাত্র গোলে পর্তুগালকে হারিয়ে আরেকটি চমক দেয় উত্তর আফ্রিকার দেশটি। তবে হারের পর ম্যাচে রেফারিংকে দুষলেন পর্তুগালের ডিফেন্ডার

দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল কনফেডারেশন থেকে চারটি দল অংশ নিয়েছিল কাতার বিশ্বকাপের মূল পর্বে। উরুগুয়ে-ইকুয়েডর প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নিয়েছিল। শিরোপার দাবি নিয়ে আসা ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা ভালোভাবেই এগোচ্ছিল। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের স্বপ্ন যাত্রার পথ উপড়ে দিয়েছে ক্রোয়েশিয়া।

‘রেফারিং নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না, তাহলে তারা আমাকে নিষিদ্ধ করে দেবে’—নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধ উত্তেজনার ম্যাচের পর এ কথা বলছিলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জিতে শেষ চারে চলে গেছে আর্জেন্টিনা দল। কিন্তু ম্যাচে যে তাদের লড়তে হয়েছে আরেক শক

আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে মরক্কো। ১৯৯০ বিশ্বকাপে আফ্রিকার হয়ে প্রথমবার কোয়ার্টারে উঠেছিল ক্যামেরুন। ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে আয়োজিত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে

আরও অনেক লাতিন ফুটবলারের মতো ছোটবেলায় দারিদ্র্যের কশাঘাত সইতে হয়েছে এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে। মাঝরাতে বাবা আলবার্তোকে কাঁদতে দেখেছেন পরিবারের ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হওয়ায়। কিন্তু দারিদ্র্য মেরে ফেলতে পারেনি

নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে গত পরশু কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। ১২০ মিনিটের ম্যাচে ৪৮টি ফাউল আর ১৮ হলুদ কার্ডে বিশ্বকাপে রেকর্ডও হয়েছে। স্পেনের রেফারি অ্যান্তেনিও মাতেউ লাহোজের

বিশ্বকাপের ট্রফি ধরে রাখতে আর মাত্র দুটি ম্যাচ দূরে ফ্রান্স। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের পর আরেকটি সোনালি প্রজন্ম পেয়েছে তারা। ২০১৮ বিশ্বকাপ জয়ের পর অভিজ্ঞ আর তারুণ্যের মিশেলে এবারের দলটাও সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ।

কান্না তাঁর বাঁধ মানলো না। চোখের পানি দেখাতে চাননি বলে সবার আগে চলে গেলেন ড্রেসিং রুমে। টানেলে সারাটা পথ চোখ গড়িয়ে নামল অশ্রু। বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কেঁদে কাঁদালেন সবাইকে। অপরপ্রান্তে তখন ইতিহাস গড়ার আনন্দে উদযাপনে ব্যস্ত মরক্কো।

বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়াকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না নেইমার। এবারের বিদায়কে সবচেয়ে বড় আঘাত বলে মনে করছেন তিনি। এতটাই হতাশ হয়েছেন যে, সামাজিক মাধ্যমে মনস্তাত্ত্বিকভাবে বিধ্বস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। 

খেলা শেষ হওয়ার পর কাতারের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম থেকে মন খারাপ করে বের হন ব্রাজিলিয়ান সমর্থক পাউলো, জোসে ও মার্কুস। তাঁরা খেলা দেখতেই এসেছিলেন ব্রাজিল থেকে। জোসের হলুদ জার্সির সঙ্গে মাথায় হলুদ কৃত্রিম তন্তুর চুল। মুখে বিভিন্ন রঙের প্রলেপ। বোঝাই যাচ্ছে প্রিয় দল ব্রাজিল জিতবে, আনন্দ করবেন; তাই ইচ্ছেমত

কাতার বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত যত ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে মাঠের বাইরে আলোচনায় সবার আগে উঠে এসেছে পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নাম। কখনো কোচের সাথে দ্বন্দ্ব আবার, কখনো দল ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি। সবগুলোই কেমন যেন নাটকীয়তার পূর্ণ। 

আর্জেন্টিনা-নেদার‍ল্যান্ডস কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে ছিল যুদ্ধংদেহী মনোভাব। গতকাল লুসাইলে ম্যাচ শেষ হওয়ার পরেও এর রেশ থেকে যায়। যেখানে নেদারল্যান্ডস কোচ লুই ফন গালের সঙ্গে লিওনেল মেসিরা এক বিশেষ উদ্‌যাপন করলেন। 

ছবিটা গত রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। যে ছবি শুধুই ছবি নয়। যে ছবি শুধুই ফুটবলের নয়। ছবিটা ফুটবল ছাপিয়ে জীবনেরও গল্প। ছবিটা হৃদয়স্পর্শী। 

আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ যে কতটা উত্তেজনাপূর্ণ ছিল, তা তো বোঝা গেছে রেফারি আন্তোনিও মাতেউ লাহোজের কার্ড দেখানোয়। গতকাল ম্যাচ শেষেও এই উত্তেজনা বজায় থাকে। এক ডাচ ফরোয়ার্ডকে ধমক দিয়েছেন লিওনেল মেসি। 

২০০২ বিশ্বকাপে জার্মানিকে হারিয়েই পঞ্চম বিশ্বকাপ জিতেছিল ব্রাজিল। এরপরের ২০ বছরের গল্পটা ব্রাজিলিয়ানদের জন্য ভীষণ হতাশার। পাঁচ বিশ্বকাপে ইউরোপিয়ান দলগুলোর কাছে নকআউট রাউন্ডে হেরেছে ব্রাজিল। যার মধ্যে চারবার হেরেছে কোয়ার্টার ফাইনালে, আরেকবার সেমিফাইনালে।