Ajker Patrika

মিজানুরকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া অনভিপ্রেত, আমার সংশ্লিষ্টতা নেই: ফয়েজ আহমদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৯
প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। ফাইল ছবি

মিজানুর রহমান সোহেলকে মধ্যরাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সকালেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

আজ বুধবার দুপুরে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব কথা জানানো হয়।

আজ দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি নামে একটি সংগঠনের এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার) বিষয়ক একটি সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। মিজানুর রহমান এই সংগঠনের পরামর্শক।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থেই আমরা এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার) বাস্তবায়ন করছি। অবৈধ হ্যান্ডসেটের লাগাম টানতে সংক্ষুব্ধ পক্ষের সঙ্গে বিটিআরসি বৈঠকও করেছে। এত কিছুর পরও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো গণমাধ্যম আমার ওপর দায় চাপিয়েছে। তাদের উদ্দেশেই আমার বক্তব্য—এটা অনভিপ্রেত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কাজ করে। এখানে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকার অবকাশই নেই। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গোয়েন্দা পুলিশের দলটিই তাঁকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে।’

তিনি বলেছেন, ‘সাংবাদিক মিজানুরের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত বা পেশাগত কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এরপরও এমন “প্রোপাগান্ডা” মুক্তমত প্রকাশের স্বাধীনতাকেই ভূলুণ্ঠিত করছে।’

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মিজানুর রহমান সোহেলকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে জড়িয়ে একটি ভিত্তিহীন প্রচারণা চালানো হয়েছে। অভিযোগের বিষয়টি ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মঙ্গলবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ভোরের কাগজের অনলাইন এডিটর মিজানুর রহমান সোহেলকে কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় বলে খবর পাওয়া যায়। তবে এর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে জড়িয়ে একটি ভিত্তিহীন প্রচারণা চালানো হয়েছে; যা সকালে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেখানে এনইআইআর বাস্তবায়নের সঙ্গে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে জড়িয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে সত্যের অপলাপ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এ ধরনের অসত্য তথ্য প্রচার জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তাই আশা করি, এরপর আর কেউ এ ধরনের লেখায় বিভ্রান্ত হবেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তিন পার্বত্য জেলার স্কুলে বসছে স্টারলিংক সংযোগ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলার স্কুলগুলোতে বসানো হচ্ছে স্টারলিংক ইন্টারনেট সংযোগ। এ জন্য বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল), খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মধ্যে তিনটি পৃথক চুক্তি সই হয়েছে।

বিএসসিএল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত ২৭ নভেম্বর বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কার্যালয়ে, ১২ নভেম্বর রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ কার্যালয়ে এবং ১১ নভেম্বর খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে চুক্তি তিনটি সই হয়।

বিএসসিএল মনে করছে, এসব চুক্তির ফলে স্টারলিংক ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে তিন জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ধাপে ধাপে ই-লার্নিং সিস্টেম চালু হবে। এর ফলে পাহাড়ি অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা নিরবচ্ছিন্ন ও উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস, ডিজিটাল কনটেন্ট এবং ভার্চুয়াল শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। ফলে ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও দূরবর্তী এলাকার শিক্ষার্থীরাও মূলধারার শিক্ষায় যুক্ত হতে পারবে।

বিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. মুহাম্মদ ইমাদুর রহমান বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ি অঞ্চলের শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেল। প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ঘটিয়ে দক্ষ জনগোষ্ঠী গঠনের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল সরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এআই বিশ্বে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য আরও তীব্র করে তুলবে: জাতিসংঘ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ০৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সম্ভাবনা ঘিরে যতই উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাক না কেন, এর আড়ালে রয়েছে কিছু কঠিন বাস্তবতা। বিশেষ করে তথ্যনির্ভর বিশ্বে আগে থেকেই বঞ্চিত মানুষের ওপর এই প্রযুক্তির প্রভাব এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে এআই থেকে যে সুফল মিলবে, তার বেশির ভাগই ধনী দেশগুলো ভোগ করবে। মৌলিক চাহিদা পূরণ থেকে শুরু করে উন্নত প্রযুক্তিগত দক্ষতা—সব ক্ষেত্রেই বৈষম্য আরও বাড়তে পারে।

আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে এ পরিস্থিতিকে শিল্পবিপ্লব-পরবর্তী ‘মহা বিভাজন’-এর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে; যখন পশ্চিমা অনেক দেশ দ্রুত আধুনিকায়নের দিকে এগিয়ে যায় আর অন্য অনেক দেশ পড়ে পিছিয়ে।

কোম্পানি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এআই কীভাবে ব্যবহার করবে—এ প্রশ্ন প্রায় সর্বজনীন উদ্বেগের কারণ। এই প্রযুক্তি মানুষের কাজকে বদলে দিতে পারে, এমনকি কম্পিউটার ও রোবট দিয়ে কিছু কাজ প্রতিস্থাপনও হতে পারে।

কিন্তু এআই নিয়ে যে মনোযোগ-উৎপাদনশীলতা, প্রতিযোগিতা কিংবা প্রবৃদ্ধির দিকে—প্রতিবেদনের লেখকদের মতে, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো এই প্রযুক্তি মানুষের জীবনে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে।

ব্যাংককে এক সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও বার্তায় প্রতিবেদনের প্রধান লেখক লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক মাইকেল মুথুকৃষ্ণ বলেন, ‘আমরা সাধারণত প্রযুক্তির ভূমিকা অতিরঞ্জিত করি। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, প্রযুক্তি নয়—মানুষই প্রথম অগ্রাধিকার।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব সম্প্রদায়ে এখনো দক্ষতা, বিদ্যুৎ-সংযোগ ও ইন্টারনেট সুবিধা সীমিত, অথবা যারা যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ বা জলবায়ু বিপর্যয়ে বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন—তাদের জন্য বাদ পড়ার ঝুঁকি আরও বেশি। একই সঙ্গে এমন মানুষ অনেক সময় ‘অদৃশ্য’ থেকে যান তথ্যভান্ডারে। ফলে তারা কোনো নীতিনির্ধারণী হিসাব-নিকাশে ধরা পড়েন না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি সর্বব্যাপী প্রযুক্তি হিসেবে এআই উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে, নতুন শিল্প তৈরি করতে পারে এবং পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকে এগিয়ে আসার সুযোগ দিতে পারে

কৃষিকাজে উন্নত পরামর্শ, কয়েক সেকেন্ডে এক্স-রে বিশ্লেষণ ও দ্রুত চিকিৎসা নির্ণয়, আরও কার্যকর আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন—এসব সুবিধা গ্রামীণ সম্প্রদায় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ এলাকার জন্য বড় সম্ভাবনা এনে দিতে পারে।

প্রতিবেদনটি বলছে, দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য ও দুর্যোগ ঝুঁকি বিশ্লেষণকারী এআই ব্যবস্থা দ্রুততর, ন্যায়সংগত ও আরও স্বচ্ছ সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করতে পারে, যা তথ্যকে রূপান্তরিত করে ধারাবাহিক শিক্ষায় এবং জনস্বার্থে।

তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশেও ডেটা সেন্টারগুলো অত্যধিক পরিমাণে বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহার করতে পারে। এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বাড়তি চাহিদা মেটাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে গেলে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হতে পারে, পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।

এই প্রযুক্তি নানা নৈতিক, গোপনীয়তা ও সাইবার নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট উদ্বেগও তৈরি করছে।

গবেষকেরা দেখেছেন, হ্যাকাররা সাইবার হামলার কিছু অংশ স্বয়ংক্রিয় করতে এআই ব্যবহার করছে। পাশাপাশি ভুয়া ভিডিও বা ডিপফেকের সমস্যা রয়েছে, যা ভুল তথ্য ছড়াতে পারে বা অপরাধকে সহজ করতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরসহ এশিয়ার অনেক দেশ এআইয়ের সুবিধা কাজে লাগানোর মতো অবস্থানে আছে।

অন্যদিকে আফগানিস্তান, মালদ্বীপ ও মিয়ানমারের মতো দেশে প্রয়োজনীয় দক্ষতা, নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ কিংবা এআইয়ের গণনাশক্তি কাজে লাগাতে সহায়ক অন্যান্য সম্পদ যথেষ্ট নেই। এমনকি উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে আঞ্চলিক বৈষম্যের কারণে কিছু অঞ্চল পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষের এখনো ইন্টারনেট সংযোগ নেই।

ইউএনডিপির এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফিলিপ স্কেলেকেনস বলেন, এই ব্যবধানগুলো কমানো না গেলে লাখ লাখ মানুষ সেসব ডিভাইস, ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা, ডিজিটাল পরিচয়পত্র, শিক্ষা ও দক্ষতা থেকে বঞ্চিত থাকবে; যেগুলো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে পূর্ণ অংশগ্রহণের জন্য অপরিহার্য। আর এতে তারা আরও পিছিয়ে পড়বে।

তথ্যসূত্র: এপি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টেলিটকের প্রযুক্তিগত বৈষম্য নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মঙ্গলবার আয়োজিত মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মঙ্গলবার আয়োজিত মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিটকের প্রযুক্তিগত বৈষম্য নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও অংশ নেন।

মানববন্ধনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, তরঙ্গ নিলামের ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই আন্দোলনের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। একের পর এক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে সরকারের সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটকও বিলুপ্ত করে দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালিদ আবু নাসির বলেন, ‘প্রযুক্তির উন্নয়নের বিপক্ষে আমরা নই। ৭০০ ব্যান্ডের তরঙ্গ ব্যবহারের বিপক্ষেও আমরা নই। তবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটককে বাইরে রেখে তরঙ্গ বরাদ্দের সিদ্ধান্তের আমরা প্রতিবাদ জানাই। বর্তমানে একটি প্রতিষ্ঠান একাই ৯০ শতাংশ লাভ করছে। অন্য একটি প্রতিষ্ঠান ৮ শতাংশ লাভে আছে। বাকি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ টেলিটক লোকসান গুনছে। এর মধ্যে যদি টেলিটককে পিছিয়ে রাখা হয়, তাহলে বাজারে প্রতিযোগিতা ধ্বংস হবে।’

মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ৭০০ ব্যান্ডের তরঙ্গ টেলিটককে বরাদ্দ দিতে হবে।

এ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৭০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম আন্তর্জাতিকভাবে মোবাইল কভারেজ ও ৫জি বিস্তারের জন্য ‘গোল্ডেন ব্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত। এই ব্যান্ডের মোট ৪৫ মেগাহার্টজের মধ্যে প্রথম ধাপে ২৫ মেগাহার্টজ নিলামের ঘোষণা এবং বাকি ২০ মেগাহার্টজ ভবিষ্যতে চাহিদাভিত্তিক বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত দেশের রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটকের ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে।

সম্প্রতি বিটিআরসি ও সব অপারেটরের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় জানানো হয়, আগামী ১৪ জানুয়ারি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।

মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, অভিযোগ উঠেছে, সভায় এক বেসরকারি অপারেটর প্রকাশ্যে টেলিটকের জন্য কোনো ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ না রাখার আহ্বান জানিয়েছে। সরকারের নিজস্ব অপারেটরকে বাদ দিয়ে বিদেশি মালিকানাধীন অপারেটরদের সুবিধা দেওয়ার এই প্রস্তাব ‘বৈষম্যমূলক ও অযৌক্তিক’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ও দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজ। ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদেশি মোবাইল অপারেটররা মুক্তবাজারে সেবা দিলেও তখন কলচার্জ, ইনকামিং চার্জ, অব্যবহৃত ব্যালেন্স কেটে নেওয়া—এসব কারণে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছিল।

এমন বাস্তবতায় স্বল্প খরচে জনবান্ধব মোবাইল সেবা দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে টেলিটক প্রতিষ্ঠিত হয়। টেলিটক শুরুতেই কলচার্জ কমিয়ে আনায় বিদেশি কোম্পানিগুলো তা করতে বাধ্য হয়। এটাই ছিল টেলিটকের প্রথম বড় অবদান। দেশে প্রথম অনলাইন ভর্তি আবেদন, চাকরির আবেদন, অনলাইন বিল পরিশোধের মতো জনবান্ধব সেবা চালু করে টেলিটক। বিদেশি অপারেটরদের যেখানে বিনিয়োগ ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি, সেখানে টেলিটক মাত্র ৬ হাজার কোটি টাকায় সীমাবদ্ধ সুবিধায় দেশের মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে।

মানববন্ধনে বক্তারা জানান, ৭০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম টেলিটকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি মোবাইল নেটওয়ার্কের সবচেয়ে শক্তিশালী কভারেজ ব্যান্ড, যা কম টাওয়ারে বিস্তৃত এলাকা কভার করতে পারে এবং দুর্গম ও গ্রামীণ অঞ্চলে স্থিতিশীল সিগন্যাল নিশ্চিত করে ৫জি বিস্তারের ভিত্তি তৈরি করে। রাষ্ট্রীয় নির্দেশনায় টেলিটক ইতিমধ্যে দুর্গম এলাকায় সেবা দিচ্ছে। কিন্তু সীমিত বিনিয়োগ ও কমসংখ্যক ব্যবহারকারী নিয়ে দেশব্যাপী মানসম্মত নেটওয়ার্ক বজায় রাখা কঠিন। টেলিটককে বঞ্চিত করা হলে গ্রামীণ জনগণ মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হবে, দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বিদেশি অপারেটররা অতিরিক্ত বাজার সুবিধা পাবে। একই সঙ্গে সরকারি জরুরি সেবা বিঘ্নিত হতে পারে।

বক্তারা জানান, ৭০০ ব্যান্ড না পেলে বেশি টাওয়ার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তায় টেলিটকের অপারেটিং খরচ (পরিচালন ব্যয়) বাড়বে; যার প্রভাব গ্রাহকসেবার মান ও খরচ উভয় ক্ষেত্রেই পড়তে পারে।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম, গ্রিন পার্টির চেয়ারম্যান রাজু খান প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খাওয়া যায় যে রোবট, পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন স্বাদেরও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জেলির মতো ভক্ষণযোগ্য রোবট বানিয়েছেন বিজ্ঞানীর। ছবি: ইপিএফএল
জেলির মতো ভক্ষণযোগ্য রোবট বানিয়েছেন বিজ্ঞানীর। ছবি: ইপিএফএল

রোবট নিয়ে আমাদের এত দিনকার একটি বড় সমস্যা ছিল—এগুলো খাওয়া যায় না! তবে এবার বিজ্ঞানীদের নিরলস চেষ্টায় সেই বাধা অতিক্রম করা গেছে। সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা বিশ্বের প্রথম সম্পূর্ণরূপে ভক্ষণযোগ্য কোমল রোবট তৈরি করেছেন। এই রোবটের ব্যাটারি ও অ্যাকচুয়েটর (সক্রিয় অংশ) সম্পূর্ণভাবে গিলে ফেলা যায়। এটি খাওয়ার উপযোগী বিভিন্ন ফ্লেভারেও তৈরি করা হয়েছে।

যদিও প্রাথমিকভাবে এটি মানুষের জন্য তৈরি করা হয়নি, তবে এই উদ্ভাবন রোবোটিকস এবং ওষুধ শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

বাইরে থেকে দেখলে রোবটটিকে দেখতে অনেকটা জেলি বা ‘জেলো’ দিয়ে তৈরি একটি সরল টেট্রিস ব্লকের মতো মনে হয়। প্রচলিত রোবটগুলোতে যেখানে প্লাস্টিক ও ধাতব যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়, সেখানে এই নরম রোবটটির মূল দেহ এবং নড়াচড়ার জন্য ব্যবহৃত পাম্পের টিউবগুলো তৈরি হয়েছে মোম এবং জিলেটিনের মতো ভোজ্য উপকরণ দিয়ে।

সাধারণ রোবটগুলোর মতোই এটি গ্যাস পাম্প করে চেম্বারের ভেতরে ও বাইরে চলাচল করে। গ্যাসের প্রভাবে রোবটের দেহ বিকৃত হয় এবং নড়াচড়া করতে সক্ষম হয়। তবে এই রোবটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো এর ভোজ্য ব্যাটারি।

এটির ব্যাটারি সিলিন্ডার আকৃতির, যার ভেতরে আলাদা চেম্বারে বেকিং সোডা এবং তরল সাইট্রিক অ্যাসিড রয়েছে। বেকিং সোডা দিয়ে তৈরি একটি পাতলা মেমব্রেন বা পর্দা এই উপাদান দুটিকে আলাদা করে রাখে।

যখন মেমব্রেনে চাপ প্রয়োগ করা হয়, তখন অ্যাসিড এবং বেকিং সোডা মিশে যায়। রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়। এই নির্গত গ্যাসই হলো রোবটটিকে চালনা করার মূল শক্তি। এই শক্তিই চেম্বারগুলোকে বিকৃত করে এবং রোবটকে নড়তে সাহায্য করে। ছোটবেলার বিজ্ঞান ক্লাসে তৈরি সাধারণ গ্যাস প্রতিক্রিয়ার মতোই এর কার্যপ্রণালী।

রোবটটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এটির মূল লক্ষ্য ছিল বন্যপ্রাণীদের কাছে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া, যেখানে মানুষের পক্ষে নিরাপদে পৌঁছানো সম্ভব নয়। গবেষকেরা এ ক্ষেত্রে বুনো শুয়োরের উদাহরণ দিয়েছেন। এই রোবট ব্যবহার করে এদের দেহে দূর থেকে ওষুধ প্রয়োগ করা সম্ভব হবে।

তবে এরই মধ্যে মানুষও এই রোবটটির স্বাদ নিতে শুরু করেছে। বর্তমানে ফলের স্বাদের অ্যাকচুয়েটরসহ মানুষের ওপর এই রোবটের পরীক্ষা চলছে। এই গবেষণা প্রকল্পের ব্যবস্থাপক দারিও ফ্লোরিয়ানো জোর দিয়ে বলেন, এই রোবটের আসল তাৎপর্য হলো এর বায়ুচালিত ব্যাটারি এবং ভালভ সিস্টেম। এই যুগান্তকারী প্রযুক্তি আগামীতে খাদ্য বা ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন পথ দেখাতে পারে।

সূত্র: নোটবুক চেক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত