Ajker Patrika

চীনের হয়ে মার্কিন টেলিকম কোম্পানিতে গুপ্তচরবৃত্তি, প্রকৌশলীর ৪ বছরের জেল

আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ১৩
একজন মার্কিন নাগরিক এবং চীনা অভিবাসী হলেন পিং লি (৫৯)। ছবি: লিডারস মিনা ডট কম
একজন মার্কিন নাগরিক এবং চীনা অভিবাসী হলেন পিং লি (৫৯)। ছবি: লিডারস মিনা ডট কম

চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করার অপরাধে এক টেলিকম প্রকৌশলীকে ৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (ডিওজে) জানায়, তিনি তাঁর নিয়োগকর্তা কোম্পানির সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য বেইজিংকে সরবরাহ করছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ (ডিওজে) অনুযায়ী, একজন মার্কিন নাগরিক এবং চীনা অভিবাসী হলেন পিং লি (৫৯)। ২০১২ সাল থেকে চীনের স্টেট সিকিউরিটি মিনিস্ট্রি (এমএসএস) –এর জন্য একটি ‘সহযোগী যোগাযোগ’ হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এর মানে হলো, তিনি চীনের মন্ত্রণালয়ের পক্ষে গবেষণা পরিচালনা এবং অন্যান্য সংবেদনশীল তথ্য চীনের কাছে পৌঁছানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

চীনের বিরোধী দল, গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারী, ফ্যালুন গং আধ্যাত্মিক আন্দোলনের সদস্য, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা এবং তার নিজ প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন পিং লি। এসব তথ্য সরবরাহ করার জন্য এবং চীনের স্টেট সিকিউরিটি মিনিস্ট্রির (এমএসএস) সঙ্গে যোগাযোগ করতে তিনি গোপন গুগল মেইল, ইয়াহু অ্যাকাউন্ট এবং অন্যান্য অনলাইন সেবা ব্যবহার করতেন। এ ছাড়া গোপন বৈঠকের জন্য নিয়মিতভাবে চীনেও সফর করেন লি।

লির দুটি নিয়োগকর্তার নাম প্রকাশ করেনি ডিওজে। এদের ‘একটি প্রধান মার্কিন টেলিকম কোম্পানি এবং একটি আন্তর্জাতিক তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। তবে অন্যান্য মিডিয়া আউটলেটগুলো নিয়োগকর্তাদের ভ্যারাইজন এবং ইনফোসিস হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানে কারণ লির লিংকডিন অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের মতে, লি ভেরিজনের চীনভিত্তিক শাখাগুলোর তথ্য, প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা পরিকল্পনা এবং সাইবার আক্রমণের ঘটনার তথ্য সরবরাহ করেছিলেন। মার্কিন কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্য করে এই সাইবার হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে ‘সোলারউইন্ডস’ নামের সাইবার হামলাও রয়েছে, যা চীনের সরকারের পরিচালনা করে বলে সন্দেহ করা হয়। ‍আন্তর্জাতিক আইটি প্রদানকারী কোম্পানির জন্য সাইবার সিকিউরিটি প্রশিক্ষণ উপকরণ এবং অন্যান্য তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছিল।

চীনের অনুরোধে দ্রুত সাড়া দিতেন লি। তিনি ১০ বছর ধরে চীনের এমএসএসের জন্য কাজ করার সময় তাদের অনুরোধগুলো মাঝে মাঝে এক দিনের মধ্যে পূরণ করতেন।

লিকে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার জরিমানাও রয়েছে। সেই সঙ্গে চার বছর কারাভোগের পর পরবর্তী তিন বছর তিনি নজরদারিতে থাকবেন।

চীনের সমর্থনে চলা গুপ্তচরবৃত্তির কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্রমেই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে একটি গুপ্তচর দল ‘সল্ট টাইফুন’ এর কার্যক্রম নিয়ে। এই হ্যাকার দল ভ্যারাইজন, এটি অ্যান্ড টি এবং লুমেন টেকনোলজিসে হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে সিনেট ইনটেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান মার্ক ওয়ার্নার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার চুল পুড়ে যাচ্ছে’। কারণ চীনা হ্যাকাররা মার্কিন নেটওয়ার্কে প্রবেশ করেছে। তার মতে, এসব সাইবার হামলা কারণে ‘হাজার হাজার’ নেটওয়ার্ক ডিভাইস পরিবর্তন করা প্রয়োজন হতে পারে, যাতে চীনের প্রবেশাধিকার বন্ধ করা যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

তথ্যসূত্র: দ্য রেজিস্টার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চ্যাটজিপিটির কাছে দৈনিক লক্ষাধিক মানুষ আত্মহত্যার ইচ্ছা জানায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
এআই চ্যাটবটটির কাছে লাখো মানুষ ‘আত্মহত্যা’র ইচ্ছা প্রকাশ করছে। ছবি: জেমিনি
এআই চ্যাটবটটির কাছে লাখো মানুষ ‘আত্মহত্যা’র ইচ্ছা প্রকাশ করছে। ছবি: জেমিনি

চ্যাটজিপিটি যেন এখন মানুষের নিত্যদিনকার সঙ্গী। প্রতিদিনই কিছু না কিছু জানতে আমরা চ্যাটজিপিটির শরণাপন্ন হচ্ছি। এই নির্ভরতা নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করছেন, আবার প্রযুক্তি উন্নতি হিসেবে একে বাহবা দিচ্ছে অনেকে। কিন্তু এবার চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই জানিয়েছে, প্রতিদিন তাদের এই এআই চ্যাটবটটির কাছে লাখো মানুষ ‘আত্মহত্যা’র ইচ্ছা প্রকাশ করছে।

গতকাল সোমবার এক ব্লগপোস্টে এ কথা জানায় ওপেনএআই। চ্যাটবটটি কীভাবে এসব সংবেদনশীল কথোপকথন পরিচালনা করে, সে সম্পর্কে একটি আপডেটের অংশ হিসেবে এই তথ্য প্রকাশিত হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা কীভাবে ও কতটা বাড়িয়ে তুলতে পারে সে প্রসঙ্গে জানাতে গিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ওপেনএআই।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, প্রতি সপ্তাহে এক মিলিয়নেরও বেশি চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারী এমন বার্তা পাঠান যেখানে ‘আত্মহত্যার পরিকল্পনা বা ইচ্ছার স্পষ্ট ইঙ্গিত’ পাওয়া যায়।

আত্মহত্যা-সংক্রান্ত চিন্তা ও সংশ্লিষ্ট যোগাযোগের পাশাপাশি, ওপেনএআই আরও জানিয়েছে, প্রতি সপ্তাহে সক্রিয় ব্যবহারকারীদের প্রায় ০.০৭ শতাংশ—অর্থাৎ ৮০ কোটি সাপ্তাহিক ব্যবহারকারীর মধ্যে প্রায় ৫ লাখ ৬০ হাজার জন তাদের কথোপকথনে ‘মনোরোগজনিত বিভ্রম (psychosis) বা মানিয়াজনিত (mania) জরুরি মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার সম্ভাব্য লক্ষণ’ প্রদর্শন করেন।

তবে ওপেনএআই ব্লগপোস্টে সতর্ক করে জানায়, এ ধরনের কথোপকথন শনাক্ত বা পরিমাপ করা কঠিন। আর এটা কেবল একটি প্রাথমিক বিশ্লেষণ।

চ্যাটজিপিটির সঙ্গে সম্পর্কিত মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার তথ্য প্রকাশ করার পর ওপেনএআই এখন বাড়তি নজরদারির মুখে পড়েছে। সম্প্রতি এক কিশোরের আত্মহত্যার ঘটনায় তার পরিবারের মামলার পর এই নজরদারি আরও তীব্র হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই কিশোর আত্মহত্যার আগে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কথোপকথন চালিয়েছিল।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) ওপেনএআই-সহ এআই চ্যাটবট তৈরি করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একটি বিস্তৃত তদন্ত শুরু করেছে। এসব চ্যাটবট কীভাবে শিশু-কিশোরদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তা খতিয়ে দেখছে এফটিসি।

ওপেনএআই তাদের পোস্টে দাবি করেছে, সাম্প্রতিক জিপিটি-৫ আপডেটে চ্যাটজিপিটির ‘অবাঞ্ছিত আচরণ’ কমেছে। নিজের ক্ষতি করা ও আত্মহত্যা-সংক্রান্ত ১ হাজারটিরও বেশি কথোপকথনের ভিত্তিতে করা এক মূল্যায়নে দেখা গেছে, ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা আরও উন্নত হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধের তাৎক্ষণিক কোনো জবাব দেয়নি ওপেনএআই।

কোম্পানির পোস্টে বলা হয়েছে, ‘নতুন জিপিটি-৫ (GPT-5) মডেল আমাদের কাঙ্ক্ষিত আচরণের সঙ্গে ৯১ শতাংশ সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে আগের মডেলে এই হার ছিল ৭৭ শতাংশ।’

ওপেনএআই জানিয়েছে, জিপিটি-৫ সংস্করণে সঙ্কটকালীন সহায়তা হটলাইনগুলোর অ্যাক্সেস বাড়ানো হয়েছে এবং দীর্ঘ সেশনের সময় ব্যবহারকারীদের বিরতি নেওয়ার জন্য স্মরণ করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা যোগ করা হয়েছে।

টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, মডেলটি আরও উন্নত করতে গত কয়েক মাসে গ্লোবাল ফিজিশিয়ান নেটওয়ার্কের ১৭০ জন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞকে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। মডেলের প্রতিক্রিয়াগুলোর নিরাপত্তা মূল্যায়ন করে মানসিক স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত প্রশ্নে চ্যাটবটের উত্তর তৈরি করতে সহায়তা করেছেন তাঁরা।

ওপেনএআই জানিয়েছে, এ কাজের অংশ হিসেবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও মনোবিজ্ঞানীরা গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি জড়িত ১ হাজার ৮০০ টিরও বেশি মডেল প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করেছেন। নতুন জিপিটি-৫ চ্যাট মডেলের উত্তরগুলোর সঙ্গে আগের মডেলগুলোর তুলনা করেছেন।

এআই গবেষক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন, চ্যাটবটগুলো প্রায়ই ব্যবহারকারীর সিদ্ধান্ত বা বিভ্রমকে ক্ষতিকর হোক বা না হোক, অন্ধভাবে সমর্থন করার প্রবণতা দেখায় যা ‘সাইকোফ্যান্সি’ (sycophancy) নামে পরিচিত।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, মানুষ যদি মনস্তাত্ত্বিক সহায়তার জন্য এআই চ্যাটবটের ওপর নির্ভর করে, তাহলে তা ঝুঁকিপূর্ণ ও সংবেদনশীল ব্যবহারকারীদের ক্ষতি করতে পারে।

ওপেনএআই এমনভাবে বিষয়টি নিয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছে যা থেকে মনে হয়, তাদের পণ্য ও ব্যবহারকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যে সরাসরি কোনো কারণগত সম্পর্ক নেই।

ওপেনএআই তাদের পোস্টে জানিয়েছে, ‘মানসিক স্বাস্থ্যজনিত উপসর্গ ও মানসিক চাপ মানবসমাজে সর্বজনীনভাবে বিদ্যমান এবং ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ার অর্থ হলো চ্যাটজিপিটির কথোপকথনের একটি অংশে স্বাভাবিকভাবেই এসব পরিস্থিতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

চলতি মাসের শুরুর দিকে ওপেনএআই-এর প্রধান নির্বাহী (সিইও) স্যাম অল্টম্যান এক্স-এ দাবি করেন, মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে তাঁর কোম্পানি। একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা দেন, ওপেনএআই শিগগিরই প্রাপ্তবয়স্কদের ইরোটিক কনটেন্ট (অশ্লীল নয়, যৌনধর্মী শিল্প ও গল্প) তৈরি করার অনুমতি দিতে কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবে।

অল্টম্যান পোস্টে বলেন, ‘আমরা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে সতর্ক থাকতে চ্যাটজিপিটিকে বেশ সীমাবদ্ধভাবে তৈরি করেছিলাম। আমরা বুঝতে পারছি, এর ফলে যেসব ব্যবহারকারীর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল না, তাদের জন্য এটি কম উপযোগী বা কম উপভোগ্য হয়ে পড়েছিল। তবে বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় আমরা নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম যে কাজটি ঠিকভাবে করা হচ্ছে। এখন যেহেতু আমরা গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি এবং নতুন টুলস পেয়েছি, তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরাপদভাবে এসব সীমাবদ্ধতা শিথিল করতে পারব।’

গতকাল সোমবার এক ব্লগপোস্টে এ কথা জানায় ওপেনএআই। চ্যাটবটটি কীভাবে এসব সংবেদনশীল কথোপকথন পরিচালনা করে, সে সম্পর্কে একটি আপডেটের অংশ হিসেবে এই তথ্য প্রকাশিত হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা কীভাবে ও কতটা বাড়িয়ে তুলতে পারে সে প্রসঙ্গে জানাতে গিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ওপেনএআই।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ওপেনএআই-এর প্রধান নির্বাহী (সিইও) স্যাম অল্টম্যান এক্স-এ দাবি করেন, মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে তাঁর কোম্পানি। একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা দেন, ওপেনএআই শিগগিরই প্রাপ্তবয়স্কদের ইরোটিক কনটেন্ট (অশ্লীল নয়, যৌনধর্মী শিল্প ও গল্প) তৈরি করার অনুমতি দিতে কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবে।

অল্টম্যান পোস্টে বলেন, ‘আমরা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে সতর্ক থাকতে চ্যাটজিপিটিকে বেশ সীমাবদ্ধভাবে তৈরি করেছিলাম। আমরা বুঝতে পারছি, এর ফলে যেসব ব্যবহারকারীর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল না, তাদের জন্য এটি কম উপযোগী বা কম উপভোগ্য হয়ে পড়েছিল। তবে বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় আমরা নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম যে কাজটি ঠিকভাবে করা হচ্ছে। এখন যেহেতু আমরা গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি এবং নতুন টুলস পেয়েছি, তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরাপদভাবে এসব সীমাবদ্ধতা শিথিল করতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিশ্বের নাম্বার ওয়ান ইউটিউবারের পথচলা

ফাহিম হাসনাত
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৩৩
বিশ্বের নাম্বার ওয়ান ইউটিউবারের পথচলা

জিমি ডোনাল্ডসন নামটা হয়তো অনেকের কাছে অপরিচিত। কিন্তু তাঁর ইউটিউব চ্যানেল ‘মিস্টারবিস্ট’ আজ সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে এক আবেগ, অনুভূতি, ভালো লাগা ও ভালোবাসার নাম। বিশাল অঙ্কের পুরস্কার, দান, মানবিক উদ্যোগ আর বিশাল বাজেটের চ্যালেঞ্জিং ভিডিও—সব মিলিয়ে তিনি আজ ইউটিউবের দুনিয়ার সবচেয়ে বড় তারকা।

শৈশব এবং বেড়ে ওঠা

১৯৯৮ সালের ৭ মে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস অঙ্গরাজ্যের উইচিটা শহরে জন্মগ্রহণ করেন ডোনাল্ডসন। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। মা সু ডোনাল্ডসন ছিলেন সেনাবাহিনীর সাবেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মায়ের চাকরির কারণে তাঁর পরিবারকে ঘন ঘন জায়গা বদল করতে হতো। ছোটবেলা থেকেই জিমির ছিল একগুঁয়ে স্বভাব। যে কাজে মন দিতেন, তাতেই সারাক্ষণ ডুবে থাকতেন।

শৈশবে লেগো খেলনা আর বেসবল ছিল তাঁর দুনিয়া। ১৩ বছর বয়সে এক পুরোনো ল্যাপটপে ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে আপলোড করা শুরু করেন। ২০১২ সালে তৈরি করা সেই চ্যানেলের নাম দেন ‘মিস্টারবিস্ট ৬০০০’।

শিক্ষাজীবন থেকে ইউটিউব যাত্রা

প্রথম দিকে ‘লেটস প্লে’ ভিডিও বানাতেন। অর্থাৎ গেম খেলতে খেলতে নিজের মন্তব্যসহ ভিডিও প্রকাশ করতেন ডোনাল্ডসন। ২০১৬ সালে নর্থ ক্যারোলাইনার গ্রিনভিল ক্রিশ্চিয়ান একাডেমি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে ইস্ট ক্যারোলাইনা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন মায়ের ইচ্ছায়। কিন্তু ক্লাসের চেয়ে বেশি সময় কাটাতেন গাড়ির ভেতর ভিডিও বানিয়ে। কনটেন্ট তৈরি যাঁর স্বপ্ন, ক্লাসের চারদেয়ালে তিনি বন্দী থাকতে চাইবেন না, সেটা ছিল নির্ধারিত। তাই ইউটিউব ক্যারিয়ারে মন দেওয়ার জন্য মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেন।

সে বছরের জুলাইয়ে তাঁর চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ছুঁয়ে ফেলে ১ লাখ। তখন থেকে তিনি ভিডিও থেকে আয়ের পথ খুঁজে পান। সেটিই ছিল ডোনাল্ডসনের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া মুহূর্ত।

ভাইরাল হওয়ার শুরু

২০১৭ সালে প্রকাশিত ‘আই কাউন্টেড টু ১০০,০০০’ ভিডিও দিয়ে প্রথম ভাইরাল হন মিস্টারবিস্ট। এর পর থেকে শুরু হয় অসাধারণ সাফল্যের যাত্রা। ইউটিউবে অন্য নির্মাতাদের আয় নিয়ে বিশ্লেষণ, বড় অঙ্কের চ্যালেঞ্জ ও পুরস্কার—সবকিছু মিলিয়ে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। একসময় তাঁর ভিডিওর ধরনই বদলে যায়। মানুষকে অবাক করা পুরস্কার, বিশাল চ্যালেঞ্জ আর মানবিক উদ্যোগে ভরপুর ভিডিও। অন্ধত্ব নিরাময়ে এক হাজার মানুষের চোখের অপারেশনের খরচ বহন করা, আফ্রিকার পানিশূন্য এলাকায় নলকূপ স্থাপন ইত্যাদি ভিডিও আলাদা উচ্চতায় নিয়ে যায় ডোনাল্ডসনকে।

২০২১ সালে ‘ফোর্বস ৩০ আন্ডার ৩০’ তালিকায় তিনি জায়গা করে নেন নিজের কাজ দিয়ে। ২০২৪ সালের মধ্যে তাঁর দান ও পুরস্কারের পরিমাণ ছাড়িয়ে যায় ৩০ মিলিয়ন ডলার। কেউ চাকরি ছেড়ে দিলে দিচ্ছেন ১ লাখ ডলার, কেউ দরিদ্র হলে হাতে তুলে দিচ্ছেন নগদ অর্থভর্তি ব্যাগ। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘মানুষকে সহযোগিতা করতে ভালো লাগে। তাঁদের মুখে আনন্দ দেখি, সেটাই আমার বড় পুরস্কার।’

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইউটিউব চ্যানেল

২০২৪ সালের জুলাই মাসে ইতিহাস সৃষ্টি করে মিস্টারবিস্ট। প্রথম ইউটিউবে ৩০০ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার অতিক্রম করে তাঁর চ্যানেল। বর্তমানে ডোনাল্ডসনের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ৪৪৭ মিলিয়ন বা ৪৪ দশমিক ৭ কোটি। এটি ইউটিউবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

Capture

টিকটক কেনার প্রস্তাব

এ বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার গুঞ্জন ছড়ায়। তখন ডোনাল্ডসন ঘোষণা দেন, তিনি নিজেই টিকটক কিনে ফেলবেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করে বলেন, ‘যদি টিকটক বন্ধ হয়, আমি এটি কিনব।’ তবে এই উদ্যোগের কোনো আনুষ্ঠানিক অগ্রগতি আর জানা যায়নি।

কনটেন্ট ক্রিয়েটর শুধু নন, সফল উদ্যোক্তাও

২০২২ সালে মিস্টারবিস্ট প্রতিষ্ঠা করে ফিস্টেবলস ও মিস্টারবিস্ট বার্গার। ফিস্টেবলস উৎপাদন করে চকলেট বার। মিস্টারবিস্ট বার্গার একটি ভার্চুয়াল রেস্টুরেন্ট চেইন। যেখানে অনলাইন অর্ডার করলে স্থানীয় রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার সরবরাহ করা হয়। ২০২৩ সালে তিনি লগান পল ও কেএসআইয়ের সঙ্গে মিলে বাজারে আনেন লাঞ্চলি। এটি স্বাস্থ্যকর খাবারের প্যাকেজড কিট হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ২০২৪ সালে তিনি আমাজন প্রাইম ভিডিওর সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করেন ‘বিস্ট গেমস’ শিরোনামে এক বিশাল গেম শো। যেখানে প্রতিযোগীরা ৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এটি আমাজন প্রাইমের সবচেয়ে বেশি দেখা আনস্ক্রিপটেড শো হয়ে ওঠে।

বিলিয়নিয়ার মিস্টারবিস্ট

মাত্র ২৬ বছর বয়সে ডোনাল্ডসন ২০২৪ সালের জুন মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলিয়নিয়ারের তালিকায় যুক্ত হন। শুধু ইউটিউব এবং এসব ব্যবসা থেকে ২০২৪ সালে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার। মজার বিষয় হলো, কাগজ-কলমে কোটিপতি হওয়া সত্ত্বেও তিনি এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, তাঁর কাছে মাত্র প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার বা তার কম নগদ অর্থ আছে। কারণ, তিনি সব অর্থ পুনর্বিনিয়োগ করেন এবং সেখান থেকে সাধারণত কর্মীর মতোই মাসিক বেতন নেন।

আরেক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, সম্পদ জমা করে রাখার কোনো পরিকল্পনাই তাঁর নেই।

মিস্টারবিস্ট তথা ডোনাল্ডসন শুধু একজন ইউটিউবার নন, বর্তমান প্রজন্মের অনেক তরুণের আদর্শ। তাঁর ভিডিওগুলোতে বিনোদনের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে মানবিকতা ও উদারতা। ভিডিওগুলোতে যেমন আছে প্রতিযোগিতা, উদ্দীপনা ও বিনোদন, তেমনি অনুপ্রেরণামূলক এক বার্তাও।

সূত্র: বিবিসি, এনডিটিভি, রোলিং স্টোন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চ্যাটজিপিটিতে ব্যবহার করা যাবে জনপ্রিয় একাধিক অ্যাপ

প্রযুক্তি ডেস্ক   
চ্যাটজিপিটিতে ব্যবহার করা যাবে জনপ্রিয় একাধিক অ্যাপ

ওপেনএআই সম্প্রতি চ্যাটজিপিটিতে যোগ করেছে অ্যাপ ইন্টিগ্রেশন নামের নতুন এক ফিচার। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সরাসরি তাদের প্রিয় অ্যাপগুলোর সঙ্গে চ্যাটজিপিটিকে যুক্ত করতে পারবে। ফলে এখন আলাদা করে কোনো অ্যাপে গিয়ে খোঁজাখুঁজি না করে চ্যাটজিপিটিকে বললেই প্রয়োজনীয় কাজগুলো সে করে দেবে।

যেমন স্পটিফাই অ্যাকাউন্ট যুক্ত করে চ্যাটজিপিটিকে পছন্দের গানের তালিকা তৈরি করতে বললে সে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেই প্লেলিস্ট তৈরি করে সরাসরি আপনার স্পটিফাই অ্যাপে যোগ করে দেবে।

কীভাবে কাজ করে

এই নতুন ফিচারের মাধ্যমে অন্যান্য অ্যাপ অ্যাকাউন্টগুলো সরাসরি চ্যাটজিপিটির সঙ্গে যুক্ত করা যাবে—

  • প্রথমে চ্যাটজিপিটি প্লাসে লগইন করুন।
  • অ্যাপের নাম লিখুন, যেমন স্পটিফাই
  • কিংবা ক্যানভা।
  • চ্যাটজিপিটির দেওয়া লগইন ও কানেক্ট করার নির্দেশনা মেনে কাজ করুন।
  • সব একসঙ্গে সেটআপ করতে চাইলে সেটিংস থেকে অ্যাপ অ্যান্ড কানেক্টরস মেনুতে গিয়ে একে একে অ্যাপ যোগ করুন।

তবে মনে রাখতে হবে, কোনো অ্যাপ যুক্ত করা মানে আপনি চ্যাটজিপিটিকে সেই অ্যাপের কিছু ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছেন। যেমন স্পটিফাই কানেক্ট করলে আপনার প্লেলিস্ট এবং শোনা গানের ইতিহাস চ্যাটজিপিটির কাছে থাকবে। তাই প্রতিটি অ্যাপ যুক্ত করার আগে শর্তগুলো ভালোভাবে পড়ে নেওয়া জরুরি।

ডিজাইনারদের জন্য ক্যানভা ও ফিগমা

যাঁরা গ্রাফিক ডিজাইন কিংবা প্রেজেন্টেশন তৈরির কাজ করেন, তাঁদের জন্য এই ফিচার সময় বাঁচানোর দারুণ উপায়। ক্যানভা ইন্টিগ্রেশন যুক্ত করে নির্দেশনা দিলে চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে ক্যানভা ডিজাইন তৈরি করে দেবে। আপনি চাইলে নির্দিষ্ট রং, ফন্ট অথবা থিমও নির্ধারণ করতে পারবেন।

অন্যদিকে, ফিগমা ইন্টিগ্রেশন দিয়ে তৈরি করা যায় প্রোডাক্ট রোডম্যাপ, ডায়াগ্রাম অথবা ফ্লোচার্ট।

ভ্রমণ পরিকল্পনায় বুকিং ডটকম ও এক্সপিডিয়া

চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে এখন ভ্রমণ পরিকল্পনা আরও সহজে করা যাবে। বুকিং ডটকম বা এক্সপিডিয়া অ্যাকাউন্ট যুক্ত করে নিজের ভ্রমণ পরিকল্পনার পরামর্শ চাইলে হোটেল, ফ্লাইট বা রুম—সবকিছু সাজিয়ে আপনাকে পরামর্শ দেবে চ্যাটজিপিটি। এটি এখন বুকিং প্রক্রিয়া সহজ করে তুলেছে।

পড়াশোনায় সাহায্য করবে

যাঁরা অনলাইনে নতুন কিছু শেখার সুযোগ খোঁজেন, তাঁদের জন্য আছে কোর্সেরা ইন্টিগ্রেশন। ধরুন, আপনি ইন্টারমিডিয়েট লেভেলের কম্পিউটার কোর্স খুঁজছেন। কমান্ড করলেই সেই কোর্সগুলোর রেটিং, সময়কাল, খরচ ও বিষয়বস্তু তুলনা করে দেখাবে চ্যাটজিপিটি। কোন কোর্সে কী শেখানো হবে, তা-ও সংক্ষেপে জানিয়ে দেবে।

চ্যাটজিপিটির এই নতুন অ্যাপ ইন্টিগ্রেশন ফিচার ব্যবহারকারীদের ডিজিটাল জীবনকে আরও সহজ ও স্বয়ংক্রিয় করে তুলবে। গান শোনা, ডিজাইন করা, ভ্রমণ পরিকল্পনা কিংবা অনলাইন কোর্স খোঁজা—সব কাজ এখন এক জায়গা থেকে করা সম্ভব। এতে সময় বাঁচে, কাজের প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং ব্যবহারকারীরা স্বস্তি পায়।

সূত্র: টেকক্রাঞ্চ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্কুলে এআই দিয়ে পড়াশোনা করছে শিক্ষার্থীরা

টি এইচ মাহির 
স্কুলে এআই দিয়ে পড়াশোনা করছে শিক্ষার্থীরা

যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর আলফা স্কুলে চালু হয়েছে এআইভিত্তিক পড়াশোনা। এটি এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে। অনেকে এর ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করছে। কেউ আবার সমালোচনাও করতে ছাড়ছে না। এই স্কুলে প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এটি পড়ানো হচ্ছে।

প্রথাগত শিক্ষার বিপরীতে নতুন পদ্ধতি

আলফা স্কুলে পাঠদান হচ্ছে গতানুগতিক শিক্ষার বাইরে গিয়ে ভিন্ন এক পদ্ধতিতে। শিক্ষার্থীরা দিনে মাত্র দুই ঘণ্টা এআই টুলের মাধ্যমে গণিত, ইতিহাস ও অন্যান্য শিক্ষামূলক বিষয় শেখে। বাকি সময় হাতে-কলমে জীবনমুখী শিক্ষা, কর্মশালা ও সৃজনশীল কার্যক্রম চলে। যেমন এখানে শিক্ষার্থীরা চালকবিহীন গাড়ির প্রোগ্রামিং শেখে, ট্রাক চালানোর কার্যক্রমে অংশ নেয়, দলগত কাজ এবং সামাজিক দক্ষতা অর্জনের ক্লাসও করে।

শিক্ষকেরা এখানে মূলত ‘গাইড’ হিসেবে থাকেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা করেন এবং এআইয়ের মাধ্যমে শেখার প্রক্রিয়াকে গেমের মতো আকর্ষণীয় এবং উৎসাহমূলক করে তোলেন। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার অগ্রগতি সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পায়, ব্যাজ ও পয়েন্ট অর্জন করে। এটি ভিডিও গেম খেলার আনন্দের মতো বলে শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণ হয়।

প্রযুক্তি ও গেমের সমন্বয়

আলফা স্কুলে শিক্ষার্থীরা পায় রিয়েল-টাইম অগ্রগতি ট্র্যাকিং, ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জের স্তর এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। তাদের এ ধরনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তাৎক্ষণিকভাবে পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা দুই ঘণ্টা এআই শিক্ষকের সঙ্গে পড়াশোনা করে এবং ২৫ মিনিটের পোমোডোরো বা সময় ব্যবস্থাপনার সেশনে অংশ নেয়। বিভিন্ন শিক্ষামূলক গেমের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় শিক্ষার্থীরা অনুশীলন করতে পারে। স্কুলটি এই গেম ডিজাইনে ১০০ মিলিয়নের বেশি বিনিয়োগ করেছে।

ফলাফল ও দাবি

আলফা স্কুলের দাবি, তাদের শিক্ষার্থীরা অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীর তুলনায় দ্বিগুণ দ্রুত শিখতে সক্ষম। উৎসাহমূলক শিক্ষার ফলে শিক্ষার্থীরা মনোযোগী ও দক্ষ হয়েছে। জাতীয় পরীক্ষায় তারা ভালো করছে।

child

সমালোচনা ও প্রশ্ন

অনেকে এই উদ্যোগকে এআইয়ের প্রাথমিক প্রয়োগ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে। তবে কিছুসংখ্যক শিক্ষাবিদ ও অভিভাবক স্কুলের এই শিক্ষাপদ্ধতির সমালোচনা করেছেন। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা কীভাবে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, সহযোগিতা এবং সামাজিকীকরণে পারদর্শী হবে। এ ছাড়া এআই সফটওয়্যার ব্যবহারের সময় ডেটা নিরাপত্তা এবং স্কুলের উচ্চ বার্ষিক ফি নিয়েও তাঁদের প্রশ্ন রয়েছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেটিভ এআই ফর এডুকেশন হাবের পরিচালক ক্রিস অ্যাগনিউ বলেন, ‘আলফা স্কুল যে সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, তার কিছু উপাদান বহু বছর ধরে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাক্ষেত্রে স্বপরিচালিত শিক্ষার মডেলে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আইএক্সএল ও ম্যাথ একাডেমির প্রোগ্রামও এ ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে।’

এআইচালিত আলফা স্কুলের উদ্ভাবনী শিক্ষাপদ্ধতি থেকে বোঝা যায়, ভবিষ্যতের স্কুল কেমন হতে পারে। পড়াশোনা শুধু বইতে আটকে থাকবে না, তা হবে সৃজনশীল, বাস্তবমুখী ও প্রযুক্তিনির্ভর। তবে সমালোচনা ও নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন থাকলেও এ ধরনের শিক্ষাপদ্ধতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগী, দক্ষ ও উদ্ভাবনী হওয়ার পথে এক নতুন দিক উন্মোচন করেছে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত