Ajker Patrika

চীনে ‘গোল্ড ডিগার’ ভিডিও গেম নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২৫, ১৭: ৪৭
রিভেঞ্জ অন গোল্ড ডিগার্স নামে ওই গেমের গল্প আবর্তিত হয়েছে অর্থলোভী নারী ও তাঁদের প্রেমের প্রকৃতি নিয়ে। ছবি: সংগৃহীত
রিভেঞ্জ অন গোল্ড ডিগার্স নামে ওই গেমের গল্প আবর্তিত হয়েছে অর্থলোভী নারী ও তাঁদের প্রেমের প্রকৃতি নিয়ে। ছবি: সংগৃহীত

চীনে সদ্য প্রকাশিত একটি ভিডিও গেমস নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। ‘রিভেঞ্জ অন গোল্ড ডিগার্স’ নামে ওই গেমের গল্প আবর্তিত হয়েছে অর্থলোভী নারী ও তাদের প্রেমের প্রকৃতি নিয়ে। এটি একটি লাইভ অ্যাকশন গেম। এতে দেখানো হয়, অর্থলোভী নারীদের ছলনায় কীভাবে তাদের প্রেমে পড়ে পুরুষেরা। খেলোয়াড়দের প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করেই নির্ধারিত হয় গল্পের পরবর্তী গতিপথ।

গত মাসে সবার জন্য উন্মুক্ত হয় গেমটি। মুক্তির পর কয়েক দিনের ব্যবধানে গেমিং প্ল্যাটফর্ম স্টিমে বিক্রির শীর্ষে উঠে আসে এটি। সবার জন্য উন্মুক্ত করার এক দিন পরই এই গেম নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। গেমটি লিঙ্গগত অবমাননামূলক ধারণা এবং নারীবিদ্বেষকে উৎসাহিত করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেকে।

তবে আছে মুদ্রার উল্টো পিঠও। অনেকে বলছেন, ভালোবাসার নামে এ ধরনের প্রতারণা যে হয়, তা তো মিথ্যা নয়। এর বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে কাজ করছে ভিডিও গেমটি—এমনটাই ভাষ্য তাঁদের।

সমালোচনার চাপে বাধ্য হয়ে এক দিনের মাথায় গেমটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ইমোশনাল অ্যান্টি ফ্রড সিমুলেটর’। কিন্তু এতেও কমেনি বিতর্ক। এরই মধ্যে চীনের একাধিক সামাজিক মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়েছে গেমটির পরিচালক হংকংয়ের চলচ্চিত্র নির্মাতা মার্ক হুকে।

তুমুল বিতর্কের মুখে মার্ক হু জানান, এই গেম নির্মাণের পেছনে নারীবিদ্বেষ বা নারীদের লক্ষ্যবস্তু করার মানসিকতা কখনোই কাজ করেনি, বরং আধুনিক প্রেম-সম্পর্কের জটিলতা ও আবেগগত সীমানা নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা উত্থাপনই এই গেমের মূল্য উদ্দেশ্য।

সিউ ইকুন নামের এক নারী জানান, গেমটি খেলে তিনি প্রচণ্ড অপমানিত বোধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কেবল কাটতি বাড়ানোর জন্য এমন গেম তৈরি করা হয়েছে। ইচ্ছাকৃত বিতর্ক ও বিভাজনের মাধ্যমে আলোচনায় থেকে গেমের বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।’

সমালোচকদের মতে, গেমের পরিচালক যতই বলুন যে নারীবিদ্বেষ ছড়ানো তাঁদের লক্ষ্য ছিল না, তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ‘গোল্ড ডিগার’ শব্দটিই নারীবিদ্বেষমূলক। সিউ ইকুন বলেন, ‘এই শব্দটা প্রায়ই নারীদের হেয় করতে ব্যবহৃত হয়। আপনি যদি ধনী প্রেমিক পান, আপনাকে গোল্ড ডিগার বলা হবে। আপনি যদি নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলেন, তাহলেও এই অপবাদ জুটবে—এমনকি কেউ আপনাকে এক গ্লাস পানীয় কিনে দিলেও শুনতে হবে আপনি গোল্ড ডিগার!’

তবে কিছু গেমার মনে করেন, এসব সমালোচনা বাড়াবাড়ি। ৩১ বছর বয়সী ঝুয়াং মেংশেং বলেন, ‘গেমটি বলতে চায়নি যে, সব নারীই গোল্ড ডিগার। আমি মনে করি, নারী-পুরুষ উভয়ই অর্থলোভী হতে পারে।’

সমালোচকেরা এই যুক্তি খণ্ডন করে বলছেন, গেমটিতে দেখানো সব গোল্ড ডিগার চরিত্রই নারী। চীনের স্থানীয় গণমাধ্যমও গেমটি নিয়ে বিভক্ত। হুবেই প্রদেশের একটি সংবাদপত্র বলছে, এই গেম পুরো নারী জাতিকে প্রতারক হিসেবে অভিহিত করার চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে বেইজিং ইয়ুথ ডেইলি নামের আরেকটি সংবাদমাধ্যম গেমটির ‘সৃজনশীলতা’র প্রশংসা করেছে এবং প্রেমঘটিত প্রতারণা রোধে এ ধরনের কনটেন্টের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে। চীনের ন্যাশনাল অ্যান্টি-ফ্রড সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে এ ধরনের প্রতারণার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ বিলিয়ন ইউয়ান।

তবে মজার বিষয় হলো, তুমুল বিতর্কের মধ্যেও গেমটির বিক্রি বেড়েই চলেছে। এটি এখন চীনে উইন্ডোজ ডেস্কটপ কম্পিউটার প্ল্যাটফর্মে সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০টি গেমের মধ্যে রয়েছে। এমনকি সর্বকালের অন্যতম সফল চীনা গেম ব্ল্যাক মিথ: য়ুকোংকেও এটি অতিক্রম করেছে।

২৮ বছর বয়সী এক পুরুষ বলেন, ‘আমি বুঝি না মানুষ এত রেগে যাচ্ছে কেন। আপনি যদি নিজে গোল্ড ডিগার না হন, তাহলে আপনার গায়ে লাগছে কেন?’

তিনি আরও বলেন, ‘এই বিষয়গুলোর উপস্থিতি তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তবে চীনে এগুলো নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না, গেমটির নির্মাতারা বরং সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।’

অনেকে বলছেন, এই গেমের ধারণা এসেছে ‘ফ্যাট ক্যাট’ নামে পরিচিত এক চীনা পুরুষের বাস্তব ঘটনা থেকে, যিনি গত বছর বিচ্ছেদের পর আত্মহত্যা করেন। তাঁকে নিয়ে অনলাইনে ব্যাপক আলোচনা হয় এবং তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকাকে অর্থলোভী বলে অভিযুক্ত করা হয়। যদিও পুলিশ এই অভিযোগ খারিজ করে দেয়।

কিছু নারী মনে করেন, গেমটি চীনা সমাজে প্রচলিত লিঙ্গবিদ্বেষ-ভিত্তিক মানসিকতা আরও উসকে দিচ্ছে—যেখানে ‘গৃহিণী’ হওয়ায়ই নারীর প্রধান কাজ ভাবা হয় এবং পুরুষদের উপার্জনকারী হিসেবে দেখা হয়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পুরুষতান্ত্রিক নেতৃত্ব, এমনকি প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং নিজেও নারীদের ‘ভালো স্ত্রী ও মা’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন একাধিকবার। সরকার নারী অধিকার নিয়ে সোচ্চার আন্দোলনকারীদের দমনও করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বিবিসিকে বলেন, এই গেম শুধু পুরুষ-নারীর মধ্যে বিদ্বেষ বাড়াবে। আবারও নারীদের দুর্বল ও নির্ভরশীল রূপেই দেখানো হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বদলির আদেশ ছিঁড়ে বরখাস্ত হলেন এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা

দরপত্র ছাড়াই জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ পেল দুই প্রতিষ্ঠান, এরা কারা

বাংলাদেশের সোনালি মুরগিতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া: গবেষণা

ট্রাকে করে ৪৩ হাজার পৃষ্ঠার নথি ইসিতে জমা দিয়েও নিবন্ধন পেল না এনসিপি

প্রেক্ষাপটবিহীন প্রতিবেদন কি সাংবাদিকতা হতে পারে?

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত