Ajker Patrika

প্রযুক্তির দুনিয়ায় বাংলাদেশিরা

টি এইচ মাহির 
জাহিদ সবুর, হাসান উল বান্না, ইকবাল সজল ও খালেদ সাইফুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত
জাহিদ সবুর, হাসান উল বান্না, ইকবাল সজল ও খালেদ সাইফুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালি বিশ্বের অন্যতম প্রধান প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন কেন্দ্র। সেখানে রয়েছে গুগল, অ্যাপল, মেটা, আমাজন, ইনটেল, টেসলার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়। প্রতি মুহূর্তে সেখানে নতুন নতুন বিষয় উদ্ভাবন হয়ে চলেছে এবং পৃথিবীতে তৈরি হচ্ছে নতুন বাজারের সম্ভাবনা।

প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে যাঁরা ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাঁদের সবারই স্বপ্ন থাকে সিলিকন ভ্যালির যেকোনো একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। একসময় এ যাত্রায় বাংলাদেশিদের সংখ্যা কম থাকলেও তা দিন দিন বাড়ছে। গুগল, মাইক্রোসফট বা ইন্টেলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোয় কাজ করছেন বাংলাদেশের তরুণেরা।

জেমিনি অ্যাপের লিড ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ সবুর
জেমিনি অ্যাপের লিড ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ সবুর

জেমিনি অ্যাপের লিড ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ সবুর

টেক জায়ান্ট গুগলে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে যোগ দেন জাহিদ সবুর। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছেন তিনি। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন সবুর। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে যুক্ত ছিলেন প্রোগ্রাম টিমের সঙ্গে। গুগলের প্রোগ্রামিং শাখায় চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দেওয়ার সুযোগ হয় তাঁর। সে সুযোগ কাজে লাগান তিনি। ২০০৭ সালে জাহিদ সবুর গুগলের বেঙ্গালুরু অফিস থেকে ব্যাকেন্ড সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে কাজ শুরু করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতি পেয়ে গুগলের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী হন তিনি। বর্তমানে কাজ করছেন সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরে। গুগলের জেমিনি অ্যাপ তৈরির লিড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন তিনি। এআই অ্যাপসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের জাহিদ সবুর।

ইন্টেলে হাসান উল বান্না
ইন্টেলে হাসান উল বান্না

ইন্টেলে হাসান উল বান্না

জি এম হাসান উল বান্না চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি ইন্টেল করপোরেশনে এলটিডি মডিউল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগনে অবস্থিত ইন্টেলের কারখানায় এখন কাজ করছেন তিনি। বান্না লজিক ট্রানজিস্টর ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করেন। নওগাঁর সন্তান বান্না এসএসসি ও এইচএসসি সম্পন্ন করেছেন জয়পুরহাট থেকে। তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেছেন বাংলাদেশের ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে। ২০১৩ সালে স্নাতক শেষ করার পর দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ প্রকৌশলী হিসেবে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি শুরু করেন ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার প্রকৌশলের ওপর। ২০২৪ সালে পিএইচডি করার সময় তিনি ইন্টেলে চাকরির আবেদন করেন এবং বছরের মাঝামাঝি তাঁর চাকরি নিশ্চিত হয়। ইন্টেলে যোগ দেওয়া আগে তিনি চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।

মেটার ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল সজল
মেটার ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল সজল

মেটার ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল সজল

মেটায় এখন বাংলাদেশের অনেকে কাজ করছেন। তাঁদের একজন দেশ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা ইকবাল সজল। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মেটার প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন তিনি। গাজীপুরে জন্ম নেওয়া ইকবাল সজল এইচএসসি পাস করেছেন ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে। এরপর ২০১৭ সালে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে। স্যামসাং বাংলাদেশে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বেশ কয়েক বছর চাকরি করেন তিনি। সে সময় প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাজ করেছিলেন সজল। সে সময় থেকে নিয়মিত প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষতা বাড়াতে থাকেন ইকবাল, যা তাঁকে মেটার কোডিং রাউন্ড পার করতে সহায়তা করেছে। অবশেষে তিনি মেটার ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হন এবং ২০২৩ সালে মেটায় যোগ দেন। বর্তমানে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে মেটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত।

মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার খালেদ সাইফুল্লাহ
মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার খালেদ সাইফুল্লাহ

মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার খালেদ সাইফুল্লাহ

প্রযুক্তির জগতে অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট। বেশ পুরোনো এ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন বাংলাদেশিরাও। লক্ষ্মীপুরের সি এম খালেদ সাইফুল্লাহ তাঁদেরই একজন। ২০২২ সালে মাইক্রোসফটে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন তিনি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন খালেদ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে তিনি প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষতা বাড়াতে প্রতিনিয়ত অনুশীলন করতে থাকেন।

এ ছাড়া নিয়মিত সচল থাকতেন লিংকডইনে। একদিন লিংকডইনে মাইক্রোসফটের একজন রিক্রুটার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যাচাইয়ের পর তাঁকে ইন্টারভিউর জন্য ডাকা হয়। কোভিডের সময় নেওয়া ভার্চুয়াল ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হন খালেদ। এরপর ২০২২ সালের অক্টোবরে যোগ দেন মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। বর্তমানে কানাডায় কর্মরত খালেদ সাইফুল্লাহ।

সিলিকন ভ্যালি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের প্রযুক্তি বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। সেখানে বাংলাদেশের মেধাবী তরুণ-তরুণীরা শুধু অংশ নিচ্ছেন না, অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গুগল, অ্যাপল, মেটা, স্পেসএক্স কিংবা উদীয়মান স্টার্টআপ—সবখানেই আজ বাংলাদেশিদের মেধার ছাপ স্পষ্ট।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাকিব খানের নামের সঙ্গে ‘মেগাস্টার’ শব্দ নিয়ে জাহিদ হাসানের আপত্তি

হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত রাজশাহীর ৭ বন্দীর সাজা মওকুফ

স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর মৃত্যু ‘বিষক্রিয়ায়’, কেয়ারটেকার চাচাকে সন্দেহ

দুদকের আতশ কাচের নিচে ছয় সাবেক মুখ্য সচিব

ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত