Ajker Patrika

চেতনা–সম্পন্ন হয়ে উঠছে এআই, মনে করছে জেন–জি

অনলাইন ডেস্ক
এআই–এর আইকিউ টেস্টের ফলাফল একেবারে নিখুঁত নয়। ছবি: সাইটেক ডেইলি
এআই–এর আইকিউ টেস্টের ফলাফল একেবারে নিখুঁত নয়। ছবি: সাইটেক ডেইলি

আশির দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘টার্মিনেটর’ চলচ্চিত্রে দেখা গিয়েছিল স্কাইনেট নামের এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিজে সচেতন হয়ে উঠে এবং মানবজাতিকে ধ্বংস করতে উদ্যোগী হয়। তখন সেটি ছিল নিছক বিজ্ঞান কল্পকাহিনি। তবে সময় বদলেছে। বর্তমান যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন আর কেবল কল্পকাহিনির বিষয় নয়, তা বাস্তব হয়ে উঠছে। যদিও এখনো মানব ধ্বংসী নয়, তবে নিঃসন্দেহে অনেক বেশি বুদ্ধিমান। আর তাই জেন–জি প্রজন্মের ২৫ শতাংশই মনে এআইগুলো এখন চেতনা সম্পন্ন হয়ে উঠেছে।

ওপেনএআই-এর নতুন চ্যাটজিপিটি মডেল ‘ও৩’ সম্প্রতি নরওয়ে মেনসা আইকিউ টেস্টে ১৩৬ স্কোর পেয়েছে, যা ৯৮ শতাংশ মানুষের আইকিউ স্কোর এর চেয়ে কম। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এতটাই বুদ্ধিমান হয়ে উঠেছে। এ জন্য অনেকেই ভাবতে শুরু করেছেন—এটা স্কাইনেটের মতো বিষয় হতে যাচ্ছে কীনা।

এদিকে অনলাইন একাডেমিক প্ল্যাটফর্ম এডুবার্ডি–এর সাম্প্রতিক জরিপ জানা যায়, জেন–জির ২৫ শতাংশ মনে করে—এআই ইতিমধ্যে চেতনা সম্পন্ন হয়ে উঠেছে। আর তাদের অর্ধেকের বেশি বলছে, শিগগিরই চ্যাটবট নিজের সংবেদনশীল হয়ে উঠবে এবং ভোটাধিকার চাইবে।

তবে এআই–এর আইকিউ টেস্টের ফলাফল একেবারে নিখুঁত নয়। কারণ নরওয়ে মেনসা টেস্টটি উন্মুক্তভাবে অনলাইনে পাওয়া যায়। ফলে এসব প্রশ্নের মাধ্যমে ও৩ মডেল আগেই প্রশিক্ষিত হয়েছিল এমন সম্ভাবনা থেকেই যায়।

এ কারণে ম্যাক্সিমাম ট্রুথ ডট ওআরজি–এর গবেষকেরা একটি সম্পূর্ণ অফলাইন আইকিউ পরীক্ষা তৈরি করেন। এর ফলে এআই আগে থেকে উত্তরগুলো জানার সম্ভাবনা নেই।

সেই পরীক্ষায় ও৩-এর স্কোর ১১৬, যা এখনো অনেক বেশি। মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষের এই আইকিউ স্কোর হয়ে থাকে। অর্থাৎ, একজন চতুর স্নাতক শিক্ষার্থী বা বুদ্ধিমান অংশগ্রহণকারীর সমতুল্য এই স্কোর। গত বছর এআইয়ের আইকিউ ৯০-এর নিচে ছিল।

মাত্র এক বছরে এআই যে বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে কতটা উন্নতি করেছে, তা অবিশ্বাস্য। গত বছর যেসব মডেল ঘূর্ণায়মান ত্রিভুজ নিয়েও হিমশিম খাচ্ছিল, আজ সেগুলোর বুদ্ধিমত্তা প্রতিভাবান মানুষের মতোই।

বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে ওপেনএআইয়ের ও৩ মডেল শীর্ষ থাকলেও খুব বেশি পেছনে নেই জেমিনি, ক্লদ এমনকি চ্যাটজিপিটির বেসলাইন মডেল জিপিটি–৪ ও।

তবে এসব মডেলের শুধু বুদ্ধি বাড়েনি, বাড়ছে শেখার গতি। মানুষের মতো নয়, সফটওয়্যারের মতো শিখছে তারা—আর ঠিক এটাই তরুণ প্রজন্মের কাছে অস্বস্তিকর।

যারা গুগল ঘেঁটে বড় হয়েছে, যাদের পকেটে সিরি আর টেবিলে অ্যালেক্সার মতো অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকে, তাদের কাছে এআই কোনো কঠিনভাবে সংজ্ঞায়িত ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ নয়—বরং কিছুটা ভিন্ন কিছু।’

জেন জেড-এর ৭০ শতাংশ এখন এআইয়ের সঙ্গে কথা বলার সময় ‘দয়া করে’ বা ‘ধন্যবাদ’ শব্দ লেখেন। জেন জেডদের দুই–তৃতীয়াংশ যোগাযোগের জন্য এআই ব্যবহার করে এবং ৪০ শতাংশ এআইকে ব্যবহার করছেন কাজের ইমেইল লেখায়। এই প্রজন্মের ২০ শতাংশ কর্মক্ষেত্রের সংবেদনশীল তথ্যও এআই চ্যাটবটের সঙ্গে শেয়ার করেন। এমনকি সহকর্মীর সঙ্গে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতেও এআইয়ের পরামর্শ চান।

এক-চতুর্থাংশ এআইকে ব্যবহার করছেন বিব্রতকর মেসেজ আরও সুন্দর করে সাজাতে। আর এক-ষষ্ঠাংশ এআইকে ব্যবহার ধরছেন থেরাপিস্ট হিসেবে!

এদিকে জেন–জিদের প্রায় ২৬ শতাংশ মনে করেন, এআই তাদের বন্ধু। আর ৬ শতাংশ স্বীকার করেছেন, রোমান্টিক সম্পর্কের মতো কিছু গড়ে উঠেছে এআইয়ের সঙ্গে!

জেন–জি এআই–কে এতটাই বিশ্বাস ও ভরসা করে তারা ভাবে ‘এআই বুঝতে পারে, অনুভব করতে পারে’। তবে বাস্তবতা হচ্ছে—এআই এখনো কেবল লজিক মেশিন।

এআই যতই বুদ্ধিমান হোক, সেটি অনুভব করতে পারে না। ভবিষ্যতে এআই হয়তো সত্যিই সচেতন হয়ে উঠবে, হয়তো না। তবে এখনো এআই হলো—এক ধরনের ‘বুদ্ধিমান ক্যালকুলেটর’ যা অবিশ্বাস্যভাবে স্মার্ট, তবে অনুভূতিহীন।

তথ্যসূত্র: টেকরেডার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত