Ajker Patrika

চীনা সরকারকে কনটেন্ট সেন্সর শিখিয়েছে ফেসবুক: সাবেক কর্মকর্তা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৫, ১১: ২৪
সারাহ ওয়েন-উইলিয়ামস। ছবি: এএফপি
সারাহ ওয়েন-উইলিয়ামস। ছবি: এএফপি

চীনা কর্তৃপক্ষ যাতে ফেসবুকে কনটেন্ট সেন্সর ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সেই লক্ষ্যে তাদের সঙ্গে ‘হাতে হাত মিলিয়ে’ কাজ করেছে মেটা। ফেসবুকের সাবেক জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সারাহ ওয়েন-উইলিয়ামস এই অভিযোগ করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, সারাহ তাঁর স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ ‘কেয়ারলেস পিপল’ এবং মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে দাখিল করা অভিযোগে এই দাবি করেন।

ফেসবুকের গ্লোবাল পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সারাহ দাবি করেছেন, ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ চীনের বাজারে প্রবেশ করার বিনিময়ে ভাইরাল পোস্টগুলো চীনা কর্তৃপক্ষের দ্বারা যাচাই না হওয়া পর্যন্ত গোপন রাখার কথা বিবেচনা করেছিলেন।

সারাহের অভিযোগ, জাকারবার্গ চীনের বাজারে প্রবেশের জন্য ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণে’ আপস করতে ইচ্ছুক ছিলেন, তিনি চীনকে তাঁর ‘হোয়াইট হোয়েল’ বা ‘অদম্য লক্ষ্য’ হিসাবে বর্ণনা করেন। সারাহের মতে, জাকারবার্গ অবিরাম তাঁর এই লক্ষ্য পূরণে কাজ করেছেন। কিন্তু এত প্রচেষ্টার পরও এক্স এবং ইউটিউবের পাশাপাশি ফেসবুকও চীনে নিষিদ্ধ।

ফেসবুকের মাতৃ প্রতিষ্ঠান মেটা এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, সারাহকে ২০১৭ সালে ‘দুর্বল কর্মক্ষমতা’ এবং ‘ক্ষতিকর আচরণের’ জন্য বরখাস্ত করা হয়েছিল। কোম্পানিটি চীনের বাজারে অতীতের আগ্রহ স্বীকার করেছে। তবে এটাও বলেছে যে, ‘আমরা শেষ পর্যন্ত আমাদের অন্বেষণ করা ধারণাগুলোর সঙ্গে এগিয়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এই প্রসঙ্গে মেটা জাকারবার্গের ২০১৯ সালের একটি মন্তব্যও উল্লেখ করেছে। যেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘সেখানে (চীনে) কাজ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে সে বিষয়ে আমরা কখনই চুক্তিতে আসতে পারিনি, এবং তারা (চীন) কখনই আমাদের (চীনের বাজারে) প্রবেশ করতে দেয়নি।’

সারাহ ওয়েন-উইলিয়ামস দাবি করেছেন, ২০১৫ সালের মাঝামাঝি ফেসবুক চীন সরকারকে দেশটির ব্যবহারকারীদের ডেটাতে প্রবেশাধিকার দেওয়ার কথা বিবেচনা করেছিল। সারাহ বিবিসিকে বলেন, ‘তিনি (জাকারবার্গ) চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছিলেন, একটি সেন্সরশিপ সরঞ্জাম (টুল) তৈরি করছিলেন...মূলত ফেসবুকের মূলভিত্তি স্থাপনকারী অনেক নীতির বিপরীতে কিছু একটা বিকাশের জন্য কাজ করছিলেন তিনি।’

ফেসবুকের সাবেক এই কর্মকর্তা আরও অভিযোগ করেন, বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো যখন ফেসবুকের অ্যালগরিদম সম্পর্কে বিশদ জানতে চেয়েছিল, তখন ‘ব্যক্তিগত মালিকানা সংক্রান্ত তথ্যের’ গোপনীয়তার অজুহাত দেখিয়ে প্রায়শই তা অস্বীকার করা হতো। তবে, ‘যখন চীনের কথা আসে, তখন পর্দা সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। প্রকৌশলীদের বের করে আনা হয়েছিল। তাদের প্রতিটি দিক ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছিল।’

এর প্রতিক্রিয়ায় মেটা জানিয়েছে, এসব বিষয় সেই সময় ‘ব্যাপক প্রচার’ হয়েছে। জাকারবার্গও ২০১৮ সালে কংগ্রেসে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় উল্লেখ করেন, ‘চীন সরকার কীভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কনটেন্টের ওপর নিজেদের আইন ও বিধি প্রয়োগ করতে চাইবে তা সঠিকভাবে জানার অবস্থানে নেই ফেসবুক।’

ওয়েন-উইলিয়ামসের আরেকটি গুরুতর অভিযোগ হলো, ফেসবুক বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে তথ্য বিক্রির জন্য গবেষণার অংশ হিসাবে কিশোর-কিশোরীরা কখন দুর্বল বোধ করে তা শনাক্ত করতে অ্যালগরিদম ব্যবহার করেছে। তিনি দাবি করেন, ফেসবুক যখন কিশোর-কিশোরীরা ‘নিজেকে মূল্যহীন বা অসুখী মনে করে’ তখন তা অনুমান করতে পারত এবং এই তথ্য নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করত।

তিনি অভিযোগ করেন, যখন কোনো কিশোরী সেলফি মুছে ফেলে তখন তা ট্র্যাক করতে পারত ফেসবুক এবং তারপর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এই ডেটা প্রসাধন কোম্পানিকে অবহিত করত। সারাহ বলেন, ‘আমি এই চিন্তায় অসুস্থ বোধ করেছি এবং ফিরে আসার চেষ্টা করেছি, যদিও আমি জানতাম এটি নিরর্থক। তারা বলেছিল—ব্যবসার দিকটি মনে করে এটিই আমাদের করা উচিত। আমাদের কাছে এই আশ্চর্যজনক পণ্য রয়েছে, আমরা তরুণদের পেতে পারি, যা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞাপনের অংশ।’

মেটা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে যে, তারা ‘কখনই মানসিক অবস্থার ভিত্তিতে লোকজনকে টার্গেট করার জন্য কোনো টুল ব্যবহার করেনি’ এবং এই গবেষণা ছিল ব্যবহারকারীর আচরণ বুঝতে, বিপণনকারীদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে নয়।

মেটা সারাহ ওয়েন-উইলিয়ামসের বইয়ের ‘মানহানিকর এবং মিথ্যা তথ্যের আরও প্রসার’ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। ওয়েন-উইলিয়ামসের আইনজীবী বলেছেন, ‘তাঁর স্মৃতিকথার খবর প্রকাশের পর থেকে মেটা সারাহ সম্পর্কে বেশ কয়েকটি মিথ্যা এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিবৃতি দিয়েছে।’

নিউজিল্যান্ডের সাবেক কূটনীতিক ওয়েন-উইলিয়ামস ২০১১ সালে ফেসবুকে যোগ দেন। তিনি জাকারবার্গ সম্পর্কে তাঁর ব্যক্তিগত মতামত শেয়ার করে লিখেছেন, জাকারবার্গ ‘দুপুরের আগে উঠতেন না’, ‘কারাওকে পছন্দ করতেন’ এবং ‘রিস্কের মতো বোর্ড গেমে হারতে পছন্দ করতেন না।’

কেন তিনি এখন মুখ খুলছেন জানতে চাইলে সারাহ বলেন, তিনি চান মেটার পরিবর্তন হোক, কারণ এটি ‘আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বেশির ভাগ অংশকে প্রভাবিত করে’ এবং আমাদের নিশ্চিত করা দরকার ‘আমরা যেন আমাদের প্রাপ্য ভবিষ্যৎটাই পাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত