Ajker Patrika

নতুন পথে গ্রাফিক ডিজাইন

তারিক আল আজিজ
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ১১: ২৩
নতুন পথে গ্রাফিক ডিজাইন

পেশা হিসেবে গ্রাফিক ডিজাইন বেশ আকর্ষণীয়। জীবন যতই প্রযুক্তিকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে, গ্রাফিক ডিজাইনাররা ততই বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠছেন। এর বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা তৈরি হচ্ছে। ফলে ক্যারিয়ারও হয়ে উঠছে বর্ণিল।

গ্রাফিক ডিজাইন মূলত কম্পিউটারনির্ভর ডিজাইন। প্রথাগত বা প্রাতিষ্ঠানিক চিত্রশিল্পী না হলেও গ্রাফিক ডিজাইনার হতে বাধা নেই কারও। সফটওয়্যারের সাহায্যে আপনার সৃজনশীল চিন্তার প্রকাশ ঘটাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ভালোভাবে সফটওয়্যার আয়ত্ত করা জরুরি। গ্রাফিক ডিজাইনের ক্ষেত্রে সাধারণত অ্যাডবি ইলাস্ট্রেটর ও অ্যাডবি ফটোশপ—এ দুটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। এর বাইরে ইনডিজাইন, কোয়ার্কসহ আরও বিভিন্ন সফটওয়্যারে অনেকেই কাজ করে থাকেন। কিন্তু এখন সর্বাধিক ব্যবহৃত সফটওয়্যার সে দুটিই।

কর্মক্ষেত্র ও আয়
গ্রাফিক ডিজাইনের কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত। দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা রয়েছে। দেশে কাজের বড় ক্ষেত্র প্রিন্টনির্ভর। নানান ধরনের ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, লিফলেটসহ যা প্রেসে প্রিন্ট হয়ে থাকে, তার সবই আগে ডিজাইন করা হয়ে থাকে। এসব কাজের জন্য অনেক ডিজাইন হাউস আছে দেশে। সেগুলোতে কাজের সুযোগ আছে। এর বড় একটি জায়গা হচ্ছে সংবাদপত্র এবং ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজস্ব ডিজাইনার নিয়োগ রেখে কাজ করে। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও ডিজাইন বিভাগ থাকে। সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রেসসহ বেশ কিছু দপ্তরেও ডিজাইনার নিয়োগ দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে অবশ্য এ বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট বা ডিপ্লোমাধারীরা প্রাধান্য পেয়ে থাকেন।

দেশে স্থানীয় স্টার্টআপের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অনেকেই ই-কমার্সে যুক্ত হচ্ছেন। প্রত্যেকেরই ডিজাইন প্রয়োজন হয়। লোগো থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমের বিজ্ঞাপনের ডিজাইন করার জন্য অনেকে ডিজাইন হাউস বা ব্যক্তিগতভাবে কোনো ডিজাইনারের সহায়তা নেন। অনেক ডিজাইনার চুক্তিবদ্ধ হয়ে নিয়মিতভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করে থাকেন।

গ্রাফিক ডিজাইনারদের অন্যতম একটি কাজের জায়গা হলো মার্কেটপ্লেস। আপ ওয়ার্ক, ফাইভার থেকে শুরু করে বেশ কিছু মার্কেটপ্লেসে অনেকে নিয়মিত কাজ করেন। এ ক্ষেত্রে ডিজাইনারদের আয়ও আকর্ষণীয়। নির্দিষ্ট করে অনেকে শুধু লোগো, ফ্লায়ার বা ম্যাগাজিন ডিজাইন করে থাকেন। আবার অনেকে ফটোশপনির্ভর ক্লিপিং পাথ, রিটাচিং, ইনহ্যান্সমেন্ট বা এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। মার্কেটপ্লেসের বাইরেও কিছু ডিজাইনার সরাসরি আন্তর্জাতিক অনেক গ্রাহকের সঙ্গে কাজ করেন। গ্রাফিক ডিজাইনারদের আয় তাঁদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে। এ কাজে ১৫-২০ হাজার থেকে শুরু করে কেউ লক্ষাধিক টাকা আয় করে থাকেন।

নতুন পথে গ্রাফিক ডিজাইন
গ্রাফিক ডিজাইনাররা যত অভিজ্ঞ হয়ে উঠবেন, তাঁদের কাজের পরিধি তত বাড়বে। তেমনি ক্যারিয়ারে যুক্ত হবে নতুন নতুন বিষয়। এরই একটি হচ্ছে ইউজার ইন্টারফেস বা ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইন। আমরা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ বা বিভিন্ন ইন্টারফেস ব্যবহার করি, এগুলো সে ধরনের ডিজাইন। একজন গ্রাফিক ডিজাইনারকে ইউআই ডিজাইন করতে নতুন অনেক কিছু শিখতে হবে—বিষয়টি এমন নয়। অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতা এখানে বড় ভূমিকা পালন করে। একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের তুলনায় ইউআই ডিজাইনারের আয় অনেকটা বেশি। কাজেই অনেকেই এদিকে ঝুঁকছেন।

মোশন গ্রাফিকস বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। অনেক গ্রাফিক ডিজাইনার একটা পর্যায়ে এসে মোশন গ্রাফিকসেও কাজ শুরু করেন। এর জন্য আলাদাভাবে আফটার এফেক্ট বা এ ধরনের কিছু সফটওয়্যার শেখার প্রয়োজন হলেও গ্রাফিকসের কাজ জানা তাঁদের পথচলা সহজ করে। কেউ নির্দিষ্টভাবে শুধু ওয়েবসাইটের টেমপ্লেট নিয়ে কাজ করেন।

আবার অনেকে ওয়েব ডেভেলপার হয়ে ওঠেন। বর্তমানে এ ধরনের কাজের ক্ষেত্রে ‘ফিগমা’ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।  

কোথায় শিখবেন
ইউআই বা ইউএক্স ডিজাইন, মোশন গ্রাফিকস ইত্যাদি সবকিছুরই আলাদা কোর্স রয়েছে। দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানই অনলাইন, অফলাইনে সব কোর্স করিয়ে থাকে। তবে শুরুটা গ্রাফিক ডিজাইন শেখার মাধ্যমে হলে ভালো হয়। ফটোশপ ও ইলাস্ট্রেটর এমন দুটি সফটওয়্যার, যা জেনেই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া জরুরি।

গ্রাফিক ডিজাইন শেখার ক্ষেত্রে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। কোথায় শিখছেন তা আগে যাচাই করে নিন। একজন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক আপনার পথচলা অনেকটা সহজ করে দিতে পারে। চাইলে যে কেউ নিজে ঘরে বসে টিউটোরিয়াল দেখেও শিখতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ও নিয়মিত অনুশীলনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

প্রত্যেকের সৃজনশীল চিন্তা এক রকম নয়। নানাভাবে দেখতে ও শিখতে পারলে এর বিকাশ ঘটে। এসইআইপিসহ বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রজেক্টেও গ্রাফিক ডিজাইন শেখানো হয়। এ ক্ষেত্রে ফি প্রয়োজন হয় না এবং শিক্ষার্থীরা বৃত্তিও পেয়ে থাকেন। খোঁজ নিয়ে এসব প্রজেক্টে শেখার জন্য আবেদন করে রাখতে পারেন।

গ্রাফিক ডিজাইন আপনার সৃজনশীল চিন্তাকে সহজে রূপ দেওয়ার মাধ্যম। একটু নিজেকে পরখ করে নিন। আপনার যদি রং, রেখা, আঁকিবুঁকি ভালো লাগে তাহলে নিশ্চিন্তে এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। হয়তো এর মাধ্যমেই পরে সৃজনশীল কাজের বিভিন্ন পর্যায়ে আপনি নিজেকে যুক্ত করতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত