Ajker Patrika

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে মনমাতানো ছবির রহস্য

মাহবুব শুভ
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২: ২২
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে মনমাতানো ছবির রহস্য

সম্প্রতি মহাজগতের তেরো শ কোটি বছর আগের ছবি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে সারা দুনিয়ায় হইচই ফেলে দিয়েছে নাসা। অন্য টেলিস্কোপগুলোর তুলনায় মহাবিশ্বের দূরতম অংশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করার পাশাপাশি এ টেলিস্কোপটি অন্যান্য টেলিস্কোপের চেয়ে বেশি অতীতের দৃশ্যও দেখতে পারে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সূচনা-পরবর্তী দৃশ্যগুলোর ছবিও তুলতে পারে। এটি প্রায় ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন তথা ১ হাজার ৩৫০ কোটি বছর আগে গ্রহ-নক্ষত্রগুলো কেমন ছিল, তা পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। সেই দূরবীক্ষণ যন্ত্রের নাম জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ।

১৯৬০ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত নাসার নেতৃত্বে ছিলেন জেমস ই ওয়েব। সে সময় বিশ্ব অ্যাপোলো মিশনে নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিনের চাঁদে অবতরণ দেখেছিল। ২০০২ সালে নাসার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পদে ছিলেন সিন ও’কিফে। তিনি সে সময় ঘোষণা দেন, নাসার শক্তিশালী টেলিস্কোপ হবে জেমস ওয়েবের নামে।

গত বছরের জুলাইয়ে প্রথমবারের মতো ছবি প্রকাশ করে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ।এরপর দূর আকাশের প্রাচীন ছায়াপথ, উজ্জ্বল নীহারিকা ও সৌরজগতের বাইরের চমৎকার সব ছবি তুলে বিশ্ববাসীকে বিহ্বল করে দিচ্ছে টেলিস্কোপটি। এতে এমন সব ছবি উঠে আসছে, যা একসময় মানুষের কল্পনার বাইরে ছিল। সাধারণ ক্যামেরায় এ ধরনের ছবি তোলা সম্ভব নয়। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ছবিগুলোতে উঠে আসে মহাকাশের লুকোনো সব রহস্য। অনেকে এগুলোকে কম্পিউটার দিয়ে তৈরি বলে ভুলও করে বসতে পারেন।

যেভাবে কাজ করে
১৫ লাখ কিলোমিটার দূরের পৃথিবী এবং সূর্যের তাপ থেকে বাঁচাতে ৫টি পর্দা লাগানো হয়েছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে। একেকটি পর্দার মাপ টেনিস কোর্টের সমান। এই টেলিস্কোপে রয়েছে সোনার পাত মোড়ানো ১৮টি ষড়ভুজ আয়না। যার সম্মিলিত ব্যাস ৬ দশমিক ৫ মিটার। ঠিক যেভাবে রাতের আঁধারে ফুল পাপড়ি মেলে সেভাবে আয়নাগুলো মহাকাশে উন্মীলিত হয়েছে।

 ছবি: সংগৃহীতপ্রথমে দূরের কোনো বস্তু থেকে আলো টেলিস্কোপের ২১ ফুট চওড়া ও সোনার পাতে মোড়ানো আয়নায় আঘাত করে। কক্ষপথে টেলিস্কোপটির বিশাল আয়না ও ফোকাস ঠিক রাখতে বিজ্ঞানীরা ওয়েব ফ্রন্ট সেন্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ করেন।

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে ব্যবহৃত প্রতিটি আয়না মানুষের চুল থেকেও পাতলা। এটি হাবল টেলিস্কোপ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা যে ধরনের আলো দেখতে অভ্যস্ত জেমস ওয়েবে আলো সেভাবে কাজ করে না। এই টেলিস্কোপকে যত ইচ্ছা বড় করা যায়। ফলে যে পরিমাণ আলো আপতিত হয় প্রায় তত পরিমাণ আলোর প্রতিফলন ঘটে। 

এ জন্য সুস্পষ্ট ছবি দেখা যায়। এ ছাড়া ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ হওয়ায় জেমস ওয়েব দৃশ্যমান আলোর চেয়ে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বেশি দেখে, যা দূরের ছায়াপথ দেখতে সাহায্য করে।

নির্দিষ্ট সীমার তরঙ্গদৈর্ঘ্য শনাক্ত করতে পারে
নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরার সঙ্গে টেলিস্কোপটিতে মিড-ইনফ্রারেড যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। দুটি একসঙ্গে বিস্তৃত পরিসরের তরঙ্গদৈর্ঘ্য শনাক্ত করতে পারে। ফলে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সদ্য জন্ম নেওয়া নক্ষত্র থেকে ধূমকেতু সবকিছুই দেখতে পান।

প্রতিটি ক্যামেরায় ইনফ্রারেড স্পেকট্রামের নির্দিষ্ট অংশের জন্য ফিল্টারের একটি সেট থাকে। বেশির ভাগ ছবিই একাধিক ফিল্টারের সংমিশ্রণ। এতে একাধিক এক্সপোজার থাকে। পুরো প্রক্রিয়াকে ডিথারিং বলা হয়। মহাজাগতিক রশ্মি ও অন্যান্য ক্ষতিকর বলয় থেকে মুক্ত রাখতে প্রতিটি এক্সপোজারের পর টেলিস্কোপের ফ্রেম সামান্য পরিবর্তন করা হয়।

কোনো খারাপ পিক্সেল থাকলেও সেটি ভালো পিক্সেল থেকে তথ্য দিয়ে পূর্ণ হয়ে যায়। তারপর পৃথক ছবিগুলো সারিবদ্ধ ও একসঙ্গে করে একটি নির্দিষ্ট শটে নিয়ে আসা হয়।

 ছবি: সংগৃহীতমহাবিশ্বের বিস্তৃত সমীক্ষার জন্য নাসা ডজন ডজন ফ্রেমে নয়টি ফিল্টার ব্যবহার করবে প্রতি নয়টি এক্সপোজারের জন্য। সেই হিসাবে প্রতিটি ফ্রেমের জন্য ৮১টি এবং পুরো প্রক্রিয়ার জন্য ৭ হাজার এক্সপোজারের প্রয়োজন হবে; যা সাধারণ ক্যামেরা দিয়ে একেবারেই অসম্ভব। 

এক্সপোজারের সময়
মহাবিশ্বের বিভিন্ন গ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ ও অন্যান্য বস্তুর মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। এক্সপোজারের সময় সবকিছুই বিবেচনায় নিতে হয়। এনআইআরক্যামে এক্সপোজারের সময় কয়েক মাইক্রোসেকেন্ড থেকে প্রায় ২৩ মিনিট পর্যন্ত।

অনেক সময় উজ্জ্বল বস্তুর পাশে থাকা অস্পষ্ট বস্তু দেখতে সমস্যায় পড়তে হয়। এ জন্য এনআইরক্যামে করোনাগ্রাফ ব্যবহার করা হয়। এটি মূলত কালো বিন্দুসহ একটি গ্লাস প্লেট, যা অবাঞ্ছিত আলো দূর করে স্পষ্টভাবে দূরের বস্তু দেখতে সহায়তা করে।
ইনফ্রারেড ছবির আরেকটি সুবিধা হলো, দীর্ঘতম তরঙ্গদৈর্ঘ্যগুলো ধূলিকণার মধ্য দিয়ে ঝলমল করতে থাকে। ফলে মহাবিশ্বের গভীর অংশ থেকে দুর্লভ ছবি তুলে আনা সম্ভব।

যেহেতু মানুষ ইনফ্রারেড আলো দেখতে পায় না, তাই আমরা আকাশে তাকালে যেমন দেখতে পাই, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে তেমনটি দেখা যায় না। নাসার কর্মীরা সামঞ্জস্য করে প্রয়োজনীয় তরঙ্গদৈর্ঘ্য দৃশ্যমান রঙে রূপ দেয়। রংগুলো একেবারে সঠিক না হলেও আকৃতি ও বস্তুগুলোর অস্তিত্ব বাস্তব।

জেমস ওয়েবের উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ কারিনা নেবুলা, পিলারস অব ক্রিয়েশন ও এক্সোপ্ল্যানেটের মনোমুগ্ধকর ছবি তুলতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া এর আবিষ্কারের তালিকায় আছে—

  • দূরবর্তী ৫০টি তারার জন্ম-রহস্য উন্মোচন।
  • ৯০ লাখ সূর্যের ভরের সমান একটি বিশাল কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান। 
  • শিলা, ধূলিকণা এবং গ্যাসের একটি বলয়ে মিথাইল ক্যাটায়ন নামের রাসায়নিক আবিষ্কার।
  •  শত শত নতুন ছায়াপথ।
  •  ২৩৫ ট্রিলিয়ন মাইল দূরের একটি গ্রহে ধুলার ঝড়। 

সূত্র: ডিসকভারি ম্যাগাজিন ও বিজনেস ইনসাইডার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কাও ঢাকায় এসিসির সভা বর্জন করল

মুক্তি পেয়ে আ.লীগ নেতার ভিডিও বার্তা, বেআইনি বলল বিএনপি

গাড়ি কেনার টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে মারধর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা

সালাহউদ্দিনকে নিয়ে বিষোদ্‌গার: চকরিয়ায় এনসিপির পথসভার মঞ্চে বিএনপির হামলা-ভাঙচুর

যুদ্ধবিমানের ২৫০ ইঞ্জিন কিনছে ভারত, ফ্রান্সের সঙ্গে ৬১ হাজার কোটি রুপির চুক্তি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত