Ajker Patrika

শুধু ডিএনএ ডেটা দিলেই আপনার মুখের থ্রিডি ছবি বানাবে নতুন এআই টুল

অনলাইন ডেস্ক
এআই টুলটি ডিএনএ-র তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করতে পারে মানুষের মুখচ্ছবি। ছবি: জেডএমই সায়েন্স
এআই টুলটি ডিএনএ-র তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করতে পারে মানুষের মুখচ্ছবি। ছবি: জেডএমই সায়েন্স

শুধু ডিএনএ ডেটা বা তথ্য দিয়েই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই তৈরি করে দিচ্ছে মানুষের মুখের অবিকল ত্রিমাত্রিক ছবি। এমনই চমকপ্রদ দাবি করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা।

চীনা অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষকেরা সম্প্রতি ‘ডিফেস’ নামের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর (এআই) টুল প্রকাশ করেছেন, যা শুধুমাত্র ডিএনএ-র তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করতে পারে মানুষের মুখচ্ছবি। গবেষকেরা বলছেন, এই প্রযুক্তি ফরেনসিক, চিকিৎসকদের এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাজের ধরন বদলে দিতে পারে। তবে একই সঙ্গে এর গোপনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

গবেষণা দলের অন্যতম জ্যেষ্ঠ সদস্য লুওনান চেন বলেন, ‘ডিফেস ডিএনএ ব্যবহার করে শুধু মানুষের মুখের ত্রিমাত্রিক চিত্র তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সে মানুষের চেহারা কেমন হতে পারে তাও দেখিয়ে দিতে পারে।’

ডিফেস যেভাবে কাজ করে

দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা জানেন যে, মানুষের মুখের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য—যেমন চিবুক, নাক, গালের হাড়—নির্ধারণ করে কিছু নির্দিষ্ট জিন। এসব জিনের একক রূপ হলো এসএনপি (সিঙ্গেল নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজম)।

এই ধারণাকে প্রযুক্তিগতভাবে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে ডিফেস। এটি প্রথমে জেনেটিক ডেটা (জিনের তথ্য) ও থ্রিডি ফেসিয়াল কাঠামোর মধ্যে মিল খুঁজে দেখে। এরপর ‘কনট্রাস্টিভ লার্নিং’ নামের একটি আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে মুখাবয়ব ও ডিএনএ-এর সম্পর্ক খুঁজে বের করে। সবশেষে, ‘ডিফিউশন মডেল’ নামের এক এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি হয় একটি ডিজিটাল মুখের অবয়ব—যা আশ্চর্যজনকভাবে বাস্তবের কাছাকাছি।

প্রথম পর্যায়ে ৯ হাজার ৬৭৪ জন চীনা স্বেচ্ছাসেবকের ডিএনএ ও থ্রিডি মুখাবয়ব ব্যবহার করে প্রশিক্ষিত হয় এই মডেল। এর ফলে গালের হাড়ের গঠন বা নাকের আকারের মতো সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্যও স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে ডিফেস।

ডিএনএ দিয়ে বানানো মুখচ্ছবির গড় ত্রুটির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩ দশমিক ৫ মিলিমিটার। বয়স, লিঙ্গ ও শরীরের গঠন সংক্রান্ত তথ্য দিলে এই ত্রুটি আরও কমে আসে—মাত্র ২ দশমিক ৯৩ মিলিমিটারে।

ফরেনসিকে বিপ্লব

ফরেনসিক বিজ্ঞানে এই প্রযুক্তির প্রভাব হতে পারে বিপ্লবী। অপরাধস্থলে যদি শুধু একটি চুল কিংবা কয়েকটি কোষ পাওয়া যায়, তাহলেও সম্ভাব্য অপরাধীর মুখের ছবি বানানো যেতে পারে।

একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, পাঁচটি ছবির মধ্যে ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক মুখটি শনাক্ত করতে পেরেছেন পর্যবেক্ষকেরা। তবে ২০টি ছবির তালিকায় এ সাফল্য কমে ৫১ শতাংশে এ দাঁড়িয়েছে।

তবে ডিফেস এখনো পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়। ডিএনএ-র তথ্য কম হলে মুখগুলো সাধারণ হয়ে যায়। যখন জেনেটিক ডেটার মাত্র ৭০ শতাংশ বা তার কম অংশ পাওয়া যায়, তখন ডিফেসের মুখচিত্র পুনর্গঠনের সক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়। এ ক্ষেত্রে তবে নাকের মতো বৈশিষ্ট্য তুলনামূলকভাবে বেশি নির্ভরযোগ্য।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, শুধু ডিএনএ দিয়েই যদি কারও মুখ গঠন করা যায়, তবে সে আর ‘অজ্ঞাত’ থাকতে পারবে না। তবে এই ধরনের শনাক্তের পদ্ধতি অনেক ডিএনএ টেস্টিং কোম্পানির গোপনীয়তা নীতির বিপরীত। ফলে, কারও অজান্তেই তার পরিচয় উন্মোচিত হতে পারে—যা নজরদারি বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে।

জেনেটিক ডেটা সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা দেশভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে এবং খুব কম দেশই এই ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্রে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই ডিএনএ ফেনোটাইপিং ব্যবহার করে সন্দেহভাজনের মুখাবয়বের খসড়া তৈরি করেছে। চীনে কর্তৃপক্ষ জাতিগত সংখ্যালঘুদের ডিএনএ-ভিত্তিক ডেটাবেইস তৈরি করেছে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর ব্যবহার

চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ প্রযুক্তির ব্যবহার হতে পারে বৈপ্লবিক। জন্মগত অসুস্থতা শনাক্ত করা বা বার্ধক্যের প্রক্রিয়া বুঝতেও কাজে লাগতে পারে ডিএনএ-নির্ভর এসব মুখছবি। গবেষকেরা জানিয়েছেন, ডিফেস ভবিষ্যতের চেহারা কেমন হবে তা পূর্বানুমানও করতে পারে।

তবে এই প্রযুক্তি এখনো সব জনগোষ্ঠীর জন্য উপযুক্ত নয়। এটি কেবল চীনা জনগোষ্ঠীর (চীনের সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগোষ্ঠী হান) তথ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে। বৈচিত্র্যময় জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে এটি ব্যবহার করতে হলে নতুন বিশাল ডেটাবেইস তৈরি করতে হবে—যা নতুন ধরনের নৈতিক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

গবেষকেরা অস্বীকার করছেন, ‘ভবিষ্যতে ডিফেসকে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ডেটা দিয়ে যাচাই করা ও আরও জেনেটিক তথ্য সংযুক্ত করা জরুরি।’

গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে অ্যাডভান্সড সায়েন্স সাময়িকীতে।

তথ্যসূত্র: জেডএমই সায়েন্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত