বাংলাদেশ দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দীন জাতীয় দলে গত ডিসেম্বরে যুক্ত হওয়ার পর গত আট মাসে মুদ্রার দুটি পিঠই দেখে ফেলেছেন। জাতীয় দলের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় সালাহ উদ্দীন সমালোচিত হয়েছেন। অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটের সাফল্যে তিনি এত দিন শুধু প্রশংসা পেয়ে অভ্যস্ত ছিলেন। এসব নিয়েই গতকাল মাস্কো ক্রিকেট একাডেমিতে সালাহ উদ্দীন কথা বললেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রানা আব্বাস।
রানা আব্বাস, ঢাকা
প্রশ্ন: গত ৮ মাসে জাতীয় দলের অভিজ্ঞতা কেমন হলো?
মোহাম্মদ সালাহ উদ্দীন: খুব বেশি পরিবর্তন হইনি। আমি আগের মতোই; যা ছিলাম, তা-ই আছি। এখন চ্যালেঞ্জ একটু বেশি। আগে মানুষের প্রত্যাশা কম ছিল, এখন বেশি। এটা স্বাভাবিক এবং তা হবেই। যেহেতু অনেক দিন হয়ে গেছে, আমরা বড় কোনো টুর্নামেন্টে ভালো করিনি। এটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রশ্ন: বিসিবির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল আপনাকে ডেকেছিলেন। তিনি কী বললেন?
সালাহ উদ্দীন: এসব আসলে প্রকাশ্যে বলা যাবে না। আমার মনে হয় একটা ভালো দিক, যেকোনো পরিস্থিতিতে বোর্ড আমাকে ভালো সহায়তা করছে, যেন কাজের দিকে বেশি মনোযোগ রাখি। খেলায় তিনটা পার্ট থাকে। ক্রিকেটাররা খেলে, ম্যানেজমেন্ট আছে আর কর্মকর্তা আছে। সবকিছুর ওপর নির্ভর করে, আমাদের সামগ্রিক ক্রিকেটটা কীভাবে এগোবে। সমন্বয়টা যদি ঠিকমতো হয়, তাহলে হয়তো আমাদের ক্রিকেট এগোবে। এসব নিয়েই কথা হয়েছে। বোর্ড সভাপতি বুলবুল ভাই নিজেও ক্রিকেট প্লেয়ার ছিলেন। তিনি জানেন আসলে কী কী লাগবে। খুবই জ্ঞানী মানুষ। তাঁর ইচ্ছা আছে।
প্রশ্ন: বলা হচ্ছে, জাতীয় দলে আপনার মধুচন্দ্রিমা শেষ। এখন তাহলে আপনি কি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি?
সালাহ উদ্দীন: ওভাবে চিন্তা করাটা ভুল হবে। এই আট মাসে আমরা হয়তো কিছু সাফল্য পেয়েছি। কিছু জায়গায় বেশি খারাপ করে ফেলছি। নির্দিষ্টভাবে বললে অনেক টেস্ট ম্যাচ আছে, আমরা কয়েক ঘণ্টা খারাপ খেলছি। তাতেই টেস্ট হেরে গেছি। আরব আমিরাতের সঙ্গে যে সিরিজটা হেরেছি, ওটা বড় ধাক্কা ছিল। এ ছাড়া আমরা প্রতিটি জায়গায় ভালো খেলেছি। কিছু ফল এসেছে। আরও কিছু ফল এলে দলের জন্য আরও ভালো হতো। তাতে দলের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়ত। এর মধ্যে আমরা যেসব সিরিজ জিতেছি, সেগুলো দলের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। আমার মনে হয়, ছেলেদের জেতার মানসিকতা তৈরি হয়েছে। আমরা চাচ্ছি, বড় টুর্নামেন্টে ভালো খেলি। সবাই সেভাবেই এগোচ্ছি।
প্রশ্ন: আরব আমিরাতে হারের পর একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। আপনি যখন ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন, গ্যালারি থেকে ছুটে আসা দর্শকদের তির্যক মন্তব্যে শামীম পাটোয়ারী তেড়ে গেলেন। এটা আপনার জন্য কতটা ধাক্কার? এই দর্শকই তো একসময় আপনাকে মাথায় তুলে রেখেছিল।
সালাহ উদ্দীন: এটা স্বাভাবিক। মানুষের প্রত্যাশা এখন অনেক বেশি। আমাকে এটা মেনে নিতেই হবে। যখন এই দায়িত্বে এসেছি, তখন নিজেও জানতাম, এখানে সাফল্য পেলে আমাকে মাথায় তুলে নাচবে। আবার সাফল্য না পেলে মাথা থেকে নামিয়েও দেবে। সাফল্য-ব্যর্থতা মিলিয়ে দলকে কীভাবে এগিয়ে নিতে পারছি, এটাই মূলকথা। ছেলেদের ভেতরে পরিবর্তন আসছে কি না, ছেলেরা শিখছে কি না ভালোভাবে—সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এক দিনেই তো সব পরিবর্তন করা যাবে না। প্রতিটি বিষয়ের ধাপ আছে। মনে হয়, দিন শেষে আমার কাছে মানুষ ফলটা চাইবে। যেহেতু খুব বেশি পিছিয়ে নেই। যদি তাড়াতাড়ি ওভারকাম করতে পারি, বড় টুর্নামেন্টেও আমরা ভালো করব।
প্রশ্ন: অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার চলে গেছেন। দল কতটা গুছিয়ে নিতে পেরেছেন?
সালাহ উদ্দীন: টি-টোয়েন্টিতে কমবেশি ফল আসছে। আমাদের ছেলেরা নিজ নিজ দায়িত্ব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে। কে কোন ভূমিকায় খেলবে। কোন পথে আমরা টি-টোয়েন্টিতে এগোব। আমরা এখানে কিছুটা পরিষ্কার হয়ে গেছি। পরিষ্কার থাকাটাই বেশি জরুরি। ব্যাটার হোক বা বোলার—কার কী ভূমিকা। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে একটা ভালো সেটআপের মধ্যে চলে আসছি। ওয়ানডেতে একটু সময় লাগবে। এখানে ভালো করতে অনেক অভিজ্ঞতা লাগে। আমরা বিশেষভাবে মিডল ওভারে কিছুটা সংগ্রাম করছি। এই জায়গাটা পূরণ হতে কিছুটা সময় লাগবে। এখানে এটাও খেয়াল রাখতে হবে, ছেলেদের কতটা সুযোগ আমরা দিচ্ছি। তারা কীভাবে গুছিয়ে উঠছে। সবচেয়ে বড় উন্নতিটা হয়েছে, আমাদের বোলাররা নিচে দারুণ ব্যাটিং করছে। আগে এটা ছিল না। আগে পাঁচ উইকেট পড়ে গেলে আমরা শেষ! কিন্তু এখন ওই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসছি। সাদা বলে ওপেনিংয়ে ভালো একটা জুটি দেখতে পাচ্ছি। এটা থিতু হওয়ার চান্স আছে।
প্রশ্ন: ফিনিশিং রোলে জাকের আলী ও শামীম হোসেন পাটোয়ারীর ভূমিকা আপনাকে কতটা আশাবাদী করছে?
সালাহ উদ্দীন: ওরা এসব জায়গায় নিয়মিতই খেলে। এখানে তারা অভ্যস্ত। কঠিন পরিস্থিতিতে বহুবার খেলেছে। নার্ভটা তারা ধরে রাখে। মনে হয়, তারা দিনে দিনে আরও পরিণত হবে। আমার বিশ্বাস, ভবিষ্যতে তারা হারা ম্যাচও এক হাতে জেতাবে।
প্রশ্ন: পাকিস্তান সিরিজ জিতলেও যে উইকেটে খেলেছেন, সেটা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আপনার কি মনে হয়, এটা আদর্শ ছিল?
সালাহ উদ্দীন: ভুল আসলে দুই দলই করেছে। উইকেট এত খারাপ ছিল না, যতটা খারাপ বলা হচ্ছে। খেলা আসলে প্রথম ৬ ওভারেই শেষ! প্রথম ৬ ওভারেই তো অনেক সময় যেভাবে ব্যাটিং করা দরকার ছিল, কোনো দলই সেভাবে করেনি। এটা আমরা ভুল করেছি। ওরাও ভুল করেছে। এখানেই খেলাটা শেষ হয়ে গেছে। এই উইকেটে দেখবেন, ৬ ওভার পর ব্যাটাররা স্ট্রোক খেলতে পেরেছে। প্রতিটি ম্যাচেই দেখবেন, প্রথম দু-তিন ওভারে ৩-৪টা উইকেট পড়ে গেছে। ওই পরিস্থিতিতে যেভাবে খেলা উচিত ছিল, আমরা খেলিনি, ওরাও খেলেনি সেভাবে। আমরা একটা ম্যাচে খেলিনি। ওরা দুটি ম্যাচে খেলেনি। প্রথম দিকের ব্যাটাররাই ভুল করছে।
প্রশ্ন: এশিয়া কাপের আগেও কি এমন উইকেটে প্রস্তুতি সারতে চান?
সালাহ উদ্দীন: আমরা যে দুবাইয়ে খেলেছি, প্রায় একই ধরনের উইকেট মনে হয়েছে। উইকেটে স্পিন ধরে। হাই স্কোরিং ম্যাচ তেমন একটা হয় না কিন্তু। খুব বেশি যে কঠিন হবে বলে মনে হয় না। কারণ, মোটামুটি একই ধরনের।
প্রশ্ন: যদি বাংলাদেশের ম্যাচ আবুধাবিতে পড়ে?
সালাহ উদ্দীন: সেটা হয়তো ভিন্ন হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে হলে আপনাকে সব ধরনের পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে হবে। উইকেটে হেল্প থাকলে দলের জন্য কিছুটা উপকার আছে। সেটা যেখানেই খেলি। শুধু ফ্ল্যাট ট্র্যাকে খেলবেন, তা তো নয়। আপনাকে বিভিন্ন উইকেটে বিভিন্নভাবে মানিয়ে নিতে হবে।
প্রশ্ন: বিসিবি নেপাল-নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে খেলে এশিয়া কাপের প্রস্তুতি সারতে চাইছে। এটা আদর্শ হবে কি না।
সালাহ উদ্দীন: এখন তো আন্তর্জাতিক কোনো দল নেই। ছেলেরা যাওয়ার আগে কিছু প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে যেতে পারলে দলের জন্য ভালো হবে। দিন শেষে আপনাকে খেলতে হবে। শুধু অনুশীলনই করবেন, তা তো নয়। ম্যাচ খেলার জন্য যা যা করা দরকার, সেগুলো হয়তো ম্যানেজমেন্ট চিন্তা করছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে তিন অধিনায়ক তত্ত্ব কি সঠিক মনে করেন?
সালাহ উদ্দীন: আগে ছিলাম দলের বাইরে। তখন হয়তো চাইলে অনেক কথা বলতে পারতাম। এখন চাইলেও অনেক কথা বলতে পারব না। ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বলতে পারি। বোর্ডের সঙ্গে বলতে পারি। তবে সেটা জনসমক্ষে বলতে পারব না। প্রতিষ্ঠান যা মনে করবে, সেই পলিসির সঙ্গে দ্বিমত করা যায় না। দ্বিমত করতে হলে অভ্যন্তরীণভাবে করব।
প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কা সফরের মাঝে নাজমুল হোসেন শান্তর অধিনায়কত্ব ছাড়া আপনাকে কতটা অবাক করেছে?
সালাহ উদ্দীন: ও (শান্ত) তো দায়িত্ব ছেড়ে দেয়নি। (টেস্ট) সিরিজটা সম্পূর্ণ করে তারপর করেছে। এমন নয় যে সে সিরিজের আগে বলেছে, আমি করব না (অধিনায়কত্ব)। তা তো নয়। সিরিজটা শেষ করে ভালোভাবেই করেছে (অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া)। আমার মতে, সবারই ব্যক্তিগত মতামত আছে। এটা তো আসলে জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার মতো নয়। সবারই ব্যক্তিগত মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সে (শান্ত) যদি মানসিকভাবে বিরক্ত থাকে, সে কিন্তু খেলতে পারবে না। দিন শেষে তাকে খেলোয়াড় হিসেবে পারফর্ম করতে হবে। তার যদি মনে হয়, এটা মানসিকভাবে খুবই ভোগাচ্ছে, তার সেই সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের সম্মান জানানো উচিত।
প্রশ্ন: দলে আপনার অনেক প্রভাবের কথা শোনা যায়। কথাগুলো আপনাকে কতটা বিব্রত করে?
সালাহ উদ্দীন: বিব্রত হওয়ার মতো কিছু না। জানি, আগে থেকেই এখানে কিছু ঘটলে জবাবদিহি করতে হবে। কারণ, আমি দেশি মানুষ। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিদেশিদের সঙ্গে পার্থক্য করাও ঠিক নয়। তাহলে তাদের প্রতি অসম্মান করা হয়। এটা আমাদের সংস্কৃতি। এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। আমাদের নিয়মই হচ্ছে, আপনি কেন ভালো আছেন, আমি তাই খুব অসুখী! আমাদের সংস্কৃতির একটা দিক, ও কেন ভালো আছে। নিজে কেমন আছি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। এটা মেনে নিয়েছি। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নাই। তবে আমার মনে হয়, গঠনমূলক সমালোচনা করলে সবার জন্যই ভালো। আমি ব্যাটিং কোচ। দল ভালো করছে না। সেটা নিয়ে আপনি বলেন। কোনো সমস্যা নেই। সবকিছুই গঠনমূলক হলে সবার প্রতি সম্মান থাকে। কারও মোটিভ যদি প্রয়োগ করতে চান, ঠিক নয়। শুধু অন্যায়ভাবে না জেনে দোষ দেওয়া ঠিক নয়। এখানে হেড কোচ, অধিনায়ক আছে। কোচিং স্টাফে অনেক কিংবদন্তি খেলোয়াড় আছেন। আমি চাইলেও মুশতাক ভাইয়ের ওপর মাতব্বরি করতে পারব না। তাঁরাও অনেক হাই প্রোফাইল কোচ। বুঝেশুনে কথা বললে ভালো হয়।
প্রশ্ন: হুট করে শেখ মেহেদীকে সহ-অধিনায়ক করা, বিপিএলের টুর্নামেন্ট সেরা হয়েও মেহেদী হাসান মিরাজের টি-টোয়েন্টি দলে উপেক্ষিত থাকা ইত্যাদি বিষয় আপনার প্রভাবের উদাহরণ হিসেবে এসেছে।
সালাহ উদ্দীন: সব তো প্রকাশ্যে বলা যায় না। এতটুকু বলব, নির্বাচক, অধিনায়ক, প্রধান কোচ আছেন। এগুলো বুঝতে হবে। আমার মতামতেই যদি সব হতো, তাহলে আমারই দল চালালে ভালো হতো। এটা নিয়ে কথা না বলাই ভালো। প্রতিটি বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করে। দলে সাফল্য আসে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে।
প্রশ্ন: দলে একজন পাওয়ার হিটিং কোচ যোগ হচ্ছেন। আপনার কাজের পরিধি কমে যেতে পারে। কীভাবে দেখছেন?
সালাহ উদ্দীন: আমার দল যদি সামান্য লাভবান হয়, যেকোনো বিভাগে, আমি কেন ঈর্ষান্বিত হতে যাব। দল হিসেবে ভালো করলে সবারই ভালো লাগবে। আমি তো বলতে যাইনি, গত এক বছরে আমরা সবচেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছি, আমাদের পাওয়ার হিটিং কোচ আনার দরকার নেই! আমার যদি মনে হয় দলের সামান্য উপকারেও যদি কেউ আসে, সেটা দলেরই হবে। দলটা পুরো বাংলাদেশের। এখানে ভিন্নভাবে দেখার কিছু নেই।
প্রশ্ন: সংক্ষিপ্ত সময়ে একজন পাওয়ার হিটিং কোচ কতটা বদলে দিতে পারবেন?
সালাহ উদ্দীন: যদি কেউ একটা ধাপ এগিয়ে দিতে পারে, সেটা দলেরই লাভ। কী শিখবে, কী শেখাবে, জানি না। তবে কেউ যদি সামান্য নিতে পারে, তাতে দলই লাভবান। এখানে আমরা ব্যক্তিগতভাবে কেউ গুরুত্বপূর্ণ নই, দল গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: অধিনায়ক লিটন দাস এই রানে আছেন তো এই নেই! তাঁকে নিয়ে কী বলবেন?
সালাহ উদ্দীন: শুধু লিটন দাস নয়, ব্যাটিং কোচ হিসেবে আমার আরও কয়েকটা চ্যালেঞ্জ আছে। বোলাররা যেন ভালো ব্যাটিং করতে পারে। তাতে ওপরের নাম্বার ছয়-সাতে যারা ব্যাটিং করে, তারা অনেক চাপে খেলে। ওরা ভাবে, আমার পরে আর কেউ নেই! আমরা অধারাবাহিক। এক ম্যাচে সবাই ভালো করল, পরের ম্যাচের সবাই একসঙ্গে খারাপ করল। শুধু লিটন নয়, এখানে সবাইকে উন্নতি করতে হবে। শ্রীলঙ্কার টেস্ট ব্যাটারদের গড় দেখুন, সবারই ৪০-এর ওপরে। আমাদের কারও নেই, ৩৬-৩৭ তারা যদি ৪০-৪২ গড়ে নিয়ে যায়, যারা ২৭-২৮ তারা যদি ৪০-এর কাছাকাছি চলে যায়, তাহলে দল থিতু হয়ে যাবে। এই চ্যালেঞ্জ আছে সামনে। এখানে বেশি উন্নতি করা জরুরি।
প্রশ্ন: সাকিব-তামিমদের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের ক্রিকেটারদের মৌলিক পার্থক্য কী?
সালাহ উদ্দীন: পার্থক্য খুব বেশি নয়। তাদের সময়ে দলের চাহিদা কম ছিল। টেস্টে আমরা কখনো চিন্তা করতাম, যেন আড়াই দিনে যায়। আড়াই দিনে গেলে বেঁচে যাই! ওয়ানডেতে ২০০৮ সালের দিকে ২০০-২২০ করলে আমরা খুশি হয়ে যেতাম। জেমি (সিডন্স) মাঝে মাঝে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলত—সালাহ উদ্দীন, আজ আমরা ২২০ করেছি। তখন চাওয়া-পাওয়া অন্য রকম ছিল। এখন দলটা একটা ভালো পর্যায়ে গেছে। এখন জয়ের প্রত্যাশা বেশি। ছেলেদের এই মানসিকতা আছে, জয়ের ক্ষুধা আছে। এই পরিবর্তন যুগের সঙ্গে সঙ্গে মানিয়ে নিতেই হবে।
প্রশ্ন: সাকিবের সঙ্গে শেষ কথা কবে?
সালাহ উদ্দীন: সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সফরে।
প্রশ্ন: কী কথা হয়েছে ক্রিকেট নিয়ে?
সালাহ উদ্দীন: সাকিব আমাকে নিয়ে একটু চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। জিজ্ঞেস করল, আপনি টেনশনে পড়ে গেছেন কি না। সে আমাকে ভালোভাবে চেনে। একটা ডায়ালগ দিয়েছিলাম ওকে, দেখ, জীবনে মাইনাস ৫০০ টাকা নিয়ে সংসার শুরু করেছিলাম। তুই আমাকে টেনশন দিয়ে কাবু করবি, আমি ওই মানুষ না। তখন বলে, রাখি! রাখি!
প্রশ্ন: ওর ক্রিকেট ক্যারিয়ার কোন দিকে যাচ্ছে, নিভৃতে শেষ?
সালাহ উদ্দীন: এটা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। বোর্ডও কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। এটা সরকারি নীতি, তাদের ওপর নির্ভর করে। বোর্ডেরও কিছু করার নেই। যখন সরকার মনে করবে, তখনই সে আসতে পারবে। না হলে আসলে...তাকে ক্রিকেট খেলতে দেশে আসতে হবে। এটা নিয়ে আমাদের খুব বেশি চিন্তা করার কিছু নেই। হয়তো সেভাবে সে মেনে নেবে। বা কখনো যদি সে ফিরে আসতে পারে, সবাই চাই আসুক। এটা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।
প্রশ্ন: গত ৮ মাসে জাতীয় দলের অভিজ্ঞতা কেমন হলো?
মোহাম্মদ সালাহ উদ্দীন: খুব বেশি পরিবর্তন হইনি। আমি আগের মতোই; যা ছিলাম, তা-ই আছি। এখন চ্যালেঞ্জ একটু বেশি। আগে মানুষের প্রত্যাশা কম ছিল, এখন বেশি। এটা স্বাভাবিক এবং তা হবেই। যেহেতু অনেক দিন হয়ে গেছে, আমরা বড় কোনো টুর্নামেন্টে ভালো করিনি। এটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রশ্ন: বিসিবির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল আপনাকে ডেকেছিলেন। তিনি কী বললেন?
সালাহ উদ্দীন: এসব আসলে প্রকাশ্যে বলা যাবে না। আমার মনে হয় একটা ভালো দিক, যেকোনো পরিস্থিতিতে বোর্ড আমাকে ভালো সহায়তা করছে, যেন কাজের দিকে বেশি মনোযোগ রাখি। খেলায় তিনটা পার্ট থাকে। ক্রিকেটাররা খেলে, ম্যানেজমেন্ট আছে আর কর্মকর্তা আছে। সবকিছুর ওপর নির্ভর করে, আমাদের সামগ্রিক ক্রিকেটটা কীভাবে এগোবে। সমন্বয়টা যদি ঠিকমতো হয়, তাহলে হয়তো আমাদের ক্রিকেট এগোবে। এসব নিয়েই কথা হয়েছে। বোর্ড সভাপতি বুলবুল ভাই নিজেও ক্রিকেট প্লেয়ার ছিলেন। তিনি জানেন আসলে কী কী লাগবে। খুবই জ্ঞানী মানুষ। তাঁর ইচ্ছা আছে।
প্রশ্ন: বলা হচ্ছে, জাতীয় দলে আপনার মধুচন্দ্রিমা শেষ। এখন তাহলে আপনি কি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি?
সালাহ উদ্দীন: ওভাবে চিন্তা করাটা ভুল হবে। এই আট মাসে আমরা হয়তো কিছু সাফল্য পেয়েছি। কিছু জায়গায় বেশি খারাপ করে ফেলছি। নির্দিষ্টভাবে বললে অনেক টেস্ট ম্যাচ আছে, আমরা কয়েক ঘণ্টা খারাপ খেলছি। তাতেই টেস্ট হেরে গেছি। আরব আমিরাতের সঙ্গে যে সিরিজটা হেরেছি, ওটা বড় ধাক্কা ছিল। এ ছাড়া আমরা প্রতিটি জায়গায় ভালো খেলেছি। কিছু ফল এসেছে। আরও কিছু ফল এলে দলের জন্য আরও ভালো হতো। তাতে দলের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়ত। এর মধ্যে আমরা যেসব সিরিজ জিতেছি, সেগুলো দলের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। আমার মনে হয়, ছেলেদের জেতার মানসিকতা তৈরি হয়েছে। আমরা চাচ্ছি, বড় টুর্নামেন্টে ভালো খেলি। সবাই সেভাবেই এগোচ্ছি।
প্রশ্ন: আরব আমিরাতে হারের পর একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। আপনি যখন ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন, গ্যালারি থেকে ছুটে আসা দর্শকদের তির্যক মন্তব্যে শামীম পাটোয়ারী তেড়ে গেলেন। এটা আপনার জন্য কতটা ধাক্কার? এই দর্শকই তো একসময় আপনাকে মাথায় তুলে রেখেছিল।
সালাহ উদ্দীন: এটা স্বাভাবিক। মানুষের প্রত্যাশা এখন অনেক বেশি। আমাকে এটা মেনে নিতেই হবে। যখন এই দায়িত্বে এসেছি, তখন নিজেও জানতাম, এখানে সাফল্য পেলে আমাকে মাথায় তুলে নাচবে। আবার সাফল্য না পেলে মাথা থেকে নামিয়েও দেবে। সাফল্য-ব্যর্থতা মিলিয়ে দলকে কীভাবে এগিয়ে নিতে পারছি, এটাই মূলকথা। ছেলেদের ভেতরে পরিবর্তন আসছে কি না, ছেলেরা শিখছে কি না ভালোভাবে—সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এক দিনেই তো সব পরিবর্তন করা যাবে না। প্রতিটি বিষয়ের ধাপ আছে। মনে হয়, দিন শেষে আমার কাছে মানুষ ফলটা চাইবে। যেহেতু খুব বেশি পিছিয়ে নেই। যদি তাড়াতাড়ি ওভারকাম করতে পারি, বড় টুর্নামেন্টেও আমরা ভালো করব।
প্রশ্ন: অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার চলে গেছেন। দল কতটা গুছিয়ে নিতে পেরেছেন?
সালাহ উদ্দীন: টি-টোয়েন্টিতে কমবেশি ফল আসছে। আমাদের ছেলেরা নিজ নিজ দায়িত্ব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে। কে কোন ভূমিকায় খেলবে। কোন পথে আমরা টি-টোয়েন্টিতে এগোব। আমরা এখানে কিছুটা পরিষ্কার হয়ে গেছি। পরিষ্কার থাকাটাই বেশি জরুরি। ব্যাটার হোক বা বোলার—কার কী ভূমিকা। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে একটা ভালো সেটআপের মধ্যে চলে আসছি। ওয়ানডেতে একটু সময় লাগবে। এখানে ভালো করতে অনেক অভিজ্ঞতা লাগে। আমরা বিশেষভাবে মিডল ওভারে কিছুটা সংগ্রাম করছি। এই জায়গাটা পূরণ হতে কিছুটা সময় লাগবে। এখানে এটাও খেয়াল রাখতে হবে, ছেলেদের কতটা সুযোগ আমরা দিচ্ছি। তারা কীভাবে গুছিয়ে উঠছে। সবচেয়ে বড় উন্নতিটা হয়েছে, আমাদের বোলাররা নিচে দারুণ ব্যাটিং করছে। আগে এটা ছিল না। আগে পাঁচ উইকেট পড়ে গেলে আমরা শেষ! কিন্তু এখন ওই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসছি। সাদা বলে ওপেনিংয়ে ভালো একটা জুটি দেখতে পাচ্ছি। এটা থিতু হওয়ার চান্স আছে।
প্রশ্ন: ফিনিশিং রোলে জাকের আলী ও শামীম হোসেন পাটোয়ারীর ভূমিকা আপনাকে কতটা আশাবাদী করছে?
সালাহ উদ্দীন: ওরা এসব জায়গায় নিয়মিতই খেলে। এখানে তারা অভ্যস্ত। কঠিন পরিস্থিতিতে বহুবার খেলেছে। নার্ভটা তারা ধরে রাখে। মনে হয়, তারা দিনে দিনে আরও পরিণত হবে। আমার বিশ্বাস, ভবিষ্যতে তারা হারা ম্যাচও এক হাতে জেতাবে।
প্রশ্ন: পাকিস্তান সিরিজ জিতলেও যে উইকেটে খেলেছেন, সেটা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আপনার কি মনে হয়, এটা আদর্শ ছিল?
সালাহ উদ্দীন: ভুল আসলে দুই দলই করেছে। উইকেট এত খারাপ ছিল না, যতটা খারাপ বলা হচ্ছে। খেলা আসলে প্রথম ৬ ওভারেই শেষ! প্রথম ৬ ওভারেই তো অনেক সময় যেভাবে ব্যাটিং করা দরকার ছিল, কোনো দলই সেভাবে করেনি। এটা আমরা ভুল করেছি। ওরাও ভুল করেছে। এখানেই খেলাটা শেষ হয়ে গেছে। এই উইকেটে দেখবেন, ৬ ওভার পর ব্যাটাররা স্ট্রোক খেলতে পেরেছে। প্রতিটি ম্যাচেই দেখবেন, প্রথম দু-তিন ওভারে ৩-৪টা উইকেট পড়ে গেছে। ওই পরিস্থিতিতে যেভাবে খেলা উচিত ছিল, আমরা খেলিনি, ওরাও খেলেনি সেভাবে। আমরা একটা ম্যাচে খেলিনি। ওরা দুটি ম্যাচে খেলেনি। প্রথম দিকের ব্যাটাররাই ভুল করছে।
প্রশ্ন: এশিয়া কাপের আগেও কি এমন উইকেটে প্রস্তুতি সারতে চান?
সালাহ উদ্দীন: আমরা যে দুবাইয়ে খেলেছি, প্রায় একই ধরনের উইকেট মনে হয়েছে। উইকেটে স্পিন ধরে। হাই স্কোরিং ম্যাচ তেমন একটা হয় না কিন্তু। খুব বেশি যে কঠিন হবে বলে মনে হয় না। কারণ, মোটামুটি একই ধরনের।
প্রশ্ন: যদি বাংলাদেশের ম্যাচ আবুধাবিতে পড়ে?
সালাহ উদ্দীন: সেটা হয়তো ভিন্ন হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে হলে আপনাকে সব ধরনের পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে হবে। উইকেটে হেল্প থাকলে দলের জন্য কিছুটা উপকার আছে। সেটা যেখানেই খেলি। শুধু ফ্ল্যাট ট্র্যাকে খেলবেন, তা তো নয়। আপনাকে বিভিন্ন উইকেটে বিভিন্নভাবে মানিয়ে নিতে হবে।
প্রশ্ন: বিসিবি নেপাল-নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে খেলে এশিয়া কাপের প্রস্তুতি সারতে চাইছে। এটা আদর্শ হবে কি না।
সালাহ উদ্দীন: এখন তো আন্তর্জাতিক কোনো দল নেই। ছেলেরা যাওয়ার আগে কিছু প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে যেতে পারলে দলের জন্য ভালো হবে। দিন শেষে আপনাকে খেলতে হবে। শুধু অনুশীলনই করবেন, তা তো নয়। ম্যাচ খেলার জন্য যা যা করা দরকার, সেগুলো হয়তো ম্যানেজমেন্ট চিন্তা করছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে তিন অধিনায়ক তত্ত্ব কি সঠিক মনে করেন?
সালাহ উদ্দীন: আগে ছিলাম দলের বাইরে। তখন হয়তো চাইলে অনেক কথা বলতে পারতাম। এখন চাইলেও অনেক কথা বলতে পারব না। ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বলতে পারি। বোর্ডের সঙ্গে বলতে পারি। তবে সেটা জনসমক্ষে বলতে পারব না। প্রতিষ্ঠান যা মনে করবে, সেই পলিসির সঙ্গে দ্বিমত করা যায় না। দ্বিমত করতে হলে অভ্যন্তরীণভাবে করব।
প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কা সফরের মাঝে নাজমুল হোসেন শান্তর অধিনায়কত্ব ছাড়া আপনাকে কতটা অবাক করেছে?
সালাহ উদ্দীন: ও (শান্ত) তো দায়িত্ব ছেড়ে দেয়নি। (টেস্ট) সিরিজটা সম্পূর্ণ করে তারপর করেছে। এমন নয় যে সে সিরিজের আগে বলেছে, আমি করব না (অধিনায়কত্ব)। তা তো নয়। সিরিজটা শেষ করে ভালোভাবেই করেছে (অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া)। আমার মতে, সবারই ব্যক্তিগত মতামত আছে। এটা তো আসলে জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার মতো নয়। সবারই ব্যক্তিগত মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সে (শান্ত) যদি মানসিকভাবে বিরক্ত থাকে, সে কিন্তু খেলতে পারবে না। দিন শেষে তাকে খেলোয়াড় হিসেবে পারফর্ম করতে হবে। তার যদি মনে হয়, এটা মানসিকভাবে খুবই ভোগাচ্ছে, তার সেই সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের সম্মান জানানো উচিত।
প্রশ্ন: দলে আপনার অনেক প্রভাবের কথা শোনা যায়। কথাগুলো আপনাকে কতটা বিব্রত করে?
সালাহ উদ্দীন: বিব্রত হওয়ার মতো কিছু না। জানি, আগে থেকেই এখানে কিছু ঘটলে জবাবদিহি করতে হবে। কারণ, আমি দেশি মানুষ। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিদেশিদের সঙ্গে পার্থক্য করাও ঠিক নয়। তাহলে তাদের প্রতি অসম্মান করা হয়। এটা আমাদের সংস্কৃতি। এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। আমাদের নিয়মই হচ্ছে, আপনি কেন ভালো আছেন, আমি তাই খুব অসুখী! আমাদের সংস্কৃতির একটা দিক, ও কেন ভালো আছে। নিজে কেমন আছি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। এটা মেনে নিয়েছি। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নাই। তবে আমার মনে হয়, গঠনমূলক সমালোচনা করলে সবার জন্যই ভালো। আমি ব্যাটিং কোচ। দল ভালো করছে না। সেটা নিয়ে আপনি বলেন। কোনো সমস্যা নেই। সবকিছুই গঠনমূলক হলে সবার প্রতি সম্মান থাকে। কারও মোটিভ যদি প্রয়োগ করতে চান, ঠিক নয়। শুধু অন্যায়ভাবে না জেনে দোষ দেওয়া ঠিক নয়। এখানে হেড কোচ, অধিনায়ক আছে। কোচিং স্টাফে অনেক কিংবদন্তি খেলোয়াড় আছেন। আমি চাইলেও মুশতাক ভাইয়ের ওপর মাতব্বরি করতে পারব না। তাঁরাও অনেক হাই প্রোফাইল কোচ। বুঝেশুনে কথা বললে ভালো হয়।
প্রশ্ন: হুট করে শেখ মেহেদীকে সহ-অধিনায়ক করা, বিপিএলের টুর্নামেন্ট সেরা হয়েও মেহেদী হাসান মিরাজের টি-টোয়েন্টি দলে উপেক্ষিত থাকা ইত্যাদি বিষয় আপনার প্রভাবের উদাহরণ হিসেবে এসেছে।
সালাহ উদ্দীন: সব তো প্রকাশ্যে বলা যায় না। এতটুকু বলব, নির্বাচক, অধিনায়ক, প্রধান কোচ আছেন। এগুলো বুঝতে হবে। আমার মতামতেই যদি সব হতো, তাহলে আমারই দল চালালে ভালো হতো। এটা নিয়ে কথা না বলাই ভালো। প্রতিটি বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করে। দলে সাফল্য আসে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে।
প্রশ্ন: দলে একজন পাওয়ার হিটিং কোচ যোগ হচ্ছেন। আপনার কাজের পরিধি কমে যেতে পারে। কীভাবে দেখছেন?
সালাহ উদ্দীন: আমার দল যদি সামান্য লাভবান হয়, যেকোনো বিভাগে, আমি কেন ঈর্ষান্বিত হতে যাব। দল হিসেবে ভালো করলে সবারই ভালো লাগবে। আমি তো বলতে যাইনি, গত এক বছরে আমরা সবচেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছি, আমাদের পাওয়ার হিটিং কোচ আনার দরকার নেই! আমার যদি মনে হয় দলের সামান্য উপকারেও যদি কেউ আসে, সেটা দলেরই হবে। দলটা পুরো বাংলাদেশের। এখানে ভিন্নভাবে দেখার কিছু নেই।
প্রশ্ন: সংক্ষিপ্ত সময়ে একজন পাওয়ার হিটিং কোচ কতটা বদলে দিতে পারবেন?
সালাহ উদ্দীন: যদি কেউ একটা ধাপ এগিয়ে দিতে পারে, সেটা দলেরই লাভ। কী শিখবে, কী শেখাবে, জানি না। তবে কেউ যদি সামান্য নিতে পারে, তাতে দলই লাভবান। এখানে আমরা ব্যক্তিগতভাবে কেউ গুরুত্বপূর্ণ নই, দল গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: অধিনায়ক লিটন দাস এই রানে আছেন তো এই নেই! তাঁকে নিয়ে কী বলবেন?
সালাহ উদ্দীন: শুধু লিটন দাস নয়, ব্যাটিং কোচ হিসেবে আমার আরও কয়েকটা চ্যালেঞ্জ আছে। বোলাররা যেন ভালো ব্যাটিং করতে পারে। তাতে ওপরের নাম্বার ছয়-সাতে যারা ব্যাটিং করে, তারা অনেক চাপে খেলে। ওরা ভাবে, আমার পরে আর কেউ নেই! আমরা অধারাবাহিক। এক ম্যাচে সবাই ভালো করল, পরের ম্যাচের সবাই একসঙ্গে খারাপ করল। শুধু লিটন নয়, এখানে সবাইকে উন্নতি করতে হবে। শ্রীলঙ্কার টেস্ট ব্যাটারদের গড় দেখুন, সবারই ৪০-এর ওপরে। আমাদের কারও নেই, ৩৬-৩৭ তারা যদি ৪০-৪২ গড়ে নিয়ে যায়, যারা ২৭-২৮ তারা যদি ৪০-এর কাছাকাছি চলে যায়, তাহলে দল থিতু হয়ে যাবে। এই চ্যালেঞ্জ আছে সামনে। এখানে বেশি উন্নতি করা জরুরি।
প্রশ্ন: সাকিব-তামিমদের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের ক্রিকেটারদের মৌলিক পার্থক্য কী?
সালাহ উদ্দীন: পার্থক্য খুব বেশি নয়। তাদের সময়ে দলের চাহিদা কম ছিল। টেস্টে আমরা কখনো চিন্তা করতাম, যেন আড়াই দিনে যায়। আড়াই দিনে গেলে বেঁচে যাই! ওয়ানডেতে ২০০৮ সালের দিকে ২০০-২২০ করলে আমরা খুশি হয়ে যেতাম। জেমি (সিডন্স) মাঝে মাঝে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলত—সালাহ উদ্দীন, আজ আমরা ২২০ করেছি। তখন চাওয়া-পাওয়া অন্য রকম ছিল। এখন দলটা একটা ভালো পর্যায়ে গেছে। এখন জয়ের প্রত্যাশা বেশি। ছেলেদের এই মানসিকতা আছে, জয়ের ক্ষুধা আছে। এই পরিবর্তন যুগের সঙ্গে সঙ্গে মানিয়ে নিতেই হবে।
প্রশ্ন: সাকিবের সঙ্গে শেষ কথা কবে?
সালাহ উদ্দীন: সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সফরে।
প্রশ্ন: কী কথা হয়েছে ক্রিকেট নিয়ে?
সালাহ উদ্দীন: সাকিব আমাকে নিয়ে একটু চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। জিজ্ঞেস করল, আপনি টেনশনে পড়ে গেছেন কি না। সে আমাকে ভালোভাবে চেনে। একটা ডায়ালগ দিয়েছিলাম ওকে, দেখ, জীবনে মাইনাস ৫০০ টাকা নিয়ে সংসার শুরু করেছিলাম। তুই আমাকে টেনশন দিয়ে কাবু করবি, আমি ওই মানুষ না। তখন বলে, রাখি! রাখি!
প্রশ্ন: ওর ক্রিকেট ক্যারিয়ার কোন দিকে যাচ্ছে, নিভৃতে শেষ?
সালাহ উদ্দীন: এটা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। বোর্ডও কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। এটা সরকারি নীতি, তাদের ওপর নির্ভর করে। বোর্ডেরও কিছু করার নেই। যখন সরকার মনে করবে, তখনই সে আসতে পারবে। না হলে আসলে...তাকে ক্রিকেট খেলতে দেশে আসতে হবে। এটা নিয়ে আমাদের খুব বেশি চিন্তা করার কিছু নেই। হয়তো সেভাবে সে মেনে নেবে। বা কখনো যদি সে ফিরে আসতে পারে, সবাই চাই আসুক। এটা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।
কদিন আগেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, লিভারপুল ছেড়ে নতুন ঠিকানায় যাচ্ছেন লুইস দিয়াজ। আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটাও এসে গেল। অ্যানফিল্ড থেকে জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখে পাড়ি জমাচ্ছেন তিনি। চার বছরের জন্য কলম্বিয়ান এই উইঙ্গারের সঙ্গে চুক্তি করেছে জার্মান লিগ চ্যাম্পিয়নরা।
৬ ঘণ্টা আগেসাড়ে তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ফিরেছিলেন ব্রেন্ডন টেলর। তাই এই টেস্টে সবার নজর ছিল তাঁর দিকে। তবে তাঁকে বাইরে রেখে টেস্টের একাদশ গড়ে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। তবু বুলাওয়ে টেস্টে শুরুটা তাদের মোটেও ভালো হয়নি। প্রথম ইনিংসে ১৪৯ ওভারে অলআউট হয়েছে তারা।
৭ ঘণ্টা আগেওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লিজেন্ডসে রাউন্ড রবিন লিগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেনি ভারত। দারুণ ব্যাপার হলো, সেমিফাইনালেও প্রতিপক্ষে হিসেবে নিজেদের পেয়েছে তারা। আগামীকাল বার্মিংহামে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মাঠে নামার কথা ছিল ভারত-পাকিস্তানের। সে পর্যন্ত আর যেতে হয়নি, ভারত এবারও পাকিস্তানের বিপক্ষে খেল
৮ ঘণ্টা আগেওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে বাঁ পায়ে ক্র্যাম্প এবং কাঁধে ব্যথায় ভুগছিলেন বেন স্টোকস। শেষ টেস্টে তাঁকে পাওয়া যাবে কি না, এমন সংশয় ছিলই। এর মধ্যে আজ ওভাল টেস্টের একাদশ ঘোষণা করেছে। কাল থেকে শুরু হতে যাওয়া টেস্টে নেই অধিনায়ক স্টোকস। তাঁর অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেবেন ওলি পোপ, এর আগেও ৪টি টেস্টে ইংল্যান্ডের
৯ ঘণ্টা আগে