Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

ক্রিকেট নামের সোনার খনি বাংলাদেশে ভালোভাবে উত্তোলন হয়নি

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ১৬তম সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হওয়ার পর আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানিয়েছেন, একটা কুইক ভালো টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলতে চান। বুলবুল ঝটপট কাজও শুরু করে দিয়েছেন। গতকাল হোটেল সোনারগাঁওয়ে নিজের সেই কাজের কথা সবিস্তারে তুলে ধরলেন বিসিবি সভাপতি। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আজকের পত্রিকার হেড অব স্পোর্টস রানা আব্বাস

আপডেট : ০৪ জুন ২০২৫, ০৯: ৪৭

প্রশ্ন: ছুটিতে দেশে তো কতবারই এসেছেন। এ রকম ঘটনাবহুল দেশে ফেরা কি কখনো হয়েছে?

আমিনুল ইসলাম বুলবুল: না। ঘটনাবহুল হচ্ছে, আমি দুটি লক্ষ্য নিয়ে এসেছিলাম। আড়াইটা লক্ষ্য বলা যায়! এক নম্বর হচ্ছে, আমার ভাগনের বিয়ে ছিল। আরেকটা আমার স্ত্রীর জমিসংক্রান্ত একটি ব্যাপার ছিল। আসার আগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) সঙ্গে কথা হচ্ছিল। এনএসসির সঙ্গে কথা বলাটাই সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়াল এবং আমি যে দায়িত্বটা এখন পেয়েছি, এটা এখন আমার কাছে মনে হয়, অত্যন্ত ঘটনাবহুল শুধু নয়, একটা বড় দায়িত্ব পেয়েছি। এই দায়িত্ব সামনে রেখে আইসিসিতে যে চাকরি করতাম, সেটা ছেড়ে দিয়েছি। আমার পরিবারকে বেশ কিছু সময় দিতাম। সেটা হয়তো কমে যাবে এখন। এই ঘটনাবহুল এবং ঘটনার একটা ঘটনা হচ্ছে যে আমাকে এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা করতে হবে।

প্রশ্ন: বিসিবির বড় দায়িত্ব নিয়ে গত কদিনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী মনে হয়েছে?

বুলবুল: চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই। কিন্তু দায়িত্বটা আগে। দায়িত্ব নিয়ে এটা মনে হচ্ছে যে বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন আমানত হিসেবে আমার কাছে এসেছে এবং আমাদের যে দলটা আছে; দলটা বলতে বোঝাচ্ছি, আমাদের যারা পরিচালনা করছেন ক্রিকেট বোর্ড—বাংলাদেশের জনগণ আমাদের হাতে ক্রিকেট তুলে দিয়েছে দেখেশুনে রাখতে। এই দেখেশুনে রাখাটা কতটা সৎভাবে, সুন্দরভাবে দেখে রাখতে পারছি, সেটা এক নম্বর দায়িত্ব। আমানত রক্ষা করা। তারপরই হচ্ছে যে আমাদের দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্স। আমরা হয়তো আমাদের যে নতুন চার্টার বা পরিকল্পনা সাজাচ্ছি কিংবা সাজিয়েছি, তার অন্যতম কাজই হচ্ছে যে সবার জন্য হাই পারফরম্যান্স। হাই পারফরম্যান্স বলতে বোঝাচ্ছি, শুধু ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সই নয়; আমরা যে কাজ করছি, সেগুলো যেন হাই পারফর্মিং হয়; যাতে আমাদের শুধু জাতীয় দল নয়, অবশ্যই সেটা আমাদের চূড়ান্ত প্রোডাক্ট। কিন্তু আমরা সব জায়গায় যেন হাই পারফর্ম করতে পারি, সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।

প্রশ্ন: সভাপতি হওয়ার পর তো অভিনন্দনবার্তা অনেক ধরনের আসে, আসছে, আসবে। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা আপনাকে কী বললেন? ওদের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে?

বুলবুল: না। যখন আমি দায়িত্বটা নিয়েছি, তখন জাতীয় দল পাকিস্তানে। পাকিস্তানে তারা খেলার মধ্যে, চাইনি তখন হস্তক্ষেপ করতে। আমাদের দলের যিনি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন ফাহিম, তিনি এখন বিসিবির সহসভাপতি। প্রাথমিকভাবে তাঁর (ফাহিম) সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কোনো হস্তক্ষেপ করিনি বা মতামত দিইনি। তাঁরা জানেন যে তাঁদের দায়িত্বে এসেছি। ধীরে ধীরে তাঁদের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার বোঝার চেষ্টা করব। তাঁদের জানার চেষ্টা করব। তারপরে হয়তো কোনো মতামত দেব।

প্রশ্ন: তিন বছর আগে আজকের পত্রিকায় বিশেষ এক কলাম লিখেছিলেন। দেশি কোচিং প্যানেলের একটা ছক দিয়েছিলেন। স্থানীয় কোচিং স্টাফ গড়ার কথা লিখেছিলেন। আপনার কি মনে হয়, এখন সেটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন?

বুলবুল: মনে আছে, কলামটার নাম ছিল ‘আমার স্বপ্ন’। সব সময়ের স্বপ্ন যে বাংলাদেশের সাপোর্টিং স্টাফ, বাংলাদেশের কোচরা বাংলাদেশের সেবা দেবে সব জায়গায়। তারপরে আমি যাঁদের যাঁদের পছন্দ করেছিলাম বা বেছে নিয়েছিলাম, তাঁরা এখন বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছেন। অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে বলতে হয়, গত ১৬ বা ১৭ বছরে একটামাত্র লেভেল টু কোচিংয়ের কোর্স হয়েছে। তারপর কোচ ডেভেলপমেন্টে কোনো কাজ হয়নি। আমার স্বপ্ন যেটা, আমাদের বিশেষায়িত কিছু কোচ তৈরি করা। ধরুন, লেভেল থ্রি কোচিং। কথাগুলো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কেন বলছি? আইসিসির মাস্টার এডুকেটর আছেন চারজন। তাঁদের মধ্যে আমি একজন লেভেল থ্রি পর্যায়ের। আমার এই দক্ষতার জায়গাটা বাংলাদেশে কাজে লাগাতে চাই। শুধু হাই পারফরম্যান্স লেভেল থ্রি কোচ নয়। সঙ্গে সঙ্গে বিশেষায়িত কিছু কোচ তৈরি করব। বিশেষায়িত ব্যাটিং কোচ, বোলিং কোচ, ফিল্ডিং কোচ ও অ্যানালিস্ট। আমার যে স্বপ্নটা ছিল, সেটা পূরণ হতে সময় লাগবে। তবে স্বপ্নপূরণের আগে তাঁদের তৈরি করব। আন্তর্জাতিক মানের প্রস্তুত করে তাঁদের দায়িত্ব দেব ইনশা আল্লাহ।

নিজের কার্যালয়ে নতুন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ছবি: বিসিবি
নিজের কার্যালয়ে নতুন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ছবি: বিসিবি

প্রশ্ন: আইসিসির গেম ডেভেলপমেন্টে কাজ করেছেন লম্বা সময়। আফগানিস্তানের মতো দল আজ যে পর্যায়ে এসেছে বা শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে, এর পেছনে আপনারও অবদান আছে বলে আমরা জানি। এই মডেল বাংলাদেশে কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব?

বুলবুল: হ্যাঁ...আফগানিস্তান শুধু নয়, এশিয়ায় বিভিন্ন ধরনের দল আছে। মধ্যপ্রাচ্যে কিছু দল আছে বিদেশিদের নিয়ে খেলে। যোগ্য হলে তারা খেলায়। স্থানীয়দের নিয়ে দল আছে; যেমন নেপাল, আফগানিস্তান। আমাদের যে পরিকল্পনাটা ছিল বা একেকটা দেশের একেক রকম স্বতন্ত্র অবস্থা থাকে। যেমন আফগানরা ক্রিকেটকে পাগলের মতো ভালোবাসে। সেখানকার মানুষ তাদের নায়কদের অনুসরণ করে। ওদের যেমন রশিদ খান আছে, নবী আছে। আগে ছিল রাইস আহমেদ। তারপর ধরুন গুলবাদিন। এগুলো কেন বললাম যে একেকটা দেশের একেকটা স্বতন্ত্র অবস্থা থাকে। ২০২৩ বিশ্বকাপ যখন ভারতে হলো, তখন আফগানিস্তান দল নিয়ে আমরা বসলাম। বসে তাদের দল বিশ্লেষণ করে দেখলাম, তাদের দলে ফিনিশার ও ওপেনিং ব্যাটারের অভাব। সে অনুযায়ী তারা ৭-৮ মাস কাজ করেছে। তাদের হাই পারফরম্যান্সের যে পরিকল্পনা ছিল, প্রতিদিনের অনুশীলন সেটা আমাদের তৈরি করে দেওয়া। জনাথন ট্রট ওদের প্রধান কোচ। যাহোক, এ কথাগুলো বলছি এ কারণে যে আমাদের পরিস্থিতি অনেক ভালো। আফগানিস্তান, ওমান, নেপাল বলুন—অনেক দেশের চেয়ে ভালো। আমরা ২৫ বছর ধরে টেস্ট খেলছি। কিন্তু আমরা এখনো আমাদের যে সোনার খনি আছে, সেই খনিটা ভালো করে উত্তোলন করিনি। এই কাজগুলোই করব। যেহেতু আমরা টেস্ট কেস ধরে ভালো কাজ করেছি, সেগুলো বাংলাদেশে করার চেষ্টা করব।

প্রশ্ন: ক্রিকেটের সোনার খনি উত্তোলিত হয়নি, এর অন্যতম কারণ হতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিটা সেভাবে তৈরি হয়নি। অনেক আগে যেটা ছিল, সেটা ক্ষয়ে গেছে। টেস্ট সংস্কৃতি সেভাবে তৈরি হয়নি। এটা নিয়ে আপনি ভালোভাবেই সচেতন।

বুলবুল: আমি এখানে আসার পরই প্রথম কাজ যেটা হাতে নিয়েছি, ক্রিকেটটা কীভাবে বিকেন্দ্রীকরণ করা যায়। স্কুল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ কেন ঢাকায় হবে? এটা চট্টগ্রামে হবে বা খুলনায় কিংবা সিলেটে হবে, রাজশাহীতে হবে। এটা শুধু একটা উদাহরণ দিলাম। আমরা যেটা পরিকল্পনা করছি যে ক্রিকেট একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি। সেই কাজটা শুরু করে দিয়েছি। তখনই আপনি বলতে পারবেন যে দেশব্যাপী ক্রিকেট ছড়িয়ে গেছে। কাজটি তাই শুরু করেছি। আমরা একটা প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। সেটার নাম দিয়েছি ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি’। মুশফিকুর রহিম ডাবল সেঞ্চুরি করেছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও সেভাবে ট্রিপল সেঞ্চুরি নেই। ট্রিপল সেঞ্চুরি নামটা এ জন্য দিয়েছি যে শতভাগ বিশ্বাস রাখব আমাদের কাজে। শতভাগ আমাদের প্রোগ্রামগুলো চালাব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের এই প্রোগ্রামগুলোয় পারফরম্যান্সভিত্তিক কাজ করব। সব জায়গায় পৌঁছে দেব। ট্রিপল সেঞ্চুরি প্রোগ্রামটার মধ্যে আমরা যে বড় চার-পাঁচটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি, সেগুলো যদি করতে পারি, তাহলে আমরা ক্রিকেটে আফগানিস্তানের কথা বললেন, তার চেয়েও ভালো হতে পারে। ইউনিক পরিস্থিতির দিক থেকে আমাদের সুযোগ-সুবিধা অনেক ভালো। সেটা আমরা কাজে লাগাতে চাই। তারপর বলে নিচ্ছি যে আমি কিন্তু জাদুকর না। আমাদের দলটা খুব শক্তিশালী। আমরা চেষ্টা করব। আল্লাহ সহায় হলে আমরা চেষ্টা করব ভালো কিছু করতে।

প্রশ্ন: আপনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, জাতীয় দলই একটা দেশের ক্রিকেটের সব নয়। কিন্তু জাতীয় দলের প্রতি সবার বেশি মনোযোগ থাকে। শরীরে হৃৎপিণ্ডই একমাত্র অঙ্গ নয়। কিন্তু হৃৎপিণ্ড এমন একটা অঙ্গ, যেটা ছাড়া আপনার পুরো শরীরই যেন অচল। সেই হৃৎপিণ্ড হচ্ছে জাতীয় দল। সেদিন ক্রীড়া উপদেষ্টা বললেন, আগের সভাপতি পারফরম্যান্সের বিচারে অপসারিত হয়েছেন। সেই পারফরম্যান্সটা মূলত বিচার হয় জাতীয় দলের প্রেক্ষাপটে। এই যে দলটার অবনতি ঘটছে তো ঘটছেই, এখান থেকে উত্তরণে আপনার জরুরি পদক্ষেপ কী হবে?

বুলবুল: ইমিডিয়েট পদক্ষেপ বলতে যেটা বোঝাচ্ছি, অবশ্যই আমাদের র‍্যাঙ্কিং দেখলে বোঝা যায়, আমরা একটু নিচের দিকে চলে গেছি। একটা দলের গ্রাফ কিন্তু সব সময় এক রকম থাকে না। কখনো নিচের দিকে যায়, কখনো অনেক ওপরের দিকে যায়, আবার মাঝামাঝি থাকে। ভেতরে আমাদের উন্নতির যে ভ্যারিয়েবলস আছে, আমরা তিন সংস্করণে ক্রিকেট খেলি—টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে ও টেস্ট। এই তিন সংস্করণে ভালো খেলতে যথেষ্ট ক্রিকেটার আমাদের আছে কি না, আমাদের পারফরম্যান্সের যে বিচার, সেই বিচারটা আমরা ক্রিকেটারদের ওপর আলাদাভাবে কতটুকু করতে পারছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মনে করুন, আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তানে খেলে এলাম। আমরা শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। আমাদের যাঁরা নেপথ্যে কাজ করছেন; ধরুন, যাঁরা নির্বাচন করছেন, যাঁরা ক্রিকেটিং প্রক্রিয়ায় কাজ করছেন, আমরা যত দিন না পারফরম্যান্স অ্যানালাইসিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে তাদের ফিডব্যাক; যেমন কী ভুল হয়েছে, কী সঠিক হয়েছে, কী হতে পারে—এসব বিশ্লেষণ না করলে আমরা যে ভুলগুলো আছে, সেগুলো শোধরাতে পারব না। তবে অবশ্যই আপনি বলছিলেন হৃৎপিণ্ডের কথা। জাতীয় দল সবাই অনুসরণ করে। সেটা হচ্ছে চূড়ান্ত কাজ। তবে আমার আপাতত লক্ষ্য হচ্ছে...অবশ্যই সেটা আপনাআপনি হবে। কিন্তু তৃণমূল ক্রিকেট থেকে শুরু করতে চাই।

প্রশ্ন: ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট নিয়ে আপনার অনেক দুঃখবোধ বা আফসোস ঝরেছে প্রায়। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির কাঠামো বলতে কিছু নেই। এখানে অল্প সময়ে আপনার কি কিছু করা সম্ভব?

বুলবুল: অবশ্যই করা সম্ভব। আমি আবার বলছি, একটা অল্প মেয়াদে এখানে এসেছি। একটা সিস্টেম দাঁড় করিয়ে রেখে দিতে চাই। সময়টা কি জানেন। গত ১৭ বছরে তো অনেক সময় ছিল। এমনকি কয়েক মাসও সময়। সময় কতটুকু কীভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবহার করছি, সেটাই হবে আমার মূল লক্ষ্য। এটাও ঠিক যে আমাদের ক্রিকেট উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক যে সেন্টারগুলো আছে, যেহেতু কিছু আমলাতান্ত্রিক ব্যাপার আছে, তবু আমরা ক্রিকেট নিয়ে আঞ্চলিক সেন্টারগুলো চালু করে দেব। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করব। তবে এখানে অনেক মানুষের সম্পৃক্ততার বিষয়, আমাদের এই কজনের পক্ষে সম্ভব নয়। আরও যাঁরা স্থানীয় সংগঠক আছেন, তাঁদের সহায়তা দরকার। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের এনএসসি বা আমাদের যে উপদেষ্টা মহোদয় আছেন, তাঁরা খোলাখুলি কথা বলেন। আমাকে ক্লিন শিট সার্টিফিকেটটা দিয়েছেন দেশের ক্রিকেট নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে।

প্রশ্ন: সাবেক ক্রিকেটারদের আপনি কাজে লাগাতে চান। মোহাম্মদ রফিকের মতো সাবেক ক্রিকেটারদের বাংলাদেশ ক্রিকেটে কীভাবে কাজে লাগাতে চান?

বুলবুল: দেখুন, ক্রিকেট চালাতে হলে দুই ধরনের লোক লাগে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হওয়া আর ম্যানেজমেন্ট জানতে হবে। এই দুটির সংমিশ্রণ আমরা রাখব। স্কুল ক্রিকেট আছে। ১০৪ জন কোচ আছেন, তাঁরা জেলাভিত্তিক কোচিং করেছেন। বিভাগীয় কোচিং করেন। তাঁরা যদি ডেভেলপ করেন বা তাঁদের যদি আপগ্রেড করতে পারি, তাহলে দেশের ক্রিকেট আপনাআপনি আপগ্রেড হয়ে যাবে। যেমন আবদুর রাজ্জাক রাজের কথা বলি। রাজকে সবাই জানেন একজন নির্বাচক হিসেবে। কিন্তু বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন সময়ে বোলিং করত ১৫ ওভারের মধ্যে। তাঁর যে অভিজ্ঞতা, ১৫ ওভারে কীভাবে বোলিং করতে হয়। রফিকের কথা আপনি বললেন। রফিক সে সময়ে তেমন কোচিং পায়নি। ১০০ টেস্ট উইকেট নিয়েছে। তাদের যে অভিজ্ঞতা আছে, এখান থেকে বসুন্ধরা শপিং মল কিন্তু কাছে। বসুন্ধরা শপিং মলে অভিজ্ঞতা কিনতে পাওয়া যায় না। তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাই।

প্রশ্ন: সাকিব আল হাসানকে নিয়ে প্রায় প্রশ্ন শুনছেন। তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক প্রশ্ন, সংশয়। আপনার সংক্ষিপ্ত মেয়াদেই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ রয়েছে। সাকিবকে ফিরতে হলে তাঁকে কী করতে হবে?

বুলবুল: আমি আসলে একেবারে অতটা বিস্তারিত জানি না। তবে ক্রিকেটার সাকিব নিয়ে বলতে চাই যে অবশ্যই সে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়। পারফরম্যান্স বলেন, সব মিলিয়ে দেশের প্রতি তার অবদান রয়েছে। সেটা অবিশ্বাস্য। অবশ্যই এটা আমাদের যে নির্বাচক প্যানেল আছেন, তাঁদের একটা পলিসি আছে। সাকিব মাঝেমধ্যে দলের বাইরে চলে গেছে। সেটা তাঁরা (নির্বাচক প্যানেল) যদি বিবেচনা করেন, তখন আমরা পরবর্তী পদক্ষেপে যেতে পারব। ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। তবে এটা পুরোপুরি নির্ভর করছে, নির্বাচক দল যদি ভাবে, সে (সাকিব) দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তার পরের পদক্ষেপে চিন্তা করতে পারব। তবে সে দারুণ ক্রিকেটার।

প্রশ্ন: সাকিব দেশের মাঠে অবসর নিতে চান। এটা সব ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে। সাকিব যদি কখনো আপনাকে বলেন বা বলার সুযোগ পান, আমি দেশের মাঠে অবসর নিতে চাই, যদি একটা সুযোগ দেন। আপনি তাঁকে তখন কী বলবেন?

বুলবুল: একটা গল্প বলি। ইয়ান হিলি নিজে বলেছেন আমাকে গল্পটা। ইয়ান হিলি তখন সুপার ফর্মে ছিলেন। সেই টেস্টটা হচ্ছিল (ব্রিসবেনের) গ্যাবায়। তাঁর ঘরের মাঠে। কিন্তু ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচক টিম এসে বলেছিল, হিলি। তুমি নেই। ধন্যবাদ! হিলির সঙ্গে করমর্দন করে তাঁরা বলেছিলেন, গিলক্রিস্ট প্রস্তুত। তখন তিনি (হিলি) অনুরোধ করেছিলেন, ‘আমার ঘরের মাঠে খেলা হচ্ছে। শেষ টেস্টটা কি খেলতে পারি?’ তখন নির্বাচক টিম বলেছিল, ‘না। আমরা খুবই পেশাদার। যদি গিলক্রিস্ট একটা টেস্ট মিস করে, একটা টেস্টই ক্ষতি আমাদের জন্য।’ তারা কিন্তু রাখেনি হিলির অনুরোধ। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ায় লোকজনও সেখানে হস্তক্ষেপ করেনি। এটা সম্পূর্ণ নির্বাচক টিমের ওপর নির্ভর করে। তাঁরা যদি মনে করেন, সে (সাকিব) দলে আসবে, দলে পারফর্ম করতে পারবে। অবশ্যই তাকে সুযোগ দেওয়া হবে।

প্রশ্ন: তামিম ইকবাল এখন অবসরে। তাঁকে কীভাবে কাজে লাগাতে চান? এরই মধ্যে তাঁর সংগঠক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার ইঙ্গিত মিলেছে।

বুলবুল: তামিম আমাদের আরেকজন কিংবদন্তি, সাচ আ ওয়ান্ডারফুল প্লেয়ার। আশা করেছিলাম, তামিম আরও খেলবে। তবে সে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আর খেলবে না। জানতে পেরেছি, তামিম একটা ক্লাবের হয়ে কাউন্সিলরশিপ নিয়েছে। যখন বোর্ডের নির্বাচন হবে, হি ইজ ওয়েলকাম। অন্যভাবে যদি সুযোগ থাকে তামিমের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান কাজে লাগানোর, বলেছি, আমাদের সাবেক ক্রিকেটারদের যতভাবে কাজে লাগানো যায়।

প্রশ্ন: যদ্দূর জানি, আপনি পঞ্চপাণ্ডবতত্ত্বে বিশ্বাসী না।

বুলবুল: না।

প্রশ্ন: কিন্তু পাঁচ তারকা ক্রিকেটারের বিদায়ে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এই শূন্যতা দূর করার উপায় কী?

বুলবুল: মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে সেরা ক্রিকেট খেলেছে। তারা কিন্তু পারফর্ম করেই জাতীয় দলে খেলেছে। মাঠে ও মাঠের বাইরে তাদের যে অবদান, এটা অবিশ্বাস্য! একটা রেডিমেড মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক কিংবা রিয়াদ পাওয়া যাবে না। এতগুলো ম্যাচ বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশ তাদের জন্য, তারা পারফর্ম করে এত দিন খেলেছে। তাৎক্ষণিকভাবে তখনই এ মানের ক্রিকেটারদের বিকল্প পাওয়া যাবে, যখন আপনার ঘরোয়া ক্রিকেট খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, অনেক খেলোয়াড় তৈরি থাকবে। এখন যারা খেলছে, এদের সময় দিতে হবে। নিশ্চিত, তারাও ভবিষ্যতে এ রকম সুপারস্টার হতে পারবে। যে পাঁচজনের কথা বললেন, এদের স্যালুট জানাই। এদের সঙ্গে রাজ্জাকের মতো খেলোয়াড়ও ছিল। এদের চেয়ে ভালো মানের ক্রিকেটার আমাদের তৈরি করা উচিত। এ কারণে দেশব্যাপী ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়া, দেশব্যাপী ভালো মানের কোচিং ছড়িয়ে দেওয়া। ঘরোয়া ক্রিকেট আরও অনেক প্রতিযোগিতামূলক করা।

প্রশ্ন: ঘরোয়া ক্রিকেটে বিতর্কিত আম্পায়ারিং নিয়ে অনেক কথা হয়। এই জায়গায় দ্রুততম সময়ে কী করণীয়?

বুলবুল: আম্পায়ারদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কাজটা ভালোভাবেই করছেন বিভাগীয় চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠু। আম্পায়ারিং বিভাগ দুই বছর আগেও ছিল সবচেয়ে খারাপ। তবে এখন গর্ব করার মতো অনেক কিছুই হচ্ছে সেখানে। তবে আমরা যারা বোর্ডে আছি, আমরা যদি ক্লাবের সুযোগ-সুবিধা দেখতে হস্তক্ষেপ কম করি বা হস্তক্ষেপ না করি, আম্পায়ারদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিই, এলিট প্যানেলে একজন সৈকত কেন, আমাদের আরও এলিট প্যানেলের আম্পায়ার আসবে। আমাদের আইসিসির ম্যাচ রেফারি নেই। তবে আম্পায়ারিং নিয়ে এখন খুব ভালো কাজ হচ্ছে।

প্রশ্ন: বিসিবি নাইট অ্যাওয়ার্ডস আয়োজন করতে চান শুনেছিলাম।

বুলবুল: ট্রিপল সেঞ্চুরির যে প্রোগ্রামের কথা বলেছি, পাওয়ার্ড বাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। আমরা যেন বলতে পারি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একটা বিশ্বমানের সংস্থা। চারটা বড় প্রোগ্রাম—একটা বলছি, ক্রিকেটের চেতনা, সংস্কৃতি। চেতনা নিয়ে খেলতে হবে। এটা নিয়ে বিরাট প্রকল্প হাতে নিয়েছি। দুই. কানেক্ট অ্যান্ড গ্রো। প্রত্যন্ত অঞ্চলে অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষকে আমরা কানেক্ট করে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেব। তিন. হাই পারফরম্যান্স ফর অল। আমাদের প্রতিটি কাজ যেন হাই পারফরম্যান্স হয়। এ কাজগুলো করা সম্ভব; কারণ, আমরা ২০ বছর ধরে করেছি। বাংলাদেশেও সম্ভব, পুরোটা নির্ভর করছে সবার সহযোগিতার ওপর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পশ্চিমবঙ্গে আটক দুই আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তা, পরে মুক্তি

সভা শেষে সরকারি গাড়িতেই গরু নিয়ে গেলেন ইউএনও

যশোরে বিএনপি ও যুবদল নেতার বাড়িতে কাফনের কাপড়, দা, চিরকুট পাঠিয়ে হুমকি

১২ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা

নিউজিল্যান্ডের সংসদে হাকা, দুনিয়া কাঁপানো সেই সাংসদেরা বরখাস্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত