Ajker Patrika

আফগান নারী অ্যাথলেটদের শিহরণ জাগানো গল্প

আফগান নারী অ্যাথলেটদের শিহরণ জাগানো গল্প

তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর নতুন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন আফগান নাগরিকেরা। এরই মধ্যে অসংখ্য আফগান দেশ ছেড়েছেন। এমনকি বিমান থেকে পড়ে ফুটবলারের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তবে আফগানিস্তানের নারী অ্যাথলেটদের অভিজ্ঞতাটা একেবারেই অন্য রকম। তালেবানরা দেশটির দখল নেওয়ার পর থেকেই নিজেদের ক্যারিয়ার তো বটেই, জীবন নিয়েই শঙ্কায় ছিলেন তাঁরা।

এর মধ্যে আশার আলো হয়ে সামনে আসেন আফগান নারী ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও প্রতিষ্ঠাতা খালিদা পোপাল। এই কাজে তিনি পাশে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের সংগঠন ফিফপ্রোর মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী কাট ক্রেইগ, আফগান নারী ফুটবল দলের প্রধান কোচ কেলি লিন্ডসে ও ফিফপ্রোর সাধারণ সম্পাদক জোনাস বায়ের-হফমানকে। নিজের জীবন বাজি রেখে খালিদা আফগান নারী ফুটবলার ও অ্যাথলেটদের উদ্ধারকাজে নিয়োজিত। এরই মধ্যে ১০০-২০০ আফগান অ্যাথলেট ও তাঁদের সঙ্গে জড়িত অন্যদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজও সম্পন্ন হয়েছে। 
খালিদাসহ তাঁর এই দলের কাজটা সহজ ছিল না। সব সময় সতর্ক থাকতে হয়েছে তালেবান ও সেনা কর্মকর্তাদের চলাচল নিয়ে। তাদের নজর এড়িয়ে নারী অ্যাথলেট, তাঁদের পরিবারকে বিমানবন্দর ও বাণিজ্যিক বিমানে উঠিয়ে দেওয়ার কাজটা সহজ ছিল না।

তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পরই উদ্বিগ্ন নারী ফুটবলাররা যোগাযোগ করতে থাকেন খালিদার সঙ্গে। তিনি তাঁদের পরামর্শ দেন জার্সি পুড়িয়ে ফেলতে এবং ফুটবলের সঙ্গে তাঁদের জড়িত থাকার সব প্রমাণ মুছে ফেলতে। কঠিন অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলছিলেন, অনেকেই খুবই উদ্বিগ্ন ছিল। একজন আমাকে বলছিল, সে তার ভাইয়ের বন্দুক হাতে জানালার পাশে বসে আছে। না ঘুমিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। অপেক্ষা করছে, তালেবানরা দরজায় কড়াঘাত করলেই নিজের মাথায় গুলি করবে! তালেবানদের হাতে ধরা পড়ার চেয়ে নিজেকে মেরে ফেলাটা শ্রেয় মনে করছে সে।

খালিদাসহ বাকি তিনজন আফগান সরকারের আত্মসমর্পণের তিন দিন পর গত ১৬ আগস্ট নিজেদের মধ্যে কৌশলগত বৈঠক সারেন। এরপর জরুরি ভিত্তিতে খেলোয়াড়দের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। ক্রেইগ বলেন, ‘পরিস্থিতি কীভাবে বদলাবে তা নিয়ে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না। আমরা সিদ্ধান্ত নিই প্রতি ২৪ ঘণ্টাকে আমরা আমাদের শেষ ২৪ ঘণ্টা ধরেই যতটা সম্ভব কাজ করে যাব।’

এমন পরিস্থিতিতে কাজ করা মোটেই সহজ ছিল না। একদিকে তালেবানদের হাত থেকে খেলোয়াড়দের রক্ষা করা, অন্যদিকে তাঁদের সেখান থেকে বের করে আনা। দুটো কাজই ছিল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। 

এরপর দলের সবাই নিজেদের কাজ শুরু করেন। সবকিছুর ওপর নজর রাখতে শুরু করেন। ক্রেইগ-হফমান সবাই নিজেদের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজনীয় কাজগুলো এগিয়ে নিতে থাকেন। প্রথমে তাঁরা প্রাধান্য দেন অধিক ঝুঁকিতে থাকা খেলোয়াড়দের। বাকিরাও যে ঝুঁকিমুক্ত ছিল, তা নয়।

তাঁদের উদ্যোগ আলোর দেখা পায় অস্ট্রেলিয়ার একটি দলের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার পর। সেই দলটিও অ্যাথলেটদের নিয়ে কাজ করে। এ সময় সহায়তা করেন সাবেক অলিম্পিয়ান ও মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী নিকি ড্রেইডেন ও মানবাধিকারকর্মী আলিসন বাটিসন। এরপর তাঁরা আরেক সাবেক অলিম্পিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ার সাংসদ জালি সেটেগালের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের ভিসা প্রক্রিয়াকরণের কাজ শুরু করেন।

সব চূড়ান্ত হওয়ার পর খেলোয়াড়েরা নিজেদের কাগজপত্র অন্তর্বাসে লুকিয়ে এবং টাকাপয়সা গোপনে রেখে বিমানবন্দরে আসেন।  

সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা, আত্মবিশ্বাস আর খেলোয়াড়দের লড়াকু মনোভাবে ২৩ আগস্ট ৭৭ জনের একটি দল শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে কাবুল থেকে উড়াল দিতে পেরেছিল। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ব্যানারে বিমানবন্দর এলাকায় আ.লীগের মিছিল

ইটনায় এবার ডিলার নিয়োগে ঘুষ চাওয়ার কল রেকর্ড ফাঁস

‘ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির’, কারখানার ভেতর আত্মহত্যার আগে শ্রমিকের ফেসবুক পোস্ট

কুষ্টিয়ায় গভীর রাতে বিএনপি নেতার বাড়িতে গুলি, দেখে নেওয়ার হুমকি

মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনে প্রক্রিয়া মানা হয়নি: ইউনেসকো

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত