Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

বাংলাদেশে কোনো খেলা এভাবে দেখাবে না, যেভাবে আমরা দেখানোর চেষ্টা করব

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহসভাপতি ফাহাদ করিম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

‘সমিত সোমের পাসপোর্ট হয়ে গেছে, বাকি আর একটি প্রক্রিয়া সারতে কাল (আজ) ফিফার কাছে আবেদন করব’—কাল গুলশানে নিজে বাসভবনে বেশ উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলছিলেন ফাহাদ করিম। প্রবাসী ফুটবলারদের বাংলাদেশ ফুটবলে যুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন বাফুফের সহসভাপতি ও বিপণন বিভাগের প্রধান। দেশের ফুটবলের নবজাগরণ কাজে লাগিয়ে বিপণন জায়গায় নিজেদের পরিকল্পনা, লক্ষ্য নিয়ে কাল বিস্তারিত কথা বললেন ফাহাদ করিম। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রানা আব্বাস ও আনোয়ার সোহাগ

প্রশ্ন: শেষ পাঁচ মাসে প্রবাসী ফুটবলারদের নিয়ে আগ্রহ বেশ বেড়েছে, এর পেছনে কারণ কী?

ফাহাদ করিম: আমাদের মাইন্ডসেটে পরিবর্তন এসেছে। সভাপতি তাবিথ আউয়াল মুক্তমনা ও ইনক্লুসিভনেসে বিশ্বাসী। তিনি কোনো কিছুকে বদ্ধ রাখতে চান না। কেউ যদি বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চায়, আমরা সেই সুযোগটা দেব। আমরা সেই মানসিকতার বাস্তবায়ন করছি। আর হামজা চৌধুরীর কারণে যে এমন আলোড়ন সৃষ্টি হবে, সেটা কিন্তু কেউ আশা করেনি। বাংলাদেশের মানুষের ফুটবলের প্রতি যে ভালোবাসা, সেটা আমরা একসময় শুনেছি এবং দেখেছিও। কিন্তু বর্তমান যুগে এসে এত ব্যস্ততার মধ্যে তাঁরা যেভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন হামজাকে, সেটা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে, বাংলাদেশে ফুটবল এখনো জনপ্রিয় খেলা। ফুটবলাররাও সবচেয়ে জনপ্রিয়। হামজার অন্তর্ভুক্তিতে ফুটবলে নবজাগরণ দেখা গেছে। তাঁর উপস্থিতিতে আমরা বাকি ফুটবলারদের মধ্যে যে অনুপ্রেরণা এবং পারফরম্যান্স দেখলাম, তাতে আমরা বুঝলাম, সে মানের কোনো খেলোয়াড় থাকলে তার প্রভাব জাতীয় দলে ইতিবাচকভাবে পড়বে।

প্রশ্ন: জুনে প্রবাসী ফুটবলারদের ট্রায়ালের পদ্ধতি কেমন হবে?

ফাহাদ: ট্রায়ালে আসা অনেক ফুটবলারই টিকিট কেটে ফেলেছে বাংলাদেশে আসার। ৩০ জনের বেশি ফুটবলারের একটি পুল হয়েছে। আমরা সবাইকে সুযোগ দিতে চাই। আমরা তো সাধারণত এক দিনের ট্রায়াল করে থাকি। কিন্তু সভাপতি বললেন, তারা সবাই তো বাইরে থেকে আসবে, তাই ক্লান্ত থাকতে পারে। সে কারণে ন্যূনতম তিন দিনের একটি ট্রায়াল করার কথা বলেছেন তিনি। আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ারও ব্যাপার আছে। সেই কথা আমি টেকনিক্যাল কমিটিকে বলেছি। একই সঙ্গে আমি ক্লাবকেও আমন্ত্রণ জানাতে চাই। আমরা পাঁচজনের একটি স্বাধীন প্যানেল করব। সেখানে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর (সাইফুল বারী টিটু) থাকবেন। বাফুফের কোচ বা সাবেক খেলোয়াড়ও থাকতে পারেন সেখানে। যাঁরা সবাইকে আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। একই সঙ্গে আমরা প্রযুক্তিও ব্যবহার করতে চাই। তিন দিন ট্রায়ালের পর আমরা ফুটবলারদের বিস্তারিত ডেটাবেইস পেয়ে যাব। একই সঙ্গে স্বাধীন প্যানেলের একটা স্কোরিং পাব। টেকনিক্যাল টিম যদি মনে করে, কেউ জাতীয় দলের যোগ্য, এটা তাদের সিদ্ধান্ত।

প্রশ্ন: প্রবাসী ফুটবলাররাই কি তাহলে দীর্ঘ মেয়াদের সমাধান?

ফাহাদ: আমরা কিন্তু স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য এমনটা করছি না। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতও আমাদের কাছে বাংলাদেশি। আমরা কোনো ভেদাভেদ করছি না। বিদেশে যারা, তারা ভালো সুযোগ-সুবিধা পায়, এটুকুই। আমরা হামজা-সমিতকে নিয়ে আলাপ করছি, কিন্তু স্কোয়াড তো ২৩ জনের। বাকি ২১ জন খেলোয়াড় ঘরোয়া লিগ থেকেই আসছে। এর মাধ্যমে আমরা কোনো খেলোয়াড়কে খাটো করছি না। যার যেটা প্রাপ্য, সেটাই দেওয়ার চেষ্টা করছি। এটা ফুটবল, সেরা খেলোয়াড় যেখানে আছে, সেখান থেকে আনতে হবে। একই সঙ্গে কাজ করতে হবে ঘরোয়া পুল উন্নত করতে।

প্রশ্ন: বাইরে থেকে আসা খেলোয়াড়দের সঙ্গে স্থানীয় খেলোয়াড়দের যথার্থ মিশ্রণ নিয়ে কী ভাবছেন?

ফাহাদ: যোগ্যরা যে শুধু বিদেশ থেকে আসবে, তা না কিন্তু। মোরসালিন-ফাহিমরা যখন এসেছিল, তারা কিন্তু সিনিয়র খেলোয়াড়দের জায়গা পূরণ করেছে। বাইরে থেকে এলেই যে আমরা ধরে নিই, সে সুপারস্টার, তা নয় কিন্তু। আমাদের দেশে অনেক প্রতিভা আছে। তারা এখন উৎসাহিত হবে নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য। এই মিশ্রণটা করতে হবে দুই পক্ষের। কারণ, এটা দলীয় খেলা।

প্রশ্ন: ব্র‍্যান্ড ভ্যালুর দিক দিয়ে বাংলাদেশের ফুটবল অনেক পিছিয়ে। সামনে তিনটি ম্যাচ আছে ঘরের মাঠে। ৫ ও ১০ জুনের ম্যাচ নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

ফাহাদ: এ সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত পরিকল্পনা করব। আমরা বেশির ভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করব। কিছু সীমিত টিকিট থাকবে করপোরেট পার্টনারদের জন্য। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সহায়তা করে আসছেন। সেদিন দর্শকদের অভিজ্ঞতা যেন ভালো হয়, সেটা নিয়ে কাজ করছি। ইনশা আল্লাহ বাংলাদেশে কোনো খেলা এভাবে দেখবে না, যেভাবে আমরা দেখানোর চেষ্টা করব। ফুটবল তো ৯০ মিনিটের খেলা, সেখানে আমাদের করার কিছু নেই। তবে এর আগে পরে কিছু এলিমেন্টস রাখব, ফলে দর্শকেরা পরিবেশটা যেন উপভোগ করতে পারে। আমরা ২০ মের ভেতর চেষ্টা করব টিকিট ছাড়ার। কম্পিটিশন কমিটি থেকে বিভিন্ন প্রস্তাব এসেছে। বাকিটা সভাপতি সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রাথমিকভাবে সাধারণ দর্শকদের জন্য ন্যূনতম টাকা ৩০০ থেকে ৫০০-এর মধ্যে করার আলোচনা চলছে। তিনটি ম্যাচকে আমরা রাজস্ব আয়ের ভালো সুযোগ হিসেবে নিচ্ছি।

প্রশ্ন: ফুটবলের বিপণন সব সময় হয় ক্লাব ফুটবলকেন্দ্রিক। সেই তুলনায় বাংলাদেশে ফুটবল মার্কেটিং বলতে তেমন কিছু নেই। সামগ্রিকভাবে মার্কেটিং টিমের ভিশনটা কী?

ফাহাদ: প্রথমবারের মতো আমাদের একটা অ্যাওয়ে কিট উন্মোচন হয়েছে। সেটা খুব পেশাদারভাবে। এখন হোম কিট উন্মোচন করার সময় এসেছে। আমরা অনুরোধ করেছি, কিট পৃষ্ঠপোষকদের সমর্থকদের জন্য আলাদা কোয়ালিটির জার্সি বানাতে। আমি চাচ্ছি, এটি ম্যাচের দুই সপ্তাহ আগে বাজারে আসে। সমর্থকেরা যেন এটা পরে খেলা দেখতে আসতে পারে। জার্সি বিক্রি থেকে আমরা কিছু অর্থ পেয়ে থাকি।

প্রশ্ন: ক্রিকেটের মতো ফুটবলের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ভেন্যু করার ব্যাপারে বাফুফের চিন্তাভাবনা কী?

ফাহাদ: আমাদের সভাপতি আসার পর থেকেই মাঠ চাচ্ছেন। এটি দুর্ভাগ্যজনক, ফুটবলের কোনো নির্দিষ্ট ভেন্যু নেই। জেনে অবাক হবেন, বাংলাদেশে ফিফার নিয়ম অনুযায়ী শতভাগ পরিপূর্ণ কোনো স্টেডিয়াম নেই। অবশ্যই এটা আমাদের চাওয়া। সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে কথা চলছে। কক্সবাজারে ফিফা টেকনিক্যাল সেন্টারের জন্য একটি জায়গা চেয়েছি। একই সঙ্গে আমরা বেশ কিছু স্টেডিয়াম চেয়েছি। তবে ফুটবলের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ভেন্যু থাকলে ব্যাপারটা বড় করা যায়। আমাদের সদিচ্ছার অভাব নেই।

প্রশ্ন: মার্কেটিং টিমের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ রাজস্বের জোগান দেওয়া। এখানে মূলত কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন?

ফাহাদ: আমরা যখন এসেছি, তখন দেখলাম, আমরা একেবারে নেগেটিভে আছে। আগে শূন্যের কোঠায় আনতে হবে, পরে পজিটিভে যেতে পারব। ফুটবল আয়োজন ব্যয়বহুল। পৃষ্ঠপোষক থেকে কত আয় করতে পারব, সেটা আমরা জানি এখন। তবে এক বছরে শূন্যে ওঠা সম্ভব নয়। আমরা কিন্তু সেই গ্যাপটা ছোট করা শুরু করেছি। দুই-তিন বছর লেগে যাবে। চার বছর পর যখন চলে যাব, পরে যাঁরাই আসবেন, তাঁরা যেন বলতে না পারেন, বাফুফে নেগেটিভে আছে। সমর্থকদের প্রতি আমার প্রতিশ্রুতি হলো, আমরা পজিটিভ আনতে না পারলেও নেগেটিভে রাখব না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত