Ajker Patrika

হামজাদের আনন্দের মাঝে আছে সংশয়ও

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৩
ভারতকে ২২ বছর পর হারিয়ে হামজা চৌধুরী-জামাল ভূঁইয়াদের উদযাপন। ছবি: ফেসবুক
ভারতকে ২২ বছর পর হারিয়ে হামজা চৌধুরী-জামাল ভূঁইয়াদের উদযাপন। ছবি: ফেসবুক

দেয়ালচিত্রে বদলে গেছে বাফুফে ভবনের চেহারা। গতকাল ‘হোম অব ফুটবল’ ছিল নীরবতায় ঢাকা। টানা দুটি ম্যাচ, বিশেষ করে ভারত ম্যাচ আয়োজনের ধকল কাটিয়ে উঠতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছিলেন ছুটিতে। ২২ বছর পর পাওয়া জয়ে সবার মনে বইছে আনন্দের স্রোত।

বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে এক বিশেষ দিন হয়ে থাকবে ১৮ নভেম্বর। শেখ মোরসালিনের গোলে ১-০ ব্যবধানের অবিস্মরণীয় জয়ে রাতে কেক কেটে, নেচে-গেয়ে উদ্‌যাপন করেন ফুটবলাররা। অধিকাংশ ফুটবলার রাতেই ছেড়েছেন হোটেল। হামজা চৌধুরী সকালে রওনা দিয়েছেন ইংল্যান্ডের পথে। কানাডা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ না থাকায় এই ফাঁকে শমিত সোম ছুটে গেছেন শ্রীমঙ্গলে। ফুটবলার হিসেবে এবারই প্রথম গ্রামের বাড়ি গেলেন তিনি।

দুই দিন পেরিয়ে গেলেও জয়ের রেশ এখনো কাটেনি। ম্যাচে বাংলাদেশ হয়তো সেভাবে গোছানো খেলাটা খেলতে পারেনি। তবে ফুটবলে জয়ই শেষ কথা। জয় দিয়ে বছর শেষ করতে পারার তৃপ্তি হয়তো বলে বোঝানো যায় না। সেই রেশ তখনই হতাশায় মোড় নেবে, যখন প্রশ্ন করা হবে, বছরটা কেমন হলো বাংলাদেশের।

হয়তো বলতে পারেন, হামজা এসেছেন, শমিত এসেছেন, দেশের ফুটবলে নতুন জোয়ার এসেছে। মানুষ এখন জাতীয় দল নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে, আগ্রহ বাড়িয়েছে। কিন্তু তেতো হলেও সত্যি, হামজা-শমিতদের নিয়েও এশিয়ান কাপের মূল পর্বে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। এই বছর আটটি ম্যাচ খেলে জয় এসেছে শুধু ভারত আর তুলনামূলক দুর্বল ভুটানের বিপক্ষে। নেপালকেও দুবারের দেখায় পারেনি হারাতে।

নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখানো প্রবাসী ফুটবলাররা হয়ে উঠছেন ফুটবলের আশার প্রতীক। এই নীতি শুধু বাংলাদেশই নয়, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও। কেপ ভার্দের কথাই ধরুন না। কজনই-বা চিনত প্রায় ৬ লাখ জনসংখ্যার ছোট দেশকে। অথচ বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের ঘাড়ে চরে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে নাম লিখিয়েছে তারা। ভারত পর্যন্ত বাংলাদেশকে দেখে নিজেদের নীতি বদলেছে। বিশ্বকাপে না হোক, হামজা-শমিতদের নিয়ে অন্তত এশিয়ান কাপে খেলার স্বপ্ন তো দেখতেই পারে বাংলাদেশ। ১৯৮০ সালের পর যে স্বপ্ন অধরা হয়ে আছে এখনো।

গত পরশু সংবাদ সম্মেলনে হামজা তেমনই আশ্বাস দিলেন, ‘আমাদের এখনো কিছু ধাপ পেরোতে হবে। আমরা বারবার বলেছি, কোচও বলেছেন, সবাই একই কথা বলেছে—আমাদের পারফরম্যান্স হচ্ছে, এখন দরকার ফল। এখন হয়তো পারফরম্যান্স ছাড়াই ফল এসেছে। আমরা আবার মার্চে নতুন করে গড়তে শুরু করব এবং ইনশা আল্লাহ, তখন পারফরম্যান্স ও ফল—দুটোই একসঙ্গে এনে দল হিসেবে আরও শক্তিশালী হব।’

বাংলাদেশের পরের ম্যাচ সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে। অপেক্ষা করতে হবে আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এরপর আর কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ এখন পর্যন্ত নেই বাংলাদেশের। বিশ্বকাপের বছরে সেভাবে থাকেও না। পরের ফিফা উইন্ডো প্রায় এক বছর পর সেই সেপ্টেম্বরে। সেটাও ঘরের মাঠে হবে কি না, নিশ্চয়তা নেই। তাই আগামী এক বছরে ঘরের মাঠে হামজা-শমিতদের খেলার সম্ভাবনা খুবই কম।

এই লম্বা বিরতিতে ফুটবলের প্রতি আগ্রহটা হয়তো হারাবে না। আমেজটা ধরে রাখতে হলে বাফুফের নজর দেওয়া উচিত ঘরোয়া ফুটবলে। ভারত ম্যাচ দিয়ে আর্থিকভাবে সফল হওয়ার কথা বেশ জোরগলায় শুনিয়েছেন বাফুফে সহসভাপতি ও মার্কেটিং কমিটির চেয়ারম্যান ফাহাদ করিম। অথচ ফুটবলের আসলে ব্র্যান্ডিংটা যে করতে হয় ক্লাব ফুটবল। সেটা হয়তো তিনিও উপলব্ধি করে থাকেন। তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। ঘরোয়া লিগ চলছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। ফুটবলাররা পাচ্ছেন না নিয়মিত পারিশ্রমিক। ক্লাবগুলোয় আসেনি আধুনিকতার ছোঁয়া। ফুটবলের জন্য নিবেদিত কোনো মাঠ না থাকার হাহাকার প্রায়শই শোনা যায় বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের কণ্ঠে।

হামজা-শমিতরা বাংলাদেশের হয়ে নাম লেখানোর আগেই পেয়েছেন তারকাখ্যাতি। যে দেশে বড় হয়েছেন, সে দেশের উন্নত ফুটবল কাঠামো তাঁদের বড় মানের ফুটবলার হতে সহায়তা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল খেলে বর্তমানে তারকা হয়েছেন কজন? একসময় ফুটবলারদের পরিচয়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকত ক্লাবের নাম—আবাহনীর অমুক, মোহামেডানের অমুক। সেই দৃশ্য ফিরে এলে তবেই পুনরুজ্জীবিত হতে পারে দেশের সামগ্রিক ফুটবল। শমিত যেমন শ্রীমঙ্গল ফিরে বললেন, ‘আশা করি, আমি এখানকার ফুটবলারদের অনুপ্রাণিত করতে পারব। তারা যদি ভালোভাবে অনুশীলন করে, কঠোর পরিশ্রম করে, তাহলে সুযোগ পাবে। আমি অনেক স্থানীয় খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলি, এরা তো শুধু ঢাকা নয়, ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে।’

সমর্থকেরাও এখন জাতীয় দলকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। ক্লাব ফুটবল তাদের খুব বেশি টানে না। ২৪ নভেম্বর শুরু হতে যাওয়া লিগে হয়তো চোখে পড়বে তা। সেদিনই কুমিল্লায় মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী-মোহামেডান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাঁচ মাস পর অধিনায়ক হয়েই ফিরছেন কামিন্স

ক্রীড়া ডেস্ক    
পাঁচ মাস পর ফিরছেন প্যাট কামিন্স। ছবি: ক্রিকইনফো
পাঁচ মাস পর ফিরছেন প্যাট কামিন্স। ছবি: ক্রিকইনফো

কিংসটনে জুলাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে ২৭ রানে অলআউট হয়ে বাজে রেকর্ডে নাম লিখিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে কামিন্স সবশেষ মাঠে নেমেছিলেন এই ম্যাচেই। অবশেষে পাঁচ মাস পর তাঁর অপেক্ষা ফুরোচ্ছে। অষ্ট্রেলিয়ার তারকা পেসারের ফেরাটা হচ্ছে অধিনায়ক হয়েই।

অ্যাডিলেডে ১৭ ডিসেম্বর মাঠে গড়াবে অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্ট। এই ম্যাচ সামনে রেখে গত রাতে ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। এই ম্যাচে কামিন্সকে করা হয়েছে অধিনায়ক। তাঁর মতো ফিরছেন উসমান খাজাও। পিঠের চোটে পড়ায় ব্রিসবেনে সবশেষ গোলাপি বলের টেস্টে খেলতে পারেননি তিনি। সবশেষ খাজা মাঠে নেমেছিলেন পার্থে অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে। এবার যেহেতু অ্যাডিলেড টেস্টে ফিরেছেন তিনি, সেক্ষেত্রে তাঁকে মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করতে হতে পারে। দল ঘোষণার আগেই গতকাল প্রধান কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড এমনটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়া দলে পরিবর্তন বলতে কামিন্স-খাজার অন্তর্ভুক্তি। বাকিরা সব আগের মতোই। অ্যালেক্স ক্যারি উইকেটরক্ষক ব্যাটার। স্টিভ স্মিথ, ট্রাভিস হেড, মারনাস লাবুশেন, উসমান খাজার মতো অভিজ্ঞদের সঙ্গে ব্যাটিং লাইনআপে আছেন তরুণ জেক ওয়েদার‍্যাল্ড। কামিন্স ফেরায় পেস বোলিং লাইনআপটাও একটু শক্তিশালী হয়েছে। মিচেল স্টার্ক, মাইকেল নেসার, স্কট বোল্যান্ডদের মতো তারকা পেসারদের সঙ্গে আছেন কামিন্স। নেসার ব্রিসবেনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন ৫ উইকেট। আগুনে বোলিংয়ে প্রথম দুই টেস্টেই ম্যাচসেরা হয়েছেন স্টার্ক। পার্থে প্রথম টেস্টে নিয়েছেন ১০ উইকেট। সিরিজে সর্বোচ্চ ১৮ উইকেট অস্ট্রেলিয়ার এই বাঁহাতি পেসারেরই।

পার্থ, ব্রিসবেন দুই টেস্টেই অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জিতেছে। পার্থে সিরিজের প্রথম টেস্ট শেষ হয়েছে দুই দিনে। ব্রিসবেনে গোলাপি বলের টেস্ট চার দিনে শেষ হয়েছে। ১৭ ডিসেম্বর অ্যাডিলেড ওভালে শুরু হতে যাওয়া তৃতীয় টেস্টে কামিন্সের ফেরাটা হচ্ছে অধিনায়ক হয়েই ফিরতে পারেন কামিন্স। ২৬ ডিসেম্বর মেলবোর্নে শুরু হবে চতুর্থ টেস্ট। নতুন বছরের ৩ জানুয়ারি মাঠে গড়াবে অ্যাশেজের পঞ্চম তথা শেষ টেস্ট।

অ্যাডিলেড টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার ১৫ সদস্যের দল

উসমান খাজা, জেক ওয়েদার‍্যাল্ড, মারনাস লাবুশেন, প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), স্কট বোল্যান্ড, স্টিভ স্মিথ, ট্রাভিস হেড, ক্যামেরন গ্রিন, অ্যালেক্স ক্যারি (উইকেটরক্ষক), মিচেল স্টার্ক, নাথান লায়ন, ব্রেন্ডন ডগেট, বিউ ওয়েবস্টার, মাইকেল নেসার, জশ ইংলিস

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বুমরার বিতর্কিত উইকেটে ‘জড়িত’ এক ভারতীয় আম্পায়ার

ক্রীড়া ডেস্ক    
জসপ্রীত বুমরার এই নো বল নিয়েই যত বিতর্ক। ছবি: সংগৃহীত
জসপ্রীত বুমরার এই নো বল নিয়েই যত বিতর্ক। ছবি: সংগৃহীত

ডেওয়াল্ড ব্রেভিস একটু থামলেন। ভেবেছিলেন তৃতীয় আম্পায়ার কে এন অনন্তপদ্মনবন হয়তো সিদ্ধান্ত বদলে মাঠে ফেরাবেন। কিন্তু কিসের কী! শেষ পর্যন্ত জসপ্রীত বুমরার পক্ষেই রায় দিলেন তিনি। তাঁর এই প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত নিয়ে হয়েছে সমালোচনা।

কটকের বরাবাতি স্টেডিয়ামে ভারতের দেওয়া ১৭৬ রানের লক্ষ্যে নেমে ব্যাটিং করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বুমরার অফস্টাম্পের বাইরের বল লেগ সাইডে মারতে যান ব্রেভিস। টপ এজ হওয়া বল কাভারে সহজেই লুফে নেন ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। তাতেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে শততম উইকেট পেয়ে গেলেন বুমরা। বিতর্কের শুরু এখানেই। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বুমরার সামনের পা উইকেটের বাইরে ছিল। যাচাই-বাচাই করে তৃতীয় আম্পায়ার কে এন অনন্তপদ্মনবন আউটই দিলেন। বুমরার ডেলিভারিটা বৈধ ছিল কি না, রিপ্লে দেখে দুই ধারাভাষ্যকার সুনীল গাভাস্কার ও পমি এমবাঙ্গোয়া সন্দেহ প্রকাশ করেন। হতবাক এমবাঙ্গোয়া বলেন, ‘দাগের পেছনে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। তার মানে সে (বুমরা) এটার বাইরে।’

বিভিন্ন কোণ থেকে ক্যামেরার মাধ্যমে অনেকক্ষণ যাচাই-বাচাই করার পরও বোঝার উপায় নেই যে বুমরার পা আদৌ উইকেটের ভেতরে ছিল কি ছিল না গাভাস্কার-এমবাঙ্গোয়াদের কথা অনুযায়ী তৃতীয় আম্পায়ার কে এন অনন্তপদ্মনবন বুমরার বলটাকে ফ্রন্ট ফুট নো বল দিতে পারতেন। তবে আরেক ধারাভাষ্যকার দীপ দাসগুপ্ত বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁর মতে বেনিফিট অব ডাউট বোলারদের পক্ষেই সাধারণত যায়। যে ওভারে ব্রেভিসের উইকেট বুমরা তুলে নিয়েছেন, একই ওভারে বুমরা পেয়েছেন আরও এক উইকেট। ১১তম ওভারের পঞ্চম বলে কেশব মহারাজকে ফিরিয়ে ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে ১০১তম উইকেট তুলে নিয়েছেন।

টস হেরে আগে ব্যাটিং পাওয়া ভারত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৫ রান করেছে। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১২.৩ ওভারে ৭৪ রানে গুটিয়ে যায় প্রোটিয়ারা। ১০১ রানের জয়ে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচসেরা হয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া। ২৮ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৫৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন। বোলিংয়ে ২ ওভারে ১৬ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট। আগামীকাল নিউ চন্ডীগড়ে হবে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি। ১৪ ডিসেম্বর ধর্মশালা, ১৭ ডিসেম্বর লক্ষ্ণৌ ও ১৯ ডিসেম্বর আহমেদাবাদে হবে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম টি-টোয়েন্টি।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০১ উইকেট পাওয়া বুমরা ঢুকে গেলেন এলিট ক্লাব। টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি—তিন সংস্করণেই ১০০ বা তার বেশি উইকেট নেওয়া পঞ্চম বোলার এখন তিনি। এর আগে এই এলিট ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন সাকিব আল হাসান, লাসিথ মালিঙ্গা, টিম সাউদি ও শাহিন শাহ আফ্রিদি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাক্ষাৎকার

৫ বছরে সিনিয়র বিশ্বকাপে খেলা সম্ভব

জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে ১৮ গোল করেছেন আমিরুল ইসলাম। ছবি: বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন

প্রথমবার জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কিছু করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। আর এই সাফল্যের পেছনে অন্যতম নায়ক আমিরুল ইসলাম। ৬ ম্যাচে ১৮ গোল করে এখনো টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। তরুণ এই ডিফেন্ডার এবার স্বপ্ন বুনছেন জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলার। আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি শুনিয়েছেন সেই গল্প। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনোয়ার সোহাগ

আনোয়ার সোহাগ, ঢাকা

প্রশ্ন: প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে ভালো একটা অর্জন নিয়ে ফিরছে বাংলাদেশ। ২৪ দলের মধ্যে ১৭তম হয়ে জিতেছে চ্যালেঞ্জার ট্রফি। কেমন লাগছে?

আমিরুল ইসলাম: অবশ্যই ভালো লাগছে। বিশ্বকাপের মতো একটা মঞ্চে আমরা সাফল্যের সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা ওড়াতে পেরেছি। একটা ট্রফি নিয়ে ফিরতে পারছি। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন। অবশ্যই আমাদের গর্ব হচ্ছে। দেশের মানুষ এখন আমাদের সামর্থ্য নিয়ে ভরসা করতে পারবে।

প্রশ্ন: অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে আপনি হ্যাটট্রিক করলেও ম্যাচের শেষ দিকটায় খুবই নাটকীয়তা দেখা গেছে। ওই ম্যাচে স্নায়ুচাপ উতরে যাওয়া কোন মন্ত্রে?

আমিরুল: শেষ ৫ মিনিট খুব চাপের ছিল। ছোট ছোট ভুলগুলো আসলে বড় সমস্যা তৈরি করে। এর কারণে গোল হজম করতে হতে পারে এবং সেটাই হয়েছে। চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব ঠান্ডা মাথায় খেলার। গোলকিপারের ওপর চাপ কম রাখার। আলহামদুলিল্লাহ আমরা জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছি। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে টিম হোটেলে গিয়েছি আমরা।

প্রশ্ন: ৬ ম্যাচে ৫ হ্যাটট্রিক, ১৮ গোল। টুর্নামেন্টটা নিশ্চয়ই আপনার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে?

আমিরুল: আমি আমার কাজটা করে যাব। সেটার ফল পেয়েছি। হ্যাটট্রিক করাটা অভ্যাস বলব না। আমার কাছে সুযোগ এসেছে, যে করেই হোক সুযোগ কাজে লাগাতেই হবে। নিজের প্রতি বিশ্বাস ছিল, আমি পারব।

প্রশ্ন: ১৫ দিন আগেও হকির এই টুর্নামেন্টে আপনাদের অংশগ্রহণ নিয়ে খুব একটা আলোচনা ছিল না। এটি কি নিজেদের চাপমুক্ত হয়ে খেলতে বেশি সহায়তা করেছে?

আমিরুল: আসলে পরিকল্পনা করে তো সবকিছু হয় না। পেনাল্টি কর্নার আমার শক্তির জায়গা। কোচের সঙ্গে আমি বেশি আলোচনা করেছি এ নিয়ে। শক্তির একেকটা জায়গা ধরে আমি অনুশীলন করেছি। কোচ আমাকে অনেক সহায়তা করেছেন। ধন্যবাদ দেব সতীর্থদেরও। বিশেষ করে ফরোয়ার্ডদের। তারা পেনাল্টি কর্নার আদায় করার কারণেই আমি আজকের আমিরুল কিংবা পরিচিতি পাচ্ছি। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা সব সময়ই থাকবে।

প্রশ্ন: হকিতে খুব একটা ভালো সুযোগ-সুবিধা নেই, কাঠামো নেই। তবু বড় মঞ্চে সাফল্য এসেছে কোন সূত্র ধরে?

আমিরুল: সাফল্যের পেছনে খেলোয়াড়দের অবদান সবচেয়ে বেশি। তারা দেশের হয়ে নিজের আত্মবিশ্বাসটুকু সম্বল করে হকি নিয়ে এগোচ্ছে। কিন্তু দেখুন, আমরা সব সময় ভালো পৃষ্ঠপোষক পাই না। সরকার থেকে খুব একটা আর্থিক সাপোর্ট পাই না। বা ন্যূনতম যে সম্মানী, সেটাও পাই না। আমরা দেশের জন্য খেলি। সব সময় এটাই হয়ে আসছে। তো ভবিষ্যতে যদি কিছু পাই আলহামদুলিল্লাহ, না পেলেও আর কী করার থাকতে পারে।

প্রশ্ন: ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক ঘটনায় সংবাদ শিরোনাম হয় হকি। আপনাদের এই সাফল্যে দেশের হকির ভাবমূর্তি কতটা বদলাবে বলে মনে হয়?

আমিরুল: বিষয়টা খেলোয়াড় হিসেবে আমারও খারাপ লাগে। আমাদের এই পারফরম্যান্স অনেক কিছু বদলে দিতে পারবে। যদি বিষয়টা ইতিবাচকভাবে নেওয়া হয় এবং দলটা যদি কাজ করে।

প্রশ্ন: বড় মঞ্চে ভালো করেও দলকে ঘিরে একটা অনিশ্চয়তা ভর করেছে। আপনারা জানেন না যে এরপর আপনাদের পরের টুর্নামেন্টটা কী হবে।

​আমিরুল: প্রথমত, আমরা এত কিছু চিন্তা করছি না। আমাদের লক্ষ্য ছিল ভালো একটা ফল নিয়ে আসা। তো আলহামদুলিল্লাহ, করতে পেরেছি। এখন বাকিটা ফেডারেশনের হাতে। আমরা এই বিষয়ে আশা করছি। আমরা চাই যেন খেলাটা মাঠে থাকে। ফেডারেশনে আবার বড় ফান্ডও নেই। সব সময় শুনছি যে টাকা নেই, টাকা নেই! এটা একটা সমস্যা। তো আমি বলব যে যেন যারা পৃষ্ঠপোষক আছে, তারা যদি এখানে থাকে, তাহলে আমি মনে করি, তারা এই মিশনে আরও কাজ করবে এবং তারা এই বিষয় আরও গুরুত্বের সঙ্গে নেবে।

প্রশ্ন: এখন কি স্বপ্ন দেখেন যে হকির সিনিয়র বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের খেলা সম্ভব?

​আমিরুল: আমি বলব যে যদি দলটার পরিচর্যা করা হয় এবং সঙ্গে যদি কিছু খেলোয়াড় যোগ করা হয়; তাহলে দলটা শিগগির ভালো অবস্থায় যাবে। সঙ্গে যদি একজন ভালো মানের কোচ থাকেন, তাহলে ৫-৭ বছরের মধ্যে বিশ্বকাপে পৌঁছানো সম্ভব।

প্রশ্ন: হকিতে ফ্র‍্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের ছোঁয়া লাগলেও সেটা স্থায়ী হয়নি। এ রকম টুর্নামেন্ট নিশ্চয়ই খেলতে চান নিয়মিত?

আমিরুল: এমন টুর্নামেন্ট হলে অবশ্যই আমাদের জন্য ভালো। আমরা চাই যেন এই লিগ প্রতিবছর হয়। এতে আরও খেলোয়াড় উঠে আসবে। সেখানে বিদেশি কোচরাও আসবেন, আমরা তাঁদের কাছ থেকে শিখতে পারব। আমি বলব, এটা যদি নিয়মিত হয়, তাহলে দেশের হকি আরও ভালো পথে যাবে।

প্রশ্ন: ভারতে হকির সংস্কৃতি কেমন দেখলেন?

আমিরুল: প্রথমত হচ্ছে, ওদের অবকাঠামোটা আসলে খুব শক্তিশালী। সরকার থেকে খেলোয়াড়েরা অনেক সাপোর্ট পায়। জুনিয়র লেভেল থেকে সিনিয়র লেভেল পর্যন্ত ওদের পরিচর্যা করা হচ্ছে। স্পোর্টস ইনস্টিটিউট সারা বছরই ওদের সাপোর্ট দেয় এবং ট্রেনিং করতে পারে। ওদের মধ্যে লড়াই করার চেতনা আছে, যে কারণে অনেক উন্নত। আমাদের তো বিকেএসপির পর অনেকে ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে, ওখানে (ভারতে) এ রকম না।

প্রশ্ন: অনেকে তারকাখ্যাতি পাওয়ার পর পথ হারিয়ে ফেলেন। নিজেকে নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

আমিরুল: কে কী বলল না বলল, এসবে কান দিই না। চেষ্টা করব সব সময় মাটিতে পা রাখার। আমি পরিশ্রমে বিশ্বাসী। খারাপ পারফরম্যান্স যখন হয়, তখন চেষ্টা করি স্বাভাবিক থাকতে। কোচের সঙ্গে পরামর্শ করি, কীভাবে খারাপ সময়টা কাটিয়ে উঠতে পারি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এমবাপ্পের রেকর্ড ভাঙলেন ইয়ামাল, সালাহবিহীন লিভারপুলের কষ্টার্জিত জয়

ক্রীড়া ডেস্ক    
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৪
কিলিয়ান এমবাপ্পের রেকর্ড ভাঙলেন লামিনে ইয়ামাল। ছবি: এএফপি
কিলিয়ান এমবাপ্পের রেকর্ড ভাঙলেন লামিনে ইয়ামাল। ছবি: এএফপি

একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলেছেন লামিনে ইয়ামাল। নিজে যেমন গোল করছেন, সতীর্থদের দিয়ে গোলও করাচ্ছেন এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। ছন্দে থাকা ইয়ামাল গত রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগে ভেঙে দিয়েছেন কিলিয়ান এমবাপ্পের রেকর্ড। ইয়ামালের রেকর্ড গড়ার রাতে জিতেছে বার্সেলোনা।

ইয়ামালের রেকর্ডের রাতে জয় পেয়েছে লিভারপুলও। এবার লিভারপুলের জন্য ম্যাচটা ছিল একটু ভিন্নরকমই। বিস্ফোরক মন্তব্যের পরপরই মোহাম্মদ সালাহকে চ্যাম্পিয়নস লিগের দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। যদিও কোচ আর্নে স্লট এ ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলেননি। সে যা-ই হোক, মাঠের খেলায় শেষ পর্যন্ত সালাহকে ছাড়া কষ্টার্জিত জয় পেয়েছে লিভারপুল। সান সিরোতে গত রাতে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে লিভারপুল গোল পেয়েছে শেষ মুহূর্তে এসে।

ক্যাম্প ন্যুতে গত রাতে লিগ পর্বের ম্যাচে বার্সেলোনা খেলেছে আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের বিপক্ষে। ঘরের মাঠে বার্সা জিতেছে ২-১ গোলে। ২১ মিনিটে ফ্রাঙ্কফুর্টকে এগিয়ে দেন স্ট্রাইকার আনসগার নাউফ। ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা বার্সেলোনা ঘুরে দাঁড়ায় দ্বিতীয়ার্ধেই। ৫০ ও ৫৩ মিনিটে জোড়া গোল করেন জুলস কুন্দে। যার মধ্যে ৫০ মিনিটে কুন্দে গোল করেন মার্কাস রাশফোর্ডের অ্যাসিস্টে। ৫৩ মিনিটে কুন্দেকে দিয়ে গোল করিয়ে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখান এমবাপ্পে। চ্যাম্পিয়নস লিগে ইয়ামাল এখন পর্যন্ত ১৪ গোলে অবদান রেখেছেন। সাতটি করে গোল ও অ্যাসিস্ট করেছেন। ১৮ বছর বা তার কম বয়সী খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোলে অবদান রাখার রেকর্ড এখন তাঁর। এই তালিকায় দুইয়ে থাকা এমবাপ্পের অবদান ছিল ১৩ গোলে।

সালাহবিহীন লিভারপুল গত রাতে ইন্টার মিলানকে ১-০ গোলে হারিয়েছে। ৮৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে একমাত্র গোলটি করেন লিভারপুল মিডফিল্ডার ডমিনিক সোবোসলাই। এদিকে চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের আগের ম্যাচে বার্সেলোনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল চেলসি। গত রাতে ২৫ মিনিটে জোয়াও পেদ্রোর গোলে এগিয়ে যায় চেলসি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় আতালান্তা। ৫৫ ও ৮৩ মিনিটে গিয়ানলুকা স্কামাক্কা ও চার্লস ডি কাটেলায়ের গোল করে আতালান্তাকে ২-১ গোলের জয় এনে দেন। একই রাতে বার্সার মতো পিছিয়ে পড়ে জয় পেয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ। স্পোর্তিংকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে বায়ার্ন। স্পোর্তিংয়ের একমাত্র গোলটা বায়ার্নেরই উপহার দেওয়া।

কষ্টার্জিত জয়ের পর পয়েন্ট তালিকায় ৮ নম্বরে লিভারপুল। ৬ ম্যাচে অলরেডদের এখন ১২ পয়েন্ট। সমান ১৫ পয়েন্ট হলেও গোল ব্যবধানের কারণে বায়ার্ন মিউনিখের চেয়ে এগিয়ে আর্সেনাল। ৬ ম্যাচ শেষে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে আর্সেনাল ও দুইয়ে বায়ার্ন। ৬ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে আতালান্তা ৩ নম্বরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত