Ajker Patrika

সৌম্য-লিটনকে কিছু করতেই হবে

রানা আব্বাস, ডালাস থেকে
সৌম্য-লিটনকে কিছু করতেই হবে

পাঁচ মাস আগের কথা। নিউজিল্যান্ড সফর থেকে ফেরার পর সৌম্য সরকারের কাছে সাক্ষাৎকার চাইতেই তাঁর জবাব, ‘এখন না, আরও ভালো খেলি, তখন নিয়েন।’ লম্বা সময় পর ফিরে নিউজিল্যান্ড সফরে ভালোই খেলেছিলেন সৌম্য, ক্যারিয়ারসেরা ১৬৯ রানের ইনিংস এল ওই সফরেই। সৌম্যর মুখে তবু তৃপ্তির হাসি নেই একটি চিন্তায়—ধারাবাহিক ভালো খেলা। 

 ১০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে দলে নিয়মিত হতে পারেননি—এই আসেন, এই যান। তবে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের একটা বিশেষ নজর তাঁর দিকে সব সময় ছিল। হাথুরুর আগের মেয়াদে সৌম্যর আন্তর্জাতিক অভিষেক বলেই নয়, এই বাঁহাতি ওপেনারের প্রতিভা আর খেলার ধরন নিয়ে তিনি সব সময়ই মুগ্ধ। হাথুরুর বিশ্বাস, সৌম্য সেই খেলোয়াড়, যিনি নিজের দিনে একাই প্রতিপক্ষের বোলিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। সেই আস্থার প্রতিদান নিয়মিত দিতে পারছেন না বলেই সৌম্যর দিকে এত সমালোচনার তির। 

নিউইয়র্কে ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে শূন্য রানে ফেরার পর গ্যালারি থেকে বলা দর্শকের দুয়ো ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে, ‘আর কত ডাক মারবেন? নাম তো সৌম্য সরকারের বদলে ‘‘শূন্য সরকার’’ হয়ে গেল!’ মাথা নিচু করে ড্রেসিংরুমে ফেরা সৌম্যর মনের অবস্থা দূর থেকেই অনুধাবন করা যাচ্ছিল স্পষ্ট। কোনো খেলোয়াড় ইচ্ছে করে জাতীয় দলের জার্সিতে খারাপ খেলেন না। তিনি দারুণ কিছু করার সামর্থ্য রাখেন বলেই তাঁকে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সৌম্যও ব্যতিক্রম নন। দেশ থেকে রওনা দেওয়ার আগে তিনি বড় স্বপ্নের কথা বলে এসেছেন। গতকাল বিসিবির অফিশিয়াল পেজে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আগের দুটো বিশ্বকাপে ভালো কিছু করতে পারিনি। ২০২৪ স্মরণীয় করে রাখতে চাই।’ 

কীভাবে স্মরণীয় করে রাখতে চান, সেটি বলতে গিয়ে সৌম্য বলেছেন তাঁর স্বপ্নের সীমা ছড়িয়ে দিয়েছেন আদিগন্ত, ‘আমি সব সময় বড় কিছু দেখি, স্বপ্ন বড় দেখি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখি। সব সময় স্বপ্ন বড় দেখতে পছন্দ করি। আমার লক্ষ্য, কেউ যদি বলে সেমিফাইনাল, আমি বলব, না, ফাইনাল খেলতেই যাব। ফলের কথা তো পরে আসবে। মাঠের খেলার ওপর ফল নির্ভর করবে। তবে স্বপ্ন বড় দেখাটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’ 

মানুষ তো শুধু মুখের কথায় আশ্বস্ত হয় না, মাঠে সেটার প্রতিফলন দেখতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশ দলের কথায় আর কাজে খুব একটা মিল দেখা যায়নি। হিউস্টনে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হারের পর নিউইয়র্কে ভারতের কাছে প্রস্তুতি ম্যাচে বাজে পারফরম্যান্সের পর বাংলাদেশকে নিয়ে খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না দর্শকেরা। অবশ্য দর্শকেরা সব সময়ই দলের কাউকে-না কাউকে নিয়ে চরম হতাশ থাকেন। এই মুহূর্তে সৌম্যর সঙ্গে তাঁরা হতাশ লিটন দাসকে নিয়েও। 

অনেক দিন হলো ছন্দ হারিয়ে ফেলা লিটনকে নির্বাচকেরা বিশ্বকাপ দলে রেখেছেন নিরুপায় হয়ে। বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে একসঙ্গে একজন কিপার ও একজন ব্যাটার খুঁজে পাওয়ার মতো ভালো বিকল্প তাঁদের হাতে নেই বলেই লিটনকে আরেকটি সুযোগ দেওয়া। এতে বিসিবির খেলোয়াড় তৈরির প্রক্রিয়া আবারও প্রশ্নবিদ্ধ। অনেক সময় ক্রিকেট বোর্ডকে যেখানে মধুর সমস্যায় পড়তে হয় কাকে রেখে কাকে নেবে। সেখানে বাংলাদেশ ছন্দ হারিয়ে ফেলা খেলোয়াড়কে বয়ে বেড়ায় শুধু ভালো বিকল্প না থাকায়। 

যুদ্ধে নেমে অস্ত্র কতটা কার্যকর, সেটি নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই। এখানে শুধুই সামনে তাকাতে হয়। সৌম্য-লিটনকেও তাই করতে হবে। তাঁরা কেন দলে, কেন ভালো করতে পারছেন না—এসব প্রশ্নের উত্তর এখন দলের প্রধান কোচ, ব্যাটিং কোচ এমনকি বিসিবিও নয়; ব্যাট হাতে দিতে হবে লিটন-সৌম্যকেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত