Ajker Patrika

‘অতিথি’ রুবেলের অন্য রকম বিশ্বকাপ

রানা আব্বাস, দুবাই থেকে
‘অতিথি’ রুবেলের অন্য রকম বিশ্বকাপ

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রুবেল হোসেনকে দেখলে স্মৃতিতে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের জাহাঙ্গীর আলম ফিরে আসেন। বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ দলে মিনহাজুল আবেদীন নান্নু সুযোগ না পাওয়ায় তুমুল হইচই-আন্দোলনের ঘটনা আজও দেশের ক্রিকেটে ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায় হয়ে আছে। চাপের মুখে পরে নান্নুকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে কপাল পোড়ে জাহাঙ্গীরের।

মূল দলে জায়গা না দেওয়া গেলেও সান্ত্বনা হিসেবে জাহাঙ্গীর আলমকে ১৬তম সদস্য হিসেবে নিজেদের খরচে পুরো টুর্নামেন্টে সঙ্গে রেখেছিল বাংলাদেশ। রুবেলের অভিজ্ঞতাও অনেকটা জাহাঙ্গীরের মতোই হচ্ছে। এবার বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে তাঁর সুযোগ মিলেছে ‘রিজার্ভ’ খেলোয়াড় হিসেবে। মাসকাট থেকে আরেক রিজার্ভ খেলোয়াড় আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে দেশে ফিরে গেলে রুবেল হন ১৬তম খেলোয়াড় (অনেকটাই জাহাঙ্গীরের মতোই)।

সুপার টুয়েলভে শারজায় শ্রীলঙ্কা ম্যাচে চোটে পড়ে সাইফউদ্দিনের বিশ্বকাপ শেষ হলে একটু ‘পদোন্নতি’ হয় রুবেলের—রিজার্ভ খেলোয়াড় থেকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন মূল স্কোয়াডে। অবশ্য মূল স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত হলেও এখনো ম্যাচ খেলার সুযোগ মেলেনি রুবেলের। ৩১ বছর বয়সী পেসারের তাই ‘আশায় আশায় দিন যে গেল, আশা পূরণ হলো না…।’

সাকিব আল হাসানের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়ায় দল এখন নেমে এসেছে ১৪ জনে। তবু টুর্নামেন্টে নিজেদের বাকি দুই ম্যাচে রুবেলের সুযোগ মিলবে কি না, সেটি নিশ্চিত নয়। চেনা ছন্দে না থাকলেও মোস্তাফিজুর রহমানকে এখনই একাদশের বাইরে রাখার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সর্বশেষ উইন্ডিজ ম্যাচে ভালো খেলা তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলামকেও একাদশের বাইরে রাখার কথা নয় টিম ম্যানেজমেন্টের। যদিও পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসন, দলের সঙ্গে থাকা নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন দলের পেস আক্রমণের কথা বলতে গিয়ে কখনো কখনো রুবেলের কথা বলছেন। তবে ৩১ বছর বয়সী পেসারের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা এখনো ক্ষীণ।

রুবেলের অবশ্য দলে ‘অতিথি’ হিসেবে কাটছে জুলাইয়ের জিম্বাবুয়ে সফর থেকেই। বাংলাদেশ দলের এই অভিজ্ঞ পেসার সর্বশেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচই খেলেছেন গত জুনে, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। জিম্বাবুয়ে সফরের পর দেশের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সিরিজেও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাঁর কাছে এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ব্যতিক্রম কিছু নয়। এমনিতে মহামারির এই সময়ে খেলোয়াড়দের কাছে বায়ো-বাবল জীবন হয়ে উঠেছে বড় একঘেঁয়ে আর কঠিন। সেই বায়ো-বাবল জীবনটা যদি কাটে বসে বসে, মানসিকভাবে চাঙা থাকা আরও কঠিন।

অবশ্য বায়ো-বাবলের কঠিন জীবনের চেয়ে বেশি কঠিন দিনের পর দিন দলে ‘অতিথি’ খেলোয়াড় হিসেবে থাকাটা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দারুণ বোলিং করেছেন তাসকিন। বাংলাদেশ দলের গতিময় পেসারের একটি বল তো ঘণ্টায় ১৪৯ কিলোমিটারের কাটাও ছুঁয়েছে। সতীর্থ পেসারের এই গতির ঝড় দেখে হয়তো রুবেলের আফসোস বাড়ার কথা। ভালো উইকেটে গতির ঝড় তোলার অভ্যাস তাঁরও তো আছে।

প্রায় পাঁচ মাস প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের বাইরে অথচ নিয়মিত দলে থাকছেন—এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতাই হচ্ছে রুবেলের। অনুশীলনে সতীর্থদের সঙ্গে নানা মজা-রসিকতা করতে দেখে মনে হয় একাদশে সুযোগ না পাওয়ার আফসোস তিনি অন্যভাবে ভুলছেন। সামনাসামনি দেখা হয়ে গেলে মৃদু হেসে নিজেই বলছেন, ‘কী আর করা…!’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত