Ajker Patrika

অজপাড়াগাঁয়ে ক্রিকেটার তৈরির কারখানা গড়েছেন এই তরুণ

তাজরুল ইসলাম, পীরগাছা (রংপুর) 
আপডেট : ২২ মে ২০২৪, ১৬: ৫৮
অজপাড়াগাঁয়ে ক্রিকেটার তৈরির কারখানা গড়েছেন এই তরুণ

স্বপ্ন ছিল তাঁর ক্রিকেটার হওয়ার। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তোলার। লেখাপড়ার পাশাপাশি সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে খেলতেন ক্রিকেটও। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে মুকুলের। যে স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি, সেই স্বপ্নবীজ এখন তিনি বুনে চলেছেন শিশু-কিশোরদের মনে। তাঁর ক্রিকেট একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্রিকেটের এই মুকুলগুলো হয়তো পাপড়ি মেলবে একদিন—এটাই স্বপ্ন মুকুলের। 

পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয়েছিল মুকুলকে। পুরো নাম ইমরান খান মুকুল। বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নের দেউতি গ্রামে। মা বুলবুলি বেগম ও বাবা আব্দুল হামিদের ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোনো’র সংসার। নিত্য অভাব-অনটনের মধ্যে বড় হওয়া মুকুলকেও একসময় উপার্জনের পথে নামতে হয়। বাদ দিতে হয় স্বপ্নের পেছনে ছোটা। 

তবে স্বপ্নের ‘মৃত্যু’ তিনি হতে দেননি। নিজের স্বপ্নটাকেই এখন স্বপ্ন বানিয়ে দিয়েছেন এলাকার শতাধিক শিশু-কিশোরের মনে। তারাই এখন ক্রিকেটার হওয়ার, জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখে। আর কাজটি করতে তিনি একক প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন ‘দেউতি ক্রিকেট একাডেমি’। 

নিজের গোছানো একটা দল নিয়ে ২০২২ সালে বঙ্গবন্ধু টি-টেন রয়্যালটি কাপে (জেলা পর্যায়ে) চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই গড়ে তোলেন দেউতি ক্রিকেট একাডেমি। জীবিকার তাগিদে দেউতি স্কুল অ্যান্ড কলেজে ল্যাব সহকারীর চাকরি করলেও তাঁর ধ্যানজ্ঞান এখন ক্রিকেটার গড়ে তোলা। শুরুর দিকে তাঁর কলেজেরই কয়েকজন ছাত্রকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতেন। এখন বেড়েছে খুদে ক্রিকেটারের সংখ্যা। নিজের মেধা-শ্রম দিয়ে শতাধিক স্বপ্নবাজ শিশু-কিশোরকে প্রশিক্ষণ দিলেও কানাকড়িও নেননি। সামান্য যে টাকা কলেজ থেকে বেতন হিসেবে পান, সেটি থেকে ব্যয় করেন একাডেমি চালাতে। 

তবে পরিপূর্ণ ক্রিকেট একাডেমি বলতে যা বোঝায়, মুকুলের একাডেমি সেটি এখনো হয়নি। ধীরে ধীরে হয়তো বড় হবে, সেখানে বাড়বে ক্রিকেটীয় সুযোগ-সুবিধা। আপাতত দেউতি পুরোনো মাঠের পাশে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে শুরু হয়েছে মুকুলের একাডেমি। সরেজমিনে দেখা যায়, উঠতি বয়সের ১৫-২০ জন কিশোর-তরুণকে হাতে-কলমে শেখাচ্ছেন মুকুল। এমনই এক ক্রিকেটার আবদুল্লাহ আল-মাহমুদ আপন বলেছে, ‘আমি এ পর্যন্ত অনেক জায়গায় খেলেছি। ইন্টার স্কুল লিগ খেলছি। একদিন মোস্তাফিজ-মিরাজের মতো খেলোয়াড় হতে চাই।’ আর নিজের একাডেমি নিয়ে মুকুল বললেন, ‘এখানে যারা অনুশীলন করে, তাদের অনেকে প্রতিভাবান। গ্রামের ক্রিকেট অনুরাগী, প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের মাঝে আমার স্বপ্নটা ছড়িয়ে দিতে চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত