Ajker Patrika

বাংলাদেশকে টি-টোয়েন্টি ‘শিখিয়ে’ ভাষা হারিয়ে ফেলেছে আমিরাত

ক্রীড়া ডেস্ক    
সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে রুদ্ধশ্বাস জয়ের পর আমিরাতের উদযাপন। ছবি: ক্রিকইনফো
সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে রুদ্ধশ্বাস জয়ের পর আমিরাতের উদযাপন। ছবি: ক্রিকইনফো

জাকের আলী অনিকের হতাশাই বলে দিচ্ছিল, বাংলাদেশের যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেছে। কারণ, তাওহীদ হৃদয় ঠিকমতো থ্রো করতে পারেননি। জাকেরও তাই পারেননি রানআউট করতে। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় আম্পায়ার যখন নট আউট দিলেন, তখন আরব আমিরাতের ডাগআউটে শুরু উদযাপন।

আমিরাতের বাধভাঙা উচ্ছ্বাসের কারণ তাদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে এমন রুদ্ধশ্বাস জয়। শারজায় গত রাতে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দেওয়া ২০৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ১ বল হাতে রেখে ২ উইকেটে জেতে আমিরাত। ওভারপ্রতি ১০-এর ওপরে রান দরকার হলেও মুহাম্মদ ওয়াসিমের নেতৃত্বাধীন আমিরাত ঘাবড়ে যায়নি। অনেক হিসেব-নিকেশ করে ঠাণ্ডা মাথায় তারা হারিয়েছে বাংলাদেশকে। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ওয়াসিম বলেন, ‘আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। খুবই খুশি যে বাংলাদেশকে হারাতে পেরেছি। পারফরম্যান্স নিয়ে খুবই খুশি।’

‘ক্যাপ্টেন লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’-এর যথার্থ উদাহরণ ওয়াসিম। ২০৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৬১ বলে মুহাম্মদ জোহেবের সঙ্গে ১০৭ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়তে ওয়াসিম অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস যেখানে ৩২ বলে ৪০ রান করেছেন, আমিরাত অধিনায়ক করেছেন ৪২ বলে ৮২ রান। ৯ চার ও ৫ ছক্কা মেরেছেন। দুই অধিনায়কের ব্যাটিংয়েই ম্যাচের আসল পার্থক্য বোঝা গেছে।

দলের রুদ্ধশ্বাস জয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে ওয়াসিমের হাতে। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আমিরাত অধিনায়ক বলেন, ‘সবাইকে আশা দিচ্ছিলাম যে আমরা এই রান তাড়া করে জিততে পারি। কারণ, এখানের কন্ডিশন আমাদের জানা। আমরা রান তাড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছিলাম।’

ওয়াসিম গত রাতে ১৫তম ওভারের পঞ্চম বলে শরীফুল ইসলামের অফস্টাম্পের বাইরের স্লোয়ার খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন। উইকেটরক্ষক জাকের ক্যাচ ধরার পর শরীফুল শূন্যে উড়ে উদযাপন করেছেন। বড় শিকার ধরতে পেরে উল্লাস তখন পুরো বাংলাদেশ দলের। কারণ, হাতে ৭ উইকেট থাকলেও ৩১ বলে ৫৮ রানের সমীকরণে পা হড়কাতে তো পারে আমিরাত।

নিজের উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার আফসোসও ঝরেছে ওয়াসিমের কণ্ঠে। তবে তাদের আশা ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটি যে করেই হোক তারা জিতবে। শেষের দিকে ধ্রুব পরাশর, হায়দার আলীদের ছক্কা জিতিয়েছে আমিরাতকে। ওয়াসিম বলেন, ‘আমি আরও দীর্ঘ সময় খেলতে চেয়েছিলাম। তবে দুর্ভাগ্যবশত উইকেটটা উপহার দিয়ে এলাম। আমাদের শেষ অব্দি আশা ছিল। ধ্রুব একটা ছক্কা মারল। হায়দার একটা ছক্কা মারল। সৌভাগ্যবশত আমরা জিতলাম।’

বাংলাদেশ-আরব আমিরাত তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ এখন ১-১ সমতায়। তৃতীয় টি-টোয়েন্টি আগামীকাল শারজায় শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে রুদ্ধশ্বাস জয়ের পর এখন সিরিজ জয় নিয়ে আশাবাদী আমিরাত। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ওয়াসিম বলেন, ‘তৃতীয় ম্যাচে আমরা এই শক্তি নিয়ে যাচ্ছি। আশা করি ২-১ করতে পারব।’

বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘শনির দশা’ চলছে অনেক দিন ধরেই। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০২৫ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি—আইসিসির সবশেষ তিন সাদা বলের ইভেন্টে ভরাডুবি হয়েছে দলটির। কদিন আগে বাংলাদেশ ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট হেরেছিল। এবার তারা টি-টোয়েন্টি হারল আমিরাতের বিপক্ষে। মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মিতব্যয়ী বোলিং করলেও গতকাল তাঁর এমন বোলিং পায়নি বাংলাদেশ। কারণ, তিনি দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে আইপিএল খেলতে চলে গিয়েছেন। নাহিদ রানা, তানজিম হাসান সাকিব—দুই পেসারই ‘ফিফটি’ করেছেন। ২০৬ রানের মধ্যে আমিরাত তাঁদের থেকেই পেয়ে ১০৫ রান।

আরব আমিরাত ২ বছর আগে টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে। এই সংস্করণে আফগানদের তিনবার হারিয়েছে আমিরাত। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে সাত ম্যাচ আমিরাত জিতেছে। আর শারজায় দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি জয়ের পর আমিরাত অধিনায়ক ওয়াসিম তো হুংকার ছেড়েছেন বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে। বাংলাদেশকে হারাতে পারলে প্রথম সারির কোনো দলের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কীর্তি গড়বে আমিরাত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত