Ajker Patrika

ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের আলোচিত ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন শচীন

ক্রীড়া ডেস্ক    
বেন স্টোকস প্রথমে করমর্দন করতে চাইলেও রাজি হননি রবীন্দ্র জাদেজা। সেঞ্চুরির পর জাদেজা করমর্দন করেছেন স্টোকসের সঙ্গে। ছবি: ক্রিকইনফো
বেন স্টোকস প্রথমে করমর্দন করতে চাইলেও রাজি হননি রবীন্দ্র জাদেজা। সেঞ্চুরির পর জাদেজা করমর্দন করেছেন স্টোকসের সঙ্গে। ছবি: ক্রিকইনফো

ভারত-ইংল্যান্ড পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ যেন ব্লকবাস্টার মুভিকেও হার মানিয়েছে। এজবাস্টনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ছাড়া সব ম্যাচই রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে। ম্যাচের মোড় ঘুরেছে বারবার। দুই দলই সমানে সমানে লড়াই করেছে। দেড় মাসের এই অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার সিরিজে ঘটেছে আলোচিত ঘটনাও। সেটা নিয়ে এবার মুখ খুলেছেন শচীন টেন্ডুলকার।

সদ্য শেষ হওয়া অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফিতে ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকসের হ্যান্ডশেকের ঘটনা নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। ২৭ জুলাই সিরিজের চতুর্থ টেস্টের শেষ দিনের খেলা শেষ হতে যখন এক ঘণ্টার মতো বাকি, তখন রবীন্দ্র জাদেজা-ওয়াশিংটন সুন্দরের সঙ্গে করমর্দন করতে এগিয়ে আসেন স্টোকস। কিন্তু সুন্দর-জাদেজা তাতে রাজি হননি। ক্যামেরার লেন্স যখন তাক করা হয়েছিল গ্যালারিতে বসে থাকা ভারতীয় অধিনায়ক শুবমান গিলের দিকে, তাঁকে (গিল) অনেক অসন্তুষ্ট মনে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সুন্দর-জাদেজা সেঞ্চুরি করে ড্র মেনে নিয়েছিলেন।

ভারতীয় এক ওয়েবসাইটে ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ নিয়ে পর্যালোচনা করতে গিয়ে ম্যানচেস্টারে ঘটে যাওয়া আলোচিত ঘটনা নিয়ে কথা বলেছেন শচীন। ভারতের ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার বলেন, ‘সিরিজটা তখনো জমজমাট অবস্থায় ছিল। তাই কেন তারা সেসময় রাজি হবে (স্টোকসের সঙ্গে করমর্দন করা) এবং ইংল্যান্ডের বোলার-ফিল্ডারদের হাতে ম্যাচ ছেড়ে দেবে? ইংল্যান্ড যে হ্যারি ব্রুকের হাতে বল তুলে দিতে চেয়েছিল, এটা বেন স্টোকসের ইচ্ছেতেই হয়েছিল। ভারতের সমস্যা ছিল না এটা। আমার কাছে এটা ঠিক ছিল। তারা (সুন্দর-জাদেজা) ড্রয়ের জন্য খেলেছিল। তাদের সেঞ্চুরির জন্য নয়। যদি তারা আউট হওয়ার পর ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নামত, আমরা হারতেও পারতাম।’

স্টোকসের প্রস্তাব দেওয়ার সময় জাদেজা ও সুন্দরের স্কোর ছিল ৮৯ ও ৮০ রান। দুজনেই যখন সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ড্র মেনে নিয়েছিলেন, দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের স্কোর ৪ উইকেটে ৪২৫ রান। পঞ্চম উইকেটে জাদেজা-সুন্দর ৩৩৪ বলে ২০৩ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটি গড়েছিলেন। ম্যাচ শেষে ১০১ ও ১০৭ রানে অপরাজিত ছিলেন সুন্দর ও জাদেজা। ম্যানচেস্টারে জাদেজা-সুন্দরের বীরত্বপূর্ণ ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করে শচীন বলেন,‘ওয়াশিংটন-জাদেজা সেঞ্চুরি করল। তারা তো ড্রয়ের জন্য খেলছিল। ইংল্যান্ড যখন চাপে রেখেছে, তারা (সুন্দর-জাদেজা) তখন লড়াই করেছে। সবকিছু ঠিকঠাক সামলে দারুণ ব্যাটিং করেছে।’

দিনের যখন এক ঘণ্টার মতো খেলা বাকি, তখনই কেন হ্যান্ডশেক করতে চাইলেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে স্টোকস জানিয়েছিলেন, ম্যাচের ফল (ড্র) যখন সবারই জানা তখন খেলে লাভ কী! অল্প সময়ের জন্য মূল বোলারদের নিয়ে কোনোরকম ঝুঁকি নিতে চাননি বলে স্টোকস তখন ড্র মানতে চেয়েছিলেন। দিনের শেষ পাঁচ ওভার ইংল্যান্ডের দুই খন্ডকালীন স্পিনার জো রুট ও হ্যারি ব্রুক ভাগাভাগি করে বোলিং করেছিলেন। ভারত সেই টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করেছিল ১৪৩ ওভার। এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ক্রিস ওকসকে স্কুপ করতে গিয়ে পায়ে মারাত্মক আঘাত পেয়েছিলেন ঋষভ পন্ত। পরে চোট নিয়ে ব্যাটিং করলেও উইকেটরক্ষকের কাজ করেননি। উইকেটরক্ষকের গ্লাভস তখন পরেছিলেন ধ্রুব জুরেল। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য ব্যাটিংয়েরই প্রয়োজন হয়নি পন্তের।

পন্তের মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন ওকস। ওভালে সিরিজের পঞ্চম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে কাঁধে চোট পেয়ে ওকস ছিটকে গিয়েছিলেন। প্রথম ইনিংসে তিনি নামেননি ব্যাটিংয়ে। এরপর ৩৭৪ রানের লক্ষ্যে নেমে ইংল্যান্ডের স্কোর যখন ৯ উইকেটে ৩৫৭ রান, তখন ভাঙা হাত নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন। ওভালের গ্যালারিতে সেই মুহূর্তে শোনা গিয়েছিল মুহুর্মুহু করতালির শব্দ। ১৬ মিনিট ব্যাটিং করলেও কোনো বল মোকাবিলা করেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা ইংল্যান্ড ৬ রানে হেরে যায়। ভারত-ইংল্যান্ড পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শেষ হয় ২-২ ব্যবধানে।

ইংল্যান্ড-ভারত টেস্ট সিরিজে আলোচনা হয়েছে বাংলাদেশের আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতকে নিয়েও। এজবাস্টন দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনের এক ঘটনায় সৈকতের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছিল বেন স্টোকসের। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের অষ্টম ওভারের চতুর্থ বলে যশস্বী জয়সওয়ালের বিপক্ষে জশ টাঙ এলবিডব্লিউর আবেদন করলে বাংলাদেশি আম্পায়ার সৈকত দ্রুতই আঙুল তুলে দিয়েছিলেন। জয়সওয়াল তাঁর সঙ্গী লোকেশ রাহুলের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলাপ-আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে জয়সওয়াল রিভিউ নিলে স্টোকস তেড়ে গিয়েছিলেন সৈকতের দিকে। ইংল্যান্ড অধিনায়ক বোঝাতে চেয়েছিলেন রিভিউর সময় শেষ হওয়ার পরও কেন জয়সওয়ালের আবেদন সৈকত গ্রহণ করেছিলেন। তবে এই সিরিজে তাঁর (সৈকত) আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশংসামূলক পোস্ট করেছিলেন হার্শা ভোগলে।

সিরিজ সর্বোচ্চ ৭৫৪ রান করে ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছেন ভারতীয় টেস্ট অধিনায়ক শুবমান গিল। চার ফিফটির চারটিকেই সেঞ্চুরিতে পূর্ণ করেছেন তিনি। হ্যারি ব্রুকও পেয়েছেন সিরিজসেরার পুরস্কার। অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফিতে তিনি ৫৩.৪৪ গড় ও ৮১.৩৮ স্ট্রাইকরেটে ৪৮১ রান করেছেন ব্রুক। দুটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটি করেছেন তিনি। গিলের পর সিরিজে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৩৭ রান করেছেন রুট। তিন সেঞ্চুরি ও এক ফিফটি এসেছে রুটের ব্যাট থেকে। গিল, রুটসহ ভারত-ইংল্যান্ড পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ৫০০-এর বেশি রান করেছেন চার ব্যাটার। লোকেশ রাহুল ও রবীন্দ্র জাদেজা করেছেন ৫৩২ ও ৫১৬ রান।

অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফিতে সিরিজে সর্বোচ্চ ২৩ উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজ। ওভালে ১৯০ রানে ৯ উইকেট নিয়ে জেতেন ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার। দ্বিতীয় ইনিংসে পেয়েছেন ৫ উইকেট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯ উইকেট পেয়েছেন জশ টাঙ। এই তালিকায় তিনে থাকা বেন স্টোকস সিরিজে নিয়েছেন ১৭ উইকেট। ১৪টি করে উইকেট নিয়েছেন জসপ্রীত বুমরা ও প্রসিধ কৃষ্ণা। বুমরার পাঁচ ইনিংসের মধ্যে দু্ইবার ইনিংসে ৫ উইকেট রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত