Ajker Patrika

বাংলাদেশের এমন ক্রিকেটে কীভাবে বাড়বে ব্র্যান্ড ভ্যালু

রানা আব্বাস, সিলেট থেকে
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১: ০৪
ব্যাটারদের ব্যর্থতায় হেরেছে বাংলাদেশ। ছবি: বিসিবি
ব্যাটারদের ব্যর্থতায় হেরেছে বাংলাদেশ। ছবি: বিসিবি

সংবাদ সম্মেলনের শুরুর দিকেই নাজমুল হোসেন শান্ত স্বীকার করে নিলেন, তাঁর আউটের চরম মূল্য দিতে হয়েছে দলকে, ‘আমার আউটটা আমাদের পুরো ব্যাটিং নষ্ট করে ফেলেছে।’ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিলেট টেস্টে দুই ইনিংসেই বাংলাদেশের ব্যাটিং বলার মতো হয়নি। বোলারদের জোর চেষ্টা তাই বৃথাই গেছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ হেরেছিল, সিলেটে সেই হারও বাজে ব্যাটিংয়ের খেসারত দিয়ে।

এবার বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্ট সিরিজে একটা প্রশ্ন ঘুরেফিরে এসেছে, দেশের ক্রিকেটের ব্র্যান্ড ভ্যালু কি কমে যাচ্ছে? সিলেট টেস্টে টিকিটের দাম ছিল সর্বনিম্ন ৫০ টাকা। দেশের অধিকাংশ পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও টেস্টে টিকিটের দামে সেটির প্রভাব নেই। তবু সিলেটের দর্শক খুব একটা মাঠমুখী হননি। খাঁ খাঁ করতে থাকা গ্যালারিতে চার দিনে ৪০০ দর্শকও হয়েছে কি না সন্দেহ। টেস্টে অবশ্য বাংলাদেশে দর্শক এমনিতেই কম হয়। তবে যে রকম শূন্য গ্যালারি এবার দেখা গেল, এতটা কম নির্জনতাই দেখা গেছে গত দুই দশকে। ৫০ টাকা কেন, এবার যেন বিনা মূল্যে টিকিট দিলেও স্বাগতিক দর্শক বাংলাদেশের খেলা দেখতে আসতেন না!

খেলা যদি না টানে, খেলোয়াড়দের উপস্থিতি, দলের পারফরম্যান্স যদি আকর্ষণ তৈরি না করে, দর্শকেরা মাঠে আসবেন কেন? এই সিরিজের ব্র্যান্ড ভ্যালু এতটাই নিম্নমুখী, ফারুক আহমেদের নেতৃত্বাধীন ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষে সিরিজের সম্প্রচারকারী টেলিভিশন খুঁজে পেতে ঘাম ছুটে গেছে। অতঃপর বাংলাদেশ টেলিভিশনকে (বিটিভি) দিয়ে কোনোভাবে উদ্ধার হয়েছে বিসিবি।

ক্রিকেট নামের পণ্যটা বাংলাদেশের মতো ক্রিকেটপাগল দেশে যেভাবে বাজারজাতকরণ সহজ হয়েছে এত দিনে, সেটিই এখন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স যদি নিম্নমুখী হয়, মানুষের কাছে সেটির চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই কমবে। যদিও বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ক্রিকেটের বাজার নিয়ে ভাবতে রাজি নন। তাঁর পরিষ্কার কথা, ‘আমাদের কাজ হলো পারফর্ম করা। খেলা (কোনো টিভি) দেখাবে কি দেখাবে না, এটা নিয়ে চিন্তা করিনি। আমাদের কাজ হলো ভালো খেলা, যেটা আমরা পারছি না।’

কিন্তু বিষয়টি উপেক্ষা করার মতো নয়। শান্তর সামনে বর্তমান প্রেক্ষাপট আরও পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হলো। কিছুদিন আগেও ক্রিকেটাররা এত ‘বড় বিক্রয়যোগ্য’ তারকা ছিলেন, দেশে টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন বাজারে ছিল সাকিব-তামিমদের দাপট। এখানে চিত্রটা বিপরীত। বাজারে ক্রিকেটারদের চাহিদা নিয়ে শান্ত স্বীকার করে নিচ্ছেন, ভালো না করতে পারলে তাঁদের ব্র্যান্ড ভ্যালু কমবে, ‘পারফরম্যান্স করেই ভালোটা আসলে তৈরি করতে হবে। এখন পারফরম্যান্স নেই দেখে ভ্যালু একটু কম। নিচের দিকে যাচ্ছে। দলের পারফরম্যান্স যখন আবার ভালো হবে, এটা তখন আবার ওপরের দিকে যাবে।’

ব্যাটারদের ব্যর্থতায় হেরেছে বাংলাদেশ। ছবি: বিসিবি
ব্যাটারদের ব্যর্থতায় হেরেছে বাংলাদেশ। ছবি: বিসিবি

কিন্তু বেতন-ভাতা, ম্যাচ ফিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তো কমছে না ক্রিকেটারদের; বরং দিন দিন বাড়ছে। তবু ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের গ্রাফ কেন উন্নতির দিকে যাচ্ছে না? শান্তর উল্টো প্রশ্ন, ‘বেতন বাড়াতে মনে হয় আপনারা খুশি না?’ এরপর নিজেই যোগ করলেন, ‘আমার মনে হয়, অনেক দিন পর ম্যাচ ফি বেড়েছে। অবশ্যই সমর্থন করার মতো ব্যাপার। ভালো ক্রিকেট খেলা অনেক জরুরি। দায়িত্ব নিয়ে খেলা জরুরি। আমাদের অবশ্যই সেই দায়িত্বটা নিতে হবে যে আমরা ভালো করছি না। এখন কীভাবে ভালো করতে হবে, সবাই মিলে আলাপ করে সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েই করতে হবে। সারা দিন কিন্তু মাঠে সবাই কষ্ট করছে। মাঠে বাস্তবায়নের দিকে অনেক ঘাটতি আছে। যার যা ভূমিকা আছে, তাকে সেভাবে দায়িত্ব নিতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত