Ajker Patrika

অথচ তাসকিনের গল্পটা হতে পারত আরও রঙিন

আরমান হোসেন
আপডেট : ২৮ মে ২০২১, ১৬: ৪০
Thumbnail image

ঢাকা: উইকেট পেয়েই প্রজাপতির মতো ডানা মেলে দুরন্ত গতিতে ছুটে সতীর্থদের সঙ্গে উদ্‌যাপন আর জোরে গর্জন ছুড়ে মাঠ কাঁপিয়ে দেওয়া—সেই দুর্দান্ত তাসকিন আহমেদের দেখাই মিলল আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কান ওপেনার দানুশকা গুনাতিলাকাকে দিয়ে শুরু। তাসকিন পরে উইকেট পেয়েছেন আরও দুটি। হতে পারত আরও একটি! তবু যা হয়েছে মন্দ নয়—৭ ওভারে ৩৮ রানে ৩ উইকেট।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের ব্যর্থতা যেন এই ম্যাচে সুদে–আসলে পুষিয়ে নিতে চাইছেন তাসকিন। গুনাতিলাকা আর পাথুম নিশাঙ্কাকে আউট করে ওয়ানডেতে উইকেটের ফিফটি পূর্ণ করেছেন বাংলাদেশি পেসার। সাত বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫০তম উইকেট পেতে তাঁর লেগে গেল ৩৮ ইনিংস। এই অর্জনে একটা তৃপ্তির আভা খেলে গেলেও অলক্ষ্যে একটা আফসোসও হয়তো বুক চিড়ে বেরিয়ে আসবে তাসকিন আহমেদের। পরিসংখ্যানটা তাঁর আরও উজ্জ্বল হতো, যদি চোট তাঁর ক্যারিয়ার থেকে অনেকটা সময় কেড়ে না নিত!

২০১৪ সালের জুনে ভারতের বিপক্ষে অভিষেকেই ৫ উইকেট নিয়ে শুরুটা কি দুর্দান্তভাবেই না করেছিলেন! অভিষেকের পর তিন ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০১৫ বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন তাসকিন । বিশ্বকাপেও নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে নিয়েছিলেন ৯ উইকেট, যেটি দলের বোলারদের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ।

তাসকিনের পর ওয়ানডে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ওয়ানডেতে ৫০ উইকেট নিতে বাঁহাতি পেসার সময় নিয়েছেন তিন বছরেরও কম। ২৭ ইনিংসেই ৫০ উইকেট নেওয়া মোস্তাফিজের উইকেট এখন ১২৪টি। ওয়ানডেতে দ্রুত ৫০ উইকেট নিতে বাংলাদেশের তিন অভিজ্ঞ পেসার মাশরাফি বিন মুর্তজা, রুবেল হোসেন ও শফিউল ইসলামের চেয়ে অবশ্য এগিয়েই আছেন তাসকিন। ৫০ উইকেট নিতে রুবেলের লেগেছিল ৪১ ইনিংস, মাশরাফির ৪২ ইনিংস আর শফিউলের ৪৩ ইনিংস। দ্রুত ৫০ উইকেট পেতে পেসারদের মধ্যে একমাত্র মোস্তাফিজই তাসকিনের চেয়ে এগিয়ে আছেন। শফিউল–রুবেল–মাশরাফির চেয়ে দ্রুত ৫০ উইকেট নিলেও সময় লেগেছে সাত বছর। লম্বা সময় লেগে যাওয়ার পেছনের অন্যতম বড় কারণ, জাতীয় দলে নিয়মিত হতে না পারা।

ফর্মের কারণে তাসকিন দলের বাইরে ছিলেন—এমন ঘটনা কমই। তাঁর মতো গতিময় একজন পেসারকে সব সময়ই দল চেয়েছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। তবু কেন তাসকিন পারেননি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত হতে? চোট! সাত বছরের ক্যারিয়ারে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের চেয়ে তাঁর বড় প্রতিপক্ষ যেন চোট। এই অদৃশ্য শত্রুটা বড় ভুগিয়েছে তাসকিনকে।

২০১৮ সালটা প্রায় বসে কাটিয়েছেন চোটে পড়ে। ২০১৯ সালের বিপিএল দিয়ে দুর্দান্তভাবে ফিরলেও টুর্নামেন্টের একেবারে শেষ দিকে, নিউজিল্যান্ড সফরের আগমুহূর্তে চোটে পড়েছেন। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে পুরোপুরি ফিট না হতে পারায় নির্বাচকেরা তাঁকে আর দলেই রাখলেন না। যদিও বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে আয়ারল্যান্ড সফরে তিনি গিয়েছিলেন। চোট আর ফর্ম ২০১৮, ২০১৯ আর ২০২০ সালে একটি ওয়ানডেও খেলতে দেয়নি তাঁকে। ক্যারিয়ার থেকে এভাবে তিন–তিনটি বছর হারিয়ে গেলে কীভাবে উইকেটের সংখ্যা বাড়িয়ে নেবেন তাসকিন!

অবশ্য আরেকটি ঘটনাও বিশেষ দাগ কেটেছে তাসকিনের ক্যারিয়ারে। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে নিষিদ্ধ হলেন অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের দায়ে। বোলিং অ্যাকশন শুধরে মাঠে ফিরতে লেগে গেল ছয় মাস। শুধু সময়ের বিরতিই নয়, এই ঘটনাটা তাঁকে মানসিকভাবেও দিয়েছিল ভীষণ ধাক্কা। আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতেও অনেকটা সময় লেগে গেছে তাসকিনের।

গত জানুয়ারিতে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে ফিরেছেন তাসকিন। লম্বা সময় পর ফিরে ওয়ানডেতে নিজের ছায়া হয়েই ছিলেন সর্বশেষ ৬ ম্যাচে। অবশেষে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে। গত মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দারুণ করেছিলেন। এবার রঙিন পোশাকে রঙিন পারফরম্যান্স দেখা গেল তাসকিনের।

তাসকিনের চ্যালেঞ্জ, এই ছন্দটার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। কিন্তু ভয় তাঁর একটিই—অদৃশ্য শত্রুটা যে কখন আবার হানা দেয়! এই শত্রুটাই তো তাঁকে অনেক ভুগিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত