Ajker Patrika

পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক সূত্র মানে না মানুষের শুক্রাণু! 

আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ১৪: ০৩
পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক সূত্র মানে না মানুষের শুক্রাণু! 

মানুষের শুক্রাণু লেজের সাহায্যে ঘন তরল পদার্থের মধ্য দিয়ে পথ করে নিয়ে এগিয়ে চলে। কিন্তু এই এগিয়ে চলার পথে শুক্রাণু পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম মৌলিক সূত্র, যা নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র নামে পরিচিত, সেই সূত্রকেই অমান্য করে। সম্প্রতি প্রখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী পিআরএক্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

জাপানের কিয়োটো ইউনিভার্সিটির গণিতজ্ঞ কেন্তা ইশিমতো ও তাঁর সহকর্মীরা গবেষণা চালনা যে, শুক্রাণুসহ একই ধরনের চলৎশক্তিসম্পন্ন বস্তু বা অণুজীবগুলো কীভাবে মানুষের শরীরের ঘন তরলের ভেতর দিয়ে সাঁতার কাটে। বিশেষ করে, এসব ঘন তরলে সাঁতার কাটার ক্ষেত্রে এসব তরলের ঘনত্ব শুক্রাণুর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারত। অন্তত পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব তাই বলে। সে বিষয়টি জানতেই বিস্তর গবেষণা করেন তাঁরা।

১৬৮৬ সালের দিকে যখন নিউটন গতির সূত্রগুলো নিয়ে কাজ করছিলেন, তখন বাহ্যিক বস্তুর ক্ষেত্রে সেই সূত্রগুলো বিবেচনা করলেও অণুজীবের ক্ষেত্রে আঠালো কোনো তরল পদার্থের মধ্য দিয়ে চলাচলের ক্ষেত্রে এসব তত্ত্ব কখনো বিবেচিত হতে পারে সেটি নিশ্চয়ই ভাবেননি। কিন্তু নিউটন না ভাবলেও তাঁর প্রায় ৩৫০ বছর পর এসে কিয়োটো ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভেবেছেন। 

নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্রটি হলো—‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।’ এই তত্ত্ব প্রকৃতির একটি নির্দিষ্ট প্রতিসাম্যকে নির্দেশ করে, যেখানে দুটি পরস্পরবিরোধী শক্তি একে অপরের বিরুদ্ধে কাজ করে। কিন্তু প্রকৃতির সর্বত্রই বোধ হয় এই তত্ত্ব সমানভাবে কাজ করে না। বিশেষ করে তরলে পদার্থের মধ্য দিয়ে চলাচলের ক্ষেত্রে এই সূত্র পুরোপুরি কাজ করে না। 
 
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের কোষগুলো নিজের শক্তি নিজেই উৎপাদন করে। মানুষের শুক্রাণুর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ঘন আঠালো তরলের ভেতর দিয়ে চলাফেরার সময় শুক্রাণুও নিজের অভ্যন্তরীণ শক্তির সাহায্যে এগিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ায় শুক্রাণু একপ্রকার বল প্রয়োগ করেই এগিয়ে যায়। কিন্তু বিপরীতে সমান বল শুক্রাণুকে বাধা দেয় না। ফলে এ ক্ষেত্রে নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্রও প্রযোজ্য হয় না। 

ইশিমতো ও তাঁর সহকর্মীরা মানুষের শুক্রাণুর পরীক্ষামূলক তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন এবং সবুজ শৈবাল ক্ল্যামিডোমোনাসের চলৎশক্তির একটি মডেলও তৈরি করেছেন। এ দুটি কোষই বেশ পাতলা ও আঁকাবাঁকা ফ্ল্যাজেলা বা লেজ ব্যবহার করে সাঁতার কাটে, যা কোষের শরীর থেকে বেরিয়ে আসে এবং কোষকে সামনের দিকে চালিত করার জন্য আকৃতি পরিবর্তন করে। 

সাধারণত উচ্চ ঘনত্বের তরলগুলো একটি ফ্ল্যাজেলার শক্তিকে নষ্ট করে শুক্রাণুকে নড়াচড়া করতে বাধা দিতে পারে। তবু যেভাবেই হোক শুক্রাণুর স্থিতিস্থাপক লেজ তার চারপাশে কোনো প্রতিক্রিয়া উসকে না দিয়ে শুক্রাণুকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, শুক্রাণুর লেজের স্থিতিস্থাপকতা একেবারেই অনন্য। এর ফলে সেটি আশপাশের তরলে খুব সামান্য শক্তি ব্যয় করেই শুক্রাণুকে এগিয়ে নিতে পারে। 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই আবিষ্কার সক্রিয় অণুজীবের মতো বৈশিষ্ট্য দেখায় এমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রোবটের নকশা তৈরিতে বেশ অবদান রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত