Ajker Patrika

৪৬ কোটি বছর আগের মাছের ‘দেহবর্ম’ থেকেই এসেছে মানুষের দাঁত: গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক
স্কেট মাছের সামনের অংশের সিটি স্ক্যানে দেখা যাচ্ছে এর চামড়ায় থাকা দাঁতের মতো শক্ত আঁশ (কমলা রঙে)। ছবি: ইয়ারা হারিদি
স্কেট মাছের সামনের অংশের সিটি স্ক্যানে দেখা যাচ্ছে এর চামড়ায় থাকা দাঁতের মতো শক্ত আঁশ (কমলা রঙে)। ছবি: ইয়ারা হারিদি

মানুষের সংবেদনশীল দাঁতের উৎপত্তি হয়েছিল প্রাচীন বিলুপ্ত মাছের ‘দেহবর্ম’ বা বর্মাকৃতির আবরণ থেকে। প্রায় ৪৬ কোটি ৫০ লাখ বছর আগের সেই মাছদের শরীরে থাকা একধরনের সংবেদনশীল টিস্যুই পরবর্তীতে বিবর্তিত হয়ে দাঁতে রূপ নেয়। নতুন এক গবেষণায় এমনটাই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়ন্টোলজিস্ট এবং বিবর্তন জীববিজ্ঞানী ইয়ারা হারিডি বলেন, ‘এটি প্রমাণ করে যে দাঁত শুধু মুখেই নয়, শরীরের বাইরের অংশেও সংবেদনশীল ভূমিকা পালন করতে পারে।’

এই গবেষণা বুধবার (২১ মে) প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে।

প্রাথমিকভাবে গবেষকেরা জীবাশ্মের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রথম মেরুদণ্ডী প্রজাতি শনাক্ত করার চেষ্টা করছিলেন। এই লক্ষ্যে তাঁরা ক্যাম্ব্রিয়ান ও অর্ডোভিসিয়ান যুগের (৫৪ কোটি ১০ লাখ থেকে ৪৪ কোটি ৩০ লাখ বছর আগে) জীবাশ্ম সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করেন। সাধারণত মেরুদণ্ডী প্রাণীর শরীরে ডেন্টিন নামক খনিজ পদার্থের উপস্থিতিই তাদের শনাক্ত করার মূল চিহ্ন। এই ডেন্টিন মানুষের দাঁতের এনামেলের নিচে থাকে, আর প্রাচীন মাছের বর্মে তা ছিল বাইরের অংশে ছোট ছোট উঁচুনিচু গঠন হিসেবে।

যখন উচ্চ-রেজল্যুশনের সিটি স্ক্যান ব্যবহার করে গবেষকেরা চোয়ালবিহীন আদিম মাছ Anatolepis heintzi বিশ্লেষণ করছিলেন, তখন তাঁরা সেখানে ডেন্টিনে ভরা ছোট ছোট ছিদ্রের মতো গঠন দেখতে পান। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তাঁরা A. heintzi-কে প্রাচীন বিভিন্ন জীবাশ্ম এবং আধুনিক সামুদ্রিক প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করেন।

কিন্তু আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যেগুলো ডেন্টিনে আবৃত ছিদ্র বলে মনে হচ্ছিল, সেগুলো আসলে অনেক বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ আধুনিক কাঁকড়ার খোলসের সংবেদনশীল অঙ্গগুলোর সঙ্গে। এর মানে, A. heintzi আদতে কোনো মেরুদণ্ডী প্রাণী ছিল না, বরং এটি ছিল একটি প্রাচীন অমেরুদণ্ডী আর্থ্রোপড।

এই মাছের শ্রেণিবিন্যাস নিয়ে বিভ্রান্তি দূর হওয়ার পর গবেষকেরা একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেন: প্রাচীন মেরুদণ্ডী প্রাণী যেমন: মাছ এবং প্রাচীন অমেরুদণ্ডী আর্থ্রোপড—দুই দলই আশপাশের পরিবেশ বুঝতে একধরনের খনিজ টিস্যু তৈরি করত। পরে সেই খনিজ টিস্যুই বিবর্তনের ধারায় রূপ নেয় ডেন্টিনে—আর তা থেকেই সৃষ্টি হয় আমাদের সংবেদনশীল দাঁত।

গবেষণাটি এই ধারণাকে জোরালোভাবে সমর্থন করে যে, কমপক্ষে ৪৬ কোটি বছর আগে সংবেদনশীল গঠন প্রথম বিবর্তিত হয়েছিল এক্সোস্কেলেটন বা বাহ্যিক খোলসের ওপর। পরে বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রাণীরা একই ‘জেনেটিক টুলকিট’ ব্যবহার করে দাঁতের মতো কাঠামো তৈরি করতে শুরু করে।

গবেষকেরা তাঁদের প্রতিবেদনে লেখেন, ‘বিবর্তনের এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মুখের দাঁতের অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা আর রহস্য নয়; বরং এটি প্রাচীন মেরুদণ্ডী প্রাণীদের সংবেদনশীল দেহবর্ম থেকে উদ্ভূত একটি বিবর্তনীয় উত্তরাধিকার।’

তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শেখ হাসিনা যাঁকে ঢাকায় ‘হত্যা করলেন’, তিনি ময়মনসিংহে জীবিত!

চরফ্যাশন থেকে গেটিসবার্গ কলেজ

জীবিত ভাইকে জুলাই আন্দোলনে নিহত দেখিয়ে মামলায় সাক্ষীও দুই ভাই, নেপথ্যে যা জানা গেল

নগদে স্ত্রীর চাকরি, স্বার্থের সংঘাতে জড়ালেন নাহিদের সাবেক পিএ আতিক মুর্শেদ

যুক্তরাষ্ট্রে সি চিন পিংয়ের মেয়েকে বহিষ্কারের দাবি, হঠাৎ কেন এই বিতর্ক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত