Ajker Patrika

পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক উদ্ভাবন করলেন জাপানের বিজ্ঞানীরা, সমুদ্রের পানিতে মিশে যাবে ঘণ্টাখানেকেই

অনলাইন ডেস্ক
এই প্লাস্টিক সমুদ্রের পানিতে মিশে গেলেও কোনো ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক বা ন্যানো প্লাস্টিক কণার সৃষ্টি হয় না। ছবি: মানামি ইয়ামাডা
এই প্লাস্টিক সমুদ্রের পানিতে মিশে গেলেও কোনো ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক বা ন্যানো প্লাস্টিক কণার সৃষ্টি হয় না। ছবি: মানামি ইয়ামাডা

আধুনিক জীবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার এড়িয়ে চলা প্রায় অসম্ভব। তবে এই বহুল ব্যবহৃত উপাদানই আজ পরিবেশের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এই প্লাস্টিক জমে থাকছে নদী-নালা, সাগর ও মাটির গভীরে, যা জলজ প্রাণী থেকে শুরু করে মানবস্বাস্থ্যের ওপর ফেলছে মারাত্মক প্রভাব। বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা প্লাস্টিক দূষণের টেকসই সমাধান খুঁজতে গবেষণায় ব্যস্ত। সেই প্রচেষ্টারই এক আশাব্যঞ্জক সাফল্য এসেছে জাপান থেকে—যেখানে একদল বিজ্ঞানী তৈরি করেছেন এমন এক প্লাস্টিক, যা সাগরের পানিতে পড়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুরোপুরি মিশে যাবে, কোনো ক্ষতিকর অবশিষ্টাংশ না রেখে।

এ নতুন ধরনের প্লাস্টিক তৈরি করেছেন জাপানের রিকেন সেন্টার ফর ইমারজেন্ট ম্যাটার সায়েন্স এবং টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। এটি প্রচলিত বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকের চেয়েও পরিবেশবান্ধব। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এই প্লাস্টিক নোনা পানিতে মিশে গেলেও কোনো ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক বা ন্যানো প্লাস্টিক কণার সৃষ্টি হয় না, যা সাগর ও পরিবেশের জন্য বড় হুমকি।

গবেষক দল জানিয়েছে, নতুন এই প্লাস্টিকের শক্তি প্রচলিত পেট্রোলিয়ামভিত্তিক প্লাস্টিকের সমান হলেও নোনাপানিতে এটি গলে যায় এবং এর মূল উপাদানে ভেঙে পড়ে। এরপর প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান ব্যাকটেরিয়া সেই উপাদানগুলোও ভেঙে ফেলে, ফলে কোনো ক্ষতিকর অংশ বা কণা পরিবেশে রয়ে যায় না।

টোকিওর এক পরীক্ষাগারে গবেষকেরা দেখিয়েছেন, স্বচ্ছ প্লাস্টিকের একটি টুকরো লবণপানিতে রাখলে তা এক ঘণ্টার মধ্যেই পুরোপুরি গলে গেছে। গবেষকেরা আরও বলেন, মাটিতেও লবণ থাকে বিধায় মাটির নিচে দুই ইঞ্চি গভীরে এই প্লাস্টিক রাখা হলে সেটি ২০০ ঘণ্টার মধ্যে পুরোপুরি গলে যাবে।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই প্লাস্টিক মানবদেহের জন্য নিরাপদ, অদাহ্য (অগ্নিনিরোধক), এবং এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত করে না। উপযুক্তভাবে প্রলেপ দিলে এটি প্রচলিত যেকোনো প্লাস্টিক পণ্যের মতোই কাজ করতে পারে। তবে এখনো বাণিজ্যিক উৎপাদনের উপযোগী নয়। গবেষক দল এখন সেরা প্রলেপ (কোটিং) পদ্ধতি উদ্ভাবনে কাজ করছে।

গবেষণা প্রকল্পের প্রধান তাকুজো আইডা বলেন, এই উদ্ভাবনে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে প্যাকেজিং কোম্পানিগুলো আগ্রহ দেখিয়েছে। তিনি বলেন, আমি এমন এক পৃথিবী চাই, যেখানে ক্ষতিকর ও দূষণকারী পদার্থ থাকবে না।

এই উদ্ভাবন সফল হলে প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ে এক বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত