Ajker Patrika

যে মৌমাছি ৭ দিন পানিতে ডুবে থাকলেও মরে না

আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ২১: ৩৯
যে মৌমাছি ৭ দিন পানিতে ডুবে থাকলেও মরে না

গ্রাম বা শহর দুই পরিবেশেই সাধারণত মৌমাছিরা নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারে। তবে গবেষকেরা মৌমাছির একটি প্রজাতি খুঁজে পেয়েছেন, যা পানিতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত ডুবে থাকতে পারে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তর আমেরিকার পূর্বাঞ্চলে সাধারণ ইস্টার্ন বাম্বলবি প্রজাতির মৌমাছি দেখা যায়। এই প্রজাতির রানি মৌমাছিগুলো শীতনিদ্রায় থাকার সময় প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকতে পারে।

এই ইস্টার্ন বাম্বলবি প্রজাতির রানি শীতনিদ্রায় যাওয়ার জন্য মাটির নিচে গর্ত করে। গবেষকেরা বলেন, রানির এই ক্ষমতা তাকে বন্যা থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।

আবার বাম্বলবি বলতে Apidae পরিবারের মধ্যে Bombus গণের অন্তর্গত পোকামাকড়ের একটি দলকে বোঝায়। এটি একক কোনো প্রজাতি নয়, বরং বিভিন্ন প্রজাতির দল। এই দলে বিশ্বব্যাপী ২৫০টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। অন্যান্য প্রজাতির বাম্বলবিও একই ক্ষমতা রয়েছে কি না তা-ও গবেষক দলটি জানার চেষ্টা করছেন।

কানাডার ইউনিভার্সিটি অব গেল্ফের অধ্যাপক ড. সাবরিনা রোন্ডেউ বলেন, বর্তমানে বাম্বলবি প্রজাতির মৌমাছি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। তবে ইস্টার্ন বাম্বলবির ক্ষেত্রে এমনটি হয়নি। অন্য প্রজাতির তুলনায় বেশি বাঁচার একটি কারণ হতে পারে, এসব প্রজাতির রানিদের পানির মধ্যেও বেঁচে থাকার ক্ষমতা।

গবেষণাগারে একটি ভুলের ‘কল্যাণে’ মৌমাছির মধ্যে এই ক্ষমতা দেখতে পান রোন্ডেউ ও তাঁর সহকর্মী অধ্যাপক নাইজেল রেইন। যে পাত্রে রানি মৌমাছিগুলো শীতনিদ্রায় ছিল, সেই পাত্রে পানি ঢুকে পড়ে। কিন্তু এরপরও রানি মৌমাছিগুলো মারা যায়নি।

এই ঘটনা দেখে রোন্ডেউদের মনে কৌতূহলের উদ্রেক হয়। তাই পরীক্ষাগারে একই অবস্থা বারবার তৈরি করে বিষয়টি নিশ্চিত হন গবেষকেরা।

বায়োলজি লেটার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা বলেন, শীতনিদ্রায় থাকা ও অন্য সঙ্গীর সঙ্গে শারীরিক মিলন করেনি, এমন ইস্টার্ন বাম্বলবি প্রজাতির ১৪৩টি রানি মৌমাছির ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। এদের প্রত্যেককে আলাদা প্লাস্টিকের টিউবে রাখা হয়। এসব টিউবে ভেজা মাটি রাখা হয়। এরপরে টিউবগুলো ছিদ্রযুক্ত ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করা হয়। এক সপ্তাহের জন্য একটি অন্ধকার ঠান্ডা ঘরে সেগুলো রাখা হয়। 

এই পরীক্ষায় দেখা যায়, এক সপ্তাহ পরেও মৌমাছিগুলো জীবিত ছিল। তুলনা করতে ১৭টি টিউব আলাদা করে রাখেন বিজ্ঞানীরা। এদের স্বাভাবিকভাবে টিউবে থাকতে দেওয়া হয়। বাকি ১২৬টি মৌমাছির টিউবে ঠান্ডা পানি ঢালা হয়। এর মধ্যে অর্ধেক রানি মৌমাছিকে পানির ওপর ভেসে থাকার সুযোগ দেওয়া হয় আর বাকি অর্ধেককে প্লাঞ্জার (ড্রেন ও পাইপ পরিষ্কারের জন্য এক ধরনের টুল) দিয়ে টিউবের নিচে পানির মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়। 

টিউবগুলোর এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত পানি ভরে আট ঘণ্টা, আর এক-তৃতীয়াংশ ২৪ ঘণ্টা ও বাকি এক-তৃতীয়াংশ পানি ভরে সাত দিনের জন্য রেখে দেওয়া হয়। এসব অবস্থা বিভিন্ন মাত্রার বন্যা পরিস্থিতির অনুকরণে তৈরি করা হয়। পরবর্তী সময় গবেষক দলটি মৌমাছিগুলোকে নতুন টিউবে স্থানান্তর করেন এবং এদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করেন। 

পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, সময় ও অবস্থা নির্বিশেষে রানিদের বেঁচে থাকার হার একই। এক সপ্তাহের জন্য স্বাভাবিক অবস্থায় থাকা ৮৮ শতাংশ রানি ও পানিতে নিমজ্জিত ৮১ শতাংশ রানিকে জীবিতই পাওয়া গেছে। তবে বেশি ওজনের রানিদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি দেখা গেছে। 

গবেষকেরা বলেছেন, পরীক্ষার ফলাফলগুলো অস্বাভাবিক। কারণ, বেশির ভাগ পোকামাকড় এমনকি গ্রাউন্ড বিটলও (একধরনের গুবরেপোকা) পানিতে ডুবে গেলে মারা যায়। বেঁচে থাকার জন্য তারা বন্যাকবলিত এলাকা ছেড়ে চলে যায়। 

গবেষক দলটি বলে, বন্যায় এসব রানি মৌমাছি বেঁচে থাকার কারণ জানতে আরও গবেষণা করা হবে। শীতনিদ্রার সময় মৌমাছিদের কম অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন। 

সাসেক্স ইউনিভার্সিটির মৌমাছি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডেভ গলসন বলেন, ‘মৌমাছি নিয়ে গবেষকেরা দীর্ঘদিন ধরে অনুমান করেছিলেন, জলবায়ু সংকটের মধ্যে শীতকালীন বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় অনেক রানি বাম্বলবি ডুবে যেতে পারে। কারণ, এরা মাটির নিচে শীতনিদ্রায় থাকে। তবে নতুন গবেষণা দেখায়, শীতনিদ্রায় থাকা রানি বাম্বলবি পানিতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত নিমজ্জিত থাকলেও বেঁচে থাকতে পারে। তার মানে, জলবায়ু পরিবর্তনের এই দিক নিয়ে বাম্বলবিদের বিষয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত