অনলাইন ডেস্ক
২০ সেপ্টেম্বর, ১৯২৪ সাল। যুক্তরাজ্যের সাময়িক পত্রিকা ‘দ্য ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ’ সেদিন প্রথম পাতায় বিরাট করে এক আবিষ্কারের খবর ছাপে। লেখা হয়, গ্রিসের ‘টিরিনস্’ ও ‘মাইসিনে’র মতো প্রাচীন শহর খুঁজে পাওয়া গেছে ভারতে। এটি ছিল প্রায় ৫ হাজার বছর আগেকার দুই গুরুত্বপূর্ণ শহর মহেঞ্জোদারো আর হরপ্পা আবিষ্কারের কাহিনি। সারা বিশ্বে হইহই রইরই পড়ে গেল সেই খবরে।
এর আগে পর্যন্ত কারও ধারণা ছিল না যে ভারতেও থাকতে পারে হাজার হাজার বছরের পুরোনো কোনো সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। লন্ডন নিউজে এই প্রতিবেদন লিখেছিলেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের (আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া) তৎকালীন প্রধান, প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ স্যার জন মার্শাল। খবরের সঙ্গে ছাপা হয়েছিল প্রচুর ছবি ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ।
তবে মি. মার্শাল তাঁর প্রতিবেদনে এটা উল্লেখ করেননি যে সিন্ধু সভ্যতার ওই দুই প্রাচীন শহর আবিষ্কারের কৃতিত্ব আসলে ছিল দুই ভারতীয় পুরাতত্ত্ববিদের। তাঁদের একজন আবার বাঙালি— নাম রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাখালদাস ছিলেন পুরাতত্ত্ব বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মী ও প্রশিক্ষিত প্রত্নতত্ত্ববিদ, যিনি মহেঞ্জোদারো খুঁজে পেয়েছিলেন। অন্যজন দয়ারাম সাহানি, আবিষ্কার করেছিলেন হরপ্পা।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিভা ও বিতর্কিত কর্মজীবনের জন্য পরিচিত ছিলেন। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক আবিষ্কার করেছিলেন এই প্রত্নতত্ত্ববিদ। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আজও উপেক্ষিত।
১৯০০ সালের শুরুর দিকে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে খুঁজে পেয়েছিলেন মহেঞ্জোদারো—সিন্ধি ভাষায় যার অর্থ ‘মৃত মানুষের টিলা’। এটি ছিল ব্রোঞ্জ যুগের সিন্ধু ভ্যালি (হরপ্পা) সভ্যতার সবচেয়ে বড় নগর। একসময় যা বিস্তৃত ছিল উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তান থেকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন দুর্দান্ত এক অভিযাত্রী ও প্রত্নলিপি বিশেষজ্ঞ। তিনি ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’র (এএসআই) হয়ে কাজ করতেন। ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে ঘুরে ঘুরে প্রাচীন নিদর্শন, শিলালিপি আর ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বেড়াতেন তিনি।
মহেঞ্জোদারো আবিষ্কার ইতিহাসে বড় অর্জন হলেও এ নিয়ে নানা বিতর্কে ঢাকা পড়েছে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন। তাঁর স্বাধীনচেতা স্বভাব আর ঔপনিবেশিক নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করার কারণে প্রায়ই সমস্যায় পড়তেন তিনি। এতে তাঁর অবদান আড়াল হয়ে যায়—এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ইতিহাস থেকেও হারিয়ে যেতে বসে।
মজার বিষয় হলো, মহেঞ্জোদারো নিয়ে তাঁর প্রতিবেদনগুলো কখনোই প্রকাশ করেনি এএসআই। পরবর্তী সময়ে প্রত্নতত্ত্ববিদ পি কে মিশ্র অভিযোগ করেন, তৎকালীন এএসআইয়ের প্রধান জন মার্শাল ইচ্ছাকৃতভাবে এই গবেষণা আড়াল করেন এবং আবিষ্কারের কৃতিত্ব নিজের নামে তুলে নেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক মিশ্র বলেন, ‘বিশ্ব জানে মহেঞ্জোদারো আবিষ্কারের কৃতিত্ব মার্শালের। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেন ইতিহাসের এক ক্ষুদ্র পাদটীকা করে রাখা হয়েছে।’
বিতর্কিত অধ্যায়
ইতিহাসবিদ নয়নজ্যোতি লাহিড়ীর ‘Finding Forgotten Cities: How the Indus Civilization Was Discovered’ বইয়ে বলা হয়েছে, রাখালদাস ছিলেন স্পষ্টভাষী, কৌশল ও কূটনীতির ঘাটতি ছিল তাঁর। তাঁর ব্যবহারে প্রশাসনের উচ্চপদস্থদের সঙ্গে প্রায়ই বিবাদ বাধত।
বইটিতে বলা হয়, একবার তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি জাদুঘর থেকে শিলালিপি ও চিত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেন। আবার অন্য একবার কোনো অনুমতি ছাড়াই বাংলার এক জাদুঘর থেকে মূর্তি সরিয়ে নিজের কর্মস্থলে নিতে চেয়েছিলেন।
এ ছাড়া আরেক ঘটনায় অনুমোদন ছাড়াই তিনি পুরোনো একটি চিত্রকর্ম কিনে ফেলেন, যার দাম নিয়েও পরে প্রশ্ন ওঠে। লাহিড়ী লেখেন, রাখালদাস অনেক প্রতিভার অধিকারী হলেও প্রায়ই সবার সঙ্গে বিরোধ বাধিয়ে বসতেন।
শৈশব ও অভিযাত্রার গল্প
১৮৮৫ সালে বাংলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর শৈশব কেটেছিল বহরমপুর শহরে। এই শহরের মধ্যযুগীয় নানা স্মৃতিস্তম্ভ তাঁকে ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
ছাত্রাবস্থাতেই তাঁর ভ্রমণপ্রীতি ছিল প্রবল। একবার ‘ভারতে শক জাতির ইতিহাস’বিষয়ক প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে নিজেই চলে যান পাশের রাজ্যের জাদুঘরে। সেখানে ঘুরে দেখেন ওই সময়কার শিলালিপি আর ভাস্কর্য।
ইয়ামা পাণ্ডের ‘The Life and Works of Rakhaldas Banerji’ বইয়ে বলা হয়েছে, তিনি ১৯১০ সালে এএসআইয়ে খনন সহকারী হিসেবে যোগ দেন। এরপর দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে ১৯১৭ সালে পশ্চিম ভারতের সুপারিনটেনডিং আর্কিওলজিস্ট হন। এই দায়িত্বে থেকেই ১৯১৯ সালে প্রথম মহেঞ্জোদারো পরিদর্শনে যান।
পরবর্তী কয়েক বছরে সেখানে খননকাজ চালিয়ে আবিষ্কার করেন প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপ, মুদ্রা, সিল, মৃৎপাত্র ও সূক্ষ্ম হাতিয়ার।
১৯২২ থেকে ১৯২৩ সালের মধ্যে মহেঞ্জোদারো নগরের একাধিক স্তরের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেন, যার মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো স্তরটি ছিল আজ থেকে প্রায় ৫৩০০ বছর আগে গড়ে ওঠা। তখনো ইতিহাসবিদেরা জানতেন না, সিন্ধু সভ্যতা এত বিস্তৃত ছিল। আজ জানা যায়, সিন্ধু উপত্যকা ধরে প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল এই সভ্যতা।
রাখালদাসের খননকাজে পাওয়া তিনটি সিলে হরপ্পা থেকে পাওয়া সিলের মতোই প্রতীক ও লিপি ছিল। এতে প্রমাণ হয়, মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা একই সভ্যতার অংশ।
চাকরিতে বদলি, বিতর্ক ও অপবাদ
১৯২৪ সালে মহেঞ্জোদারো প্রকল্পের অর্থ শেষ হয়ে যায়। এরপর রাখালদাসকে বদলি করা হয় পূর্ব ভারতে। ইয়ামা পাণ্ডের বইয়ে বলা হয়, এরপর আর মহেঞ্জোদারোর সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ ছিল না।
তবে নয়নজ্যোতি লাহিড়ী লেখেন, বাজেট ব্যবস্থাপনা নিয়ে জটিলতায় জড়িয়ে পড়ায় নিজেই বদলির অনুরোধ করেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ব্যয়ের হিসাব ছিল অনিয়মিত।
জানা যায়, খনন তহবিলের টাকা দিয়ে অফিসের আসবাবপত্র কিনেছিলেন। এ ছাড়া ভ্রমণের ব্যয় ছিল অস্বাভাবিক। ঊর্ধ্বতনদের কাছে এই খরচের সাফাই দিতে পারেননি। ফলে শাস্তির মুখে পড়ে নিজেই বদলির অনুরোধ জানান। পরে তিনি কলকাতাকেন্দ্রিক নানা প্রত্নতাত্ত্বিক কাজের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
চুরিকাণ্ড ও পদত্যাগ
১৯২৫ সালে মধ্যপ্রদেশের এক বিখ্যাত হিন্দু মন্দির পরিদর্শনে যান রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন দুই সহকারী ও দুজন শ্রমিক। সেখান থেকে একটি বৌদ্ধ দেবীর পাথরের মূর্তি রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়।
অভিযোগ ওঠে, মূর্তি চুরির সঙ্গে তিনিই জড়িত। যদিও তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। মূর্তিটি পরে কলকাতায় উদ্ধার হয়। তবুও জন মার্শালের চাপে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
১৯২৭ সালে এএসআই ছাড়ার পর আর্থিক সংকটে পড়েন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিহাসবিদ তপতী গুহঠাকুরতা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ভালো খাবার, ঘোড়ার গাড়ি আর বন্ধুদের পেছনে ঢালতেন প্রচুর টাকা। নিজের ভবিষ্যতের জন্য কিছুই রাখেননি।’
১৯২৮ সালে বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৩০ সালে ৪৫ বছর বয়সে মারা যান এই প্রত্নতত্ত্ববিদ।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
২০ সেপ্টেম্বর, ১৯২৪ সাল। যুক্তরাজ্যের সাময়িক পত্রিকা ‘দ্য ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ’ সেদিন প্রথম পাতায় বিরাট করে এক আবিষ্কারের খবর ছাপে। লেখা হয়, গ্রিসের ‘টিরিনস্’ ও ‘মাইসিনে’র মতো প্রাচীন শহর খুঁজে পাওয়া গেছে ভারতে। এটি ছিল প্রায় ৫ হাজার বছর আগেকার দুই গুরুত্বপূর্ণ শহর মহেঞ্জোদারো আর হরপ্পা আবিষ্কারের কাহিনি। সারা বিশ্বে হইহই রইরই পড়ে গেল সেই খবরে।
এর আগে পর্যন্ত কারও ধারণা ছিল না যে ভারতেও থাকতে পারে হাজার হাজার বছরের পুরোনো কোনো সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। লন্ডন নিউজে এই প্রতিবেদন লিখেছিলেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের (আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া) তৎকালীন প্রধান, প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ স্যার জন মার্শাল। খবরের সঙ্গে ছাপা হয়েছিল প্রচুর ছবি ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ।
তবে মি. মার্শাল তাঁর প্রতিবেদনে এটা উল্লেখ করেননি যে সিন্ধু সভ্যতার ওই দুই প্রাচীন শহর আবিষ্কারের কৃতিত্ব আসলে ছিল দুই ভারতীয় পুরাতত্ত্ববিদের। তাঁদের একজন আবার বাঙালি— নাম রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাখালদাস ছিলেন পুরাতত্ত্ব বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মী ও প্রশিক্ষিত প্রত্নতত্ত্ববিদ, যিনি মহেঞ্জোদারো খুঁজে পেয়েছিলেন। অন্যজন দয়ারাম সাহানি, আবিষ্কার করেছিলেন হরপ্পা।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিভা ও বিতর্কিত কর্মজীবনের জন্য পরিচিত ছিলেন। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক আবিষ্কার করেছিলেন এই প্রত্নতত্ত্ববিদ। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আজও উপেক্ষিত।
১৯০০ সালের শুরুর দিকে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে খুঁজে পেয়েছিলেন মহেঞ্জোদারো—সিন্ধি ভাষায় যার অর্থ ‘মৃত মানুষের টিলা’। এটি ছিল ব্রোঞ্জ যুগের সিন্ধু ভ্যালি (হরপ্পা) সভ্যতার সবচেয়ে বড় নগর। একসময় যা বিস্তৃত ছিল উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তান থেকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন দুর্দান্ত এক অভিযাত্রী ও প্রত্নলিপি বিশেষজ্ঞ। তিনি ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’র (এএসআই) হয়ে কাজ করতেন। ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে ঘুরে ঘুরে প্রাচীন নিদর্শন, শিলালিপি আর ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বেড়াতেন তিনি।
মহেঞ্জোদারো আবিষ্কার ইতিহাসে বড় অর্জন হলেও এ নিয়ে নানা বিতর্কে ঢাকা পড়েছে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন। তাঁর স্বাধীনচেতা স্বভাব আর ঔপনিবেশিক নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করার কারণে প্রায়ই সমস্যায় পড়তেন তিনি। এতে তাঁর অবদান আড়াল হয়ে যায়—এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ইতিহাস থেকেও হারিয়ে যেতে বসে।
মজার বিষয় হলো, মহেঞ্জোদারো নিয়ে তাঁর প্রতিবেদনগুলো কখনোই প্রকাশ করেনি এএসআই। পরবর্তী সময়ে প্রত্নতত্ত্ববিদ পি কে মিশ্র অভিযোগ করেন, তৎকালীন এএসআইয়ের প্রধান জন মার্শাল ইচ্ছাকৃতভাবে এই গবেষণা আড়াল করেন এবং আবিষ্কারের কৃতিত্ব নিজের নামে তুলে নেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক মিশ্র বলেন, ‘বিশ্ব জানে মহেঞ্জোদারো আবিষ্কারের কৃতিত্ব মার্শালের। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেন ইতিহাসের এক ক্ষুদ্র পাদটীকা করে রাখা হয়েছে।’
বিতর্কিত অধ্যায়
ইতিহাসবিদ নয়নজ্যোতি লাহিড়ীর ‘Finding Forgotten Cities: How the Indus Civilization Was Discovered’ বইয়ে বলা হয়েছে, রাখালদাস ছিলেন স্পষ্টভাষী, কৌশল ও কূটনীতির ঘাটতি ছিল তাঁর। তাঁর ব্যবহারে প্রশাসনের উচ্চপদস্থদের সঙ্গে প্রায়ই বিবাদ বাধত।
বইটিতে বলা হয়, একবার তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি জাদুঘর থেকে শিলালিপি ও চিত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেন। আবার অন্য একবার কোনো অনুমতি ছাড়াই বাংলার এক জাদুঘর থেকে মূর্তি সরিয়ে নিজের কর্মস্থলে নিতে চেয়েছিলেন।
এ ছাড়া আরেক ঘটনায় অনুমোদন ছাড়াই তিনি পুরোনো একটি চিত্রকর্ম কিনে ফেলেন, যার দাম নিয়েও পরে প্রশ্ন ওঠে। লাহিড়ী লেখেন, রাখালদাস অনেক প্রতিভার অধিকারী হলেও প্রায়ই সবার সঙ্গে বিরোধ বাধিয়ে বসতেন।
শৈশব ও অভিযাত্রার গল্প
১৮৮৫ সালে বাংলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর শৈশব কেটেছিল বহরমপুর শহরে। এই শহরের মধ্যযুগীয় নানা স্মৃতিস্তম্ভ তাঁকে ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
ছাত্রাবস্থাতেই তাঁর ভ্রমণপ্রীতি ছিল প্রবল। একবার ‘ভারতে শক জাতির ইতিহাস’বিষয়ক প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে নিজেই চলে যান পাশের রাজ্যের জাদুঘরে। সেখানে ঘুরে দেখেন ওই সময়কার শিলালিপি আর ভাস্কর্য।
ইয়ামা পাণ্ডের ‘The Life and Works of Rakhaldas Banerji’ বইয়ে বলা হয়েছে, তিনি ১৯১০ সালে এএসআইয়ে খনন সহকারী হিসেবে যোগ দেন। এরপর দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে ১৯১৭ সালে পশ্চিম ভারতের সুপারিনটেনডিং আর্কিওলজিস্ট হন। এই দায়িত্বে থেকেই ১৯১৯ সালে প্রথম মহেঞ্জোদারো পরিদর্শনে যান।
পরবর্তী কয়েক বছরে সেখানে খননকাজ চালিয়ে আবিষ্কার করেন প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপ, মুদ্রা, সিল, মৃৎপাত্র ও সূক্ষ্ম হাতিয়ার।
১৯২২ থেকে ১৯২৩ সালের মধ্যে মহেঞ্জোদারো নগরের একাধিক স্তরের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেন, যার মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো স্তরটি ছিল আজ থেকে প্রায় ৫৩০০ বছর আগে গড়ে ওঠা। তখনো ইতিহাসবিদেরা জানতেন না, সিন্ধু সভ্যতা এত বিস্তৃত ছিল। আজ জানা যায়, সিন্ধু উপত্যকা ধরে প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল এই সভ্যতা।
রাখালদাসের খননকাজে পাওয়া তিনটি সিলে হরপ্পা থেকে পাওয়া সিলের মতোই প্রতীক ও লিপি ছিল। এতে প্রমাণ হয়, মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা একই সভ্যতার অংশ।
চাকরিতে বদলি, বিতর্ক ও অপবাদ
১৯২৪ সালে মহেঞ্জোদারো প্রকল্পের অর্থ শেষ হয়ে যায়। এরপর রাখালদাসকে বদলি করা হয় পূর্ব ভারতে। ইয়ামা পাণ্ডের বইয়ে বলা হয়, এরপর আর মহেঞ্জোদারোর সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ ছিল না।
তবে নয়নজ্যোতি লাহিড়ী লেখেন, বাজেট ব্যবস্থাপনা নিয়ে জটিলতায় জড়িয়ে পড়ায় নিজেই বদলির অনুরোধ করেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ব্যয়ের হিসাব ছিল অনিয়মিত।
জানা যায়, খনন তহবিলের টাকা দিয়ে অফিসের আসবাবপত্র কিনেছিলেন। এ ছাড়া ভ্রমণের ব্যয় ছিল অস্বাভাবিক। ঊর্ধ্বতনদের কাছে এই খরচের সাফাই দিতে পারেননি। ফলে শাস্তির মুখে পড়ে নিজেই বদলির অনুরোধ জানান। পরে তিনি কলকাতাকেন্দ্রিক নানা প্রত্নতাত্ত্বিক কাজের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
চুরিকাণ্ড ও পদত্যাগ
১৯২৫ সালে মধ্যপ্রদেশের এক বিখ্যাত হিন্দু মন্দির পরিদর্শনে যান রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন দুই সহকারী ও দুজন শ্রমিক। সেখান থেকে একটি বৌদ্ধ দেবীর পাথরের মূর্তি রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়।
অভিযোগ ওঠে, মূর্তি চুরির সঙ্গে তিনিই জড়িত। যদিও তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। মূর্তিটি পরে কলকাতায় উদ্ধার হয়। তবুও জন মার্শালের চাপে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
১৯২৭ সালে এএসআই ছাড়ার পর আর্থিক সংকটে পড়েন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিহাসবিদ তপতী গুহঠাকুরতা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ভালো খাবার, ঘোড়ার গাড়ি আর বন্ধুদের পেছনে ঢালতেন প্রচুর টাকা। নিজের ভবিষ্যতের জন্য কিছুই রাখেননি।’
১৯২৮ সালে বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৩০ সালে ৪৫ বছর বয়সে মারা যান এই প্রত্নতত্ত্ববিদ।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
রঙের জগতে নতুন চমক নিয়ে এসেছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, তারা এমন একটি রং আবিষ্কার করেছেন, যা সাধারণ চোখে আগে কখনো দেখা যায়নি। এই রঙের নাম রাখা হয়েছে ‘ওলো’, যা দেখতে একধরনের গাড় সবুজাভ নীল।
১৫ ঘণ্টা আগেআইনস্টাইনের কথা উঠলেই চলে আসে আরও একজনের নাম। তিনি হলের এমি নোয়েথার। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব সহজভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন এই নারী। তিনি ছিলেন জার্মান গণিতবিদ। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মারা যান এই নারী। কিন্তু এই অল্প কিছুদিনেই গণিতে তাঁর অবদান অসামান্য।
১ দিন আগেজলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই–অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের কৃষিপ্রধান দেশগুলোর ধানে আর্সেনিকের উপস্থিতির আশঙ্কা বেড়ে গেছে। সম্প্রতি দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এই তথ্য জানানো হয়েছে।
১ দিন আগেডলফিনেরা পৃথিবীর অন্যতম বুদ্ধিমান প্রাণী, যাদের জটিল সামাজিক আচরণ ও শিসের মাধ্যমে নিজস্ব সাংকেতিক নাম রয়েছে। তারা ঘনঘন শব্দ, ক্লিক ও স্কোয়াক ব্যবহার করে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। রহস্যময় এই যোগাযোগব্যবস্থা ভেদ করার পথেই এগোচ্ছে বিজ্ঞান।
২ দিন আগে