Ajker Patrika

পুনর্ব্যবহার অযোগ্য প্লাস্টিক থেকে হাইড্রোজেন জ্বালানি উৎপাদন করলেন বিজ্ঞানীরা

অনলাইন ডেস্ক
প্রতিটি কেজি বর্জ্য প্লাস্টিক থেকে প্রায় ১৩০ গ্রাম হাইড্রোজেন উৎপন্ন করা সম্ভব হয়েছে।ছবি: ই সিটি
প্রতিটি কেজি বর্জ্য প্লাস্টিক থেকে প্রায় ১৩০ গ্রাম হাইড্রোজেন উৎপন্ন করা সম্ভব হয়েছে।ছবি: ই সিটি

প্লাস্টিক-দূষণ ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বড় ধরনের সাফল্য পেলেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা। কারণ পুনর্ব্যবহার করা যায় না এমন থার্মোসেট প্লাস্টিক থেকে হাইড্রোজেন গ্যাস বানাতে পেরেছেন তাঁরা। পরিবেশবান্ধব ও কার্যকর এই পদ্ধতির নেতৃত্ব দেন কোরিয়া ইনস্টিটিউট অব এনার্জি রিসার্চের (কেআইইআর) গবেষক ড. চোং-পিও চো।

থার্মোসেট প্লাস্টিক এমন একধরনের উপাদান, যা একবার তৈরি হলে আর গলানো যায় না। গাড়ি, ইলেকট্রনিক যন্ত্র ও উচ্চ তাপ বা রাসায়নিক প্রতিরোধী সামগ্রী তৈরিতে এটি ব্যবহৃত হয়। তবে পুনরায় রূপান্তর সম্ভব না হওয়ায় এই প্লাস্টিকগুলো অধিকাংশ সময় ফেলে দেওয়া হয় বা পুড়িয়ে ফেলা হয়, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক রিসাইক্লিং শিল্প দ্রুত বাড়ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এর বাজারমূল্য দাঁড়াবে ১৭৩ ট্রিলিয়ন কোরিয়ান ওনে। এই বাস্তবতায় থার্মোসেট প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের টেকসই উপায় বের করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

এই চ্যালেঞ্জের জবাব দিয়েছে ড. চো’র নেতৃত্বাধীন দলটি। তারা ‘গ্যাসিফিকেশন’ নামের একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন, যেখানে উচ্চ তাপে প্লাস্টিক ভেঙে তৈরি করা হয় সিনগ্যাস। এতে থাকে হাইড্রোজেনসহ নানা গ্যাস।

তাঁরা যে ‘নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসিফিকেশন সিস্টেম’ তৈরি করেছেন, তা দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথম। এতে ব্যবহৃত হয়েছে ‘অক্সি-ফুয়েল কমবাসশন’ পদ্ধতি, যেখানে বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সরিয়ে অতিরিক্ত তাপ সংরক্ষণ করা হয়। এতে ১ হাজার ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা ওঠে এবং প্রতিদিন এক টন মিশ্র থার্মোসেট প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করা যায়।

সাধারণ গ্যাসিফিকেশন পদ্ধতিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ‘টার’ নামক আঠালো বর্জ্য, যা যন্ত্রপাতি বন্ধ করে দেয় এবং পুরো প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। সাধারণ প্রযুক্তি ৮০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রায় কাজ করায় অনেক বেশি পরিমাণে টার তৈরি হয়, যেটি সরাতে দরকার ব্যয়বহুল পরিশোধনব্যবস্থা।

তবে কোরিয়ান গবেষকদের উচ্চতাপ প্রযুক্তি এই টার প্রায় সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলে। এতে টার উৎপাদন ৯৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমে এসেছে। গ্যাসে টারের পরিমাণ মাত্র দশমিক ৬৬ মিলিগ্রাম প্রতি ঘনমিটার, যা বাণিজ্যিক হাইড্রোজেন উৎপাদনের জন্য নির্ধারিত মাত্রার অনেক নিচে।

গবেষণা অনুযায়ী, প্রতি কেজি বর্জ্য প্লাস্টিক থেকে প্রায় ১৩০ গ্রাম হাইড্রোজেন উৎপন্ন করা সম্ভব হয়েছে। সংখ্যাটি ছোট মনে হলেও একে গবেষকেরা পরিচ্ছন্ন জ্বালানি উৎপাদনের দিকে এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

তারা ইতিমধ্যে একটি পাইলট প্ল্যান্টে প্রযুক্তির সফল প্রদর্শনী শেষ করেছেন এবং তিনটি দেশীয় পেটেন্ট ও একটি আন্তর্জাতিক পেটেন্ট আবেদন করেছেন।

ড. চো জানিয়েছেন, তাঁদের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিদিন দুই টন প্লাস্টিক প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতা সম্পন্ন একটি পূর্ণাঙ্গ প্লান্ট তৈরি করা এবং প্রযুক্তিটির পূর্ণ বাণিজ্যিকীকরণের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

এই প্রযুক্তি একদিকে যেমন প্লাস্টিক-দূষণ কমাতে সাহায্য করবে, অন্যদিকে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহারের বৈশ্বিক ধারা শক্তিশালী করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তথ্যসূত্র: নোরিডজ সায়েন্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত