Ajker Patrika

ভিনগ্রহের প্রাণীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে বিমানবন্দরের রাডার ব্যবস্থা: গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক
রাডার ইনস্টলেশন বা ব্যবস্থাগুলো থেকে নির্গত শক্তিশালী ইলেকট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ ২০০ আলোকবর্ষ দূর থেকেও শনাক্ত করা সম্ভব। ছবি: ক্যানভা
রাডার ইনস্টলেশন বা ব্যবস্থাগুলো থেকে নির্গত শক্তিশালী ইলেকট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ ২০০ আলোকবর্ষ দূর থেকেও শনাক্ত করা সম্ভব। ছবি: ক্যানভা

বিশ্বের বড় বড় বিমানবন্দরে ব্যবহৃত রাডার সিস্টেমগুলো শুধু বিমান চলাচলই নিয়ন্ত্রণ করছে না, বরং এগুলো বুদ্ধিমান ভিনগ্রহের প্রাণীদের দৃষ্টি আকর্ষণও করতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাজ্যের ডারহামে অনুষ্ঠিত রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমি মিটিং ২০২৫-এ প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।

ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, বেসামরিক ও সামরিক রাডার ইনস্টলেশন বা ব্যবস্থাগুলো থেকে নির্গত শক্তিশালী ইলেকট্রোম্যাগনেটিক বা তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ ২০০ আলোকবর্ষ দূর থেকেও শনাক্ত করা সম্ভব। যদি ভিনগ্রহের সেসব প্রাণীর কাছে পৃথিবীর মতো রেডিও টেলিস্কোপ থাকে, তাহলে তারা এগুলো শনাক্ত করতে পারে।

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী ও গবেষণার প্রধান লেখক রামিরো কাইসে সাইডে বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, যেকোনো উন্নত প্রযুক্তি ও জটিল বিমান চলাচলব্যবস্থার অধিকারী গ্রহ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হওয়া রাডার সিগন্যালই বুদ্ধিমান প্রাণের অস্তিত্ব থাকার ইঙ্গিত হতে পারে।’

নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দর এবং লন্ডনের হিথ্রো ও গ্যাটউইক বিমানবন্দরের রাডার সিগন্যাল মহাকাশে কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তা কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে দেখেছেন গবেষকেরা। তারপর ছয়টি নিকটবর্তী তারার দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীর রেডিও সিগন্যাল কতটা শক্তিশালী হতে পারে, তা হিসাব করেন—

  • বার্নার্ডস স্টার (৬ আলোকবর্ষ)
  • এউ মাইক্রোস্কোপি (৩২ আলোকবর্ষ)
  • এইচডি ৪৮৯৪৮ (৫৫ আলোকবর্ষ)
  • এইচডি ৪০৩০৭ (৪২ আলোকবর্ষ)
  • এইচডি ২১৬৫২০ (৬৪ আলোকবর্ষ)
  • এলএইচএস ৪৭৫ (৪১ আলোকবর্ষ)

জোরালো সিগন্যালের ভুবনে পৃথিবী

বিশ্বজুড়ে বিমানবন্দরের রাডার সিস্টেমগুলো মিলিয়ে মোট ২ × ১০ ^১৫ ওয়াট রেডিও শক্তি নির্গত করে, যা আন্তনাক্ষত্রিক দূরত্ব থেকে শনাক্ত করা সম্ভব—তবে এ জন্য তাদের কাছে গ্রিন ব্যাংক টেলিস্কোপের মতো প্রযুক্তি থাকে। সামরিক রাডার সিস্টেমগুলো তুলনামূলক আরও শক্তিশালী, যা বাতাসে বাতিঘরের আলোর মতো ঘুরে বেড়ায়। এগুলো থেকে নির্গত সিগন্যালের সর্বোচ্চ তীব্রতা পৌঁছায় ১ × ১০^ ১৪ ওয়াট পর্যন্ত।

সাইডে বলেন, ‘এই সামরিক সিগন্যালগুলো নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে প্রায় শতগুণ বেশি শক্তিশালী দেখাতে পারে। আর এগুলো কোনো উন্নত রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহারকারী ভিনগ্রহের প্রাণের কাছে সম্পূর্ণ কৃত্রিম বলে মনে হবে।’

টেকনোসিগন্যাল খোঁজার নতুন দিশা

গত কয়েক বছরে বিজ্ঞানীরা প্রাণের খোঁজে টেকনোসিগনেচার বা প্রযুক্তির চিহ্ন শনাক্তে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কারণ জীবনের জৈবিক চিহ্ন বা বায়োসিগনেচারের তুলনায় প্রযুক্তিগত চিহ্ন শনাক্ত করা তুলনামূলক সহজ।

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে গবেষকেরা ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যালেন টেলিস্কোপ অ্যারে ব্যবহার করে ট্র্যাপিস্ট-১ তারা ব্যবস্থায় টেকনোসিগনেচার খুঁজেছেন। পৃথিবী থেকে ৪১ আলোকবর্ষ দূরে এই তারামণ্ডলকে অনেক সময় ‘সৌরজগৎ ২.০’ বলা হয়। তবে এখন পর্যন্ত সেখান থেকে কোনো কৃত্রিম সিগন্যাল পাওয়া যায়নি।

অন্য সভ্যতাকে খুঁজতে যেভাবে সাহায্য করবে এই গবেষণা

পৃথিবীর সিগন্যাল দূর মহাকাশে কেমন দেখা যায়, তা বোঝা গেলে অন্য গ্রহের সভ্যতার উপস্থিতি শনাক্ত করাও সহজ হবে।

গবেষণার সহলেখক, ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল গ্যারেট বলেন, ‘এই দুর্বল সিগন্যাল শনাক্ত করার কৌশল শুধু ভিনগ্রহের প্রাণী খোঁজার জন্য নয়, বরং জ্যোতির্বিজ্ঞান, গ্রহরক্ষা এবং মহাকাশে মানব প্রযুক্তির প্রভাব পর্যবেক্ষণেও কাজে লাগবে। আমরা বুঝতে পারছি, আমাদের রেডিও সিগন্যাল মহাকাশে কীভাবে ছড়ায় এবং ভবিষ্যতের রাডার সিস্টেম কেমন হওয়া উচিত।’

রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানে বিপ্লবের অপেক্ষা

রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞান, অর্থাৎ মহাকাশ থেকে আসা রেডিও তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে মহাজাগতিক বস্তু বোঝার বিজ্ঞান এক বৈপ্লবিক যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে স্কয়ার কিলোমিটার অ্যারে (এসকেএ) নামের এক বিশাল রেডিও টেলিস্কোপ প্রকল্প।

২২ বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পে দুটি বিশাল রেডিও টেলিস্কোপ নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে—দক্ষিণ আফ্রিকার কারু অঞ্চলে ১৯৭টি রেডিও ডিশ এবং অস্ট্রেলিয়ার মারচিসনে ১ লাখ ৩১ হাজার ৭২টি অ্যান্টেনা। এ দুটি টেলিস্কোপ মিলিয়ে দুই মহাদেশজুড়ে এক বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি যৌথ সংগ্রাহক এলাকা গড়ে তুলবে, যা অত্যন্ত দুর্বল রেডিও সংকেতও শনাক্ত করতে পারবে।

তথ্যসূত্র: ফোর্বস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত