Ajker Patrika

মঙ্গলে প্রাচীন প্রাণের সম্ভাব্য চিহ্ন পেল নাসার রোবট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪: ০৪
২০২১ সাল থেকে পারসেভিয়ারেন্স রোভার মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধের জেজেরো ক্রেটার এলাকায় অনুসন্ধান চালাচ্ছে। ছবি: নাসা
২০২১ সাল থেকে পারসেভিয়ারেন্স রোভার মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধের জেজেরো ক্রেটার এলাকায় অনুসন্ধান চালাচ্ছে। ছবি: নাসা

মঙ্গল গ্রহের জেজেরো ক্রেটারে প্রাচীন লেকের তলদেশ থেকে গঠিত লালচে রঙের একটি শিলার নমুনা সংগ্রহ করেছে নাসার পারসেভিয়ারেন্স রোভার। ওই নমুনায় প্রাচীন মাইক্রোবিয়াল বা অণুজীবের সম্ভাব্য চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে শিলাটিতে পাওয়া খনিজ উপাদানগুলো কোনো অণুজীব ছাড়াই রাসায়নিকভাবে গঠিত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

স্টোনি ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের পারসেভিয়ারেন্স গবেষক জোয়েল হুরোভিৎস বলেন, মঙ্গলের একটি শিলায় সম্ভাব্য প্রাণের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এই শিলা যখন প্রায় ৩২০ থেকে ৩৮০ কোটি বছর আগে গঠিত হয়েছিল, তখন জেজেরো ক্রেটার পানিতে নিমজ্জিত ছিল বলে ধারণা করা হয়।

সম্প্রতি নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়, ওই শিলার গায়ে চিতাবাঘের দাগের মতো রিং আকৃতির গঠন এবং পপি বীজের মতো গাঢ় দাগ দেখা গেছে, যেগুলো অণুজীব সংশ্লিষ্ট রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে গঠিত হয়ে থাকতে পারে।

নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক শন ডাফি বলেন, ‘আমরা এক বছর ধরে তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করেছি। এখন পর্যন্ত অন্য কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছি না। তাই এটি হতে পারে মঙ্গলে প্রাণের সবচেয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত, যা আমরা এখন পর্যন্ত পেয়েছি—এটা অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ।’

তবে নাসার বিজ্ঞান পরিচালক নিকি ফক্স সতর্ক করে বলেন, ‘এটা কোনো জীবিত জীবের সন্ধান নয়।’ তিনি বলেন, এটি জীবনের সরাসরি প্রমাণ না হলেও জীবনের অস্তিত্বের সম্ভাব্য চিহ্ন।

২০২১ সাল থেকে পারসেভিয়ারেন্স রোভার মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধের জেজেরো ক্রেটার এলাকায় অনুসন্ধান চালাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, কোনো এক সময় নদী জেজেরো ক্রেটারের প্রাচীর উপচে সেখানে একটি হ্রদ গঠন করেছিল।

ওই শিলার গায়ে চিতাবাঘের দাগের মতো রিং আকৃতির গঠন দেখা গেছে। ছবি: নাসা
ওই শিলার গায়ে চিতাবাঘের দাগের মতো রিং আকৃতির গঠন দেখা গেছে। ছবি: নাসা

নমুনা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ

২০২৪ সালের জুলাই মাসে পারসেভিয়ারেন্স রোভার মঙ্গলের ‘ব্রাইট অ্যাঞ্জেল’ নামের এলাকায় একটি শিলা থেকে ‘স্যাফায়ার ক্যানিয়ন’ নামে একটি নমুনা সংগ্রহ করে। শিলাটি ছিল ‘চেয়াভা ফলস’ নামক জায়গায়, যা ‘নেরেটভা ভ্যালিস’ নামে একটি প্রাচীন নদীর উপত্যকার পাশে অবস্থিত। এই উপত্যকা প্রায় ৪০০ মিটার চওড়া।

এই শিলায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ শনাক্ত করা হয়—ভিভিয়ানাইট (লোহা ও ফসফরাসযুক্ত) ও গ্রেইগাইট (লোহা ও সালফারযুক্ত)। গবেষকদের মতে, এই খনিজগুলো গঠিত হয়েছিল যখন হ্রদের তলদেশে জমে থাকা কাদামাটির সঙ্গে জৈব পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটেছিল।

পৃথিবীতে এ ধরনের খনিজ (যেমন ভিভিয়ানাইট ও গ্রেইগাইট) অনেক সময় এমনভাবে তৈরি হয়, যখন অণুজীব জীবিত অবস্থায় কিছু রাসায়নিক প্রক্রিয়া ঘটায়।

জোয়েল হুরোভিৎস বলেন, ‘এই বিক্রিয়াগুলো ঘটে অণুজীব যখন জৈব পদার্থ গ্রহণ করে এবং তাদের বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় এ ধরনের খনিজ তৈরি করে।’

রোভারটির যন্ত্রপাতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শিলাটিতে জৈব কার্বন, সালফার, ফসফরাস ও অক্সিডাইজড আয়রন রয়েছে, যা অণুজীবের জন্য শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে।

হুরোভিৎস বলেন, ‘আমরা এখনই এসব চিহ্নকে প্রাণের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করতে পারছি না, কারণ একই ধরনের খনিজ ও গঠন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায়ও গঠিত হতে পারে। আর রোভার থেকে পাওয়া তথ্য দিয়ে আমরা সেই সম্ভাবনাকে পুরোপুরি বাতিল করতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, পৃথিবীতে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা ও ফিল্ডওয়ার্কের মাধ্যমে এ ধরনের গঠনের উৎপত্তির রাস্তা বোঝা যেতে পারে। তবে চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে তখনই, যখন স্যাফায়ার ক্যানিয়ন নমুনাটি পৃথিবীতে এনে বিশ্লেষণ করা যাবে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাজেট প্রস্তাবে নাসার বর্তমান ‘মার্স স্যাম্পল রিটার্ন’ মিশন বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ডাফি বলেন, ‘আমরা আমাদের বাজেট, সময় ও প্রযুক্তির দিকগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করছি, যাতে দ্রুততম সময়ে মঙ্গল থেকে নমুনা ফিরিয়ে আনা যায় কিংবা সেখানে আরও উন্নত বিশ্লেষণ সরঞ্জাম পাঠানো যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত