Ajker Patrika

১০৫ ট্রিলিয়নের ঘর পর্যন্ত পাই–এর মান বের করে নতুন বিশ্ব রেকর্ড 

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

পাইয়ের মান নিয়ে মাতামাতি রয়েছে বিশ্বজুড়েই। পাইয়ের মান বের করে বিশ্ব রেকর্ড ভাঙার একটি চলমান প্রতিযোগিতা রয়েছে। এবার কয়েক হাজার স্মার্টফোনের সমতুল্য কম্পিউটিং শক্তি প্রয়োগ করে ১০৫ ট্রিলিয়ন অঙ্কের পাইয়ের মান বের করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেটা স্টোরেজ কোম্পানি। এক ট্রিলিয়ন এক লাখ কোটির সমান।

পাইকে সংক্ষিপ্তরূপে ৩ দশমিক ১৪ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। পাই–এর প্রকৃত মান একটি অমূলদ ও অসীম সংখ্যা। যেকোনো বৃত্তের পরিধিকে তার ব্যাস দিয়ে ভাগ করলে (২২–কে ৭ দিয়ে ভাগ) প্রতি ক্ষেত্রে যে একটি ধ্রুব সংখ্যা পাওয়া যায় সেটিকেই পাই–এর সংজ্ঞা হিসেবে ধরা হয়। সূত্র অনুযায়ী, যে কোনো বৃত্তের ব্যাস বা ব্যাসার্ধ জানলে বৃত্তের পরিধি বের করা যায়। 

পাই–এর মানের লুকানো দশমিক স্থানগুলো গোনায় ধরলেও তা গণিতে কোনো বাস্তব প্রভাব ফেলে না। কারণ সাধারণ গণনার জন্য মাত্র কয়েক ডজন অঙ্কের প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ, মহাবিশ্বের বেশির ভাগ বিষয় বুঝতে নাসার বিজ্ঞানীদের শুধু পাই–এর প্রথম ১৫ দশমিক স্থান পর্যন্ত জানলেই চলে। নতুন কম্পিউটার প্রোগ্রাম এবং ডেটা স্টোরেজ সিস্টেমগুলো পরীক্ষা করার জন্য একটি বেঞ্চমার্ক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সংখ্যাটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। 

গত ১৪ মার্চ পাই দিবসে ১০৫ ট্রিলিয়নের ঘর পর্যন্ত দশমিক স্থানের অঙ্ক বের করেছে ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত মার্কিন কম্পিউটার স্টোরেজ কোম্পানি সলিডিগম। 

যদি ১০ সাইজের ফন্ট ব্যবহার করে একটি ক্রমাগত লাইনে এই সংখ্যা কাগজে টাইপ করা হয় তাহলে সংখ্যাটি প্রায় ২৩০ কোটি মাইল (৩৭০ কোটি কিলোমিটার) দীর্ঘ হবে! অর্থাৎ এই লাইন পৃথিবী থেকে ইউরেনাসের ও নেপচুনের মধ্যবর্তী কোথাও পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। আর পাই–এর মানের ১০৫ ট্রিলিয়নতম অঙ্কটি হলো ৬। 

পাই–এর এই মান বের করতে প্রায় ৭৫ দিন লেগেছিল। কোম্পানির মালিকানাধীন সলিডস্টেট ড্রাইভ (এসএসডি) দিয়ে এই হিসাব করা হয়। এই স্টোরেজ নতুন একটি ল্যাপটপে লাগানো হয়েছিল যা প্রায় ১ পেটাবাইট (১০ লাখ গিগাবাইট) ডেটা সংরক্ষণ করতে পারে। 

সংখ্যা গণনার জন্য প্রসেসরের প্রয়োজন হয়। শক্তিশালী প্রসেসর গণনা করার সময়ও কমিয়ে দেয়। নির্ভরযোগ্য ও শক্তিশালী ডেটা স্টোরেজেও এই গণনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

এক বিবৃতিতে সলিডিগমের মালিক ব্রায়ান বিলার বলেন, এটি কোনো ছোটখাটো কৃতিত্ব নয়। এতে নির্ভুল পরিকল্পনা, অপটিমাইজেশন ও সম্পাদনা জড়িত ছিল। 

২০২২ সালে গুগল ক্লাউড পাই–এর মান ১০০ ট্রিলিয়নের ঘর পর্যন্ত গণনা করে। গত বছরের এপ্রিলে গুগলের এই গণনার সঙ্গে সলিডিগম তাদের গণনা মিলিয়ে দেখে। 

২০২১ সালে সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস অব দ্য গ্রিসন পাই–এর ৬২ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ঘর পর্যন্ত গণনা করেন। একটি সুপার কম্পিউটারের মাধ্যমে ১০৮ দিনে এই গণনা সম্পন্ন করা হয়েছিল। এর আগে ২০২০ সালে অ্যালাবামার হান্টসভিলের টিমোথি মুলিকান তাঁর ব্যক্তিগত কম্পিউটার ব্যবহার করে পাইয়ের মান ৫০ ট্রিলিয়নের ঘর পর্যন্ত বের করেছিলেন। 

মানুষ পাইয়ের মান কত ঘর পর্যন্ত মুখস্থ রাখতে পারে? এখন এই মুখস্থের বিশ্ব রেকর্ডটি হলো ৭০ হাজারের ঘর পর্যন্ত। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুসারে ২১ মার্চ ২০১৫ সালে ভারতের ভেলর ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (ভিআইটি) বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজবীর মিনা এই রেকর্ড গড়েন। 

কম্পিউটার ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকলে পাই–এর মান আরও বড় অঙ্ক পর্যন্ত গণনা করা সম্ভব হবে। তবে কম্পিউটার যতই শক্তিশালী হোক না কেন, পাই অসীম প্রকৃতির হওয়ায় কখনই এর সম্পূর্ণ মান নির্ণয় করা সম্ভব নয়। 

তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত