Ajker Patrika

বৃহত্তম রকেট স্টারশিপের সফল উৎক্ষেপণ, মঙ্গলযাত্রার স্বপ্নে আরেক ধাপ এগোলেন মাস্ক

অনলাইন ডেস্ক
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৭ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টা ৩৭ মিনিট) দক্ষিণ টেক্সাসের একটি গ্রামসংলগ্ন স্পেসএক্সের স্টারবেস উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে থেকে রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। ছবি:এএফপি
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৭ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টা ৩৭ মিনিট) দক্ষিণ টেক্সাসের একটি গ্রামসংলগ্ন স্পেসএক্সের স্টারবেস উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে থেকে রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। ছবি:এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের স্টারবেস থেকে বুধবার সফলভাবে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হলো বিশ্বের বৃহত্তম রকেট, স্পেসএক্সের স্টারশিপ। তবে প্রাথমিকভাবে সফল এই যাত্রা মাঝপথে গিয়েই কিছু বড় বাধার সম্মুখীন হয়, যা ইলন মাস্কের বহুল প্রচারিত মঙ্গলে অভিযান প্রকল্পের জন্য নতুন করে কিছু প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। উৎক্ষেপণে মহাকাশে পৌঁছাতে পারলেও শেষ পর্যন্ত এটি ফেরার পথে আকাশেই বিস্ফোরিত হয়েছে।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৭ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টা ৩৭ মিনিট) দক্ষিণ টেক্সাসের একটি গ্রামসংলগ্ন স্পেসএক্সের স্টারবেস উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে থেকে রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। এই গ্রাম চলতি মাসের শুরুতে ‘স্টারবেস’ নামক একটি শহরে রূপান্তরিত হওয়ার পক্ষে ভোট দেয়।

৪০০ ফুট দৈর্ঘ্য (১২২ মিটার) স্টারশিপ রকেটটি স্পেসএক্সের মানুষের মঙ্গল গ্রহে পাঠানোর প্রধান বাহন হিসেবে বিবেচিত। এটি এর আগের দুটি ব্যর্থ উৎক্ষেপণের তুলনায় অনেক দূর এগিয়ে যায়। আগের দুই উৎক্ষেপণে রকেট আকাশে বিস্ফোরিত হয়ে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের ওপর ধ্বংসাবশেষ ফেলেছিল এবং ওই অঞ্চলে বহু যাত্রীবাহী বিমানের রুট পরিবর্তন করতে হয়েছিল।

এই নবম পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণে প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত একটি পুরোনো বুস্টারের মাধ্যমে স্টারশিপকে মহাকাশে পাঠানো হয়, যা ছিল রকেটের পুনর্ব্যবহার যোগ্যতার এক উল্লেখযোগ্য পরীক্ষা। তবে বুস্টারটি পরিকল্পনা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিতভাবে সাগরে নামতে পারেনি; বরং এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভারত মহাসাগরে পড়ে যায় এবং এর সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

স্টারশিপ নিজে মহাকাশে পৌঁছালেও প্রায় ৩০ মিনিট পর এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। মহাকাশে পরীক্ষামূলকভাবে আটটি স্টারলিংক স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। তবে, রকেটের পেলোড ডোর খোলেনি, ফলে এই পরীক্ষাগুলো আর করা সম্ভব হয়নি।

এসবের পরও বেশ কিছু সাফল্যও যোগ হয়েছে বুধবারের প্রচেষ্টায়। সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে, আগের দুবারের মতো এবার রকেট যাওয়ার পথে বিস্ফোরিত হয়নি। আরেকটি বড় সাফল্য হচ্ছে, এবারের বুস্টার আগেও ব্যবহৃত হয়েছিল।

স্পেসএক্সের সম্প্রচারক ড্যান হুয়েট বলেন, ‘আজকের উৎক্ষেপণে আমাদের অনেক কক্ষপথীয় লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে।’

মাস্ক একটি পোস্টে জানান, প্রাথমিক জ্বালানি ট্যাংকে একটি লিকের কারণেই স্টারশিপ নিয়ন্ত্রণ হারায়। তিনি বলেন, ‘বিশ্লেষণের জন্য অনেক ভালো তথ্য পাওয়া গেছে।’

ইলন মাস্ক আরও বলেন, ‘পরবর্তী তিনটি উৎক্ষেপণের সময়ের ব্যবধান কমানো হবে। প্রায় প্রতি তিন থেকে চার সপ্তাহে একটি করে উৎক্ষেপণ করা হবে।’ তবে স্পেসএক্সের মঙ্গল গ্রহ নিয়ে পূর্বঘোষিত লাইভ স্ট্রিমটি তিনি এখনো করবেন কি না, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

স্পেসএক্স জানিয়েছে, চলতি বছর উৎক্ষেপিত স্টারশিপগুলোর নকশায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন আনা হয়েছে, যা একসঙ্গে প্রচুর স্যাটেলাইট পাঠানো, চন্দ্রাভিযানে সাহায্য করা এবং শেষ পর্যন্ত মঙ্গল অভিযানের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

স্টারশিপের এই উৎক্ষেপণ ছিল প্রায় পুরো পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে ভারত মহাসাগরে নিয়ন্ত্রিত পতনের একটি পরীক্ষা, যার মাধ্যমে নতুন হিট শিল্ড এবং নিয়ন্ত্রণ ফ্ল্যাপ পরীক্ষার কথা ছিল। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার আকাশে আগুনের গোলা হয়ে ভেঙে পড়া এই রকেট প্রকল্পটিতে নতুন করে বিলম্বের ইঙ্গিত দেয়।

নাসা ২০২৭ সালে এই স্টারশিপ রকেট দিয়েই মানুষকে চাঁদে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে, যদিও মাস্কের মঙ্গলকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং রাজনৈতিক প্রভাব এই কর্মসূচিকে জটিল করে তুলছে।

স্পেসএক্স আদতে ঝুঁকি নিতে ভয় পায় না। তারা বারবার রকেট পরীক্ষা চালায়, ত্রুটি খুঁজে বের করে, তারপর সেগুলোর সমাধান করে উন্নতি আনে। এই পদ্ধতি অনেক পুরোনো বা প্রচলিত মহাকাশ প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আলাদা।

ইলন মাস্ক সম্প্রতি তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে মনোযোগ সরিয়ে আবার ব্যবসায় মনোনিবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি স্টারশিপকে ভবিষ্যতের ‘ফ্যালকন ৯’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনায় এগিয়ে চলেছেন। ফ্যালকন ৯ রকেট বাণিজ্যিকভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে চলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) চার দিন আগেই স্টারশিপের এই উৎক্ষেপণের অনুমতি দেয়। এর আগে জানুয়ারি ও মার্চ মাসে স্টারশিপের দুটি পরীক্ষা চালানো হয়, যা উৎক্ষেপণের কিছু সময় পরই বিস্ফোরিত হয় এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে বাণিজ্যিক বিমান চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে।

এ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জিত না হলেও, মহাকাশ অভিযানের অগ্রযাত্রায় এটি নিঃসন্দেহে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

উৎক্ষেপণের সময় টেক্সাসের দক্ষিণ উপকূলীয় সাউথ পাদ্রে আইল্যান্ডের কাছাকাছি ইসলাম ব্লাংকা পার্কে অনেক মহাকাশপ্রেমী জড়ো হন ইতিহাসের সাক্ষী হতে। ছোট ছোট পর্যটক নৌকাও ছিল পার্শ্ববর্তী জলাশয়ে। স্টারবেস গ্রাউন্ড কন্ট্রোলে ইলন মাস্ককে ‘অকুপায় মারস’ লেখা টি-শার্ট পরে বসে থাকতে দেখা যায়।

অস্ট্রেলিয়ার ৫০ বছর বয়সী পিয়ার্স ডসন এএফপিকে বলেন, ‘আমি এই রকেট নিয়ে পুরোপুরি মুগ্ধ। আমি আমার পরিবারের ছুটি পরিকল্পনা করেছি এই উৎক্ষেপণকে কেন্দ্র করে।’ তিনিই প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন, সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও স্কুলফেরত কিশোর ছেলে।

অন্য এক দর্শক, ৩৩ বছর বয়সী প্রযুক্তি উদ্যোক্তা জোশুয়া উইংগেট বলেন, ‘বিজ্ঞানজগতে কোনো ব্যর্থতা নেই। প্রতিটি পরীক্ষার মধ্য দিয়েই শেখা হয়, তাই এটি দেখা ছিল অত্যন্ত রোমাঞ্চকর।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত