Ajker Patrika

আমাদের সৌরজগতে একটি বহির্জগতের বস্তু শনাক্ত

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৫, ২২: ০৫
নাসার ছবিতে ওপরের ডান পাশে দেখা যাচ্ছে বস্তুটিকে
নাসার ছবিতে ওপরের ডান পাশে দেখা যাচ্ছে বস্তুটিকে

সম্প্রতি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একটি নতুন মহাজাগতিক বস্তু শনাক্ত করেছেন, যা আমাদের সৌরজগতের মধ্য দিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে। সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, এটি আমাদের সৌরজগতের কোনো অংশ নয়। এটিকে একটি ধূমকেতু বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং এটি এখন পর্যন্ত দেখা তৃতীয় ‘ইন্টারস্টেলার অবজেক্ট’ বা বহির্জাগতিক বস্তু।

নতুন এই ধূমকেতুর নাম রাখা হয়েছে ‘৩ আই/অ্যাটলাস’। এটি প্রথম শনাক্ত হয় নাসার অর্থায়নে পরিচালিত ও চিলিতে অবস্থিত ‘অ্যাটলাস’ টেলিস্কোপের মাধ্যমে। এরপর অন্যান্য টেলিস্কোপের পুরোনো পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, এটি ১৪ জুনের আগেই শনাক্তযোগ্য ছিল এবং এটি ধনু (স্যাগিটারিয়াস) নক্ষত্রমণ্ডল থেকে আমাদের দিকে এসেছে।

ইতালির বেলাট্রিক্স জ্যোতির্বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণাগারের জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিয়ানলুকা মাসি জানিয়েছেন, বস্তুটির গতি ও কক্ষপথ এই অনুমানকে জোরদার করেছে যে, এটি আমাদের সৌরজগতের বাইরে থেকে এসেছে। বস্তুটি ঘণ্টায় প্রায় ২ লাখ ১৪ হাজার কিলোমিটার গতিতে চলছে। এই গতি আমাদের সৌরজগতের সাধারণ গতি থেকে অনেক বেশি।

ভিলানোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টেডি কারেটা ব্যাখ্যা করেছেন, আমাদের সৌরজগতের যেকোনো বস্তু সাধারণত সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। কিন্তু ‘৩ আই/অ্যাটলাস’ প্রায় সোজাসুজি পথে সৌরজগৎ অতিক্রম করছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, এটি বাইরের কোনো উৎস থেকে এসেছে।

নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবের বিজ্ঞানী ড. পল চোডাস জানিয়েছেন, কক্ষপথ বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে এটি কোনো এক দূরবর্তী সৌরজগৎ থেকে বহু মিলিয়ন বছর ধরে ভ্রমণ করে এখানে পৌঁছেছে।

বর্তমানে বস্তুটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৬৭ কোটি ৫০ লাখ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। কারেটা জানিয়েছেন, বিষয়টি জানার পর থেকেই বিশ্বের বড় বড় টেলিস্কোপ এটি পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

নতুন বস্তুটির আগ পর্যন্ত পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আমাদের সৌরজগতে মাত্র দুটি বহির্জগতের বস্তু শনাক্ত করেছিলেন। এগুলো হলো, ২০১৭ সালে শনাক্ত হওয়া ‘ওউমুয়ামুয়া’ এবং ২০১৯ সালে শনাক্ত হওয়া ‘২ আই/বোরিসভ’। তবে সদ্য শনাক্ত হওয়া ‘৩ আই/অ্যাটলাস’-কে এখন পর্যন্ত দেখা সবচেয়ে উজ্জ্বল ও দ্রুতগতির ইন্টারস্টেলার বস্তু হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

আজ শুক্রবার সিএনএন জানিয়েছে, নতুন শনাক্ত হওয়া বস্তুটির ব্যাস আনুমানিক ২০ কিলোমিটার এবং এটি বরফ, ধূলিকণা ও গ্যাস নিঃসরণ করছে বলে মনে করা হচ্ছে—মূলত এগুলো কোনো ধূমকেতুর সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তবে এটির ক্ষেত্রে ঠিক কোন উপাদানগুলো নির্গত হচ্ছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

নাসা জানিয়েছে, এটি পৃথিবীর খুব কাছাকাছি আসবে না। চলতি বছরের ১৯ ডিসেম্বর এটি পৃথিবী থেকে ২৭ কোটি কিলোমিটার দূরে থাকবে। তবে ২ অক্টোবরে এটি মঙ্গলগ্রহের কাছাকাছি পৌঁছাবে। মঙ্গলগ্রহ থেকে সেদিন এটির দূরত্ব থাকবে ৩ কোটি কিলোমিটার।

মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী, এটি এখন ধনু নক্ষত্রপুঞ্জে দেখা যাচ্ছে। তবে পূর্ণিমার কারণে ১০ জুলাইয়ের দিকে এটিকে দেখা কঠিন হতে পারে। ডিসেম্বরের শুরুতে এটি আবার সূর্যের অন্য পাশে দৃশ্যমান হবে এবং ২০২৬ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত এটিকে দেখা সম্ভব হবে বলে অনুমান করছেন বিজ্ঞানীরা।

বহির্জগৎ থেকে আসা এ ধরনের ধূমকেতু আমাদের সৌরজগতের বাইরে থাকা গ্রহ ও এগুলোর উৎপত্তি সম্পর্কে নতুন ধারণা দিতে পারে। কারেটা বলেন, ‘এগুলো এমন বস্তু, যেগুলো অন্য নক্ষত্রের চারপাশে তৈরি হয়ে পরে মহাশূন্যে ছিটকে পড়ে। এখন তারা আমাদের সৌরজগৎ পার হচ্ছে—এমন জিনিস আমরা উপেক্ষা করতে পারি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত