Ajker Patrika

‘এইখানে অনলাইনে মোবাইল কিনলে সাবান আসে’

ইমরান খান
‘এইখানে অনলাইনে মোবাইল কিনলে সাবান আসে’

খুলনার মেহেরপুর থেকে গরু বিক্রির জন্য ঢাকায় এসেছেন মো. সোহেল রানা। সোহেল মূলত সিঙ্গাপুর প্রবাসী। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দেশে ফিরে করোনায় আটকে গেছেন। তাই বসে না থেকে কোরবানি উপলক্ষে এলাকা থেকে ১৪টি গরু এনে ঢাকায় বিক্রি করছেন। 

সরকার অনলাইনে গরুর হাট চালু করলেও তিনি কেন অনলাইন বাদ দিয়ে ঢাকার মেরাদিয়ায় এসেছেন—জানতে চাইলে সোহেল বললেন, ‘গরু যারা পোষে, তাদের ৭০ শতাংশ কিন্তু স্মার্টফোন ব্যবহার করে না। যারা ব্যবহার করে, তাদের বড় বড় খামার। ওই খামারওয়ালারাই এইখানে আইছে, মূর্খ লোকগুলা কী করবে? কৃষকেরা তো অনলাইন বোঝে না। অনলাইন মনে করেন যে একটা বিশ্বাসের ব্যাপার। এই দেশে অনলাইনে যেইটা অর্ডার করবেন, বাস্তবে কিন্তু অইটা আসে না। এইখানে অনলাইনে মোবাইল কিনলে সাবান আসে। যদি একটা জুতা অর্ডার করি—সাইজ, কালার অইডাও আসতে পারে; অন্যডাও আসতে পারে। আবার কবে না কবে আসবে তারও ঠিক নাই। এ জন্য দেশের অনলাইনে কিন্তু বিশ্বাস নাই।’ 

অনলাইন হাট নিয়ে সোহেল রানাকে একেবারে বিরক্ত মনে হলো। ছবি দেখে গরু কেনার বিষয়টি তিনি মানতেই পারছেন না। বললেন, ‘এই যে ছবি জিনিসটা। এইটা হইলো একটা প্র্যাকটিসের বিষয়। ছবি দিয়া আপনে জিনিসরে বড়ও দেখাইতে পারবেন, ছোটও দেখাইতে পারবেন। ৫ মণের গরুরে ৬ মণও বলতে পারবেন। আবার ধরেন, ২ লাখ টাকার গরু আপনাকে দিলাম, ছবি দেইখা আপনি কিনলেন। আসার পর আপনে বললেন, “যেইটা দেখাইছেন এইটা সেই গরু না। ” সেটা তো সমস্যা। তখন নিজেরও খারাপ লাগে, কালার (বদনাম হওয়া অর্থে) হইলাম। সেও ভাববে আমি চিটারি করলাম, মিথ্যা বললাম। অথচ এইডাই কিন্তু ছবিতে ছিল।’ 

সোহেল রানা নিজের গরুগুলোর দিকে আঙুল তাক করে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, কেন ছবি দেখে গরু কেনা–বেচা ঠিকঠাক হয় না। নিজের একটি গরুর দিকে আঙুল তাক করে বললেন, ‘এখন এইডা আপনে যদি না নেন, আমি তো আপনাকে জোর কইরে দিতে পারছি না। এত দূর থিকা ঢাকায় আইসা আমি আপনের সাথে গ্যাঞ্জাম করতে পারব? তখন তো গাড়ি ভাড়া দিয়া আইসা আবার ফেরত যাওয়া লাগবে। আমার ২০ হাজার টাকা লস। অইজন্য রিস্ক নিতে চাই না।’ 

করোনা মহামারির এই সময়ে অনলাইন বা ডিজিটাল পশুর হাট বেশ আলোচনায় এসেছে। অনেকেই হাটে যাওয়ার বদলে অনলাইন থেকেই কোরবানির পশু কিনছেন। এটা নিয়ে ইতি–নেতি দু ধরনের প্রতিক্রিয়াই আছে। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যতার দিক থেকে এখনো প্রচলিত হাটকেই এগিয়ে রাখছেন সোহেল রানা। বললেন, ‘এই যে বাজারটা বসছে, এখানে ২ লাখের গরু আড়াই লাখ দিয়া কিনলেও সমস্যা নাই। কারণ, এইখানে আপনি দেইখা কিনছেন।’ 

শুধু এটুকুই নয়, সোহেল রানা প্রশ্ন তুললেন অনলাইন হাটের মতো বিষয় যদি জনপ্রিয় হতে থাকে, তবে এত দিনের প্রচলিত বাজার ব্যবস্থার কী হবে? এই প্রশ্ন কিন্তু শুধু সোহেল রানার নয়। প্রশ্নটি বিশেষত এই করোনাকালে ব্যাপকভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কারণ, এই করোনার সময়েই ভবিষ্যতের বাজার ব্যবস্থার স্বরূপটি প্রকাশ হয়ে পড়েছে। সে ক্ষেত্রে পুরোনো বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে যারা নিজেদের নতুন সময়ের জন্য প্রস্তুত করতে পারবেন না, তাদের কী হবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। 

সোহেল রানাও এই প্রশ্নই করলেন—‘সবাই অনলাইনে কেনাবেচা করলে এই বাজারটা বসত? অনলাইনে যে কয়জন কিনছে—খামারিদের কাছ থেকে, পরিচিতদের কাছ থেকে। খামারিরা একটায় ৫ হাজার লস করবে, একটায় ২০ হাজার লাভ করবে। আর আমাদের গরুই তো অল্প। এই নিয়া রিস্ক নিব কি? আর অপরিচিত লোকের থেকে আপনি কিনবেন? কিনলেও শতকরা ৯৫ ভাগ ফেরত যাবে, নইলে কম দামে লস দিয়া বেচতে হবে।’ 

তবে আশাও হারাচ্ছেন না। বলছেন—‘তয় ২-৫ বছর পর হয়তো মানুষ অভ্যস্ত হবে। আমরা ভালো না বুঝলেও আমাদের ছেলেমেয়েরা অনলাইন বুঝবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত