Ajker Patrika

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

  • দলের ঐক্য ও শৃঙ্খলা রক্ষার বার্তা হাইকমান্ডের, শক্তি বৃদ্ধিতে জোর।
  • প্রার্থী বাছাইয়ে বিশেষ বিবেচনায় থাকবে ১৯৯১, ২০০৮ ও ২০১৮-এর প্রার্থীরা।
  • আগে নির্বাচনী জোট করার পরিকল্পনাও আছে।
রেজা করিম, ঢাকা 
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। নির্বাচন যখনই হোক, আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে বিএনপি। নির্বাচন সামনে রেখে হাইকমান্ডের নির্দেশে দল গোছানো শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সাংগঠনিক শক্তি, শৃঙ্খলা এবং গতিশীলতা বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিয়েছে দলটি।

দলীয় সূত্র বলছে, একটি নির্বাচনমুখী দল হিসেবে নির্বাচনের জন্য যে রকম প্রস্তুতি দরকার, সে প্রস্তুতি বিএনপির আছে। জুলাই অভ্যুত্থানের অনেক আগে থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আসছিল বিএনপি। রাজধানী থেকে শুরু করে বিভাগ, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে জনসমাবেশ, জনসভাসহ নানা কর্মসূচি পালনও ছিল এই প্রস্তুতির অংশ। অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে তরুণদের নিয়ে দেশের চার বিভাগে বিএনপির ৩ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যেসব সেমিনার ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করছে, এটিও মূলত নির্বাচনী প্রস্তুতিরই অংশ। সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে ১৫ মে থেকে দেশব্যাপী সদস্য নবায়ন ও কর্মী সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে বিএনপি। আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে, যেখানে অন্তত ১ কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দলে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড এখনো শুরু হয়নি। নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর এটা শুরু হবে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধিতে কাজ চলছে বলে জানান এই নেতা। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সংগঠন শক্তিশালী করার মধ্য দিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি হয়ে যায়। আমরা সে কাজেই এখন বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।’

গত মার্চে সংসদ ভবনের এলডি হলে অনুষ্ঠিত দলের বর্ধিত সভা থেকেই মূলত বিএনপির নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তৃণমূলের নেতাদের সেদিনই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার বার্তা দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই বার্তায় দুটি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা হলো ঐক্য ও ভাবমূর্তি। দলের ভেতরে অনৈক্য থাকলে আগামী নির্বাচনে ভালো ফলাফলের পথে অন্তরায় হবে। সেজন্য ঐক্য ধরে রাখতে দলের স্বার্থে ব্যক্তিস্বার্থ ভুলে, কোন্দল ভুলে পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ককে সুদৃঢ় করার তাগিদ দিয়েছেন তারেক রহমান। একই সঙ্গে দখলবাজি, চাঁদাবাজি, ক্ষমতা প্রদর্শনসহ বিভিন্ন অপকর্ম থেকে বিরত থাকতেও কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। তাঁর দেখানো পথেই দেশজুড়ে নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলেই বিএনপির নির্বাচনী তৎপরতা দৃশ্যমান হবে বলে জানান তাঁরা।

আগামী নির্বাচনে কেমন প্রার্থী চাচ্ছে বিএনপি—এমন প্রশ্নে দলটির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা আজকের পত্রিকাকে জানান, আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলেও আগামী সংসদ নির্বাচন ‘কঠিন হবে’ ধরে নিয়েই প্রার্থী বাছাইয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিচারে যাঁরা এগিয়ে থাকবেন, তাঁরাই শেষ বিচারে দলের মনোনয়ন পাবেন। প্রার্থী বাছাইয়ের জরিপ শেষে এরই মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা রাখেন এমন এক নেতা বলেন, তারেক রহমানের কাছে দেওয়া মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বিগত সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া জীবিত প্রার্থীদের নাম আছে। এ ক্ষেত্রে ১৯৯১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বিএনপি। ওই ৩ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পাবেন। তাঁরা জীবিত না থাকলে তাঁদের পরিবারের যোগ্য কেউ থাকলে তিনি প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন। কারণ হিসেবে ১৯৯১-এ যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, বিএনপির দৃষ্টিতে তাঁরা এবং তাঁদের পরিবার পরীক্ষিত। অন্যদিকে ২০০৮ এবং ২০১৮ সালেও অনেকটা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে প্রার্থী হয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের বিষয়টিও বিশেষভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ২০১৮-এর পর সেভাবে আর দলে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই করা হবে। তবে বিতর্কিতরা যাতে কোনোভাবে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না পান, সে ব্যাপারে কঠোর রয়েছে দলের হাইকমান্ড।

প্রার্থী বাছাই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু আজকের পত্রিকাকে বলেন, পদে থাকলেই প্রার্থী হবেন, এমনটি নয়। যোগ্যতা, জনপ্রিয়তা ও দলের জন্য বিগত দিনের অবদানকে মূল্যায়ন করেই নির্বাচনের জন্য প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, কাউকে বিএনপির প্রার্থী হতে হলে তাঁকে অবশ্যই ক্লিন ইমেজের হতে হবে। একই সঙ্গে এলাকায় জনপ্রিয় ও নেতা-কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার পাশাপাশি দলের আন্দোলন-সংগ্রামে কার কতখানি ত্যাগ-তিতিক্ষা আছে, সেটাও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে।

এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী জোট করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন দলটির নেতারা। বিএনপির সঙ্গে বিগত দিনগুলোতে আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল, এমন দলগুলোকে নিয়ে জোট করার আলাপ আছে। সমঝোতার মাধ্যমে দলগুলোকে আসন ছাড় দেওয়ার চিন্তা রয়েছে। একই সঙ্গে বিজয়ী হলে যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের ঘোষণাও এসেছে বিএনপির পক্ষ থেকে। তবে জোট করার বিষয়ে একটি বিষয়ে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। বাংলাদেশের মূল চেতনার বাইরের কোনো দলের সঙ্গে বিএনপি জোট করবে না বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

নির্বাচনী জোট হওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে বরকতউল্লা বুলু বলেন, বিগত দিনে বিএনপির সঙ্গে যাঁরা যুগপৎ আন্দোলন করেছেন, তাঁদের নিয়ে জোট গঠন হতে পারে। তবে বাংলাদেশের মূল চেতনার বাইরে থাকা কোনো দলের সঙ্গে বিএনপি জোট করবে না। বিশেষ করে যাঁরা একাত্তর স্বীকার করে না, তাঁদের সঙ্গে বিএনপির জোট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত