Ajker Patrika

এনসিপির নেতৃত্বে জোট গঠন পেছাল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৬
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

বিএনপি-জামায়াতের বিকল্প তৃতীয় রাজনৈতিক বলয় গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে একটি জোট গঠনের আলোচনা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। প্রাথমিকভাবে এনসিপি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ) নিয়ে এই জোট গঠনের কথা ছিল। গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) পরবর্তী সময়ে এই জোটে যুক্ত হতে পারে, এমন গুঞ্জনও চলছিল। কিন্তু আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পিছিয়ে গেল জোট গঠনের প্রক্রিয়া।

জানা গেছে, শেষ মুহূর্তে এসে দলগুলোর নেতাদের মধ্যে মতানৈক্যের কারণে জোট গঠনপ্রক্রিয়া ধাক্কা খেয়েছে। গণঅধিকার পরিষদ ও আপ বাংলাদেশের থাকা না-থাকা প্রশ্নে পিছিয়ে গেছে প্রক্রিয়া।

এনসিপি সূত্রে জানা গেছে, আপ বাংলাদেশকে জোটে নেওয়া নিয়ে দলের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেকোনো রাজনৈতিক জোট হয় রাজনৈতিক দল নিয়ে। কোনো প্ল্যাটফর্ম সাধারণত রাজনৈতিক জোটে থাকে না। আপ বাংলাদেশ একটি প্ল্যাটফর্ম, রাজনৈতিক দল নয়। তাই তাদের নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

এনসিপির এই নেতা জানান, জেএসডি ও গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা এখনো চলমান। তবে আত্মপ্রকাশের তারিখ ও জোটের রূপরেখা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমাদের সংগঠন তৃতীয় জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়ে তিন মাস ধরেই নিরলসভাবে কাজ করে এসেছে। এর ধারাবাহিকতায় জোট গঠন এত দূর এগিয়েছে। এখন জোট গঠন কিছুটা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে, জোট গঠনপ্রক্রিয়া পিছিয়েছে। আমরা এখনো তৃতীয় জোট বলয় গঠনের ব্যাপারে ইতিবাচক আছি। আলাপ-আলোচনা চলছে।’

জোট গঠন পেছাল কেন জানতে চাইলে আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘এনসিপির ভেতরকার ক্যালকুলেশনের (হিসাবনিকাশ) কারণে আপ বাংলাদেশের ব্যাপারে এনসিপি রিজার্ভেশন (রক্ষণশীলতা) দেখিয়েছে। গণমাধ্যম সূত্রে জেনেছি, কারণ হিসেবে আপ বাংলাদেশ রাজনৈতিক দল নয় আর রাজনৈতিক দল ছাড়া কারও সঙ্গে জোট করবে না জানিয়েছে। এরপর আলোচনা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।’

বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠকে থাকা একটি দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা জানান, সেখানে জোট নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি প্রকাশ পায়। অন্যদিকে এনসিপিও একটি বিষয়ে ‘আপত্তি’ জানায়। মূলত এ কারণেই জোট গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের অঙ্গীকার রক্ষা ও জুলাই সনদের ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণে যারা আগ্রহী, তাদের নিয়ে একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। এই জোটে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক লক্ষ‍্য গুরুত্ব পাবে নাকি এবারের নির্বাচনী বোঝাপড়া গুরুত্ব পাবে, সেটা নিয়ে দলগুলোর মধ‍্যে এখনো চূড়ান্ত ঐকমত‍্য হয়নি। ফলে কয়েকবার সময় পিছিয়েও আমরা ঘোষণা পর্যায়ে উপনীত হতে পারিনি। একটি দল আরও একটু সময় চেয়ে নিয়েছে। আরেকটি দলের যুক্ত হবার বিষয় নিয়ে নতুন করে আলোচনা চলছে। আমরা এখনোওহাল ছাড়িনি।’

জোটের বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদারুল ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের একটা ধারণা ছিল আজকের মধ্যে সব কাজ গুছিয়ে ফেলতে পারব। কালকে (বুধবার) রাতে দীর্ঘক্ষণ মিটিংয়ের পর দেখা গেল, আমাদের অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে আরও আলাপ করা লাগবে। এ কারণে আমরা আজকে ঘোষণা করি নাই। আমাদের আলোচনা চলমান।’

তিনি আরও বলেন, ‘আশা করি দুই-তিন দিনের মধ্যেই আলোচনা শেষ হবে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি তো আসলে আমাদেরকে দীর্ঘসময় নেওয়া পারমিট করে না। এটা যদি হওয়ার থাকে, তাহলে দুই-তিন দিনের মধ্যেই হবে।’

জোট গঠন পেছানোর নেপথ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের দুজন ছাত্র উপদেষ্টারও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে এনসিপির একটি সূত্র দাবি করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এনসিপি নেতা বলেন, দুজন ছাত্র উপদেষ্টা চান, বিএনপির সঙ্গে এনসিপি জোটে যাক। কিন্তু এনসিপির নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ এটা চায় না। এই বিষয়টিও জোট নিয়ে সিদ্ধান্ত পিছিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ